প্লেন কেন ওড়ে, বল কেন বাঁক খায়

Author Topic: প্লেন কেন ওড়ে, বল কেন বাঁক খায়  (Read 2174 times)

Offline Badshah Mamun

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2028
    • View Profile
    • Daffodil International University
প্লেন কেন ওড়ে, বল কেন বাঁক খায়

প্রথমেই প্রশ্ন—রেসিং কার, টর্পেডো আর উসাইন বোল্টের মধ্যে মিল কোথায়? সাধারণভাবে দেখলে এদের মধ্যে মিল নেই। রেসিংকার চলে রাস্তায়, টর্পেডো পানিতে আর উসাইন বোল্ট সবার আগে দৌড় শেষ করে দুই হাতে আকাশে তির ছোড়েন। বোল্ট মানুষ আর বাকি দুটো যন্ত্র। তবে তাদের মধ্যে একটা বড় রকমের মিল আছে। সেটা হলো, তারা দ্রুতগতিসম্পন্ন।
এবার পরের প্রশ্নে আসি। বোল্টের জামাটা এত আঁটসাঁট কেন? হাফপ্যান্ট আর লুঙ্গি পরে আমরা তো ভালোই দৌড়ঝাঁপ করি, খাল-বিলে দাপিয়ে বেড়াই। তাহলে অলিম্পিকের সাঁতারুরা আরেকটু ঢিলেঢালা সাঁতারের পোশাক পরে না কেন?
ডুবোজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র, উড়োজাহাজ, টর্পেডো ও রেসিংকার—সবগুলোর গঠনে যে মিল আছে, সেটা কিন্তু কাকতালীয় নয়। সামনের দিকটা গোলাকার, পুরো শরীর সিলিন্ডারের মতো, কিন্তু পেছনের দিকে গিয়ে সিলিন্ডারটা বেশ খানিকটা সরু হয়ে গেছে। এই বিশেষ ধরনের গড়নকে বলা হয় অ্যারোডাইনামিক গঠন। চলুন দেখা যাক, কেন এই মিল।
পেছনমুখো টান আর উপরমুখো ধাক্কা
যেকোনো প্রবাহী পদার্থের (তরল বা গ্যাসীয়) ভেতর দিয়ে যদি কোনো কিছু চলাচল করতে চায়, তাহলে সেই তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ তাকে বাধা দেবে। যেমন উড়োজাহাজ চলার সময় বাতাস বাধা দেয় আর ডুবোজাহাজ চলার সময় পানি। ডুবোজাহাজ বা উড়োজাহাজ তৈরি করার সময় এই বাধার কথা হিসাব করতে হয়। পুরো হিসাবটা বেশ জটিল; কিন্তু নকশা করার সময়, ড্র্যাগ বা পেছনমুখো টান ও লিফট বা উপরমুখো ধাক্কা—এই দুই বলের কথা মাথায় রাখতেই হবে।
একটা প্লেন যখন বাতাসের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগোতে চায়, তখন বাতাসের যে বাধা প্লেনের চলার দিকের বিপরীতে কাজ করে, তাকেই বলে ড্র্যাগ ফোর্স বা ড্র্যাগ বল। এই বাধা যত বেশি হবে, তা অতিক্রম করে সামনে এগোতে হলে তত বেশি বাড়তি শক্তির প্রয়োজন। বাড়তি শক্তি মানেই বাড়তি জ্বালানি, আর যত বেশি জ্বালানি পুড়বে, তত বেশি খরচা; সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে পরিবেশ দূষণ। তাই চেষ্টা থাকে ড্র্যাগের পরিমাণ যথাসাধ্য কমানোর।
ড্র্যাগ কাজ করে বস্তু যেদিকে চলে তার বিপরীত দিকে।
অন্যদিকে, লিফট বল কাজ করে বস্তর চলার দিকের সঙ্গে লম্বভাবে। কোনো বস্তু চলার সময় তার ওপর দিয়ে যে পানির বা বাতাসের প্রবাহ, সেটা নিচ দিয়ে যে প্রবাহ, তার চেয়ে দ্রুততর। এ কারণে বস্তুটির ওপরের দিকের যে চাপ অনুভব করবে, সেটা নিচের দিকে অনুভব করা চাপের তুলনায় কম হবে। ফলে বস্তুটি ওপরের দিকে লব্ধি বল অনুভব করবে এবং ওপরের দিকে উঠে যাবে। এটাকেই বলে লিফট বল। এই লিফট বলের প্রভাবেই উড়োজাহাজ আকাশে ওড়ে।
ড্র্যাগ খুব বেশি কমালে লিফট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। লিফট উড়োজাহাজের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও আমরা গাড়িগুলো মাটিতেই রাখতে চাই। তাই গাড়ির ড্র্যাগ খুব বেশি কমানো হয় না।
