Recent Posts

Pages: 1 2 3 [4] 5 6 ... 10
31
সাংবাদিক থেকে ইনফ্লুয়েন্সারদের আলাদা করার সময় এসেছে


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর সেই কারণেই হয়তো নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে সেই বহুল প্রচলিত প্রবাদ—'অসির চেয়ে মসির জোর বেশি'।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য তথাকথিত 'ইনফ্লুয়েন্সার', যাদের কোনো জবাবদিহি নেই। বিভাজন বাড়ানো ও বিদ্বেষ উস্কে দেওয়াতেই তাদের সাফল্য। প্রায়শই দেখা যায়, বেপরোয়া হয়ে মিথ্যা ও অর্ধসত্যের মিশেলে তথ্য বিকৃত করে, অন্যদের বক্তব্য ভুলভাবে তুলে ধরে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করে।

আর এখানেই সবচেয়ে বড় বিপদ। পেশাদার সাংবাদিকতা ও ইনফ্লুয়েন্সারদের কনটেন্টের মধ্যে থাকছে না কোনো সীমারেখা। এই ডিজিটাল যুগে সংহতি নষ্ট করার একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই কনটেন্টগুলো।

পেশাদার সাংবাদিক ও স্বঘোষিত ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারায় সাধারণ মানুষ এখন সহজেই প্রভাবিত বা প্ররোচিত হচ্ছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে মব তৈরি করা আজকের দিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনাগুলোর একটি।

পেশাদার সাংবাদিকরা সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বেতারের মতো গণমাধ্যমে কাজ করেন, তথ্য যাচাই করেন এবং সম্পাদকীয় ও পেশাগত নীতিমালা মেনে চলেন—তারা এই সত্যের লড়াইয়ে যেন পিছিয়ে পড়ছেন।

বিপরীতে, ইনফ্লুয়েন্সাররা জনপ্রিয়তা, লাইক ও কনটেন্ট থেকে আয় করার অদম্য ক্ষুধা থেকে কখনো তথ্য বিকৃত করে, কখনো মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করছেন। অবাক করার বিষয় হলো, বহু বছরের অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের মধ্যেও অনেকে সস্তা জনপ্রিয়তা বা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ থেকে নৈতিক মানদণ্ড বিসর্জন দিয়েছেন।

বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে গণমাধ্যম সচেতনতা এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যার ফলে বিদ্বেষের বীজ বপনের উর্বর ভূমি হয়ে উঠেছে এই দেশ। রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব—সবাই এখন অনলাইন হয়রানির ঝুঁকিতে। গঠনমূলক বিতর্ক বা অর্থবহ পাল্টা যুক্তি দেওয়ার বদলে প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করা, তথ্য বিকৃত করা বা কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহারই তাদের কাছে সাধারণ চর্চা।

আওয়ামী লীগ আমলে 'রাজাকার' ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর অপবাদ। আর এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে 'ভারতের দালাল'। এই 'ডিজিটাল মব' অনেক ক্ষেত্রেই অনলাইনের গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব জীবনেও সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।

সম্প্রতি আমরা এমন বেশকিছু উদ্বেগজনক ঘটনার সাক্ষী হয়েছি—যার মধ্যে কয়েকটি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। সন্দেহ করা হচ্ছে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী রূপরেখা ব্যাহত করতেই ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ঘটনার অবতারণা করা হচ্ছে।

এই অশুভ প্রচেষ্টার পেছনে দুটি প্রধান শক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে। প্রথমত, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পলাতক সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক এবং  দ্বিতীয়ত, সেই সব ক্ষমতাবান ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ঘৃণা ছড়ানোর ও বিভেদ সৃষ্টির অস্ত্রে পরিণত করেছে।

বাংলাদেশে এই 'ডিজিটাল মবে'র অন্যতম চারণভূমি হলো ফেসবুক ও ইউটিউব। বৈশ্বিকভাবে এই ভূমিকা পালন করছে এক্স (সাবেক টুইটার)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই ধ্বংসাত্মক ব্যবহার শুধু বাংলাদেশে হচ্ছে তা না। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের তদন্তে বলা হয়, এই প্ল্যাটফর্মগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ উস্কে দিতেও ভূমিকা রেখেছে। ২০২১ সালে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়।

