আল্লাহ তায়ালা মক্কায় তাঁর বান্দা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করেন এবং তাঁর নিজ শহর ও নিজ গোত্র কোরাইশদের মধ্যেই এ দাওয়াতি কাজের সূচনা করতে নির্দেশ দেন। এ কাজের সূচনাতেই যে সব হেদায়েতের প্রয়োজন ছিল তা তাঁকে প্রদান করা হয় এবং সেগুলো ছিলো প্রধানত তিন প্রকারের বিষয়বস্তু সমন্বিত। যথা-
এক. এ বিরাট গুরুদায়িত্ব পালন করার জন্যে নবি নিজেকে নিজে কিভাবে তৈরি করবেন এবং তিনি কোন পন্থা ও পদ্ধতিতে কাজ করবেন সেসব বিষয়ে তাঁকে শিক্ষা দেয়া হয়।
দুই. প্রকৃত তত্ত্ব ও রহস্য সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য এবং নিগূঢ় সত্য সম্পর্কে সমাজে সাধারণভাবে প্রচলিত ভুল ধারণাসমূহের প্রতিবাদ করা হয়, যেসব ভুল ধারণার কারণে তাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়েছিলো।
তিন. প্রকৃত জীবন-যাপন পন্থার প্রতি আহ্বান এবং খোদায়ী হেদায়াতের সেসব মৌলিক চরিত্র-নীতির বিশ্লেষণ, যেগুলোর অনুসরণে বিশ্বামানবতার চিরন্তন কল্যাণ ও সৌভাগ্য নিহিত রয়েছে।
দাওয়াতের সূচনা হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ের এসব পথ-নির্দেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংক্ষিপ্ত বাণীতে সমন্বিত ছিলো স্বচ্ছ ঝরঝরা-অত্যন্ত মিষ্টি মধুর, অতিশয় প্রভাব বিস্তারকারী এবং যাদের লক্ষ্য করে তা বলা হচ্ছিল-তাদের রুচি অনুযায়ী উন্নত সাহিত্যিক ভুষণে সজ্জিত। ফলে তা শ্রোতাদের হৃদয়-মনে তীর শলাকার মতো বিদ্ধ হতো; সুমধুর ভাব সামঞ্জস্যের কারণে লোকেরা আত্মহারা হয়ে তা উচ্চারণ ও আবৃত্তি করতে শুরু করতো।
সর্বোপরি তাতে স্থানীয় ভাবধারার বিশেষ প্রভাব বিদ্যমান ছিলো। যদিও আলোচনা করা হতো চিরন্তন সত্যের কিন্তু তার সত্যতা প্রমাণের জন্যে যুক্তি-প্রমাণ, সাক্ষ্য ও উদাহরণ গৃহীত হতো নিকটস্থ পারিপার্শ্বিক সমাজ থেকেই, যে সবের সাথে শ্রোতামণ্ডলীর ছিলো নিগূঢ় পরিচিতি। তাদেরই ইতিহাস, তাদের জাতীয় ঐতিহ্য, তাদেরই দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণাধীন নিদর্শনসমূহ এবং তাদেরই আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিক চরিত্র এবং সামজিক ক্রটিবিচ্যুতি সম্পর্কে তাতে আলোচনা হতো, যাতে করে তারা এর দ্বারা তীব্রভাবে প্রভাবিত হয়।
দাওয়াতের এ প্রাথমিক অধ্যায় প্রায় তিন চার বছর পযন্ত দীর্ঘায়িত হয়। (এর মধ্যে তিন বছর ছিলো গোপন দাওয়াতের পর্যায়)। এ অধ্যায় নবি করিমের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাওয়াতের প্রতিক্রিয়া তিন ভাবে প্রকাশিত হয়ঃ
১) কতিপয় সৎ ও সত্যপন্থী লোক এ দাওয়াত কবুল করে মুসলিম উম্মায় সংঘবদ্ধ হবার জন্যে প্রস্তুত হয়ে যায়।
২) একটা বিরাট সংখ্যক লোক মূর্খতা কিংবা স্বার্থপরতা অথবা বংশানুক্রমিক প্রচলিত প্রথার অন্ধ-প্রেমে মশগুল হয়ে তার বিরোধিতা করতে বদ্ধপরিকর হয়।
৩) কুরাইশ ও মক্কার পরিসীমা অতিক্রম করে এ নতুন দাওয়াতের আওয়াজ অপেক্ষাকৃত বিশাল ক্ষেত্রে পদার্পণ করে।
