একটু কি ভেবে দেখবো আমরা ?

Author Topic: একটু কি ভেবে দেখবো আমরা ?  (Read 2306 times)

Offline arefin

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1172
  • Associate Professor, Dept. of ETE, FE
    • View Profile
আমার খুব ইচ্ছা করে, তোমাকে কিছু কথা বলি। কথাগুলো মনে হয় তোমার ভাল নাও লাগতে পারে, তবু বলি। কিছুকথা আছে বলতে যেমন সাহস লাগে, শুনতে এবং মানতে তার থেকে বেশি সাহস লাগে। কথাগুলো তেতোঁ এবং অপছন্দনীয়ও হতে পারে, কিন্তু তবু বলি, একটু শোন।

ভাই, তুমি আসলে কিসের পেছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছ? তোমার এই ছোট্ট জীবনটাতে তোমার সবচেয়ে আরাধ্য বিষয়টা কি ? একটু ভাল থাকতে চাও, একটু আরামে থাকতে চাও, তাই তো ? ভাল খাবে, ভাল পরবে, একটা এসি গাড়ি থাকবে, মানুষ তোমার আর তোমার সম্পদে চোখ রেখে বলবে, “আরে এরা অনেক হাই ফাই” – এরকম কিছু ? হ্যা তোমার যদি বয়সটা একটু কম হয়, সেক্ষেত্রে আশা করতে পার, মেয়েরা তোমাকে cool বলবে, তোমার একটা স্মার্ট গার্লফ্রেন্ড থাকবে, তাকে নিয়ে তুমি যাবে KFC তে খেতে ! তুমি ‘ট্যুর’ দেবে বান্দরবন, কাঁপিয়ে বেড়াবে সুন্দরবন, অথবা কক্সবাজার দাপিয়ে সেন্টমার্টিন, ফ্রেন্ডসদের নিয়ে ছবি তুলে আপলোড দেবে ফেসবুকে, আর লোকে কমেন্ট দেবে, “awesome man”। তোমার ভাল সিজি-ডিগ্রী থাকবে, লোকে তোমাকে সমীহ করে দেখবে, সমাজে তোমার মানুষের কাছে “বলার মত একটা অবস্থান” থাকবে, যে “অবস্থান” বলার প্যারামিটার সম্ভবত তোমার চাকরি, তোমার ক্যারিয়ার কিংবা তোমার হিসেব ছাড়া ব্যাংক ব্যালেন্স, তাই না ? হতে পারে তুমি এমন যে তুমি চাও যে তোমার থাকবে অনেক প্রভাব প্রতিপত্তি, চায়ের দোকানে চা খেয়ে বিল না দিলে তোমাকে কেউ কিচ্ছু বলবে না, চোখ তুলে কেউ তোমার দিকে নজর দেবে না। তোমার নাম বেঁচে, ছলনা করে, কিংবা তোমার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের জোরে তুমি অনেক কাজ করিয়ে নেয়ার এবং দেয়ার ক্ষমতা রাখবে, যেন তুমি কারো মুখাপেক্ষী নও!

তুমি তোমার লাইফটাকে অনেক color করতে চাও, তাই না? “Enjoy man, why so serious !” টাইপের কিছু কি ?  তোমার শখ গিটার বাজানো, আলো আধারীর খেলায় সবকিছু ভুলে গিয়ে গান গাইতে কি যেন একটা ব্যাপার কাজ করে, তাই না ? ফটোগ্রাফিটা তোমার প্যাশন হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে? হুম, কমপ্লিমেন্ট পেতে ভালই লাগে। The Big Bang Theory  থেকে শুরু করে Spartacus এর মোড় ঘুরে Kung Fu Panda 2- লেটেস্ট কিছু এসেছে আর তুমি দেখ নি, এমনটা কি হয়েছে ? হয়তো না ! ফেসবুকে চ্যাট, মিউজিক, মুভি, সিরিয়াল আর বিপিএল আছে- কে রাস্তার পাশে উলটো হয়ে মরে পড়ে আছে, দূরদেশের কে স্প্লিন্টারের আঘাতে উড়ে গেছে- সেটা ভুলে যেতে একটুও কষ্ট হয় না, দরকার কি এই নোংরা বাস্তবতায় নিজের বাম হাত ঢোকাবার, কর্দমাক্ত রাস্তায় পাজামা উঁচু করেই হাটতে হয়, তাই না?