সামাজিক লাঞ্ছনা নতুন কোনো প্রবণতা নয়। তবে বিস্ময়কর বিষয় হলো, যাদের সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছিত হওয়ার কথা—যেমন: কালোবাজারি, দুর্নীতিবাজ কিংবা খাদ্যে ভেজালকারী—তারা এই 'ডিজিটাল মবে'র শিকার হন না। বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সুপরিচিত ব্যক্তিদেরই পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ যেভাবে তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার আহ্বান জানিয়ে ফ্যাসিবাদী দলে পরিণত হয়েছিল, এখন আরেকদল মানুষকে একই পথে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। তারাও প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে চায়। এই প্রবণতা চলতে থাকলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হবে, সহিংসতা বাড়বে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।

এই অস্থির পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতিক্রিয়াও সন্তোষজনক নয়। উস্কানিদাতা, দাঙ্গাবাজ ও অপরাধীদের প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ—বিশেষ করে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। মাগুরায় এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা কিংবা মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো কিছু ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রকে দেখা গেছে অপ্রস্তুত কিংবা উদাসীন।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক অনুভূতিকে ব্যবহার করে ইনফ্লুয়েন্সারদের উস্কানিমূলক বক্তব্য সমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। 'মতপ্রকাশের স্বাধীনতা'র নামে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়াও সহ্য করা হচ্ছে। সরকার বিষয়টিতে যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছে বলে মনে হয় না।

অনেক সমালোচকের অভিযোগ, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই এসব উস্কানিকে উপেক্ষা করছে। আমরা অনেকেই এই অভিযোগ বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু চুপ করে থাকাও কোনো সমাধান নয়। কেউই চায় না যে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করবে কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করবে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিষয় হলো—অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানো ও সহিংসতার উস্কানি রোধের প্রধান দায়িত্ব সরকারের। ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত দুটি প্রস্তাবেও (এ/আরইএস/৭৮/২১৪ ও এ/আরইএস/৭৮/২১৩) বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। কারণ, এগুলো পরিচালনা করে বহুজাতিক করপোরেশনগুলো। তারপরও, বিশ্বের বহু দেশ ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিলিয়ন ডলারের জরিমানা করেছে। যার ফলে তারা ক্ষতিকর কনটেন্ট প্রচারের ক্ষেত্রে কঠোর নীতি গ্রহণে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশকেও সেই পথে হাঁটতে হবে—এখনই। এসব প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে, ঘৃণা ছড়ানো বা বিকৃত তথ্যের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, ডিজিটাল মাধ্যম যেন ঘৃণা ছড়ানোর জায়গা না হয়ে ওঠে।

২০২৬ সালে নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে জবাবদিহির আওতায় আনা এখন সবচেয়ে জরুরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন নয়; বরং বিভাজন ও সহিংসতায় সমাজকে প্রভাবিত করা থেকে সুরক্ষিত রাখা। এভাবে আর ঘৃণা ছড়াতে দেওয়া যাবে না।

Source: https://bangla.thedailystar.net/opinion/views/news-704106
32
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে নতুন সূচনার আহ্বান

“দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে” — এই বাক্যটি শুধু এক ধরনের হতাশার চিত্র নয়, এটি জীবনের এক গভীর বাস্তবতাকে প্রকাশ করে। এমন সময় আসে যখন মনে হয়, সামনে আর কোনো রাস্তা নেই, চারপাশের সব দরজা বন্ধ। এক অদৃশ্য দেওয়ালের সামনে এসে দাঁড়াই, যেখানে পিছু হটার উপায় নেই, আর এগোনোর পথও অস্পষ্ট।

জীবনের এই পর্যায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অফিস কিংবা জাতীয়—যেকোনো ক্ষেত্রেই আসতে পারে। কেউ হয়তো আর্থিক সংকটে জর্জরিত, কেউ মানসিক চাপে ভেঙে পড়েছে, আবার কেউ জীবনের কোনো কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। পরিবারও এমন এক দুঃসময়ে পড়তে পারে, যখন সমাধানের কোনো পথ চোখে পড়ে না। এমনকি একটি জাতিও এমন অবস্থায় পড়তে পারে, যখন ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হয়।

