মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ (মাসিক আলকাউসার )
প্রশ্ন : এখন শেয়ারবাজারে বেশ চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ৯৬ সালের বিপর্যয়ের পর দীর্ঘ দিন পর্যন্ত শেয়ার মার্কেট অনেকটা নিস্তব্ধ ছিল। বিশেষ করে গ্রামীনফোনের শেয়ার বাজারে আসার পর থেকে শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান শেয়ারবাজার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে তাতে অংশগ্রহণের হুকুম সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : এই প্রশ্নের উত্তর তো সরাসরিই দেওয়া যায়। তবে প্রশ্নকারীর প্রতি সহানুভূতি থেকেই আমরা আগে পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বলি। একে অনেকটা তুলনা করতে পারেন, কারো স্বজনের মৃত্যুসংবাদ দেওয়ার সাথে। সংবাদটা দিতেই হয়। তবে শ্রোতা যেন বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারে এজন্য কিছুটা হলেও মানসিক প্রস্তুতিরও সুযোগ দিতে হয়। বর্তমান শেয়ারবাজারের ব্যাপারে অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই এমনটি করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, হালাল-হারামের বিষয়ে যাদের মধ্যে উদ্বেগ ও সংবেদনশীলতা আছে তাদের যদি শেয়ারবাজার সম্পর্কেও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে তাদের সংশয় সৃষ্টি হবে যে, সম্ভবত এই কারবারটা সহীহ নয়। এজন্য এখন কোনো কোনো প্রশ্নকারীকে সরাসরিও বলে দেই। শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিও বিষয়টিকে সহজ করে দিয়েছে। তা যদি আপনার সামনে থাকে তাহলে বলাও সহজ, গ্রহণ করাও সহজ। যাই হোক, আপনার প্রশ্নের উত্তর যদি সংক্ষেপে পেতে চান তাহলে বলব, বর্তমানে আমাদের দেশে শেয়ার-মার্কেট যে নিয়মে চলে তাতে সেখান থেকে শেয়ারের ক্রয়-বিক্রয়-তা আইপিও-এর মাধ্যমে বলুন বা সেকেণ্ডারি মার্কেট থেকে বলুন-শরীয়তের লেনদেন ও বেচাকেনা-সংক্রান- শর্ত ও নীতিমালা পূরণ করে না। এজন্য হালাল-হারামের দৃষ্টিতে বর্তমান শেয়ারবাজার ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রশ্ন : শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণের বিষয়ে আগে থেকে যেসব মাসআলা আমরা পড়েছি, তার সাথে এই সিদ্ধান্তের আংশিক অমিল আছে বলে মনে হয়। কারণ, শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে উপমহাদেশের আলিমদের বিভিন্ন লেখায় যেমন ইমদাদুল ফাতাওয়া ও পরবর্তী ব্যক্তিত্বদের লিখিত কিতাবপত্রে আমরা দেখি যে, তারা কিছু শর্তের সাথে কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচাকে জায়েয বলেছেন। তো এই দুই সিদ্ধান্তের মাঝে কিছুটা অমিল দেখতে পাচ্ছি।
উত্তর : শেয়ারবাজারের লেনদেনের প্রসঙ্গে যে শর্তযুক্ত বৈধতার কথা বলা হয়ে থাকে তা অনেক পুরানো কথা। প্রথম যখন তা বলা হয়েছিল তখন বৃটিশ আমল। তখনকার মুসলমানদের আর্থসামাজিক অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর শেয়ারবাজারে মূল্যের উঠা-নামা ছিল কোম্পানির বাস্তব অবস্থার সাথে অনেকটা সঙ্গতিপূর্ণ। এরপর শেয়ারবাজারে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তিত অবস্থার উপর ওই কথাগুলোর