আমাদের দোয়া কেন কবুল হয় না

Author Topic: আমাদের দোয়া কেন কবুল হয় না  (Read 12 times)

Offline Imrul Hasan Tusher

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 189
  • Test
    • View Profile
    • Looking for a partner for an unforgettable night?
আমাদের দোয়া কেন কবুল হয় না


দৈনন্দিন জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সত্ত্বেও দোয়া যেন লক্ষে পৌঁছাচ্ছেই না—এমন অনুভূতি অনেকের হয়। একই দোয়া বারবার উচ্চারণ করতে গিয়ে মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, হতাশা আচ্ছন্ন করে নেয়।

অবশ্য এই অনুভূতি দুর্বল ইমানের লক্ষণ নয়, বরং হতে পারে আল্লাহর প্রিয়জনদের জন্য একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে ধৈর্য, খাঁটি ইমান এবং তাঁর ওপর ভরসা যাচাই করা হয়।

আধুনিক জীবনের চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা এই ‘দোয়া ফ্যাটিগ’কে আরও তীব্র করে। ইসলাম বলে, আল্লাহ আপনার কান্না শোনেন, আপনার চেষ্টা দেখেন।

এই অনুভূতি কি স্বাভাবিক?

সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, হ্যাঁ, এটা ইমানের পরীক্ষা হতে পারে। নবী-রাসুলগণ এবং সৎকর্মশীল লোকেরাও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছেন দোয়ার কবুলের জন্য। সন্তানের জন্য ইবরাহিম (আ.) দোয়া করতে করতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছেন।

এই অবস্থায়ও নামাজ চালিয়ে যাওয়া এবং ইবাদতে শিথিলতা না দেখানো তার ইমানের শক্তির প্রমাণ।

অবশ্য এই অনুভূতি দুর্বল ইমানের লক্ষণ নয়, বরং হতে পারে আল্লাহর প্রিয়জনদের জন্য একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে ধৈর্য, খাঁটি ইমান এবং তাঁর ওপর ভরসা যাচাই করা হয়।
কোরআন কী বলে
কোরআনের বাণী স্পষ্ট, আল্লাহ দোয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু উত্তর সবসময় আমাদের প্রত্যাশিত রূপে আসে না।

সুরা গাফির (আয়াত: ৬০): “আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” এই আয়াত আল্লাহর অটুট প্রতিশ্রুতি, কিন্তু উত্তরের রূপ কী তাৎক্ষণিক হবে, না বিলম্ব হবে নাকি আকস্মিক আসতবে—তা তাঁর হাতে।

সুরা বাকারা (আয়াত: ১৫৫-১৫৬): “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবনের ক্ষতি এবং ফসলের ক্ষতি দিয়ে... কিন্তু ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যাদেরকোনো বিপদ আঘাত করলেও বলে: ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’”

এখানে বোঝা যায়, পরীক্ষা শাস্তি নয়, বরং আধ্যাত্মিক শুদ্ধিকরণ বা অদৃশ্য রক্ষার মাধ্যম।

সুরা শুরা (আয়াত: ৪৩): “যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে—তা নিশ্চয়ই দৃঢ় সংকল্পের কাজ।”

ধৈর্য এবং ক্ষমা আল্লাহর নৈকট্যের চাবি।

এই আয়াতগুলো স্মরণ করলে হতাশা কমে আসবে। কেননা, স্পষ্ট যে দোয়া শোনা হয়েছে—উত্তর শুধু সময়ের বিষয়।

নবীজির বাণী

মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিসগুলোও এই অনুভূতির পক্ষে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছেন, “বান্দা দোয়া করতে থাকবে এবং তার দোয়া কবুল হতে থাকবে, যতক্ষণ না সে পাপ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দোয়া করে বা অধৈর্য হয়ে বলে, ‘আমি দোয়া করেছি, কিন্তু কবুল হয়নি।’” (সহিহ মুসলিমে, হাদিস: ২৭৩৫)