এই অবস্থায় মানুষ নানা আবেগে ভরে যায়—ভয়, হতাশা, অসহায়তা, ক্ষোভ, অনিশ্চয়তা। সবকিছু যেন থমকে যায়। কিন্তু এখানেই লুকিয়ে থাকে এক আশ্চর্য সুযোগ — নতুন করে শুরু করার শক্তি।

সংকটই কখনো কখনো পুনর্জাগরণের সূচনা হয়

যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন বাধ্য হই নতুন করে ভাবতে, নতুনভাবে বাঁচতে। পুরনো পথে চলা বন্ধ হলে, নতুন পথের সন্ধান শুরু হয়। জীবনের অনেক বড় সাফল্যের সূচনা এমন অচল অবস্থাতেই ঘটে।

এই সময়টিতে আমাদের করণীয় হতে পারে—

১। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করুন: শান্তভাবে বসে ভেবে দেখুন, কী কারণে এই অবস্থায় এসেছি। মূল কারণ জানা গেলে সমাধানও স্পষ্ট হয়।
২। সম্ভাবনার দরজা খুঁজুন: মনে হতে পারে, সব দরজা বন্ধ — কিন্তু সত্যিকারে হয়তো কোনো ছোট জানালা খোলা আছে। সেটিই হতে পারে আশার আলো।
৩। সহায়তা নিন: সংকটে একা থাকা নয়, বরং যাদের বিশ্বাস করেন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। পরামর্শ, ভালোবাসা ও সহযোগিতা অনেক সময় অন্ধকারে আলো দেখায়।
৪। মনোবল দৃঢ় রাখুন: ভয় বা হতাশা নয়, বিশ্বাস ও ধৈর্যই এখানে সবচেয়ে বড় শক্তি। মনে রাখুন, রাত যত গভীরই হোক, ভোর আসবেই।
৫। নতুন কৌশল শিখুন: হয়তো পুরনো ধ্যানধারণা আর কাজ করছে না। তাই নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার সময় এসেছে। পরিবর্তনই বেঁচে থাকার প্রমাণ।

দেওয়াল নয়, এটি হতে পারে একটি দরজা

“দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে” — এই বাক্যটি শুধুই অসহায়তার প্রতীক নয়; এটি এক ধরনের জাগরণের আহ্বান। এই দেয়ালই হতে পারে জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। হয়তো এখান থেকেই শুরু হবে নতুন গল্প, নতুন দিগন্ত।

জীবন কখনোই একেবারে শেষ হয়ে যায় না। প্রতিটি কঠিন মুহূর্তের পেছনে লুকিয়ে থাকে শেখার সুযোগ, বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা।
যতক্ষণ আমরা আশাকে বাঁচিয়ে রাখি, ততক্ষণ কোনো দেয়ালই আমাদের আটকে রাখতে পারে না।

শেষ কথা:

যখন মনে হবে, “আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে”, তখন ভেবে দেখুন — হয়তো এই দেয়ালটাই আপনার জীবনের নতুন দরজায় পরিণত হতে যাচ্ছে। দরকার শুধু সাহস, বিশ্বাস, এবং একটুখানি আলো দেখার মন।
33
সিজদার আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ:

ভূমিকা: মানুষের জীবনে শান্তি, প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যে ইবাদত সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে তা হলো সালাত। আর সালাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বিনয়, সর্বাধিক আত্মসমর্পণ ও গভীর সংযোগের প্রতীক হলো সিজদা। আল্লাহ বলেন: "তোমরা সিজদা করো এবং নিকটবর্তী হও।" (সূরা আলাক: ১৯)!