প্রয়োগ আমরা যথার্থ মনে করি না। যে চিন্তার উপর ভিত্তি করে ঐ চার শর্তের কথা বলা হয়েছিল বর্তমান শেয়ারবাজারে তা মোটেই মুখ্য বিষয় নয়। শেয়ারের বেচাকেনাকে কোম্পানির অংশের বেচাকেনা ধরে নিয়ে এই শর্তযুক্ত বৈধতার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু বর্তমান শেয়ারবাজার সম্পর্কে যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন যে, সেটি এখন নিতান্তই গৌণ। এখন শেয়ারবাজার এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বেচাকেনা হলেও কোম্পানির লাভ-লোকসান বা বাস্তব অবস্থার সাথে এর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। শেয়ারকে কেন্দ্র করে মানিগেমই হচ্ছে শেয়ারবাজারের মূল ধারা। এটা এখন বেশ পরিষ্কার, সামনে আরও পরিষ্কার হবে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, বর্তমান শেয়ারবাজারের উপর হুকুম প্রয়োগের আগে এই শর্তযুক্ত বৈধতার প্রসঙ্গটি গোড়াতেই কতটা মজবুত তা নিয়েও শান্তভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন ছিল এবং এখনও এ বিষয়ে ভাবার অবকাশ আছে। তৃতীয় কথা হচ্ছে, যারা এখনো এই শর্তযুক্ত বৈধতার কথা বলছেন, বাস্তবতা সম্পর্কে খোঁজ নিলে দেখা যায় যে, তাদের কথা অনুযায়ীও বর্তমান শেয়ারবাজারের লেনদেন বৈধ হয় না। সমপ্রতি পাকিস্তানের মীযান ব্যাংক থেকে একটি পুস্তিকা বের হয়েছে। তাতে শেয়ারের প্রসঙ্গও আছে। কারণ এখনকার ব্যাংকগুলো শেয়ারের কারবারও করে। তাতে বলা হয়েছে যে, কোনো কোম্পানি যদি তার মোট পুঁজির ৪০% বা তারচেয়ে কম সুদী ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তাহলে ওই কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করা যাবে। মনে হয় যেন অহী আছে! চল্লিশ পার্সেন্ট পর্যন্ত সুদী লোন থাকলে সে কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে! এই কথাগুলো গোড়াতেই সঠিক কি না সে প্রসঙ্গ বাদ দিলেও তাদের কথা অনুযায়ীই তো হালাল হয় না। কারণ এখন কোম্পানিগুলোর ব্যাংক-লোন থাকে ৬০% থেকে ৭০%, ৮০% পর্যন্ত। ৬০% নিজের টাকা দিয়ে কোম্পানি করার দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন তো ঘরও করা লাগে না ৬০% নিজের টাকা দিয়ে। ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৮০% লোন পাবেন। ১ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনতে চান তো ব্যাংক আপনাকে ৮০ লক্ষ টাকা লোন দিবে। এজন্য আজকাল এমন কোম্পানি পাওয়া দুষ্কর, যার ব্যাংক-লোন মূল ক্যাপিটালের মাত্র ৪০%। আপনি কোম্পানিগুলোর খোঁজ-খবর নিলে দেখবেন ওদের ৬০-৭০% করে ব্যাংক-লোন আছে। যেসব কোম্পানির শেয়ার মানুষ বেশি কেনে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। কারণ, এতো ওষুধ কোম্পানি! মূল কারবার বৈধ! অথচ কিছুদিন আগেও বেক্সিমকো গ্রুপ ছিল বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপী। এখন অবশ্য তারা আর কাগজে-কলমে ঋণ খেলাপী নেই! যারা এদের সম্পর্কে ঋণখেলাপী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তাদেরকে তওবা-আসতাগফিরুল্লাহ পড়িয়ে দিয়েছে! যাই হোক, আমার দেখানো উদ্দেশ্য এই পার্সেন্টগুলো। এগুলো শরীয়তের কোনো নসে আছে বলে আমরা দেখিনি। ফকীহরা এ রকম পার্সেন্ট ধরে ধরে কোনো কথা বলেছেন তাও আমাদের জানা নেই। অথচ এখন ৩৩%, ৪০%, ৫০% এগুলো এসে গেছে ছাপানো আকারে! তো গোড়ার প্রসঙ্গটাতেই প্রশ্ন আছে।