তাওবা: ফিরে আসার অনন্ত আহ্বান

Author Topic: তাওবা: ফিরে আসার অনন্ত আহ্বান  (Read 545 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 223
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
তাওবা: ফিরে আসার অনন্ত আহ্বান

আজ আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে আশার আলো দেখাতে পারে, আমাদের ভুলগুলোকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ উন্মোচন করতে পারে। আর সেটি হলো - তাওবা।

তাওবা আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হলো ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, অনুতপ্ত হওয়া। ইসলামী শরীয়তে তাওবা বলতে বোঝায় কোনো ভুল বা পাপ কাজ করার পর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, ভবিষ্যতে সেই পাপ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা এবং সাধ্যমত অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করা।

তাওবা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশাল অনুগ্রহ। মানুষ স্বভাবতই ভুল করে, পদস্খলিত হয়। কিন্তু আল্লাহ চান তাঁর বান্দা হতাশ না হোক, বরং ভুলের অন্ধকার থেকে ফিরে এসে তাঁর রহমতের আলোয় আশ্রয় নিক। তিনি তাওবার দরজা সর্বদা খোলা রেখেছেন।

কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বারবার তাওবার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং তাওবাকারীদের ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন:

وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ

"আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন; এবং তোমরা যা কর, তিনি তা জানেন।" (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ২৫)

অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
 
"হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।" (সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮)

তাওবার শর্তসমূহ:

একটি গ্রহণযোগ্য তাওবা হতে হলে প্রধানত কিছু শর্ত পূরণ করা জরুরি:

১. অনুতপ্ত হওয়া (নাদামাহ): কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা ও লজ্জিত হওয়া। হৃদয় থেকে অনুভব করা যে কাজটি ভুল হয়েছে এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

২. তাড়াতাড়ি পরিত্যাগ করা (ইক্বলা'): যে পাপ কাজটি করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেওয়া। যদি পাপটি চলমান থাকে, তবে তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।

৩. পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প (আজম): ভবিষ্যতে আর কখনো সেই পাপ কাজটি না করার জন্য মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। শুধু মুখে মুখে বললে হবে না, অন্তর থেকে সেই বিষয়ে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হতে হবে।

৪. অধিকার ফেরত দেওয়া (রাদ্দুল হুকুক): যদি পাপটি অন্য কোনো মানুষের অধিকারের সাথে জড়িত থাকে, যেমন - কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা, কারো মানহানি করা - তাহলে সাধ্যমত সেই অধিকার ফেরত দিতে হবে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

৫. নির্দিষ্ট সময়ে তাওবা করা: তাওবার দরজা সর্বদা খোলা থাকলেও এর কিছু নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। যেমন - মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার আগে এবং সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার আগে তাওবা কবুল করা হয়। এই সময়ের পর তাওবা আর গ্রহণযোগ্য হবে না।

তাওবার তাৎপর্য ও উপকারিতা:

তাওবা আমাদের জীবনে অসংখ্য কল্যাণ বয়ে আনে:

আল্লাহর ক্ষমা লাভ: তাওবার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত লাভ করে। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

পাপ মোচন: খাঁটি তাওবার মাধ্যমে অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়, যেন সেই ব্যক্তি কখনো কোনো পাপই করেনি।

আত্মশুদ্ধি: তাওবা আমাদের অন্তরকে কলুষতা থেকে পরিষ্কার করে এবং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে।

মানসিক শান্তি: অনুশোচনার দহন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।

আল্লাহর নৈকট্য লাভ: তাওবার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর আরও কাছে চলে আসে এবং তাঁর ভালোবাসা অর্জন করে।

জীবনের দিক পরিবর্তন: তাওবা আমাদের জীবনের ভুল পথ থেকে সঠিক পথে ফিরে আসতে সাহায্য করে।

আমাদের করণীয়:

আমাদের সকলের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে তাওবা করতে থাকা। আমরা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে প্রতিনিয়ত ভুল করি। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন নিজেদের ভুলগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সেগুলো আর না করার প্রতিজ্ঞা করা। বিশেষ করে যখন কোনো পাপ কাজ হয়ে যায়, তখন বিলম্ব না করে দ্রুত তাওবা করা উচিত।

আসুন, আমরা সকলে মিলে খাঁটি অন্তরে আল্লাহর কাছে তাওবা করি এবং তাঁর ক্ষমা ও রহমত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করি। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে তাওবা করার এবং সেই তাওবার উপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Sr. Ethics Education Teacher
Daffodil Institute of Social Sciences - DISS