বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান জরুরি

Author Topic: বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান জরুরি  (Read 1316 times)

Offline Imrul Hasan Tusher

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 160
  • Test
    • View Profile
    • Looking for a partner for an unforgettable night?
বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান জরুরি

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আটটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এ জেলাগুলোর প্রায় ৫০টি উপজেলার ১৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২ লাখের বেশি মানুষ রয়েছে পানিবন্দি অবস্থায়। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় সবাইকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা এবং সাধারণ মানুষ বন্যাকবলিতদের রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

যদিও বন্যার প্রাদুর্ভাবের তুলনায় সাহায্যের পরিমাণ কম, তবু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সাহায্যের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বন্যায় মানুষের কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, গরু-ছাগল ও ফসল পানিতে ভেসে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, যা খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। এ অবস্থায় বন্যার ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশের উচিত একটি স্থায়ী সমাধান বের করা।

এ বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও সাধারণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমতাবস্থায় সাহায্যের পাশাপাশি বন্যার কারণ ও স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে বের করা অতীব জরুরি।

অন্যদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজ্যটির ইতিহাসেও এটি ভয়াবহ বন্যা। এ পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে ত্রিপুরার বন্যার পানি উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এই উজানের পানি এবং বাংলাদেশের টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো প্লাবিত হয়েছে। সংবাদমাধ্যম মারফত জানা যায়, ত্রিপুরায় পানি হাওড়া নদী দিয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়, ধলাই নদী দিয়ে মৌলভীবাজারে, মুহুরী নদী দিয়ে ফেনীতে এবং খোয়াই নদী দিয়ে সিলেটে প্রবেশ করেছে। সংবাদমাধ্যম থেকে আরও জানা যাচ্ছে, বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এমতাবস্থায় যদি বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাঁধটি খোলা থাকে, তাহলে বাংলাদেশে বন্যার প্রাদুর্ভাব আরও বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এতে মানুষের পাশাপাশি কৃষি, পশুপাখি ও প্রাকৃতিক সম্পদ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। তাছাড়া মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বাড়ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি পেলে ২০৭০ সাল থেকে ২০৯৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নদীপ্রবাহ ১৬ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশ বাড়তে পারে।

প্রতিবছর বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি। তাছাড়া দেশের জনগণের অর্ধেকেরও বেশি বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনিয়মিত বৃষ্টিপাতে এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা ও হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়ায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বন্যার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে ঘনঘন বন্যা হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এ দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ মিটারের নিচে অবস্থিত। আবার ১০ শতাংশ এলাকা হৃদ ও নদী দ্বারা বেষ্টিত। তাছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহে ঘনঘন বৃষ্টিপাত ও ঝড় পরিলক্ষিত হয়। নদী প্রবাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে দেশে প্রতিনিয়ত বন্যার প্রাদুর্ভাব বেড়েই যাচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে প্রায় ৯০৭টি নদী রয়েছে। অন্যদিকে ৫৭টি ট্রান্সবাউন্ডারি নদী আছে। এর মধ্যে ৫৪টি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাকি তিনটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মিয়ানমার থেকে। ফলে উজানের দেশ ভারত থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাতের পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নদী হলো পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা। যখন উভয় দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন এই নদীগুলোর পানির প্রবাহ বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এই ব্যাপক বন্যায় দেশের ৫৫-৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে টিপাইমুখ, ফারাক্কা ও তিস্তা বাঁধ রয়েছে। এই বাঁধগুলো দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। শীতকালে বাঁধগুলো বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের নদীগুলোতে পানির স্বল্পতা দেখা যায়। ফলে খরায় কৃষি ফসল ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে বর্ষাকালে বাঁধগুলো খুলে দেওয়ায় প্রচুর পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে উজানের দেশ ভারতের পানির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের পানি যোগ হয়ে বাংলাদেশে বন্যার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।

বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তনে বন্যার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া উজানের দেশ ভারতের অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নগরায়ণ ও অবকাঠামোর উন্নয়নে বর্ষা মৌসুমে পানির নিষ্কাশন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। ফলে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বন্যার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, একবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বন্যার প্রকোপ বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর তীর ভেঙে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যায় বর্তমানে ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার মানুষ সবচেয়ে বেশি পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। প্রথমত, মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসাই মূল লক্ষ্য। বন্যা বাংলাদেশের একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো আশার আলো মেলেনি।

বন্যায় পানিদূষণ, বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পশুপাখি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘনঘন বন্যার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষার জন্য ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, ডেল্টা প্ল্যানের আলোকে প্রকল্প গ্রহণ, বন্যাদুর্গত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো, আগাম সতর্কবার্তা প্রদান, বন্যা-পরবর্তী সময়ে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য বীজ ও চারা সরবরাহ, উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন, খাদ্যসামগ্রী এবং চিকিৎসাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, বন্যা প্রতিবছর হবে; কিন্তু বন্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াও উজানের দেশ ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টনে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই।

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম : অধ্যাপক, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

Source: https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/841506/%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF
Imrul Hasan Tusher
Senior Administrative Officer
Office of the Chairman, BoT
Cell: 01847334718
Phone: +8809617901233 (Ext: 4013)
cmoffice2@daffodilvarsity.edu.bd
Daffodil International University