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন যে, বর্তমান শেয়ারবাজার পূর্বের অবস্থায় নেই। তাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শেয়ার বাজারের গতি-প্রকৃতি এবং শেয়ারের দর বাড়া-কমা-এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় শেয়ারবাজারের নিজস্ব কিছু বিষয় দ্বারা। বিষয়টি একটু সুনির্দিষ্ট করে বলবেন কি?
উত্তর : আগে বিষয়টি এই ছিল যে, কোম্পানির কারবার ভালো হলে শেয়ারের দাম বাড়ত। কোনো কোম্পানি বেশি ডিভিডেন্ড দিবে, তা আগে থেকে জানাজানি হলে তার শেয়ারের দাম বাড়ত। ওই বাড়ারও একটা মাত্রা ছিল। জানা গেল যে, কোম্পানি ৩০% ডিভিডেন্ড দিবে তাহলে ২০%, ২৫% বেশি দামেও মানুষ শেয়ার কিনে ফেলত। তদ্রূপ কোম্পানি কোনো সম্ভাবনাময় প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছে তাহলে শেয়ারের দাম বাড়ত। এটা এখনও আছে। কিছু দিন আগে গ্রামীনফোন ঘোষণা দিয়েছে যে, টেকনোলজি সংক্রান্ত ওদের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আসছে। এই ঘোষণার পরও গ্রামীনফোনের শেয়ারের দাম বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে দাম বাড়ার যৌক্তিক বা অর্ধ-যৌক্তিক কয়েকটি কারণ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বিষয়গুলো গৌণ। এখন মুখ্য বিষয় হচ্ছে চাহিদা ও যোগান। কাঁচাবাজারে যেমন চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে দাম বাড়ে-কমে, শেয়ারবাজারেও তেমনি। শেয়ারের যোগান কিন্তু নির্ধারিত। কারণ কতগুলো কোম্পানির শেয়ার বাজারে আছে এবং কত শেয়ার আছে তা অজানা নয়। সামান্য কিছু নিরীহ লোক, যারা ঠেকায় না পড়লে স্টক এক্সচেঞ্জে যায় না তাদের শেয়ার ছাড়া অবশিষ্ট শেয়ার নিয়মিত বেচাকেনা হয়। তাই যোগান নির্ধারিত। তবে চাহিদা বিভিন্ন হওয়ার কারণে দাম বাড়ে এবং কমে। চাহিদা বাড়া বা কমার একটি প্রকাশ্য কারণ হচ্ছে মার্চেন্ট ব্যাংক। মার্চেন্ট ব্যাংক যে শেয়ারের জন্য লোন বেশি দিবে তার দাম বাড়বে, যে শেয়ারের জন্য লোন কম দিবে তার দাম কমবে। আগে মার্চেন্ট ব্যাংক বলতে কিছু ছিল না। তবে লোন নিতে চাইলে শেয়ার বন্ধক রেখে সাধারণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যেত। এখন শুধু শেয়ারে বিনিয়োগকারীদেরকে লোন দেওয়ার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংক হয়েছে। এই লোন-ব্যবসার কারণে বিনিয়োগকারীকে বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। কারণ এতে একদিকে শেয়ারের দাম বাড়ে এবং বর্ধিত মূল্যে শেয়ার খরিদ করতে হয়। অন্যদিকে মার্চেন্ট ব্যাংককে তার লোনের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়! এরপরও চাহিদার কমতি নেই। কারণ মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার কারণে আরো দশজনের ক্রয়-ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে। তারাও কিনবে। ফলে চাহিদা বেশি থাকার কারণে শেয়ারের দাম বাড়ে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মার্চেন্ট