আর কোন অপরাধবোধ নেই
___________________________
বৃষ্টির ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলের ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলমগ্নতায় কার অতল হৃদয়ের
কলরব শুনতে পাচ্ছি ।
এ কার নুপুর-নিক্কণ সকরুণ সুরে
আজো কাঁদে করোতোয়ার কচুরীর দামে?
রেণুকা? সে তো চৌদ্দ বছর আগেই
ভোকাট্টা হয়ে গেছে গোলাপী ঘুড়িটার মতো!
সেই ঘুড়ি, সেই নিরুদ্দেশ ঘুড়ি কতবার ছলে-বলে
আশ্রয় নিয়েছে রেনুকাদের ছাদে!
যতবারই কুড়োতে গিয়েছি
ততবারই বিদ্ধ হয়েছি শান্ত গভীর দু’চোখের মায়ায়।
তার বেনুনী করা চুলের দোলার বিভ্রমে
যত না চমকিত হয়েছে প্রতিদিন বিকেলের সূর্য
তারো বেশি বিস্ময়ে আমায় চিরকাল বিমূঢ় করে রেখে
ফেরার হয়েছে সে ঘুড়িটার মতোই……
রেণুকা এখন কেবলই এক বিস্মৃত অধ্যায়,
সবার অগোচরে টুপ করে ঝরে যাওয়া ভোরের শিশিরের নাম রেণুকা।
তবুও তার কথা মনে পড়ে,
বার বার কেন এতো মনে পড়ে?
রেণুকার মতোই ফিরে ফিরে আসে ভুবনপুরের মত্ত দুপুর,
পাহাড়ের কোল ঘেঁষা রেললাইন,
হুইসেল বাজিয়ে প্রচন্ড আক্রোশে ছুটে যায় ছুটে আসে ট্রেন,
সেই ট্রেনটাই বার বার আসে যেটা থেঁতলে দিয়েছিল
আমার ভাইয়ের ছোট্ট শরীর।
তার নিথর দেহ, অপলক দৃষ্টি মুছে যেতে না যেতেই
ভেসে ওঠে সেই খোঁড়া শালিকের মুখ
যার বাসা ভেঙ্গে দিয়েছিলাম এক ভর দুপুরে চুপিচুপি।
আহ্, অপরাধ! কতো অপরাধ জমে আছে এই করতলে!
জমা আছে সঙ্গোপনে।
রেণুকার চলে যাওয়া,
ভাইয়ের মৃত্যু,
বাসা-ভাঙ্গা শালিক,
এমন কি কার্নিশের কাকটাও
আমাকে অপরাধী করে রেখে গেছে চিরকাল।
প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে দেখি সেই কাক
হ্যাঁ সেই কাকটিই আমার শিয়রের কাছে বসে চেয়ে থাকে অপলক-
রোদে শুকোতে দেয়া এক ফালি আমসত্ত্ব চুরির দায়ে
যার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেছিলাম আমি।
জানালার ফাঁক দিয়ে নিপুন কৌশলে দক্ষ শিকারীর মতো
এক গুলতিতেই দিয়েছিলাম নিশ্চিত নির্বাণ আঠার বছর আগে।
কাকটি ফিরে এসেছে, যুগপৎ আমার অপরাধবোধ।
একটা কাক, দুটো কাক, অনেকগুলো কাক
একটানা কা-কা করে ডাকছে কাছে কোথাও।
এই তো দেখতে পাচ্ছি,
পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি
ওদের চোখে প্রতিশোধের আগুন।
এখনই পালাতে হবে,
ওই যে বাসটা আসছে …
বৃষ্টিও আসছে … খুব ভিড় …শোরগোল….
তবুও যে করেই হোক উঠতে হবে ..
যাচ্ছলে, পা ফস্কে গেল নাকি!
……………………………….
এখানে এতো রক্ত কেন!
বৃষ্টির ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলের ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলমগ্নতায় কোন এক ফুলকিশোরীর
চুরির টুংটাং সুর শুনতে পাচ্ছি।
বৃষ্টি মুছে দিচ্ছে সব,
সব লাল রং . . .
সব জমাট কষ্ট . . .
আর সব অপরাধবোধ।