সিজদা শুধু আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে না, বরং আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে সিজদার ভঙ্গি মানুষের শরীর, মস্তিষ্ক ও মনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

১. সিজদা করো আল্লাহর নিকটবর্তী হও (৯৬:১৯): দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ

(ক). দৈহিক (Physical) বিশ্লেষণ: সিজদা হলো শরীরের পূর্ণ বিনয়ের প্রতীক: কপাল, নাক, দুই হাত, দুই হাঁটু ও দুই পা, এই সকল অঙ্গ মাটিতে লেগে যায়।

এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, মস্তিষ্ক বেশি অক্সিজেন পায়, পেশি ও জয়েন্ট নমনীয় হয়। সুতরাং সিজদা কেবল ইবাদত নয়, এটি শরীরের জন্যও স্বাস্থ্যকর ভঙ্গি।

(খ). বুদ্ধিবৃত্তিক (Intellectual) বিশ্লেষণ: সিজদা মানুষকে শেখায়: সর্বোচ্চ জ্ঞান, শক্তি ও মর্যাদার অধিকারী কেবল আল্লাহ। Frontal lobe (যা সিদ্ধান্ত, নৈতিকতা ও যুক্তিবোধ নিয়ন্ত্রণ করে) সিজদার সময় মাটিতে লেগে যায়, এর মাধ্যমে পূর্ণভাবে মানুষ স্বীকার করে নেয় যে তার জ্ঞান সীমিত, আর আল্লাহই সর্বজ্ঞ। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সিজদা মানুষের অহংকার ভেঙে সত্য উপলব্ধি করায়।

(গ). আধ্যাত্মিক (Spiritual) বিশ্লেষণ: সিজদা হলো মানুষের পূর্ণ আত্মসমর্পণ (Total Submission)। এতে ক্বলব-হৃদয় প্রশান্তি পায়, নাফস-আত্মা শান্ত হয় ও আল্লাহর নৈকট্যের স্বাদ গ্রহণ করে। সিজদা মানুষকে অহংকার থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে দৃঢ় করে।

সিজদা হলো পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রতীক। এই সিজদা অবস্থায় মানুষ ঘোষণা করে, আমি দুর্বল, আল্লাহই সর্বশক্তিমান। আমি সৃষ্টি, আল্লাহ আমার একমাত্র স্রষ্টা। আমার কোনো অহংকার নেই; আমি শুধু তাঁর বান্দা। এভাবে সিজদা হলো পূর্ণ আত্মসমর্পণ (Total Submission), যা মানুষের অন্তরে বিনয়, কৃতজ্ঞতা ও আল্লাহর নৈকট্য সৃষ্টি করে।

(ঘ). সংক্ষেপে: এই আয়াত আমাদের শেখায়, সিজদা হলো মানুষের শরীর, বুদ্ধি ও আত্মার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদত। শরীর এতে প্রশান্তি পায়, বুদ্ধি বিনয় শিখে, আর নাফস-আত্মা আল্লাহর নৈকট্য অনুভব করে

২. বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ:

(ক). মস্তিষ্কের ওজন ও সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড: মানুষের মস্তিষ্কের (Brain) প্রকৃত ওজন প্রায় ১২০০–১৪০০ গ্রাম, কিন্তু সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে (CSF) ভেসে থাকায় কার্যত মাত্র ৫০ গ্রাম চাপ অনুভূত হয়। সিজদার সময় মাথা নিচু হলে CSF সামনের দিকে সরে গিয়ে Frontal Lobe-এ Massage প্রভাব সৃষ্টি করে, যা মস্তিষ্ককে আরাম দেয়।

(খ). রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেন সরবরাহ: এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সিজদার মতো অবস্থায় Cerebral Blood Flow বা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় (Ref: Aljawarneh et al., Journal of Physical Therapy Science, 2019)।

এতে মস্তিষ্কের Frontal lobe বেশি অক্সিজেন পায়, যা মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নৈতিকতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে মন সতেজ হয়, একাগ্রতা বাড়ে এবং উদ্বেগ কমে।

(গ). স্নায়ুতন্ত্র ও মানসিক প্রশান্তি: Electroencephalogram (EEG) Studies দেখিয়েছে যে সিজদার সময় মস্তিষ্কে Alpha Waves বাড়ে, যা শান্তি ও প্রশান্তির নির্দেশক (Ref: Doufesh et al., Neuroscience Letters, 2012)।

গবেষণা অনুযায়ী, সিজদার সময় Parasympathetic Nervous System সক্রিয় হয়, হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ কমে যায়, এবং সুখের হরমোন Endorphin ও Serotonin নিঃসৃত হয়। তাই সিজদা হলো এক ধরণের Natural Stress Reliever।