আচ্ছা, এই তোমার এই যে এতকিছু নিয়ে তোমার এই জীবন, বলতো তোমার জীবনটা কি আসলেই এসবের জন্যই ? তোমার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য কি এই “আরাম” করা? Enjoy করা?  “যা চাই তা যদি পাই তাহলে তো জীবন সার্থক, এর থেকে বেশি ভেবে কাজ নাই” তুমি এমনটা ভাবছ কি ?

শোন, একটা রুঢ় কথা বলি, এই যে তুমি তোমার জীবনকে সাজাবার জন্য শত-সহস্র খেলনার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছ, এই যে কয়টা টাকা আর ক্যারিয়ারের পেছনে তোমার সবটা ঢেলে দিচ্ছ, এই যে সমাজ তোমাকে যেমন দেখতে চাইছে আর তুমি তা হবার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছ, একে ওকে নিয়ে এই সীমাহীন ব্যস্ততার রাজ্যে তোমার অন্তহীন ছোটাছুটি – এই যে এত এত কিছু, এগুলোর প্রত্যেকটি যে একেবারেই মূল্যহীন, মরুভূমির মরীচিকাতুল্য হতে পারে, সেটা কি কখনও ভেবে দেখছ?

কথাটা frustrating হয়ে গেল ? হতে পারে, কিন্তু কথাগুলো সত্য। এই জীবনের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা কি জান ? এই জীবনের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হচ্ছে এই জীবনে বেঁচে থাকবার জন্য, এই জীবনটাকে spicy করে তোলবার জন্য এই যে আমাদের রঙ্গিন আয়োজন – এগুলোর কোন দাম নেই, যদি না আমরা বুঝতে পারি কেন আমাদের এই জীবন। কখনও কি তুমি ভেবেছ আমরা আসলে কেন বেঁচে থাকি ? আমাদের এই জীবন কি কেবল বেঁচেই থাকার জন্য, এর আর কোনই উদ্দেশ্য নেই? চারপাশে তাকিয়ে দেখ, বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে থাকে এমনভাবে যেন বেঁচে থাকাটাই তাদের উদ্দেশ্য !

তুমি কি “মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত” বলে এত বড়াই করে বেড়াও, তাহলে দশ-বিশ মাইল দূরে গিয়ে ক্ষেতে চড়ে বেড়ান গরুর বাছুরটাকে খেয়াল কর, তার সাথে আমাদের পার্থক্যটা কোথায় যখন আমরা কেবল চলছি ফিরছি খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি আর পটল তুলছি আর সেও ঠিক তাই ? শুধু আমাদের লাইফটা একটু কমপ্লেক্স আর স্পাইসি, এই তো পার্থক্য !

দেখ তুমি যদি মনে করে থাক তোমার “ভাল থাকা”টাই সব, তাহলে তুমি ভুল করছ। তুমি যদি এমনটা ভেবে থাক তাহলে তোমাকে যত কিছুই এনে দিই না কেন তুমি ভাল থাকতে পারবে না, তোমার আরো পেতে ইচ্ছা করবে। এই দুনিয়াটা এমনই অদ্ভূত। বাস্তবতা হচ্ছে, যে টাকাটাকে আজ তুমি মুখে স্বীকার না করলেও সব মনে করছ, তোমাকে যদি বলি তুমি এক সপ্তাহ পর মারা যাবে সেই টাকাটাকেই তোমার খুব অর্থহীন মনে হবে। যাকে ছাড়া তোমার চলবে না বলে তুমি ভাবছ, কিংবা যাকে তুমি chase করছ, ঠিক তাকেই তোমার একসময় মনে হবে একটা লক্ষ্যহীন মনের কিছু অস্থির ভাবনা ছাড়া আর কিছুই সে ছিল না। যে ডিগ্রী কিংবা যে চাকরির জন্য আজ তোমাকে মানুষ বাহবা দেয় সে মানুষগুলো যে তোমাকে চিনতেই পারবে না, সেটা কি তুমি জান না ? Is these stuffs really your life worth of ?

