দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করলে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসা একেবারে স্বাভাবিক, এবং এমন পরিস্থিতিতে ঘুম আসাও খুব সাধারণ। যখন আপনি গভীর মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করছেন, তখন কখনও কখনও আপনার শরীর বা মন বিশ্রামের জন্য অনুরোধ করে। তবে চিন্তা করবেন না—আপনি যদি পড়াশোনার সময় ঘুমিয়ে পড়তে থাকেন, তবে কিছু কার্যকরী কৌশল ব্যবহার করে আপনি ঘুম কাটিয়ে আরও বেশি মনোযোগী এবং উৎপাদনশীল হতে পারেন। আসুন, দেখে নিই কিভাবে পড়াশোনার সময় ঘুম আসলে তা কাটিয়ে উঠবেন।
১. ছোট বিরতি নিন
ঘুম আসা প্রতিরোধ করার অন্যতম কার্যকরী উপায় হল ছোট ছোট বিরতি নেয়া। পোমোডোরো টেকনিক একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি, যেখানে আপনি ২৫ মিনিট পড়াশোনা করবেন এবং তারপর ৫ মিনিট বিরতি নিবেন। এই ছোট বিরতিগুলি আপনার মস্তিষ্ককে বিশ্রাম নিতে এবং পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে, ফলে ক্লান্তি অনেক কমে যায়। এই বিরতিতে আপনি শরীরচর্চা করতে, হাঁটাহাঁটি করতে বা শুধু একটু বিশ্রাম নিতে পারেন।
২. পরিবেশ পরিবর্তন করুন
আপনার পড়াশোনার পরিবেশ বড় ভূমিকা রাখে মনোযোগ বজায় রাখতে। যদি আপনি অন্ধকার বা আরামদায়ক জায়গায় পড়াশোনা করেন, তবে সেখানে ঘুম আসা সহজ। পরিবর্তে, একটি ভালো আলোতে বসুন এবং এমন জায়গায় পড়াশোনা করুন যা মনোযোগী থাকতে সহায়ক। পরিবেশের পরিবর্তন, যেমন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়াও আপনাকে সতর্ক রাখতে সাহায্য করবে।
৩. পানি পান করুন এবং হালকা খাবার খান
পানি পান করা এবং হালকা খাবার খাওয়াও খুব জরুরি। শরীরের পানি শূন্যতা এবং ক্ষুধা ঘুম এবং ক্লান্তি বাড়াতে পারে। তাই এক গ্লাস পানি পান করুন এবং কিছু হালকা স্ন্যাকস, যেমন ফল, বাদাম বা দই খেতে পারেন। ভারী খাবার বা বেশি চিনি এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো পরবর্তী সময়ে ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
৪. শরীরচর্চা করুন: জাগ্রত থাকার জন্য শারীরিক কার্যকলাপ
যদি আপনার ঘুম আসতে থাকে, তবে কিছু শারীরিক কার্যকলাপ করতে পারেন। যেমন, কিছু ঝাঁপ দিয়ে বা শরীর চর্চা করে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে নিতে পারেন। এমনকি ২ মিনিটের একটি ছোট শারীরিক কার্যকলাপও আপনাকে সতেজ করতে এবং মনোযোগী রাখতে সহায়ক হতে পারে।
৫. গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নিন
গভীর শ্বাস প্রশ্বাস একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী পদ্ধতি যা আপনাকে সতেজ করতে সাহায্য করতে পারে। ৪-৭-৮ শ্বাসপ্রশ্বাস পদ্ধতিটি চেষ্টা করতে পারেন, যেখানে আপনি ৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিবেন, ৭ সেকেন্ড ধরে ধরেই রাখবেন, এবং ৮ সেকেন্ডে শ্বাস ছাড়বেন। এটি আপনার মন শান্ত করবে এবং নতুন শক্তি যোগাবে।
৬. সক্রিয়ভাবে পড়াশোনা করুন
প্যাসিভ পড়াশোনা যেমন পড়া বা হাইলাইট করা কিছু সময় ঘুমঘুম ভাব তৈরি করতে পারে। পরিবর্তে, সক্রিয়ভাবে পড়াশোনা করুন, যেমন কাউকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা, ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করা বা সমস্যা সমাধান করা। এই পদ্ধতিগুলি আরও মনোযোগ এবং শক্তির প্রয়োগ দাবি করে, ফলে আপনি ক্লান্তি কাটিয়ে তাজা অনুভব করবেন।
৮. অন্যদের সাথে পড়াশোনা করুন
যদি সম্ভব হয়, বন্ধু বা গ্রুপের সাথে পড়াশোনা করুন। আপনার সাথে বিষয়গুলো আলোচনা করার এবং একে অপরের সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা করার ফলে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে। এটি আপনাকে আরও বেশি উৎসাহিত করবে এবং আপনাকে গা-ছাড়া ভাব থেকে দূরে রাখবে।
উপসংহার
পড়াশোনার সময় ঘুম আসা একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায় যদি আপনি কিছু সহজ পরিবর্তন আপনার পড়াশোনার রুটিনে আনেন। ছোট বিরতি নেওয়া, সঠিক পরিবেশে পড়াশোনা করা, শারীরিক কার্যকলাপ করা এবং সঠিক ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখার মাধ্যমে আপনি আরও বেশি মনোযোগী এবং সতেজ থাকতে পারবেন। মনে রাখবেন, ঘুম কাটানোর মূল কথা শুধু যুদ্ধ করা নয়—বরং এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে আপনার মন আরও কার্যকরী এবং সতেজ থাকে। এই টিপসগুলো অনুসরণ করে, আপনি পড়াশোনা আরও কার্যকরীভাবে করতে পারবেন।