এরপর থেকেই আরম্ভ হয় এ দাওয়াতের দ্বিতীয় অধ্যায়। এ অধ্যায়ে ইসলামি দাওয়াতের সাথে প্রাচীন জাহেলিয়্যাতের এক তীব্র প্রাণান্তকর দ্বন্দ্বের সূচনা হয়, যার জের আট ন’বছর কাল পর্যন্ত চলতে থাকে। শুধু মক্কাতে নয়, শুধু কুরাইশ গোত্রে নয়, আরবের অধিকাংশ অঞ্চলেই প্রাচীন জাহেলিয়াতের সমর্থকরা এ দাওয়াতকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এ দাওয়াতকে নিস্তেজ ও নিস্তনাবুদ করে দেবার জন্যে তারা সর্বোতভাবে চেষ্টা করতে শুরু করে। মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা, অপবাদ, দোষারোপ, সন্দেহ-সংশয় ও নানাবিধ কুট প্রশ্নের তীব্র আক্রমণ চালাতে থাকে। জনগণের অন্তরে বিবিধ-প্রকার প্রচারণা ও প্ররোচনা সৃষ্টি করতে থাকে। অপরিচিত লোকদেরকে নবি করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর কথা শোনা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে। ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর চরম পাশবিক অত্যাচার নির্যাতন চালাতে থাকে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁদের সাথে যাবতীয় সর্ম্পক ছিন্ন করে। এভাবে তাঁদের ওপর এতো অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিষ্পেষণ চালানো হয় যে, তাদের অনেক লোকই নিজেদের ঘর-বাড়ী পরিত্যাগ করে দু’দুবার হাবশায় হিজরত করতে বাধ্য হয় এবং শেষ পর্যন্ত তৃতীয়বার তাঁদের সকলকেই মদিনায় হিজরত করতে হয়। কিন্তু এ তীব্র বিরোধিতা ও ক্রমবর্ধমান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এ দাওয়াত ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হতে থাকে। মক্কায় এমন কোনো বংশ ও পরিবার ছিল না, যেখান থেকে অন্তত এক ব্যক্তিও ইসলাম গ্রহণ করেনি। ইসলামের অধিকাংশ দুশমনের কঠিন দুশমনির কারণ এই ছিলো যে, তাদের নিজেদেরই ভাই, ভাতিজা, পুত্র, জামাই, কন্যা, বোন এবং ভগ্নিপতির ইসলামি দাওয়াত শুধু কবুলই করেনি; বরং তারা ইসলামের আত্মোৎসর্গী, সাহায্যকারী হয়ে গিয়েছিলো। তাদের নিজেদের কলিজার টুকরো সন্তানরাই তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী হয়ে উঠেছিলো। সর্বোপরি মজার ব্যাপার ছিলো যে, যারাই প্রাচীন জাহেলিয়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এ নতুন মিশনে যোগদান করছিলো, তারা জাহেলি সমাজেও সর্বাপেক্ষা উত্তম লোক হিসাবে স্বীকৃত ছিলো। আর এ আন্দোলনে যোগদানের ফলে তারা এত বেশি সৎ ও সত্যপন্হী এবং পবিত্র নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয়ে উঠেছিলো যে, এ বিপ্লবী কাজটাই বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে এ আন্দোলনের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশিষ্টতা সুস্পষ্ট করে তুললো। এ সুদীর্ঘ ও কঠিন দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম চলাকালে আল্লাহ তায়ালা সময়, সুযোগ ও প্রয়োজনমতো তাঁর নবির প্রতি এমন সব আবেগময়ী ভাষণ নাজিল করতে থাকেন, যেগুলোতে বর্তমান ছিলো দরিয়ার উচ্ছ্বসিত শ্রোতবেগ, সয়লাবের দুর্নিবার শক্তি আর আগুনের তীক্ষ্ম