তোমার কি মনে আছে ছোট বেলায় টিভি সিরিয়াল টিপু সুলতানের কথা ? ঐ সিরিয়ালটা চলাকালীন সময়ে একটা প্লাস্টিকের তলোয়ার খুব বিক্রি হত, হয়তো সেটা কিনেছ আর বিপুল আনন্দে ঘুরিয়েছ, “শাঁই শাঁই”। বছরখানেক আগে রাস্তার ফুটপাতে বিক্রি হত “লাদেন বোমা” ! ঐ বয়সটাতে একটা টিপু সুলতানের তলোয়ার কিংবা লাদেন বোমা যখন তুমি পেয়েছিলে, তোমার কি মনে হয় নি যে তুমি পুরো বিশ্বটা হাতে পেয়েছ ! কিন্তু আজ তোমার হাতে টিপু সুলতানের তলোয়ার কিংবা লাদেন বোমা ধরিয়ে দিলে তুমি বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাববে, “এই সামান্য জিনিষটার জন্য এত কান্নাকাটি করেছিলাম!”

বেঁচে থাকতে কি আসলে অনেক টাকার দরকার, অনেক বিত্ত-বৈভব দরকার ? নিজের ছন্নছাড়া পাগলাটে অর্থহীন ইচ্ছেগুলোকে পূরণ করা খুব দরকার, যখন এই জীবনটা খুবই ছোট ? কেমন ছোট ?

ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। [১]

দেখ ! এই ৫০০০০ হাজার বছর ধরে তোমাকে চেয়ে চেয়ে কেবল অপেক্ষাই করতে হবে, বাকিটা বাদ দিলাম, ৫০০০০ বছরের তুলনায় এই জীবনটা কত ছোট সেটা কি ভেবে দেখেছ ? ৫০-৬০ বছরের এই জীবনের তুলনায় যেন এক বিকেলের চা খাওয়া, এর বেশি তো কোনভাবেই নয় !

“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে গাফেল রাখে যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও ...” [২]

এই দুনিয়ার জীবনটা এমনই। আজ যখন তোমার মনে হচ্ছে, এটা ওটা ছাড়া তোমার চলে না, সেই এটা ওটাই তোমার কাছে খুব শীঘ্রই মূল্যহীন হয়ে যাবে, মৃত্যুকে যত কাছে অনুভব করবে তোমার ইচ্ছে হবে যেন অনন্তকাল বেঁচে থাকি। মনে হবে কিসের পেছনে ছুটেছি হোক সেটা কোর আই সেভেন ল্যাপটপ বা আইপড থেকে শুরু করে সী-ভিউ ফ্ল্যাট বা এক্স করোলা, এ সব কিছুই যেন ছোট্ট শিশুর টিপু সুলতানের তলোয়াড় হাতে বাহাদুরি !

“তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদের কে ধোকায় ফেলে রেখেছিল” [৩]

তুমি কেন ভাবছ তোমার এই আরাম-আয়েশে কাটিয়ে দিলেই তুমি বেঁচে গেলে ? তুমি কি ভুলে গেছ এই জীবনটার পরে আরেকটা জীবন আছে? আরাম আয়েশের জন্য তো সে জীবনটা পড়ে আছে, এই জীবন তো আরামে কাটাবার জন্য নয় ! তুমি আজ হয়তো ভাবছ পাশের বাসার সে ছেলেটা একটা loser,  কারণ তোমার মত স্মার্ট সে নয়, তোমার মত বাকপটু সে নয়, তোমার মত লোক হাসাতে তো পারে না, তোমার মত জ্ঞান গরিমা তার নেই, বরং দাড়ি আর ankle এর উপরে কাপড় টেনে সে তোমার বন্ধুদের হাসির পাত্রে পরিণত হয়, অথচ আল্লাহ loser দের সংজ্ঞা দিয়েছেন,

বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে। [৪]

আমরা যখন আল্লাহর সামনে দাড়াব, তুমি কি জান তখন আমাদের হাতে কিছুই থাকবে না। না থাকবে পয়সা, না থাকবে বাড়ি গাড়ি। একদম একা। হাতে ধোয়া ওড়ানো সিগারেট থাকবে না, থাকবে না তোমার ব্র্যান্ডের শার্ট আর জুতো, চোখে থাকবে না রেভেন এর গ্লাস কিংবা পিঠ বেয়ে ঝুলবেনা গিবসন এর গিটার, যেতে হবে তোমাকে ঐ তিন টুকরো সাদা কাপড় জড়িয়েই। ক্বিয়ামাহর দিন তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষটিও তোমাকে দেখে না দেখার ভান করে চলে যাবে। কি, বিশ্বাস হয় না ?

(সেদিন) বন্ধু বন্ধুর খবর নিবে না। যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি পনস্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে,তার স্ত্রীকে, তার ভ্রাতাকে,তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত। এবং পৃথিবীর সবকিছুকে, অতঃপর নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে। কখনই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নি। [৫]

সেদিন তোমার কাছে “বলার মত” কি থাকবে সেটা জান? সেটা হচ্ছে এই দুনিয়াতে আল্লাহর জন্য তুমি কি কি করেছ। যে আল্লাহ তোমাকে ফ্রি ফ্রি এত কিছু দিলেন অথচ সেগুলো তুমি তার কাছে চাও নি ! যে আল্লাহ তোমাকে দৃষ্টি দিলেন, শোনার ক্ষমতা দিলেন, দিলেন তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মিষ্টি মধুর পানি, হৃদয়ে  দিলেন ভালবাসা নামক এক অদ্ভূত অনূভূতি, আবেগ দিলেন, চিন্তাশক্তি দিলেন, দিলেন আরো লিস্ট না করা অবিনিময়যোগ্য কত কি! সেদিন তোমার কত ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল, তোমার গাড়ির মডেল কি Bugatti veron কিংবা  Lamborghini ছিল কিনা, তুমি গার্লফ্রেন্ডকে খুশি করতে কি করেছ, তুমি লোক দেখানো কি করেছ, তোমার সিজি কি 3.95 ছিল নাকি 3.98 ছিল, লোকে তোমাকে স্মার্ট বলেছে নাকি cool বলেছে, সেগুলো কোনই কাজে আসবে না ! যদি কোন কাজে না আসে তবে কেন এগুলোকে তুমি জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়েছ ? তুমি কেন নিজেকে ভুলিয়ে রাখছ, তুমি কেন মনে রাখতে চাচ্ছ না, তুমি কেন এই সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছ যে এই জীবনটা হল পথ, গন্তব্য নয় ? দুনিয়ার অতি স্বল্পমূল্যের কিছু স্বার্থের আশায় নিজেকে এই মহাসত্যকে ভুলে থাকার চেষ্টা করে তুমি কি নিজের সাথে প্রতারণা করছ না ?

এই যে তুমি জীবনের পূজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছ ভাই আমার, তুমি কি জান না এই জীবনটা, এই জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত, এই জীবনে করা তোমার কাজগুলো একসময় তোমার বিপক্ষে দাড়াঁতে পারে ? হাসি ঠাট্টায় ভরপুর তোমার এই ছোট্ট জীবনটা তোমাকে অনন্তকাল ধরে কাঁদাতে পারে, তুমি কি তা জান না ? তুমি কি এও ভুলে গেছ যে তুমি এই জীবনটাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু ছেড়ে দিয়ে যদি সামান্য কষ্ট কর তবে তার বিনিময়ে শতগুণে ফেরত পাওয়া পুরুষ্কার তোমাকে অনন্তকালের জন্য প্রশান্তি দেবে ?