(ঘ). দৈহিকক উপকারিতা: সিজদার সময় শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ও মাংসপেশী প্রসারিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সালাতের ভঙ্গিগুলো বিশেষত সিজদা Lower Back Pain এবং  Spine Flexibility উন্নত করতে সাহায্য করে (Ref: Sayeed & Prakash, Annals of Saudi Medicine, 2013)। সিজদা এক ধরণের হালকা ব্যায়াম, যা শরীরকে নমনীয় রাখে এবং রক্ত চলাচলকে উন্নত করে।

৩. আইন, নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দর্শনের আলোকে সিজদা:

আইন: ইসলামী শরীয়তে সিজদা ছাড়া সালাত বৈধ হয় না। নীতি: সিজদা শেখায় সমতা, আল্লাহর সামনে সবাই সমান। নৈতিকতা: এটি অহংকার ভেঙে বিনয় সৃষ্টি করে। মূল্যবোধ: এটি মনে করায় মানুষের উদ্দেশ্য কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি। দর্শন: সিজদা শেখায় মানুষের সীমাবদ্ধতা ও আল্লাহর সর্বশক্তিমত্তা।

৪. উপসংহার:

সিজদা একটি ইবাদতের অতি গুরুত্বপূর্ণ রীতি এবং সেই সাথে এটি মানুষের দেহ ও নাফসের (আত্মা) জন্য এক পূর্ণাঙ্গ থেরাপিও বটে। গবেষণা প্রমাণ করেছে যে সিজদা মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, মানসিক প্রশান্তি আনে এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। আধ্যাত্মিকভাবে এটি হলো আল্লাহর সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পণ।

সুতরাং সিজদা হলো একদিকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপকারী শারিরীক ভঙ্গি, অন্যদিকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় ও নৈকট্যের সর্বোচ্চ প্রতীক।

আল্লাহ-হুম্মা সাল্লি, ওয়া সাল্লিম, ওয়া বারিক আ'লা মুহাম্মাদ; আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন। (মূসা: ২৫-০৯-২৫)
34
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক: দোয়ার ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য[

মানুষ দুনিয়ায় যেমন আধ্যাত্মিক চাহিদা নিয়ে বেঁচে থাকে, তেমনি দেহ ও জীবিকার চাহিদাও রয়েছে। ইসলামে আল্লাহর কাছে দোয়া করার মাধ্যমে উভয় চাহিদা পূরণের দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো,

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক।”

অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।”
কেন এই দোয়া
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়া পড়ার বিষয়ে হাদিসে নির্দেশনা এসেছে। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন:

“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, সে বলুক: আল্লাহুম্মা ইফ্‌তাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা (হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার রহমতের দ্বার খুলে দিন)। আর যখন বের হবে, তখন বলুক: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক (হে আল্লাহ, আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি)।” (সহিহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত, হাদিস: ৭১৩)

একই বর্ণনা এসেছে আবু দাউদের হাদিসেও। (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদিস: ৪৬৫)
হাদিসের ব্যাখ্যা
ইমাম নববী (রহ.) বলেন,

মসজিদে প্রবেশের সময় আল্লাহর রহমত চাইতে বলা হয়েছে, কারণ মসজিদ হলো ইবাদত ও মাগফিরাতের স্থান।

বের হওয়ার সময় আল্লাহর ‘ফাদল’ চাইতে বলা হয়েছে, কারণ বান্দা তখন দুনিয়ার কর্মকাণ্ডে ফিরে যায়, যেখানে তার রিজিক, সুরক্ষা ও বরকত প্রয়োজন। (শারহে সহিহ মুসলিম, ৫/২২৩, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৬)
ইমাম খাত্তাবী (রহ.) বলেন, “ফাদল” শব্দটি শুধু বস্তুগত রিজিক বোঝায় না; বরং ইমান, ইলম, সুস্বাস্থ্য, সৎসঙ্গ—সব ধরনের কল্যাণকেই অন্তর্ভুক্ত করে। (মা‘আলিমুস সুনান, ১/১৪৫, আল-মাকতাবাতুল ইসলামি, দামেস্ক, ১৯৩২)
দোয়ার শিক্ষা
১. ইবাদত ও দুনিয়ার ভারসাম্য: মসজিদে প্রবেশে রহমত, বের হওয়ার পর ‘ফাদল’—এভাবে দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের ভারসাম্য শেখানো হয়েছে।

