শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা যেভাবে কাজে লাগাতে পারবে আট খাতের প্রতিষ্ঠান
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি আংশিক রপ্তানিকারক শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক নিশ্চয়তার বিপরীতে শুল্ক-কর ছাড়া কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনবে। বিদ্যমান বন্ড ব্যবস্থাপনার জটিলতার কারণে অনেক আংশিক রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বন্ডেড ওয়্যারহাউস সনদ বা লাইসেন্স নিতে পারে না। নতুন এই নীতি তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি সহজ করবে, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
কারা এই সুবিধা পাবেযেসব প্রতিষ্ঠানের শিল্প আমদানি নিবন্ধন ও ভ্যাট পরিপালনকারী সনদ থাকবে, সে ধরনের আট খাতের প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা পাবে। খাতগুলো হচ্ছে আসবাব, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হালকা প্রকৌশল, ইস্পাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়াজাত পণ্য ও তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক খাত। এসব খাতকে এই সুবিধা পেতে হলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু শর্তও পালন করতে হবে। শর্তগুলো হলো রপ্তানি অবশ্যই এলসি, টিটি বা বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে হতে হবে, বিক্রয় চুক্তি অবশ্যই লিয়েন ব্যাংকের অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেটে জমা দিতে হবে, ন্যূনতম মূল্য সংযোজন হতে হবে ৩০ শতাংশ।
যা আমদানি করা যাবে নাএই শুল্কমুক্ত সুবিধায় বেশ কিছু পণ্য আনা যাবে না। সেগুলো হলো সিমেন্ট, প্রি-ফ্যাব ভবন, এমএস রড, বার, পার্টিকেল বোর্ড, তার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, এয়ার কন্ডিশনার, ফার্নিচার ও অফিস সরঞ্জাম এবং জ্বালানি পণ্য।
এ ছাড়া এই সুবিধায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর উপকরণ-উৎপাদক সহগ, ব্যাংক নিশ্চয়তাপত্র, আমদানির পর আমদানিসংশ্লিষ্ট দলিলাদি, রপ্তানির পর রপ্তানিসংশ্লিষ্ট দলিলপত্র সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেটে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি আমদানি করা কাঁচামালের ব্যবহার মাসিক ভ্যাট রিটার্নের মাধ্যমে জমা, বিক্রয় ও ক্রয় রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে। এই সুবিধার আওতায় একই এলসির অধীনে একাধিকবার শুল্ক-করমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করা যাবে। তবে তা স্থানীয় বাজারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
কখন ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন করা যাবেমূসক কমিশনারেট দলিলাদি যাচাই করে অনাপত্তি সনদ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশন ওই আমদানিকে ব্যাংক গ্যারান্টি মুক্ত করবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নেবে, তাদের ৯ মাসের মধ্যে রপ্তানি সম্পন্ন করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেট যৌক্তিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সময় আরও তিন মাস বাড়াতে পারবে। নির্ধারিত সময় পার হলে অথবা আদেশ বাতিল হলে অথবা রপ্তানিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
এনবিআরের এই উদ্যোগ রপ্তানি বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগের পুরোপুরি সুফল পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদেরও নিয়মকানুনগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
Source:
https://www.prothomalo.com/business/analysis/6v6o46yamu