প্যারাসুট কেন ধীরে নামে
ড্র্যাগ বস্তুর গতি কমায়। যত বেশি জায়গা নিয়ে বস্তু অবস্থান করবে, তার ড্র্যাগ তত বেশি হবে। প্যারাসুট নিয়ে নামার সময় এর ছড়ানো গঠনের কারণে ড্র্যাগ বেশি হয়।
আরোহীর শরীরের ভর মাধ্যাকর্ষণ বলের জন্য তাকে নিচের দিকে টানতে থাকে এবং প্যারাসুটের ড্র্যাগ এই বলের বিরুদ্ধে কাজ করে। যার ফলে মানুষ ধীরে ধীরে নিরাপদে মাটিতে নেমে আসে।
মানুষ কিন্তু ড্র্যাগ লিফটের ব্যাপার জানে অনেক আগে থেকেই। না হলে পালতোলা জাহাজগুলো সুবিশাল সমুদ্র পাড়ি দিত কীভাবে? প্রয়োজন অনুযায়ী পালতোলা বা গুটিয়ে নেওয়া কিংবা বাতাসের দিকের সঙ্গে পাল ঘুরিয়ে দিক পরিবর্তন করা—এসব মানুষ কয়েক শ বছর ধরে করে আসছে।
দেখতে মাছের মতো
মাছের শরীরটা মনে আছে? মাঝখানে চওড়া, কিন্তু মাথা আর লেজের দিকটা অপেক্ষাকৃত সরু। এ ধরনের শারীরিক গঠনকে বলা হয় স্ট্রিমলাইন্ড স্ট্রাকচার। অধিকাংশ জলজ প্রাণীর শরীরই এমন। এই ধরনের গঠনের কারণেই মাছ পানিতে চলাফেরা করার সময় পানির বাধা কম টের পায় এবং সহজে ছুটতে পারে। মানুষ প্রকৃতি থেকে শেখে অনেক কিছু। ডুবোজাহাজ ও টর্পেডো বানানোর সময়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবেই মাথায় রেখেছিলেন মাছের চলাফেরা। তেমনি সাঁতারের সময় ঢিলেঢালা পোশাকে সমস্যা নেই, কিন্তু অলিম্পিকে বা অন্যান্য বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা যেখানে ফলাফল নির্ধারণে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে জয়মাল্য হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে, সেখানে কিন্তু পানির বাধা বা ড্র্যাগকে হিসাবের মধ্যে রাখা ছাড়া উপায় নেই। পৃথিবীতে এখন মিলিয়ন ডলারের গবেষণা চলছে, কীভাবে সাঁতারের সময় ড্র্যাগ কমানো যায়, তা নিয়ে।
ঠিক একই কারণে দ্রুতগতির দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীরা আঁটসাঁট পোশাক পরে, যাতে বাতাসের বাধা কম হয়। সাইক্লিংয়ে আঁটসাঁট পোশাক ও মাথার হেলমেটের বিশেষ গড়নও বাতাসের বাধাজনিত ড্র্যাগ কমানোর জন্য।
ইনসুইং আউটসুইং আর রিভারসুইং
অনেকে হয়তো জানে না, ড্র্যাগ-লিফট ক্রিকেট খেলার একটি অন্যতম উপকরণ। ক্রিকেট খেলায় বোলারদের দেখা যায়, বলের একপাশ চকচকে রাখার জন্য চেষ্টা করতে আর অন্য পাশটা অমসৃণ রাখতে। কী কারণে? ১৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে যে বল আসে, সেটি বাতাসের বাধা পাবেই। এখন বলের দুই পাশের মসৃণতা যদি সমান না হয়, তাহলে এক পাশ দিয়ে পার হওয়া বাতাসের গতি অন্য পাশের থেকে আলাদা হবে। এ তারতম্যের কারণে বাতাসের চাপ দুই পাশে সমান হবে না। তাই যেদিকে চাপ বেশি, বলটি তার বিপরীত দিকে ঘুরে যাবে। এই ঘুরে যাওয়াকেই বলা হয় সুইং।
ক্রিকেটারদের জন্য খেলার পাশাপাশি তাই বিজ্ঞানের কোর্স চালু করলে মন্দ হয় না!

লেখক:
ইমরান খান
গবেষণা সহকারী
কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা।

Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-05-20/news/259092
Md. Abdullah-Al-Mamun (Badshah)
Senior Assistant Director
Daffodil International University
01811-458850
cmoffice@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd

www.fb.com/badshahmamun.ju
www.linkedin.com/in/badshahmamun
www.twitter.com/badshahmamun