একটা মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ vital যে জিনিষটি, সেটি হল আল্লাহর প্রতি ঈমান। কারণ এই ঈমান না থাকলে এই দুনিয়াতে আমরা কে কি করেছি সেটা একটা অর্থহীন আলোচনা। একসময় এই পৃথিবীটা ধংস হবে, আমাদের বাড়ি গাড়ি ভাব পার্ট সবই চলে যাবে, যা থাকবে তা হল আমাদের সেইসব কিছু যা কেবল আমরা আল্লাহর জন্য করেছি।

এই মহাসত্যটা হয়তো মেনে নিতে তোমার কষ্ট হতে পারে, কিন্তু তবু এটা সত্য। তুমি শুনতে চাও না কেন আমি জানি না, শুনলেও বুঝতে চাওনা কেন আমি জানি না, আর বুঝলেও মানতে চাওনা কেন আমি জানিনা, সত্য হচ্ছে এটাই যে আমাদেরকে আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে। গান-মুভি আর আড্ডাবাজির মেকি জগতটার কি শেষ নেই? পারবে কি তোমার হোলি খেলার রঙ শেষ বিচারের দিনটাকে মুছে দিতে ?

তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।  [৬]

হ্যা প্রতারণা, আর প্রতারণা বলেই মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। তুমি যেই হয়, তুমি যেখানে থেকেই আস, তুমি যা কিছুই করে থাক না কেন, আল্লাহর পথ তোমার জন্য খোলা, যদি তুমি একটু কৃতজ্ঞ হও আল্লাহর অশেষ রাহময়ার প্রতি, যদি একটু সচেতনচিত্তে মেনে নাও নিজের সীমাবদ্ধতা আর আল্লাহর অসীম ক্ষমতাকে। তোমাকে শুধু একটি বার আল্লাহর দিকে তাকাতে হবে, তোমাকে শুধু অন্তর বিশ্বাস করতে থেকে হবে যে তোমার জীবন-মরণ শুধু আল্লাহরই জন্য, আর কারও জন্য নয়। তোমাকে মন থেকে চাইতে হবে, “যা কিছু কঠিন তা আমার জন্য সহজ করে দাও”, তোমাকে শুধু একটিবার মন থেকে বলতে হবে, “হে আল্লাহ পথ দেখাও”। তা না হলে কি হবে? আল্লাহ বলছেন,

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুমান ছিলাম। আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল,অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব। [৭]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

“যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।“ [৮]

আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আমরা যদি honest mindset নিয়ে একটু চেষ্টা করি, তিনি আমাদের সাথেই আছেন। এমন অমূল্য এক সুযোগের অবারিত দ্বার খোলা পাবার পর যদি আমরা “damn religion” বলে মুখ ফিরিয়ে নিই তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত আমরাই হব।

আর আল্লাহ যদি আমাদের উপর খুশি না হন, তাহলে আর কিছু আসে যায় না ...
কোন কিছুতেই কোন কিছু আসে যায় না ...
 

** ** ** ** **

[১] সূরা মা’রিজঃ৪

[২] সূরা তাকাসুরঃ১-২

[৩] সূরা আরাফঃ৫১

[৪] সূরা কাহফঃ১০৩-১০৪

[৫] সূরা মা’রিজঃ১১-১৫

[৬] সূরা হাদীদঃ২০

[৭] সূরা ত্ব-হাঃ১২৪-১২৬

[৮] সূরা আনকাবূতঃ৬৯

(সংগ্রহকৃত)
“Allahumma inni as'aluka 'Ilman naafi'an, wa rizqan tayyiban, wa 'amalan mutaqabbalan”

O Allah! I ask You for knowledge that is of benefit, a good provision and deeds that will be accepted. [Ibne Majah & Others]
.............................
Taslim Arefin
Assistant Professor
Dept. of ETE, FE
DIU