‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে প্রধান হাতিয়ার হবে তথ্যপ্রযুক্তি’। বাজেট বক্তৃতায় এমনটাই বলে অর্থমন্ত্রী এই হাতিয়ারকে শক্তিশালী করতে গতবারের চেয়ে তিন গুণের চেয়েও বেশি বরাদ্দ দিলেন।
আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ দাঁড়ায় ১০৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগামী বাজেটে খাতটিতে বরাদ্দ বাড়ছে তিন গুণেরও বেশি।
এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কম্পিউটার প্রিন্টারের রিবন, প্রিন্টারে ব্যবহূত ইংক ও রিফিল কিটস, কম্পিউটার মডেম, সেলুলার টেলিফোন সেট আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাজেট বক্তব্যে গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ই-গর্ভনেন্স, ই-সেবা, ই-শিক্ষা, ই-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে আমরা সমান মনোযোগ দিয়েছি। প্রান্তিক মানুষের কাছে তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের চার হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রতি মাসে ৪০ লাখ মানুষ সেবা নিচ্ছে। এতে করে মাঠ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বেড়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মোবাইল মানি অর্ডার সেবা এবং ক্যাশ কার্ডের প্রচলন করা হয়েছে। আট হাজার গ্রামীণ ডাকঘর ও ৫০০টি উপজেলা ডাকঘরকে ই-সেন্টারে রূপান্তরের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিসেবা উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে আমরা জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ (আইসিটি) নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এর আওতায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ৩০৬টি কর্মতালিকা বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাবমেরিন কেবেলর ব্যান্ডউইডথ সক্ষমতা ৪৪ দশমিক ৬ থেকে ১৬০ জিবিপিএস পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যান্ডউইডথ চার্জ কমিয়ে এক-তৃতীয়াংশ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেশব্যাপী আঞ্চলিক তথ্য মহাসড়ক সৃষ্টির পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করছি, ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক কেব্ল স্থাপনের কাজ শেষ হবে। এর ফলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের তথ্য মহাসড়কের অবকাঠামো নির্মিত হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলার অবস্থান ষষ্ঠ। কিন্তু ওয়েব কনটেন্টে মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে বাংলা। ওয়েবে বাংলা বাড়ানোর জন্য সব জেলা তথ্য বাতায়ন, ওয়েবসাইট ও জাতীয় ই-তথ্যকোষ বাংলায় প্রণয়ন করা হয়েছে।’ ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে সারা দেশের ২০ হাজার ৫০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে বেসরকারি খাতে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২২টি প্রতিষ্ঠান আইজিডব্লিউ, ১৮টি প্রতিষ্ঠান আইসিএক্স এবং ৩৩টি প্রতিষ্ঠান আইআইজি লাইসেন্স নেওয়ার জন্য সব কার্যক্রম শেষ করেছে।’ এ ছাড়া দেশের সব উপজেলাকে মোবাইল ইন্টারনেটের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, হাইটেক শিল্প স্থাপনে আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক এবং ঢাকায় একটি সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, গত অর্থবছর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আইসিটি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রায় ১০ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সফটওয়্যার শিল্পের আয় গত বছরের তিন কোটি ৫০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে এবার চার কোটি ৬০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে।