ক্ষমা প্রদর্শনের ধর্ম ইসলাম

Author Topic: ক্ষমা প্রদর্শনের ধর্ম ইসলাম  (Read 2263 times)

Offline wahid

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 116
    • View Profile
হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর মহান উত্তরাধিকারী হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রধান কর্তব্য ছিল খাঁটি তাওহিদকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং কাবা ঘরকে অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করা।
অষ্টম হিজরীর ১০ রমজান নবীকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১০ হাজার সৈন্যসহ মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে আরব গোত্রগুলো এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেনাদলে মিলিত হতে লাগল। মাররুয্ যাহ্রান নামক স্থানে শিবির স্থাপন করা হলো। সৈন্যরা বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল। এ স্থানটি ছিল মক্কা মুকার্রমা থেকে এক মঞ্জিল অথবা তার চেয়েও কম দূরত্বে অবস্থিত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে সৈন্যরা আলাদা আলাদাভাবে আগুন জ্বালালেন। তাতে পুরো মরুভূমি আলোয় ঝলমল করে উঠল। সৈন্য আগমনের মৃদু আওয়াজ কোরাইশদের কানে ইতিমধ্যেই পৌঁছেছিল। সঠিক খবর অনুসন্ধানের জন্য তারা হজরত খাদিজা (রা.)-এর ভ্রাতুষ্পুুত্র হাকিম ইবনে হিযাম, আবু সুফিয়ান এবং বুদাইল ইবনে ওয়ারাকাকে পাঠাল।
আবু সুফিয়ানের ইতিপূর্বেকার সব কৃতকর্ম সবার সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তাঁর অতীতের প্রতিটি কর্মই তার হত্যার দাবীদার। ইসলামের সঙ্গে শত্রুতা, মদীনা আক্রমণ, আরব গোত্রগুলোকে উস্কানি দেওয়া, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গোপনে হত্যার চক্রান্ত ইত্যাদি যেকোনো কারণে নবীজি (সা.) তাকে হত্যার আদেশ দিতে পারতেন। কিন্তু এসবের ঊর্ধে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দয়ার্দ্র হৃদয় ও ক্ষমাশীল মন। তিনি আবু সুফিয়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে অনুচ্চস্বরে বললেন, 'এটা ভয়ের স্থান নয়।'
নবী করীম (সা.) ক্ষমা, শান্তি ও নিরাপত্তার বৃত্ত এই দিন প্রসারিত করে দেন। ফলে মক্কার লোকদের মধ্যে কেবল সেই সব লোকই ধ্বংস হতে পারত, যারা নিজেরাই শান্তি ও নিরাপত্তা পেতে ইচ্ছুক কিংবা আগ্রহী নয় এবং নিজের জীবনের প্রতি যারা হতাশ কিংবা বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি ঘোষণা দেন- "যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, যে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে অবস্থান করবে সেও নিরাপদ, আর মাসজিদুল হারামে যে প্রবেশ করবে সেও নিরাপত্তা লাভ করবে।" রাসুলুল্লাহ্ (সা.) সেনাবাহিনীকে হেদায়েত দিয়ে বলেছিলেন, "মক্কায় প্রবেশেরকালে কেবল তাদের ওপর হাত
তোলা জায়েজ, যারা তাদের পথে বাধা সৃষ্টি করবে কিংবা তাদের মোকাবিলায় দাঁড়াবে। তিনি এও নির্দেশ দিয়েছিলেন, মক্কার লোকদের সহায়-সম্পদের ব্যাপারে সংযম প্রদর্শন করতে হবে, এ বিষয়ে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করা যাবে না।"
নবী করীম (সা.) এমন বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন যখন তাঁর মস্তক মোবারক আল্লাহর প্রতি দাসত্বসুলভ ভয় ও বিনয়ের আধিক্যে একেবারে ঝুঁকে পড়েছিল। মনে হচ্ছিল, নবী করীম (সা.)-এর থুতনি উটনীর পিঠের কুঁজ স্পর্শ করবে। এ সময় তিনি কোরআন শরীফের সুরা ফাতাহ্ তেলাওয়াত করছিলেন।
বিজয়ের এই দিনে এক ব্যক্তি নবী করীম (সা.)-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তিনি তার এই অবস্থা অনুভব করে তাকে অভয় প্রদান করেন এবং বলেন, "ভয় পেয়ো না, শান্ত হও। আমি কোনো বাদশাহ নই। আমি এমন এক কোরায়েশ মহিলার সন্তান, যিনি শুকনো গোশত ভক্ষণ করতেন।"
এ দিন আনসারদের পতাকা ছিল তাঁদের অধিনায়ক হজরত সা'দ ইবনে উবাদার (রা.) হাতে। অপরদিকে তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের সর্দার। তিনি সে সময় আবু সুফিয়ানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আবু সুফিয়ানের দিকে নজর পড়তেই বলে ওঠেন, 'আজ ঘোরতর যুদ্ধের দিন, প্রবল শোণিত পাতের দিন। আজ কাবা শরীফ অঙ্গনে সব কিছুই অনুমোদিত ও বৈধ বিবেচিত হবে। আল্লাহ তায়ালা আজ কোরায়েশদের অবনমিত করেছেন।' অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর বাহিনীর মধ্যে আবু সুফিয়ানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় আবু সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হজরত সা'দ ইবনে উবাদার (রা.) বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করলেন এই বলে, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! এই মাত্র সা'দ কী বলল, তা কি আপনি শুনেছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কী বলল সা'দ? এ কথা শুনতেই তিনি সা'দের (রা.) কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। নবী করীম (সা.) সা'দের কথা খুবই অপছন্দ করলেন এবং বললেন- 'না, আজ ক্ষমা ও করুণা প্রদর্শনের দিন। আল্লাহ্ তায়ালা আজ কোরায়েশদের সম্মানিত করবেন এবং কাবার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।'
রাসুলুল্লাহ্ (সা.) যখন মক্কায় আপন জায়গায় পৌঁছে গেলেন এবং লোকেরাও নিশ্চিন্ত হয়ে গেল তখন তিনি বাইরে তাশরীফ নিলেন এবং বায়তুল্লাহ্র দিকে রওয়ানা হলেন। সেখানে গিয়ে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করলেন। এ সময় তাঁর পবিত্র হাতে একটি ধনুক ছিল। কাবার ভেতর সে সময় ৩৬০টি মূর্তি ছিল। তিনি ধনুকের সাহায্যে মূর্তিগুলোকে খোঁচা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন 'সত্য সমাগত আর মিথ্যা দূরীভূত; মিথ্যা তো দূরীভূত হওয়ার জন্যই'।

Offline sumon_acce

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 359
    • View Profile
Thanks for sharing this.