বিশ্ব এখন তিন নয়, চার বলয়ে বিভক্ত, বাংলাদেশ কোথায়

Author Topic: বিশ্ব এখন তিন নয়, চার বলয়ে বিভক্ত, বাংলাদেশ কোথায়  (Read 483 times)

Offline nafees_research

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 344
  • Servant of ALLAH
    • View Profile
বিশ্ব এখন তিন নয়, চার বলয়ে বিভক্ত, বাংলাদেশ কোথায়

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর চীনের বাইরে নতুন বলয় হচ্ছে বৈশ্বিক দক্ষিণ। দক্ষিণ বলয়ের ওপর আগের মতো কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না কোনো পরাশক্তি। তারা নিজেদের স্বার্থে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায়।

টুডে উই আর ইন এ ট্রাই-পোলার ওয়ার্ল্ড’ (আমরা এখন তিন বলয়ে বিভক্ত বিশ্বের বাসিন্দা)। কথাটা মার্কিন যৌথ বাহিনী প্রধান জেনারেল মার্ক মিলির। ফরেন অ্যাফেয়ার্স পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি তিনি এ কথা বলেছেন।

৩০ বছর ধরে যারা বিশ্বকে ইউনিপোলার বা এক মেরু ভেবে এসেছে, এই স্বীকারোক্তিতে তাদের ভ্রু কোঁচকাতে পারে বৈকি। তিন বলয় মানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। জেনারেল মিলির হিসাবে অবশ্য একটা ভুল আছে, তিনি চতুর্থ একটি সম্ভাব্য বলয়ের কথা উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন। আর সেটি হলো তথাকথিত তৃতীয় বিশ্ব, যা এখন ‘গ্লোবাল সাউথ’ নামে পরিচিত। বাংলায় আমরা বলতে পারি ‘বৈশ্বিক দক্ষিণ’। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণকে ঘিরে যে মেরুকরণ ঘটেছে, তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিশ্বরাজনীতির এই চতুর্থ স্তম্ভটি জমাট বাঁধতে শুরু করে।

এক থেকে দুই
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সারা বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাবলয়ে চলে এসেছে। এর আগে দুর্বল হয়ে গেলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকে থাকতে তাকে দ্বিতীয় পরাশক্তি হিসেবে মানা হতো। নব্বই দশকের গোড়ায় নতুন ও খণ্ডবিখণ্ড রাশিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও তাকে পরাশক্তি হিসেবে কেউ গায়ে মাখত না। তার পারমাণবিক ভান্ডার ছিল বটে, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এতটাই কাবু করে ফেলেছিল যে, সে পরাশক্তির মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। সোভিয়েত ব্যবস্থার পতনের কারণেই এক মার্কিন পণ্ডিত ‘ইতিহাসের সমাপ্তি’ ঘোষণা করেছিলেন, যার মোদ্দাকথা ছিল, পশ্চিমা মূল্যবোধ ও রাজনীতির বিজয় হয়েছে। ২০ বছর না যেতেই নতুন করে হিসাব কষতে হলো। প্রেসিডেন্ট পুতিন সেই রাশিয়াকে শুধু আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেননি, পশ্চিমের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো অবস্থায় নিয়ে আসেন। ফলে পৃথিবীর কর্তা আর এক নয়, দুইয়ে দাঁড়াল।

কিন্তু গোল বাঁধল রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে।

এই আগ্রাসী অভিযান শুরুর আগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটে প্রচ্ছন্ন বিভক্তি ছিল। কোনো কোনো ইউরোপীয় দেশ, বিশেষত ফ্রান্স, ওয়াশিংটনের ছাতা থেকে বেরিয়ে আন্ত–ইউরোপীয় জোট গঠনে আগ্রহী হয়ে উঠে। গত ২০ বছরে একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভেতরে-বাইরে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের ‘পুলিশম্যান’ হতে হলে যে কবজির জোর ও পকেটে ডলার চাই, তাতে টান ধরেছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তাকে আরও দুর্বল করে তোলে। এ অবস্থায় একদিকে রাশিয়া নিজের ঘর গুছিয়ে নেয়, অন্যদিকে নতুন পরাশক্তি হিসেবে চীন বিশ্ব মানচিত্রে নিজের স্থান পোক্ত করে।


