লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ ও শর্ত

Author Topic: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ ও শর্ত  (Read 243 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile
সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান। ঈমানের বিপরীত কুফর। ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা। ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার।

ঈমানই জীবন, কুফর মৃত্যুতুল্য। ঈমান সরল পথ, আর কুফর ভ্রষ্টতার পথ। ঈমানের কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ কালেমার জন্য সৃষ্টিজগতের সৃষ্টি।
এ কালেমার জন্য মানুষ কাফির ও মুমিন—দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সৌভাগ্যবান—তারা জান্নাতি। আর কেউ হতভাগা—তারা জাহান্নামি।
এ কালেমার বাণী প্রচারের জন্য মহান আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার আগে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি, তাদের সবার ওপর আমার এই মর্মে নির্দেশ ছিল যে আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২৫)

‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) মাবুদ (উপাস্য) নেই। আল্লাহ ছাড়া কোনো বস্তু বা সত্তার ইলাহ হওয়ার যোগ্যতা নেই। ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত মহান আল্লাহ।

মহান আল্লাহ পৃথিবীর প্রকৃত মালিক। আকাশ ও পৃথিবী তিনি নিজ ক্ষমতাবলে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির ওপর তাঁর একচ্ছত্র মালিকানা, কর্তৃত্ব ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। আর তা অবিভাজ্য ও অংশীদারহীন। সুতরাং তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনিই (আল্লাহ) সেই সত্তা, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর ইলাহ (উপাস্য)।’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৮৪)

‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দুই রুকন বা স্তম্ভ। অর্থাৎ এই বাক্যের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুই ধরনের অর্থ আছে :

১.  ‘না’ সূচক : আর তা হলো, ‘লা-ইলাহা’। ‘লা’ মানে না বা নেই। ‘ইলাহ’ মানে মাবুদ (উপাস্য/ইবাদতের উপযুক্ত)। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই।

প্রত্যেক পূজনীয় বস্তুকে ‘ইলাহ’ বলা হয়। ইমাম রাগেব ইসফাহানি (রহ.) লিখেছেন, কারো কারো মতে, আল্লাহ শব্দের মূল হলো ‘ইলাহ’। আর আরবের লোকেরা ‘ইলাহ’ শব্দ মাবুদ (যার ইবাদত করা হয়) অর্থে ব্যবহার করে। (আল-মুফরাতাদ ফি গারিবিল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩১, ইলাহ)

সুতরাং ‘লা-ইলাহা’ মানে ইবাদত ও উপাসনায় আল্লাহর কোনো শরিক নেই। ‘লা-ইলাহা’ অংশীদারত্বের সব প্রকারকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয়, সবগুলো বর্জন করা অপরিহার্য করে দেয় ‘লা-ইলাহা’। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এটা এ জন্য যে নিশ্চয়ই আল্লাহই সত্য এবং তার পরিবর্তে তারা যা ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয়ই তিনিই তো সমুচ্চ, সুমহান।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৬২)

২. ‘হ্যাঁ’ সূচক :  আর তা হলো ‘ইল্লাল্লাহ’। ‘ইল্লা’ মানে ছাড়া, ব্যতীত। ‘ইল্লাল্লাহ’ মানে আল্লাহ ছাড়া (আর কোনো ইলাহ নেই)।

সুতরাং এই কালেমার ‘না’ সূচক ‘লা-ইলাহা’ এবং ‘হ্যাঁ’ সূচক ‘ইল্লাল্লাহ’ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা দেয়—একমাত্র ইলাহ মহান আল্লাহ।

তাই ‘ইল্লাল্লাহ’ বান্দার ইবাদতকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে। ইবাদতের যোগ্য একমাত্র আল্লাহ—তা অপরিহার্য করে দেয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৩)

এই পবিত্র কালেমায় যথাযথ বিশ্বাসী হতে হলে সাতটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এসব শর্ত কোরআন-হাদিস থেকে গৃহীত।

শর্তগুলো হলো : ১. ‘ইলম’ অর্থাৎ (কালেমার অর্থ ও দাবি) জানা। ২. ‘ইয়াকিন’ তথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। ৩. ‘ইখলাস’ অর্থাৎ একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধ হওয়া। ৪. ‘সিদক’ তথা সত্যায়ন করা। ৫. ‘মাহাব্বাহ’ তথা ভালোবাসা। ৬. ‘ইনকিয়াদ’ তথা নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন করা। ৭. ‘কবুল’ তথা শর্তহীনভাবে গ্রহণ করা।

শর্তগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

প্রথম শর্ত : এ কালেমার ‘না’ বাচক এবং ‘হ্যাঁ’ বাচক দুটি অংশের অর্থ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা জরুরি।

দ্বিতীয় শর্ত : ইয়াকিন বা দৃঢ় প্রত্যয়। অর্থাৎ এ কালেমার মাধ্যমে যে কথার স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাতে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ থাকতে পারবে না।

তৃতীয় শর্ত : ইখলাস বা নিষ্ঠা। অর্থাৎ অংশীদারত্বমুক্ত হয়ে বিশুদ্ধচিত্তে কালেমার দাবি মেনে নেওয়া। এই শর্ত ব্যক্তিকে শিরক ও রিয়া থেকে মুক্ত রাখবে।

চতুর্থ শর্ত : এই কালেমা পাঠকারীকে সত্যের পরাকাষ্ঠা হতে হবে। অর্থাৎ একই সঙ্গে মুখে ও অন্তরে এই কালেমায় বিশ্বাসী হতে হবে। এই শর্ত তাকে মুনাফিকি আচরণ থেকে বিরত রাখবে।

পঞ্চম শর্ত : ভালোবাসা। এই কালেমাকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ, ধারণ ও লালন করতে হবে এবং মনেপ্রাণে ভালোবাসতে হবে।

ষষ্ঠ শর্ত : আনুগত্য করা। এই কালেমার শর্ত ও দাবি হলো, পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইসলামী শরিয়তের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।

সপ্তম শর্ত : আন্তরিকভাবে এ কালেমা কবুল করা। দ্বিনের কোনো কাজ প্রত্যাখ্যান ও বর্জন থেকে নিজেকে বিরত রাখা। (ফাতহুল মাজিদ, শায়খ আবদুর রহমান বিন হাসান, পৃষ্ঠা ৯১)

কোনো কোনো আলেম উল্লিখিত সাতটি শর্তের সঙ্গে অষ্টম শর্ত যোগ করেছেন, আর তা হচ্ছে, তাগুতের সঙ্গে কুফরি করা। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাগুতের প্রতি কুফরি।

তাগুত হলো, ওই সব বাতিল উপাস্য, আল্লাহকে ছাড়া যাদের উপাসনা করা হয়।

তাগুত শব্দের অর্থ সীমা লঙ্ঘনকারী, দুষ্কৃতির মূল বস্তু, যা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। শয়তান, কল্পিত উপাস্য, যাবতীয় বিভ্রান্তিকর উপায়-উপকরণ তাগুতের অন্তর্ভুক্ত। [আল-কোরআনুল করিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, টীকা নম্বর : ১৭৭ (অবলম্বনে)]

সুতরাং কালেমা পাঠকারী এগুলো বর্জন করবে—এটাই স্বাভাবিক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুত অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ভাঙবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৬)


Source:https://www.bd-pratidin.com/islam/2023/11/18/940351
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34