ব্যাংক পুরা ১০০% লোন দেয় না। ওরা ওদের স্বার্থ-রক্ষা করে তারপর লোন দেয়। ৭০%, ৮০% এ রকম দেয় এবং অবস্থা বুঝে দেয়। শেয়ারের দাম কমে গেলেও ক্ষতি নেই। শেয়ারগুলো তাদের কাছে মর্গেজ থাকে। এদের মাধ্যম হয়ে রিলিজ হয়। অনেকটা গ্রামদেশের ফড়িয়াদের দাদনের মতো। মাছের প্রজেক্টে যদি দাদন-লোন দেয় তাহলে মাছ বিক্রির সময় সে উপস্থিত। তদ্রূপ আড়তদার থেকে বাকিতে মাছের খাবার নিয়েছেন তো আড়ৎদারকে সামনে রেখে মাছ বিক্রি করতে হবে। ওদের প্রতিনিধিরা খোঁজ খবর রাখে, কোথায় মাছ বিক্রি হচ্ছে, কোন খামারী মাছ বিক্রি করছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের বিষয়টাও এ রকম। পুঁজিপতিরা কীভাবে শেয়ারবাজারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে এটা তার একটি ছোট দৃষ্টান্ত। শেয়ারের দাম যদি ১০%, ২০%ও কমে যায় মার্চেন্ট ব্যাংক তারটা পেয়ে যাবে। কখনো শেয়ারের দাম অনেক বেশি কমে গেলে মার্চেন্ট ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়ে। তো বলছিলাম যে, মার্চেন্ট ব্যাংক হচ্ছে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টির একটি উপায়। এই কারণটাকে আগে বললাম এজন্য যে, এটাই এখন বড় কারণ হয়ে গেছে। শেয়ারবাজারের গতি নির্ধারণে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। এই তো কিছুদিন আগে গ্রামীন ফোনের শেয়ারের দাম যেভাবে বাড়ছিল তাতে অনেক আগেই হয়ত ৫০০/- পার হয়ে যেত, যদি এসইসি আইন করে গ্রামীনের শেয়ারের জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকের লোন দেওয়া নিষিদ্ধ না করত। এই আইন করার পর রাতারাতি শেয়ারের দাম কমে গেল। দেখুন, গ্রামীন ফোনের ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে তার শেয়ারের দাম কমেনি। এটা সবাই বোঝে। এজন্য দরপতনের পর বিক্ষোভ হয় এসইসির বিরুদ্ধে। গ্রামীনফোনের বিরুদ্ধে নয়। এমন কথা কেউ বলে না যে, কোম্পানির ডাইরেক্টররা কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের বেতন নেয় আর বসে বসে মাক্ষি মারে! ফলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শেয়ারের দাম কমেছে! আসলে এখনকার শেয়ারবাজার তার নিজস্ব গতিতে চলে। কোম্পানির সম্পদ, ব্যবসায়িক সফলতা-ব্যর্থতা ইত্যাদির সঙ্গে শেয়ারের দাম বাড়া-কমার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুক্ত নয়। এটা নিয়ন্ত্রিত হয় শেয়ারবাজারের নিজস্ব কিছু বিষয় দ্বারা। একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করলেই তা বোঝা যায়। শেয়ারের দাম বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে গুজব। কিছু লোক আছে যারা গুজব ছড়ানোর কাজ করে। গুজবটা কাজে লেগে যায়। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়। সৌদী যুবরাজ রূপালী ব্যাংক কিনবে এই সংবাদ আসার পর রূপালী ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়ে গেল। অথচ সে কয়েক বছর ধরে ডিভিডেন্ট দিতে পারে না, এজিএম করতে পারে না। তার ১০০/- টাকার শেয়ার তিন হাজার টাকার উপরে চলে গিয়েছিল। বছর বছর থেকে লোকসান গুনতে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার তার ফেসভ্যালুর কয়েক