মাথার চুল কাটার স্টাইল বা ডিজাইন নিয়ে ইসলাম কি বলে?

Author Topic: মাথার চুল কাটার স্টাইল বা ডিজাইন নিয়ে ইসলাম কি বলে?  (Read 139 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 230
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
মাথার চুল কাটার স্টাইল বা ডিজাইন নিয়ে ইসলাম কি বলে?

মাথার চুল কাটা

মহিলারা মাথার চুল কাটা অথবা ফ্যাশনের জন্য চুলকে ছোট ছোট করা, ডানে-বামে, সামনে-পিছনের যে কোন দিক থেকে হোক না কেন তা পুরুষের সঙ্গে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে নাজায়েয ও গোনাহ।

এ সম্পর্কে হাদীসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইরশাদ করেন, "আল্লাহ তা'আলার অভিসম্পাত সে সকল পুরুষের উপর যারা মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং সমভাবে সে সব মহিলাদের উপরও আল্লাহর অভিসম্পাত প্রযোজ্য যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।”

অতএব মহিলাদের জন্য মাথার চুল কাটা জায়েয নেই। স্বামীর জন্য নির্দেশ দিলেও স্ত্রীর জন্য এ আদেশ পালন করা নাজায়েয। কেননা আল্লাহ তা'আলার অবাধ্য হয়ে স্বামীর অনুগত্য করা হারাম। এমতাবস্থায় স্ত্রীর উচিত নম্রতা ও ভদ্রতার সঙ্গে অসম্মতি প্রকাশ করা। স্বামীকে শরীয়তের নির্দেশ জানিয়ে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করা। এতে আমি আশাবাদী যে, স্বামী যেহেতু একজন মুসলমান তাই শরীয়তের নির্দেশ অমান্য করবেনা, এবং শরীয়ত বিরোধী কাজে বাধ্য করতে স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করবেনা। (বুখারী, আবু দাউদ, মেশকাত- ৩৮০ পৃ)

বব কাটিং চুল

মহিলাদের জন্য বব কাটিং চুল রাখা সম্পূর্ণ নাজায়েয সুতরাং তা থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক।

চুল ছাঁটা

মাথার চুল কাটার যে হুকুম উপরে আলোচনা করা হয়েছে চুল ছাঁটার হুকুমও তাই। সুতরাং বেকলমাত্র ফ্যাশনের জন্য মাথার চুল ছাঁটা জায়েয নেই। তবে যদি চুলের অগ্রভাগ ফেটে শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়, যার দরুন চুলের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে চুলের 'অগ্রভাগ ছাঁটার অনুমতি আছে। তাছাড়া সাধারণ ভাবে যদি উঁচু বা নীচু হয়ে যায়, অর্থাৎ চুলের অগ্রভাগে সামান্য কটা চুল অসমভাবে লম্বা বা খাটো অবস্থায় থাকে তাহলে অগ্রভাগ থেকে ছেঁটে সমান করার অবকাশ আছে।

চুলে ডিজাইন করা

মহিলাদের জন্য চুল না কেটে বিভিন্ন ডিজাইন করে রাখা জায়েয। তবে এক্ষেত্রে সর্বদা নিম্নোল্যেখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

(১) এর দ্বারা যেন কাফের বা পাপাচারী মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা না হয়।
(২) তা হতে হবে শুধুমাত্র আপন স্বামীর মনোরঞ্জন করার উদ্দেশ্যে।
(৩) এ কাজে এত সময় নষ্ট করা যাবে না, যার প্রেক্ষিতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

চুল বৃদ্ধির জন্য কাটা

অনেক মহিলাদের চুলের শেষপ্রান্তে দু'তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে চিকন চুলে রুপান্তরিত হয়, ফলে চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় তখন যদি সে চুলের অগ্রভাগ কেটে দেয়া হয়, তাহলে আবার নতুন করে সে চুল বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাহলে এ অবস্তায় চুল বাড়ানোর জন্য অগ্রভাগ ছেটে দেয়া নিঃসন্দেহে জায়েয।

রোগ-ব্যাধির কারণে চুল কাটা

কোন মহিলার মাথায় যদি রোগের কারণে চুল কাটার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে অপারগতার কারণে অর্থাৎ শরয়ী ওযরের ভিত্তিতে চুল কাটা জায়েয আছে। কিন্তু যখনই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে তখন চুল কাটার এ অনুমতিও থাকবেনা। অর্থাৎ এর পর আর চুল কাটা জায়েয হবেনা।"

মেয়েদের চুল কাটা

বালেগা (প্রাপ্ত বয়স্কা) বা নিকটবর্তী বালেগা মেয়েদের চুল কাটা জায়েয নেই। উপরে চুল কাটার ব্যাপারে যে সব হুকুম লেখা হয়েছে সে সব বিষয়াবলী তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। কিন্তু, যারা ছোট এখনো প্রাপ্ত বয়স্কা হয়নি অর্থাৎ যাদের বয়স নয় বছরের কম, তাহলে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য বা অন্য কোন ভাল উদ্দেশ্যে তাদের চুল কাটার অনুমতি আছে। তবে কাফের, ফাসেকদের বাহ্যঃ সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে বিরত থাকবে, কেননা শরীয়ত তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে।

