"সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার প্রয়োজনীয়তা ও করণীয়"
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তবে সেটা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য ভাবলে ভুল হবে। সুখী হওয়ার জন্য বা ভালো থাকার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যও শারীরিক স্বাস্থ্যের মত ঠিক সমান গুরুত্বপূর্ণ। মন ও শরীর একে অন্যের পরিপূরক। শরীর ভাল না থাকলে যেমন মন ভাল থাকে না, তেমনি মনের অসুখ হলেও সেটা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কেবল মনের অসুখই নয়, মন-মেজাজ ভালো না থাকলে সেটা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, বিশ্রামে প্রভাব ফেলে। তার ফলস্বরূপ আমাদের শরীর ও ভাল যায় না। তাই মনের যত্ন নেয়া খুবই প্রয়োজন।
প্রত্যেকের জীবনেই কোনো না কোনো সময় বিভিন্নরকম উঠা-নামা আসে, কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তখন আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। যার ফলে আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হয়। এ প্রভাব ঠেকাতে, বা এসব কঠিন সময়গুলো সঠিক উপায়ে মোকাবিলা করতে আপনি একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। একজন এক্সপার্ট আপনাকে তার সাইকোলজিক্যাল স্কিলস ও টেকনিক কাজে লাগিয়ে আপনার ভেতরের শক্তিগুলোকে জাগিয়ে তুলতে সহযোগিতা করবেন। তাতে করে আপনি আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যতে মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন এবং আপনার ভেতরের সুপ্ত শক্তিগুলোক সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনে সফল হতে পারবেন।
তাই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে কখনো দ্বিধাবোধ করবেন না। কারণ আপনার মানসিক স্বাস্থ্য আপনার জন্য যেমন গুরত্বপূর্ণ , তেমনি আপনার আপনজনদের জন্যেও গুরত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা না নিলে সময়ের সাথে সাথে আপাতদৃষ্টিতে আপনার মন স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও ভেতরে ভেতরে এর রেশ থেকে যায়। যা পরবর্তীতে আপনার সম্পর্কে, কাজে, এবং দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ মোকাবিলায় বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে। তাই যেকোনো প্রকার মানসিক অসুবিধার সম্মুখীন হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হোন। মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের একটি সার্বজনীন মানবাধিকার।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে একটি অত্যাধুনিক “সাইকোলজিক্যাল সার্ভিস সেন্টার” রয়েছে যেখানে কর্মরত সাইকোলজিস্টরা কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি দিয়ে থাকেন যা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রী। এবং এই সেন্টারটির আন্ডারে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু ট্রেনিং ও কর্মশালার আয়োজন করা হয় যাতে অংশ নিয়ে আপনারা আপনাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়ে জীবনটা আরো সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।
এছাড়া আপনারা দৈনন্দিন জীবনে যেসকল অভ্যাসগুলো গড়ে তোলে আপনি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পারেন, সেগুলো হলঃ
মন স্থির করতে মেডিটেশনপ্রতিদিন কয়েক মিনিট মনোযোগের সঙ্গে মেডিটেশন করতে হবে। এই অভ্যাস নিজেকে নমনীয় রাখবে, মানসিক চাপ কমাবে এবং আত্মসচেতনতা বোধ বাড়িয়ে দেবে।
রুটিন মেনে চলাদৈনিক কাজের একটি নিয়ম দাঁড় করান। সময়ের কাজ সময়ে করুন। নিয়ম মেনে খাওয়া, ঘুম থেকে জাগা বা বিছানায় যাওয়ার বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দরকারি। যাঁরা নিয়ম মেনে চলেন, তাঁদের মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকার হার বেশি বলেই গবেষণায় দেখা গেছে।
ব্যায়াম করুনমানসিকভাবে ভালো থাকতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। শরীরকে সক্রিয় রাখতে সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে সুখ হরমোন নিঃসৃত হয়। মানসিকভাবে হালকা বোধ করতে বা মন ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের চর্চা করে যান।
পুষ্টিকর খাবার খানপুষ্টিমানসম্পন্ন ও সুষম খাবার খাবেন। খাবারের তালিকায় বেশি করে ফল আর সবজি রাখুন। মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত রাখে এমন খাবার, বিশেষ করে বাদাম কিংবা পালংশাকের মতো খাবার খান।
যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করুনএখনকার সময় মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন কিংবা মনোযোগ কেড়ে নেওয়া নানা যন্ত্র রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যতটা সম্ভব যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোনসহ যন্ত্র ব্যবহার বাদ দিন। এমনকি দিনের বেলাতেও যন্ত্র যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
সক্রিয় থাকুনসংবাদপত্র পড়ে, পাজল মেলানো, ক্রসওয়ার্ড সমাধান করার মতো নানা কাজে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখুন। মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হবে, এমনকি শেখার দক্ষতা বাড়বে।
নিজেকে প্রকাশছবি আঁকা, লেখা অথবা গানের মধ্যে দিয়ে নিজের আবেগ প্রকাশ করতে হবে। এই অভ্যাস এক রকম থেরাপির মত কাজ করে।
সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হনযদি মনের দিক থেকে নিজেকে বেসামাল মনে হয়, তাহলে সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে দেরি করা যাবে না। সুস্থ থাকতে কাউন্সেলিং, থেরাপি খুবই কার্যকর।
লেখকঃ রাকিবুল হাসান সৌরভ
সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।