তেজস্বীতা। এসব ভাষণে একদিকে ঈমানদারদেরকে তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের কথা বলে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে জামাতবদ্ধ জিন্দেগির চেতনা পয়দা করা হয় এবং তাদেরকে তাকওয়া, চারিত্রিক মাহাত্ম্য, পবিত্র স্বভাব ও পবিত্র জীবন যাপনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সত্য দীন প্রচারের কর্মপন্থা তাদেরকে শিখিয়ে দেয়া হয়। সাফল্যের ওয়াদা ও জান্নাতের সুসংবাদ দ্বারা তাদের সাহস যোগানো হয়। ধৈর্য্য, দৃঢ়তা ও উচ্চ সাহসিকতার সাথে আল্লাহর পথে জেহাদ ও সংগ্রাম করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করা হয় । ত্যাগ, কোরবানি ও আত্মোৎসর্গের এমন দুর্বার জজবা তাদের মধ্যে সৃষ্টি করে দেয়া হয় যে, যাবতীয় বিপদ মুসিবত ও বিরুদ্ধতার গগণচুম্বী তরঙ্গমালার সঙ্গে মুকাবিলা করার জন্যে তারা তৈরি হয়ে যায়। অন্যদিকে বিরুদ্ধবাদী, সত্যবিমুখ ও গাফলতের ঘুমোঘোরে নিমজ্জিত লোকদের সেসব জাতির ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে সতর্ক করা হয়, যাদের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের ভালভাবে জনা ছিলো। দিনরাত যেসব ধ্বংসাবশেষ অঞ্চলের উপর দিয়ে তারা যাতায়াত করতো সেসব নিদর্শনের উল্লেখ করে তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয়। আসমান ও জমিনের যেসব সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী দিনরাত চোখের সামনে প্রতিভাত হতো, যেগুলো তাদের জিন্দেগিতে তারা প্রতিটি মুহূর্তে অবলোকন করতো ও অনুভব করতো, সেসব নিদর্শনাবলী দ্বারাই তৌহিদ ও আখিরাতের প্রমাণ পেশ করা হয়। শিরক, স্বেচ্ছাচারিতা, পরকালের প্রতি অস্বীকৃতি এবং পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের ভ্রান্তি মন-মগজে প্রভাব বিস্তারকারী সুস্পষ্ট দলিল ও যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করা হয়। অতঃপর তাদের যাবতীয় সন্দেহ সংশয় বিদূরিত করা হয়। তাদের প্রতিটি প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত জবাব দেয়া হয়। যেসব জটিল সমস্যায় মন জর্জরিত ছিল অথবা অন্যদের মনকে সংশায়িত করছিল সেগুলোর সুস্পষ্ট সমাধান পেশ করা হয়। চতুর্দিক থেকে অন্দ জাহেলিয়াতকে এমনভাবে অবরুদ্ধ করা হয় যে, বুদ্ধি ও বিবেকের জগতে অবস্থানের জন্যে তার বিন্দু পরিমান স্থান থাকল না। এর সাথে তাদেরকে আল্লাহর গজব ও অভিশাপ, কিয়ামতের ভয়ঙ্কর রূপ এবং জাহান্নামের কঠিন আযাব সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করা হয়। তাদের খারাপ চরিত্র, ভ্রান্ত জীবন-যাপন পদ্ধতি, জাহেলী রসম রেওয়ায, সত্য বিরোধিতা এবং মুমিনদেরকে নির্যাতনের কারণে তাদেরকে ভৎসনা ও তিরস্কার করা হয়। নৈতিক চরিত্র ও সমাজব্যবস্থার যেসব বড় বড় মূলনীতি আল্লাহর মনোনীত সত্যভিত্তিক সভ্যতার ভিত্তি সেগুলো বিস্তারিতভাবে তাদের সামনে পেশ করে দেয়া হয়।