চুল রাঙ্গানো

বিউটি পার্লারে মেয়েদেরকে ব্লিচ করা হয়। পরে অন্য রঙ্গে রঙ্গিন করা হয়। এগুলো যদি শরীয়তের পরিসীমার মধ্যে থেকে হয় তাহলে শরয়ী দিক থেকে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই। শরয়ী সীমারেখা কিতাবের প্রারম্ভে বর্ণনা করা হয়েছে। (আল আশ্বাহ ওয়ান্নাযায়ের ২:১৭০, ফতোয়া খানিয়া ৩:৪)

ভ্রু চিকন করা

আজকাল মহিলারা ভ্রু সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্যে ভ্রুর কিছু লোম উপড়ে ফেলে। তাঁর ফলে ভ্রুদ্বয় অর্ধবৃত্ত রেখায় পরিণত হয়। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে না জায়েয। কেননা শরীর আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। শরয়ী ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া এ শরীরের কোন অংশেই পরিবর্তন বা রূপান্তর করা জায়েয নেই। সঙ্গত কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দাতের মধ্যে ফাঁকা সৃষ্টি করা, শরীরে চিত্রাঙ্কন করা বা চিত্রাঙ্কন করানোকে না জায়েয, অভিসম্পাতের উপযুক্ত এবং আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টির মাঝে পরিবর্তন করা আখ্যা দিয়েছেন। তিনি শরীর থেকে লোম উপড়ে ফেলার ব্যাপারে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। সুতরাং ভ্রুর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করা যা আজকাল সাধারণ ফ্যাশনের পরিনত হয়েছে সম্পূর্ণ নাজায়েয।

স্বামীকে খুশী করার উদ্দেশ্যে ও এরূপ করা জায়েয নেই। তবে যদি ভ্রুর লোম অতিরিক্ত লম্বা হয়ে যায় এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকার কারণে খারাপ দেখা যায়, তাহলে তা কেটে কিছুটা ছোট করা নিঃসন্দেহে জায়েয।

চেহারার লোম পরিষ্কার করা

মুখমন্ডলের লোম পরিষ্কা করা জায়েয। তবে তা উপড়ে ফেলা উচিৎ নয়। কেননা এতে শারীরিক কষ্ট হয়ে থাকে, তাই পাউডার জাতীয় (হেয়ার রিমোভার) বস্তু দ্বারা পরিষ্কার করা শ্রেয়।(মেশকাত শরীফ- ৩৮১ পৃঃ)

গোঁফ-দাড়ী পরিষ্কার করা

কোন মহিলার মুখে যদি গোঁফ-দাড়ী গজায়, তা পরিষ্কার করা শুধু জায়েযই নয় বরং অতি উত্তম। কিন্তু উপড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণে তা করা ঠিক নয়। বরং কোন প্রকার পাউডার দ্বারা পরিষ্কার করা উচিত।

ঠোঁটের লোম পরিষ্কার করা

যদি কোন মহিলার ঠোঁটের উপর লোম গজায় তাহলে তা পরিষ্কার করা নিষেধ নয়। বরং তা পরিষ্কার করা মহিলাদের জন্য উত্তম ও মুস্তাহাব।

হাত পায়ের লোম পরিষ্কার করা

মহিলাদের জন্য হাত ও পায়ের লোম পরিষ্কার করা জায়েয। কেননা তাদের জন্য সৌন্দয্য অর্জন করা ন্যায়সঙ্গত অধিকার। তাছাড়া এতে সৃষ্টির মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন বলা যাবেনা। এবং এ ক্ষেত্রে ধোকা দেয়ারও অর্থ বুঝায়না। সুতরাং হাত পায়ের লোম না উপড়িয়ে উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা উত্তম।

শরীরে চিত্রাংকন করা

শরীরে যে কোন ধরণের চিত্রাঅংকন করা বা করানো জায়েয নেই, হারাম। এর পদ্ধতি হলো শরীরে সূঁই জাতীয় কোন কিছু দ্বারা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে এর মধ্যে সুরমা বা নীল ভরে দেয়া এবং এভাবে শরীরে জীব-জন্তু বা অন্য কোন জিনিসের চিত্র আঁকা। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন ধমক দেয়া হয়েছে :

“আল্লাহ তা'আলার অভিসম্পাত সে মহিলার উপর পতিত হোক যে শরীরে চিত্রাংকন করে এবং চিত্রাংকন করায়।” (ফতোয়ায়ে শামী- ৬:৩৭৩ পৃঃ (৮) মেশকাত ৩৮১ পৃঃ, বোখারী ও মুসলিম)

Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Sr. Ethics Education Teacher
Daffodil Institute of Social Sciences - DISS