এখানে অধৈর্য হয়ে দোয়া ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

আরেক হাদিসে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “মুসলিমের দোয়ায় যদি পাপ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করা না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাকে তিনটির একটি দেন: তাৎক্ষণিক কবুল, আখিরাতে সংরক্ষণ বা সমান অনিষ্ট থেকে রক্ষা।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৩৩)

এই হাদিসটি স্পষ্ট করে যে, দোয়া কবুল হয় নি, তা নয়, বরং উত্তর লুকায়িত বা ভিন্ন রূপে আসে। মানে দোয়া সবসময় শোনা হয়; শুধু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হয়।

মুসলিমের দোয়ায় যদি পাপ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করা না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাকে তিনটির একটি দেন: তাৎক্ষণিক কবুল, আখিরাতে সংরক্ষণ বা সমান অনিষ্ট থেকে রক্ষা।
মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৩৩

কেন দোয়ায় সাড়া পেতে বিলম্ব হয়

দোয়ার বিলম্বের পিছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

আধ্যাত্মিক উন্নয়ন: দোয়া শুধু চাওয়া নয়, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়া। বিলম্ব ধৈর্য পরীক্ষা করে, যা ইমানকে মজবুত করে।

উত্তম কিছুর প্রস্তুতি: আপনার চাওয়া এখন আপনার জন্য উপকারী নাও হতে পারে। আল্লাহ করুণাময় হতে পারে তিনি ভালো কিছু প্রস্তুত রেখেছেন।

গুনাহ মোচন: দোয়ার কবুল প্রতিদান হিসেবে ভবিষ্যতের বিপদ দূর হতে পারে বা অতীতের গুনাহ মাফ হতে পারে।

কঠিন সময়ে ইমানের প্রমাণ: সহজ সময়ে কৃতজ্ঞতা সবাই আদায় করে কিন্তু কঠিন সময়ে দোয়ায় অবিচল থাকা খাঁটি ইমানের লক্ষণ।

দোয়া ক্লান্তিকর মনে হলে কী করবেন

নামাজ চালিয়ে যান: নামাজ আল্লাহর আনুগত্য প্রমাণের অন্যতম উপায়। আল্লাহ নিশ্চয় আপনার চেষ্টা দেখছেন। তা ছাড়া নামাজের মধ্য দিয়েও অনেক দোয়া করা হয়ে যায়।

ধৈর্য ও শান্তির জন্য দোয়া করুন: বলুন, “আল্লাহ, আপনার ফয়সালায় শক্তি দিন এবং আমাকে সন্তুষ্টি দান করুন।”

ইস্তিগফার করুন: গুনাহ আধ্যাত্মিক বাধা তৈরি করে। নবীজি (সা.) দিনে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার করতেন। তাই বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

অন্যদের সঙ্গে তুলনা এড়ান: সকলেরই নিজ নিজ পরীক্ষা আছে। দোয়া কোনো স্কোরবোর্ড নয়, বরং এটা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র।

জিকির ও সৎ সঙ্গের মাঝে থাকুন: ভালো সঙ্গ এবং জিকির হৃদয় নরম করে, আধ্যাত্মিক শক্তি ফিরিয়ে আনে।

এই আমলগুলো দৈনন্দিন জীবনে যোগ করলে, দোয়া আবার আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে।

আপনার এই অনুভূতি বাস্তব, বেদনাদায়ক এবং গভীরভাবে ব্যক্তিগত—কিন্তু এটি নিষ্ফল নয়। আল্লাহ আপনার অশ্রুর কথা জানেন, দোয়া শোনেন এবং চেষ্টা দেখেন। ক্লান্ত হৃদয়েও দোয়া চালিয়ে যাওয়া তাঁর কাছে প্রিয় ইবাদত হতে পারে। আল্লাহ নিশ্চয়ই শুনছেন, তিনি সাড়া দিতে দেরি করছেন মানে কবুল করছেন না, তা নয়।

Source: https://www.prothomalo.com/religion/islam/491xnipfhj
Imrul Hasan Tusher
Senior Administrative Officer
Office of the Chairman, BoT
Cell: 01847334718
Phone: +8809617901233 (Ext: 4013)
cmoffice2@daffodilvarsity.edu.bd
Daffodil International University