চীনের উত্থান ও ইউক্রেন যুদ্ধ
একুশ শতকের বিশ্বব্যবস্থার একটি নতুন উপাদান হলো পরাশক্তি হিসেবে চীনের আবির্ভাব। পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলেই নয়, অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণে সে এখন বিশ্বের ২ নম্বর শক্তি। সামরিক শক্তিতেও অন্য দুই পরাশক্তিকে পাল্লা দিতে সক্ষম। দেশটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা আরও ভালোভাবে ঠাহর হলো ইউক্রেনে রুশ হামলার পর। এই যুদ্ধে পুতিন কার্যত একা, চীনকে পাশে পেলে বোঝাটা কমে, সে জন্য তিনি কম কাঠখড় পোড়াননি। ১৯৪৯-৫০ সালে চীনা নেতা মাও সে-তুং যখন মস্কো সফরে আসেন, সোভিয়েত নেতা স্তালিন তাঁকে চার দিন দেখা না করে বসিয়ে রেখেছিলেন। এখন প্রেসিডেন্ট সি আসবেন, সে জন্য চার দিন আগে থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিন লালগালিচা বিছিয়ে অপেক্ষায় থাকেন।

ইউক্রেনে রুশ হামলা ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয়দের জন্য বড় ধরনের আঘাত। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তারা ফের এককাট্টা হয়, ইউক্রেনের পক্ষে এক ‘প্রক্সি’ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিম এক হলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ভিন্ন পথ বেছে নেয়। এই যুদ্ধ তাদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী, সেই যুক্তি মাথায় রেখে দক্ষিণের দেশগুলো একক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

২০ বছর আগে হলে এ প্রশ্নে কোনো বড় বিতর্ক হতো না। আমেরিকার ইচ্ছাই তৃতীয় বিশ্ব মেনে নিত। কিন্তু এখন অবস্থা বদলাচ্ছে। দক্ষিণের দেশগুলোর কেউ কেউ আমেরিকার আগ্রাসী মনোভাব এড়াতে চীনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহী। শুধু ব্রাজিল বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ নয়, তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়। মস্কোর সমর্থনে চীন তাদের মুদ্রা ইউয়ানকে ডলারের বদলে নতুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি চাইছে। ব্রিকসভুক্ত (BRICS) দেশগুলো তো বটেই, সৌদি আরবও এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে।

মস্কো ও বেইজিং মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এক মেরু বিশ্বব্যবস্থা তাদের জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষায় বড় কাঁটা। এই কাঁটা তুলতে তারা একে অপরের সঙ্গে হাত মেলায়। ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগের সপ্তাহে রাশিয়ার পুতিন ও চীনের সি নিজেদের মধ্যে ‘সীমাবিহীন বন্ধুত্বের’ ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণা থেকে ভাবা হয়েছিল, চীন হয়তো রাশিয়ার প্রতি সামরিক সমর্থন জোগাবে। রাশিয়া তাদের পরিকল্পনামতো দুই সপ্তাহে কিয়েভ দখল করে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিতে পারলে চীন কী করত, তা অনুমান করা কঠিন নয়। কিন্তু যুদ্ধের এক মাস না যেতেই বোঝা গেল, মস্কো অঙ্কে বড় ধরনের ভুল করেছে। এই যুদ্ধে রাতারাতি জয় করা তার পক্ষে অসম্ভব।


এ অবস্থায় চীন একটি আপাত-নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। আমেরিকার বিরুদ্ধে তার রাশিয়াকে চাই। আবার বাণিজ্যিক কারণে পশ্চিমকেও সে হাতছাড়া করতে রাজি নয়। সেই কারণে নিরপেক্ষতা। তার এই রণনীতির প্রমাণ মিলল জাতিসংঘে, যেখানে রাশিয়ার প্রতি নিন্দাসূচক প্রতিটি ভোটে সে ভোটদানে বিরত থাকল। জাতীয় সার্বভৌমত্বের অখণ্ডতার পক্ষে জোর যুক্তি দিলেও সে ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক সাহায্যের সমালোচনা করল। পাশাপাশি রাশিয়ার চাপ সত্ত্বেও তাকে কোনো অস্ত্র-বারুদ দিতে অস্বীকার করল।

