চোখের সিয়াম

Author Topic: চোখের সিয়াম  (Read 208 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile
চোখের সিয়াম
« on: March 21, 2024, 01:15:01 PM »
চোখের সিয়াম হচ্ছে কু-দৃষ্টি ও যত্রতত্র দৃষ্টিপাত থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন—

“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।” [1]

“আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।” [2]

আয়াতদ্বয় থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, চক্ষু মানুষের অন্তর পরিচালনা করে এবং এই চক্ষু-ই হচ্ছে আত্মার প্রবেশদ্বার।

একবার নবীজি (সাঃ) আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন—

‘হে আলী, কোনাে নারীকে একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা, প্রথমবার অনিচ্ছায় দৃষ্টি পড়ে গেছে বিধায় সমস্যা নেই; কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা জায়িয হবে না।‘ [3]
দৃষ্টির হিফাযত না করার দশটি ক্ষতি রয়েছে—

এক. কোনাে কাজে মন বসে না। সব সময় একপ্রকার অস্বস্তি অনুভব হয়। অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লােকও স্থিরতা ও কাজের মনােবল হারায়।

দুই. কাউকে দেখার পর তাকে না পাওয়ার বেদনা হৃদয়কে অনবরত দংশন করতে থাকে। এই হতাশা ও অতৃপ্তি তখন দু-চোখের ঘুম কেড়ে নেয়।

তিন. সালাত, সিয়াম কিংবা কুরআন তিলাওয়াত—কোনাে কিছুতেই আত্মতৃপ্তি আসে না। যিকিরে আত্মপ্রশান্তি অনুভব হয় না। এক কথায়, ইবাদাতের মাঝে যে ঈমানী স্বাদ, তা সম্পূর্ণ মাটি হয়ে যায়।

চার. এর দ্বারা বড় বড় গুনাহের সূত্রপাত হয়। অশ্লীলতা ও ব্যভিচারসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিও নেশা ও মাদকের অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায়। ধর্ষণ, হত্যা ও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সালাফদের কেউ একজন বলেন, আমি পবিত্র কুরআনের হাফিয ছিলাম। একবার কোনাে এক নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করি। ফলে চল্লিশ বৎসরে উপনীত হওয়ার পর আমি কুরআন ভুলে যাই। (আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন)

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক উপকারিতা হচ্ছে, অন্তরে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভূত হতে থাকে।

সালাফগণ বলেন, দৃষ্টি হচ্ছে একজন কমান্ডারের মতাে; যখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, মুহূর্তে শিকার করে আনবে; কিন্তু যখন তাকে আটকে রাখা হবে, সে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য হবে। দৃষ্টিকে উন্মুক্তভাবে ছেড়ে দিলে অন্তরের দূষণ অনিবার্য। সালাফগণ আরও বলেন, যদি তুমি দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করাে, তবে সে তােমাকে লাঞ্ছিত করবে। যখনই তাকে বন্ধনমুক্ত করবে, সে তােমাকে ভােগান্তিতে ফেলবে ইহকালে কিংবা পরকালে।

শাহ কিরমানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে-ব্যক্তি চক্ষুকে অবনত রাখবে, অন্তরকে তাকওয়ায় সুসজ্জিত করবে, চাল-চলন ও বেশভূষায় সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করবে—সে অবশ্যই আল্লাহপ্রদত্ত ‘অন্তর্দৃষ্টি’লাভে ধন্য হবে। অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন—

“নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী।” [4]
দৃষ্টির হিফাযত করার পাঁচটি সুফল রয়েছে—

এক.মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর আনুগত্যের গুণ অর্জিত হয়। আর এটাই দুনিয়া। ও আখিরাতে সফলতার একমাত্র পুঁজি।

দুই. অন্তর গুনাহমুক্ত থাকে, চিত্ত প্রফুল্ল থাকে এবং সর্বক্ষণ অন্তরে একপ্রকার তৃপ্তি ও আত্মপ্রশান্তি বিরাজ করে।

তিন. যাবতীয় ফিতনা ও জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

চার. আল্লাহর পক্ষ হতে ইলম, মারিফাত ও তাকওয়া লাভের পাশাপাশি সৎকাজের তাওফীক নসীব হয়।

পাঁচ. সত্যবাদী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য ও অনুগ্রহলাভের উপায় এটি। এর মাধ্যমে তাদের অন্তরজগত আরও আলােকিত হয়।

যখন রামাদান মাস আমাদের দুআরে কড়া নাড়ে তখন আমাদের উচিত আপন আপন চক্ষুর হিফাযত করা। তাকে গুনাহমুক্ত রাখা। আর এটিই হচ্ছে ‘চোখের সিয়াম’। সিয়াম পালনার্থে ক্ষুধার্ত থাকার ফলে চোখের অনেক উপকার হয়। যেমন—এক. চোখের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুই. অসৎ মনােবাসনা ও অপাত্রে দৃষ্টির কু-চাহিদা লােপ পায়।

নির্বোধ লােকেরা রাস্তায় চলার সময় এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করে। ফলে তারা শয়তানের খেলার বস্তু ও ক্রীড়নকে পরিণত হয়। শয়তান তাদের নানান গুনাহ ও অপরাধকর্মে লিপ্ত করে।

অনেকেই আছে যারা বাহ্যিকভাবে সিয়াম পালন করে, কিন্তু চক্ষু নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে তাদের কল্প-জগতে হরদম অপকর্মের চিত্র ভাসতে থাকে।

প্রিয় ভাইয়েরা, আসুন আমরা সিয়াম পালনের পাশাপাশি নিজের আত্মা ও চক্ষুকেও গুনাহমুক্ত রাখি।

মহান আল্লাহ বলেন—

“এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদের দেবেন জান্নাত ও রেশমী পােশাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। তারা সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।” [5]

শান্তি বর্ষিত হােক তার প্রতি—যে সিয়াম অবস্থায় একমাত্র রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের দৃষ্টির হিফাযত করে।

Source:https://quraneralo.net/coker-siam/
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34