এ অধ্যয়টি এককভাবে বিভিন্ন মনজিল দ্বারা সমন্বিত, যার প্রতিটি মনজিলেই দাওয়াতি কাজ অত্যন্ত ব্যাপক ও প্রশস্ত হয়ে উঠে। চেষ্টা সাধনা এবং বিরুদ্ধতাও তীব্রতর হতে থাকে। আন্দোলন বিভিন্ন মতাবলম্বী ও পরস্পর বিরোধী কর্মতৎপর অসংখ্য দল উপদলের সম্মুখীন হয়। তদনুযায়ী আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বাণীসমূহের বিষয় বৈচিত্রও ব্যাপকতর হতে থাকে। ইসলামি দাওয়াতের এ বিরাট দায়িত্ব পালনের জন্যে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে বিস্তারিত পথ-নির্দেশ প্রদান করা হয় তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সহজেই বুঝতে পারা যায় যে, মক্কার ঘোর বিরোধিতার যুগে কোন মহান চারিত্রিক শক্তি সম্মুখে অগ্রসর হবার পথ পরিষ্কার করে এবং কোন প্রভাবশালী এ আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী লোকদেরকে সকল শক্তির সাথে টক্কর লাগাতে এবং সকল মুসিবত অকাতরে সহ্য করতে উদ্বুদ্ধ করে।
নিচে এক একটি করে সেসব পথ নির্দেশ আমরা বর্ণনা করছি।
সত্যপথে ডাকতে প্রয়োজন ঠাণ্ডা মাথা ও পরিবেশগত উত্তমপন্থা
‘হে মুহাম্মদ! আমার বান্দাদের বলে দাও, তারা যেনো সর্বোত্তম ভাবে কথা বলে। আসলে শয়তান তাদের মধ্যে ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। প্রকৃতপক্ষে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। তোমাদের রব তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে সর্বাধিক জানেন । তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অনুগ্রহ করতে পারেন। আর তিনি চাইলে তোমাদের আযাবও দিতে পারেন। হে নবী, আমরা তোমাকে লোকদের ওপর উকিল বানিয়ে পাঠাইনি’। (সুরা বনি ইসরাঈল :৫৩-৫৪)
অর্থাৎ-ঈমানদার লোকেরা কাফের মুশরিক এবং তাদের দ্বীনের বিরুদ্ধবাদীদের সাথে আলোচনা ও কথা বলার সময় মিথ্যা, অতিরঞ্জিত ও দ্রুত কথা বলবে না। বিরুদ্ধবাদীরা যতই অন্যায় অপসন্দনীয় কথা বলুক না কেনো মুসলমানদেরকে কোনো অবস্থাতেই কোনো না-হক ও অন্যায় কথা মুখ দিয়ে বের করা যাবে না এবং রাগের মাথায় কোনো বাজে কথার প্রতি উত্তরে বাজে কথা বলা যাবে না। তাদের ঠাণ্ডা মাথায় পরিবেশ অনুযায়ী তুলাদণ্ডে মেপে কথা বলতে হবে। তাদের প্রতিটি কথা ন্যায় ও সত্য এবং তাদের মহান দাওয়াতের মর্যাদাসূচক।
কখনো যদি বিরুদ্ধবাদীদের কথার জবাব দিতে গিয়ে তোমাদের মধ্যে ক্রোধাগ্নি প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে বলে অনুভব করো এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করো- তখনই বুঝে নেবে যে, এ হচ্ছে শয়তানের কাজ। সে তোমাকে উস্কিয়ে দিচ্ছে যেনো দাওয়াতে দ্বীনের কাজটা বিনষ্ট হয়ে যায়। সে চায় তোমরাও তোমাদের বিরুদ্ধবাদীদের মত সংস্কার সংশোধনের কাজ ত্যাগ করে সেরূপ ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত হয়ে যাও যেরূপ ঝগড়া ফাসাদে সে গোটা মানব জাতিকে লিপ্ত রাখতে চায়।
ঈমানদার লোকদের মুখ দিয়ে এমন দাবি কখনো বেরোতে পারবে না যে আমরা বেহেশতি আর অমুক লোক বা লোকেরা দোযখি। এ কাজের ফায়সালা তো আল্লাহর হাতে। স্বয়ং নবির কাজও দাওয়াত দান পর্যন্ত সীমিত। লোকদের ভাগ্যের চাবিকাঠি তাঁর হাতে অর্পণ করা হয়নি যে, তিনি কারো জন্যে রহমতের আর কারো জন্যে আযাবের ফায়সালা করে দেবেন।