হাজার পার্সেন্ট বেশি দামে লেনদেন হল। পরে যুবরাজ যখন আর কিনল না তখন আবার আগের অবস্থায় ফিরে এল। মাঝে প্রায় দু’বছর পর্যন্ত এই শেয়ারের লেনদেন হল অত্যন্ত চড়া মূল্যে। বলাবাহুল্য, যারা আরো বেশি দামে এই শেয়ার বিক্রি করতে পারবে মনে করে সর্বোচ্চ দামে তা কিনেছিল তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদ্রূপ আগেও বলেছি যে, একটি দু’টি বড় কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়া-কমার কারণেও অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়, কমে যায়। এটা হচ্ছে হুজুগ। বাজারে রব উঠল, বেড়েছে, বেড়েছে, বেড়েছে! কী বেড়েছে, কোনটা বেড়েছে? সবই বেড়েছে!! আবার রব উঠল, কমেছে, কমেছে, কমেছে! দেখা গেল সবই কমে গেছে!!! এছাড়া আইনগত কারণেও বাড়ে কমে। যেমন কোনো সময় এসইসি হুকুম করে যে, অমুক অমুক কোম্পানির শেয়ার স্পটসেল হতে হবে। অর্থাৎ নগদ টাকায় তৎক্ষণাৎ বিক্রি হতে হবে। স্পটসেলের নির্দেশ জারি করলে ওই শেয়ারের দাম কমবে। কারণ অনেকে তা করতে পারে না। আইনগত কারণে শেয়ারের মূল্য বাড়া-কমার আরেকটি দৃষ্টান্ত ‘মিউচুয়াল ফাণ্ড’। মিউচুয়াল ফাণ্ডের শেয়ারের দাম শুধু বাড়তির দিকে যাচ্ছিল। এসইসি আইন করল যে, মিউচুয়াল ফান্ড রাইট শেয়ার, বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না। অর্থাৎ শেয়ার-হোল্ডারদেরকে লভ্যাংশ দিতে হলে নগদ টাকায় দিতে হবে, বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে দেওয়া যাবে না। অর্থনীতিবিদদের মতে, এসইসির এই আইন যৌক্তিক ছিল। কারণ মিউচুয়াল ফাণ্ডের তো অন্য কোথাও কোনো ব্যবসা নেই। অন্য কোথাও টাকা খাটানো হলে এই যুক্তি চলে যে, কোম্পানি অমুক প্রকল্পে টাকা খাটিয়ে ফেলেছে, অতএব এই মুহূর্তে তা তুলে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। প্রকল্পটি লাভজনক, তবে এই মুহূর্তে লভ্যাংশ নগদ টাকায় দেওয়া যাচ্ছে না। এই যুক্তিতে বোনাস শেয়ার দেওয়া যায়, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়টা তো এমন নয়। সে তো ব্যবসাই করে শেয়ারের। বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারই তার এ্যাসেট। আর তা হচ্ছে লিকুইড মানির মতো। যে কোনো সময় তা মার্কেটে বিক্রি করে দিয়ে নগদ টাকা পেতে পারেন, কম পাবেন বা বেশি পাবেন। তাহলে আপনি বোনাস শেয়ার দিবেন কেন? যদি বলেন যে, এখন দাম কম আছে, ভবিষ্যতে দাম বাড়বে, তাহলে এথন এত লাভ দিচ্ছেন কেন? আপনি তো আজকের অবস্থা অনুযায়ী লাভ দিচ্ছেন ভবিষ্যতে দাম বাড়বে, বাড়ুক, কিন্তু আজকেই যখন এত পার্সেন্ট লভ্যাংশ দিবেন তো আপনার কাছ থেকে ওই টাকা বের হয়ে যাবে। এটা আপনি শেয়ার আকারে আটকে রাখতে চাচ্ছেন কেন? যাই হোক, ওই ঘোষণার পরই মিউচুয়াল ফাণ্ডের শেয়ারের দাম কমে গেছে। এরপরে মিউচুয়াল ফাণ্ডওয়ালারা হাইকোর্টে রিট করেছে। বড় বড় উকীল নিয়োগ করেছে। ওই মামলায় এসইসি জয়লাভ করতে পারেনি। এখানে অনেক কথা আছে। সে কথাগুলো এখন থাক। এসইসির একটিই সুযোগ ছিল আপিল করার। তারা আপিলের ঘোষণা দিয়েছে। সে সময় আবার শেয়ারের দাম কমেছে। পরে মিউচুয়াল ফাণ্ডওয়ালারা উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতাশালীদের সাথে বসেছে। শেষ