বৈশ্বিক দক্ষিণ
বৈশ্বিক দক্ষিণ বা গ্লোবাল সাউথের ভূমিকাও বহুলাংশে চীনের মতো। আফগানিস্তান-ইরাক যুদ্ধে অধিকাংশ দক্ষিণি দেশ মার্কিন নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল। ইউক্রেনের বেলায় নয়। রাশিয়ার হামলা তারা সমর্থন করল না বটে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান সত্ত্বেও নিজেদের এই যুদ্ধে জড়াল না। বৈশ্বিক দক্ষিণের ৫০টির বেশি দেশ জাতিসংঘে ইউক্রেন প্রশ্নে ভোটদানে বিরত থাকে। এই যুদ্ধের ফলে জ্বালানির দাম বেড়েছে, খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। কোভিড–সংকটের সময় তারা দেখেছে, পরাশক্তির ওপর আর নির্ভর করা যায় না। ফলে উভয় পরাশক্তি এড়িয়ে তারা নিজেদের পথ বেছে নিল।

তৃতীয় বিশ্বের এই অবস্থান তাদের পরিপক্বতার প্রমাণ বলে ভাবা যেতে পারে। তবে বাস্তব সত্য হলো, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া কেউ এখন আর আগের মতো শক্তিধর নয় যে, তাদের লেজুড় হয়ে থাকলে ফায়দা মিলবে। এই উপলব্ধি থেকেই বৈশ্বিক দক্ষিণের নীতিগত ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান। এই নয়া কৌশলগত সমীকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

নতুন এই রণকৌশলগত সমীকরণের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব নিরুপমা রাও। তাঁর কথায়, ভারত আমেরিকাকে চায়, পাশাপাশি চীন ও রাশিয়াকেও চায়। ওয়াশিংটন ও মস্কোর লড়াই ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের জন্য নতুন সুযোগ খুলে দিয়েছে। তারা ‘ডাবল ডিসকাউন্টে’ কেবল রাশিয়ার তেল-গ্যাস কিনতে পারছে তা–ই নয়, সে জ্বালানির মূল্য নিজ মুদ্রায় পরিশোধের ব্যবস্থাও করে নিয়েছে।

ফরেন অ্যাফেয়ার্স পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যায় তিনি লিখেছেন: ‘আজকের যে পৃথিবী, শীতল যুদ্ধের সময়ের সঙ্গে তা তুলনীয় নয়। আজকের পৃথিবী বাণিজ্য, প্রযুক্তি, অভিবাসন, ইন্টারনেট ইত্যাদির কারণে আমাদের একে অপরকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক নিকটবর্তী করেছে। ইউক্রেনের ব্যাপারে পশ্চিমের কথা হয়তো ঠিক যে রাশিয়া সেখানে মানবাধিকারের লঙ্ঘন করছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বও তো ভিয়েতনাম থেকে ইরাকে কতবার কতভাবে অন্যায় ও সহিংস হস্তক্ষেপ করেছে। আমরা তাই রাশিয়াকে একঘরে করার পশ্চিমা আহ্বানে মোটেই আগ্রহী নই।’

একই সংখ্যায় ব্রাজিলীয় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাতিয়াস স্পেকটর লিখেছেন, এই যুদ্ধের ফলে পশ্চিমা জোট ও রাশিয়া উভয়েই কমজোরি হয়ে পড়েছে। এখন এরা কেউ আর দক্ষিণের ওপর নিজের ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দিতে সক্ষম নয়। ফলে সংহত হচ্ছে চতুর্থ বলয়, বৈশ্বিক দক্ষিণ।

‘যুক্তরাষ্ট্র চায় এককৌণিক বিশ্ব। তার কাছে বহুকৌণিকতা (মাল্টিপোলারিটি) মানেই সংঘর্ষ ও অস্থিরতা। কিন্তু বৈশ্বিক দক্ষিণ মনে করে, বহুকৌণিকতা একুশ শতকের উপযোগী একটি স্থিতিশীল বিশ্বব্যবস্থার ভিত হিসেবে কাজ করতে পারে।’

বৈশ্বিক দক্ষিণের ভবিষ্যৎ
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এখন বৈশ্বিক দক্ষিণের বাসিন্দা। তাদের সম্মিলিত সম্পদ মোট বৈশ্বিক উৎপাদন ক্ষমতার (জিডিপি) এক–তৃতীয়াংশ। বামঘেঁষা ফরেন পলিসি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক রাভি আগারওয়ালের কথায়, বৈশ্বিক দক্ষিণ জেগে উঠছে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