দাওয়াত দানকারীর মর্যাদা ও দায়িত্ব
‘দেখো তোমাদের কাছে তোমাদের রবের নিকট থেকে অন্তর্দৃষ্টির আলো এসে পৌঁছেছে। এমন যে লোক নিজের দৃষ্টি শক্তির সাহায্যে কাজ করবে সে নিজেরই কল্যাণ সাধন করবে। যে অন্ধত্ব গ্রহণ করবে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমি তোমাদের ওপর পাহারাদার নই’। (সুরা আনয়াম-১০৪)
‘আমি তোমাদের উপর পাহারাদার নই’ মানে আমার দায়িত্ব তো শুধু এতটুকু যে, তোমাদের কাছে সে রৌশনী পেশ করে দেবো যা তোমাদের পরওয়ারদেগারের নিকট থেকে এসেছে। অতঃপর চোখ খুলে দেখা না দেখা তোমাদের কাজ। যারা চোখ বন্ধ করে রাখবে জোর পূর্বক তাদের চোখ খুলে দেবো এবং তারা যা দেখবে না তাদেরকে তা দেখিয়ে ছাড়বো-এমন দায়িত্ব আমাকে দেয় হয়নি।
‘হে নবী! আপনার রবের নিকট থেকে অবতীর্ণ অহীর অনুসরণ করুন। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। মুশরিকদের জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না। যদি আল্লাহর ইচ্ছা হতো (এরা শিরক না করার) তবে এরা শিরক করতো না। আমি আপনাকে এদের ওপর পাহারাদার নিযুক্ত করিনি। আপনি তাদের ওপর কোনো হাবিলদারও নন’। (সুরা আনয়াম, ১০৬-১০৭।)
এ কথার তাৎপর্য এই যে, আপনাকে দায়ি ও প্রচারক বানানো হয়েছে, কোতোয়াল বানানো হয়নি। তাদের পিছে লেগে থাকার কোনো প্রয়োজন আপনার নেই। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে লোকদের সামনে এ রৌশনি আপনি পেশ করে দেবেন, সাধ্যানুযায়ী সত্য প্রকাশের হক আদায় করতে কোনো ক্রটি করবেন না। অতঃপর কেউ যদি এ সত্য কবুল করতে না চায়-তবে তা না করুক। লোকদের সত্যপন্থী বানিয়ে ছাড়ার দায়িত্ব আপনাকে অর্পণ করা হয়নি। আর এমন কথা আপনার দায়িত্ব ও জবাবদিহির অন্তর্ভুক্তও নয় যে, আপনার নবুওয়াতের সীমানায় কোনো বাতিলপন্থীর অস্তিত্ব থাকতে পারবে না। সুতরাং এ চিন্তায় আপনার মনকে পেরেশান করে তুলবেন না যে, অন্ধ লোকদেরকে কী করে দৃষ্টিশক্তি দেয়া যাবে যারা চোখ খুলে দেখতে চায় না-তাদেরকে কি করে দেখানো যাবে। যদি আল্লাহর ইচ্ছাই এ রকম হতো যে দুনিয়ায় কোনো বাতিলপন্থীর অস্তিত্ব থাকতে পারবে না তবে একাজ আপনার দ্বারা করানো আল্লাহর কি প্রয়োজন ছিল? তাঁর একটা ইশারাই কি সমস্ত মানুষকে সত্যপন্থী বানাতে পারতো না? কিন্তু শুরু থেকেই সেখানে উদ্দেশ্য এরূপ নয়। উদ্দেশ্য তো হচ্ছে মানুষকে হক ও বাতিল নির্বাচনের আজাদি দেয়া হবে। অতঃপর হকের রৌশনি তার সামনে পেশ করে তাকে পরীক্ষা করা হবে এ দুয়ের মাঝে সে কোনটা নির্বাচন করে। তাই আপনার জন্যে সঠিক কর্মপন্থা হচ্ছে যে রৌশনি আপনাকে দেখিয়ে দেয়া হলো, তার আলোকে আপনি সঠিক সোজা পথে চলতে থাকুন এবং যারা এ দাওয়াত কবুল করে নেবে তাদেরকে বুকে মিলিয়ে নিন এবং কখনো তাদের সঙ্গদান ত্যাগ করবেন না। পার্থিব দৃষ্টিতে তারা যতই নগণ্য মূল্যহীন হোক না কেনো। আর যারা এ দাওয়াত কবুল করবে না তাদের পিছে লেগে থাকবেন না। যে অশুভ পর