মানতেই হবে, স্বার্থের অভিন্নতা সত্ত্বেও বৈশ্বিক দক্ষিণ কোনো অখণ্ড বা ‘মনোলিথিক’ গ্রুপ নয়। কোনো কৌশলগত রাজনৈতিক ও সামরিক জোটও তারা গড়েনি। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের সবল উপস্থিতির কারণে এই নয়া দক্ষিণি জোটকে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন মনে হতে পারে, কিন্তু অবস্থা এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরত্বে আগ্রহী হলেও এই গ্রুপের কোনো কোনো দেশ নিজ স্বার্থে বৃহৎ শক্তির সঙ্গে লাভজনক মৈত্রী গড়েছে। যেমন ভারত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে ঠেকাতে মার্কিন নেতৃত্বে চারদেশীয় ‘কোয়াড’ সামরিক কৌশলগত আঁতাতে যোগ দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠাচ্ছে। অন্য বৃহৎ দেশ ব্রাজিল চীনের নিকটবর্তী হতে চেষ্টা চালাচ্ছে। বৈশ্বিক দক্ষিণের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ও বাস্তবধর্মিতা দ্বারাই পরিচালিত।

আমরা বলব, একটি অর্থপূর্ণ বহুমেরু বা মাল্টিপোলার বিশ্ব গঠিত হলে তা বিশ্বশান্তির জন্য ইতিবাচকই হবে। গত এক শতকের অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট, এক বা দুই পরাশক্তিনির্ভর বিশ্ব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য মোটেই সহায়ক নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর গঠিত বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক আইনের কথা যতই বলা হোক, সে ব্যবস্থায় ছড়ি ঘোরানোর একচ্ছত্র অধিকার শুধু পরাশক্তিগুলোর। নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতার জোরে তারাই নিজেদের পছন্দমতো আইন বানাচ্ছে, আইন ভাঙছে। দক্ষিণের দেশগুলো দাবি তুলেছে, নিরাপত্তা পরিষদে তাদেরও ভেটো ক্ষমতা চাই।

পৃথিবী বদলাচ্ছে, পুরোনো শক্তিবলয় ভেঙে পড়ছে। নতুন শক্তিবলয় গড়ে উঠছে। নতুন যে দক্ষিণ, তার ন্যায্য পাওনা চুকিয়ে দেওয়ার সময় আসছে।

বাংলাদেশ কোথায়
অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হলেও ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব কম নয়। জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে দেশটি যেভাবে মস্কো ও ওয়াশিংটনের বৈরিতা মোকাবিলা করছে, তা বেশ লক্ষণীয়। দুই দেশকেই তার প্রয়োজন। রাশিয়া তার দীর্ঘদিনের বন্ধু, আমেরিকা তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারতের মতো সে–ও ইউক্রেন প্রশ্নে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘে ইউক্রেন প্রশ্নে তার অবস্থান সেটাই বলে। পাশাপাশি অনেক দক্ষিণি দেশের মতো সে–ও মস্কো ও ওয়াশিংটনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়িয়ে চীনের দিকে হাত বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত মাথাব্যথা আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত। শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতা বণ্টন প্রভাবিত করার ক্ষমতাও সে রাখে। সে বিবেচনা মাথায় রেখে বাংলাদেশ তার ‘চীনা তাস’ প্রয়োগ করছে। এই নীতির লক্ষ্য, একদিকে চীনের অর্থনৈতিক শক্তি ও কারিগরি দক্ষতার ব্যবহার, অন্যদিকে ভারতকে এ কথা বোঝানো, নয়াদিল্লি ছাড়াও অন্যত্র যাওয়ার রাস্তা তার সামনে খোলা।

গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সরকারি সফরে দিল্লি যাওয়ার ঠিক আগে পিরোজপুরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেন। এটি ছিল চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মিত অষ্টম সেতু। ভাষ্যকার অনির্বাণ ভৌমিকের কথায়, দিল্লি সফরের ঠিক আগে এই উদ্বোধন যে দিল্লির কাছে বাংলাদেশের একটি ‘বার্তা’, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখকঃ
হাসান ফেরদৌস, প্রাবন্ধিক

সূত্রঃ https://www.prothomalo.com/opinion/column/xjj8224mei


Nafees Imtiaz Islam
Deputy Director, IQAC, DIU and
Ph.D. Candidate in International Trade
University of Dhaka

Tel.:  65324 (DSC-IP)
e-mail address:
nafees-research@daffodilvarsity.edu.bd  and
iqac-office@daffodilvarsity.edu.bd