২. রিজিক ও কল্যাণ আল্লাহর কাছেই: বান্দা যত পরিশ্রমই করুক, প্রকৃত বরকত ও কল্যাণ আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।

৩. সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর দোয়া: এই দোয়া ছোট হলেও এর ভেতর জড়িয়ে আছে জীবনের সব প্রয়োজনীয় কল্যাণের প্রার্থনা।

৪. প্রতিদিনের অভ্যাস: মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার প্রতিবারে এ দোয়া পড়া অভ্যাস করলে, মানুষের জীবনে আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ প্রবাহিত হতে থাকে।
বাস্তব জীবনে তাৎপর্য
নামাজ শেষে দুনিয়ার কাজে ফেরার সময় এ দোয়া আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দুনিয়ার সাফল্যও আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সম্ভব নয়।

বান্দা যখন মসজিদে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত কামনা করে, এবং বের হওয়ার সময় দুনিয়ার কাজে প্রবেশের আগে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করে—তখন তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে যায়।

অতএব, আমাদের সবার উচিত এই দোয়াকে প্রতিদিনের আমলের অংশ বানানো, যেন আমাদের ইবাদত, কর্ম, জীবিকা ও দুনিয়া-আখিরাত সবই আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহে ভরে ওঠে।
35
Common Forum/Request/Suggestions / secret women for dating
« Last post by Abdus Sattar on September 22, 2025, 10:38:29 AM »
Explore adult dating with live girls. Private, secure, and always online.
https://privateladyescorts.com
 
 
local adult chat rooms
36
Others / real women for adult fun
« Last post by asifiqbal on September 17, 2025, 04:17:22 PM »
Adult dating made easy with real-time girl chat
https://privateladyescorts.com
 
 
private profiles for dating
37
আপনার উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত, তা জানতে আগ্রহী অনেকেই। কিন্তু কোথায়, কীভাবে জানবেন, তা জানতেই জেরবার হয়ে যাই আমরা। আবার অনেকেই বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বা দেহ–ভর সূচক নামের পরিমাপ–পদ্ধতির কথা জানেন, তবে তা উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের কতটা সঠিক ধারণা দেয়?


উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত, তা জানতে আগ্রহী অনেকেইছবি: পেক্সেলস

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএমআই ওজনের ধারণা দেয় বটে, তবে তা শরীর ও স্বাস্থ্যের পুরো ছবিটা পরিষ্কার করে না। এটি বিশেষ করে পেশি ও চর্বির ওজনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।

একই সঙ্গে শরীরে চর্বির বণ্টন সঠিক আছে কি না, তা–ও বোঝাতে পারে না। ফলে তা হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি–সম্পর্কিত কার্ডিওভাসকুলার ও বিপাকক্রিয়া–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকির বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে না।

চলতি বছর বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু বিএমআই কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে পারে।

এর বদলে তাঁরা বিএমআইয়ের সঙ্গে কোমরের পরিধি ও চর্বির শতকরা হার মাপার মতো কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন।

গবেষকেরা বলছেন, ওজন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে ওসব পরিমাপের সঙ্গে জীবনযাপনের বিভিন্ন বিষয়–আশয়, যেমন খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যক্রম ও বংশগতির মতো বিষয়ও বিবেচনা করা উচিত।

বিএমআই ও এর সীমাবদ্ধতাগুলো কী
বিএমআই হিসাব করার জন্য প্রথমে কোনো ব্যক্তির ওজনকে কিলোগ্রাম এককে নিতে হবে। উচ্চতা পরিমাপ করতে হবে মিটারে। এরপর সেই ওজনকে মিটারের বর্গ দিয়ে ভাগ করলেই পাওয়া যাবে বিএমআই।

অর্থাৎ বিএমআই = ওজন (কিলোগ্রাম) ÷ উচ্চতা (মিটার)২

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে—

বিএমআই ১৮.৫–এর নিচে হলে ওজন কম ধরা হয়।

১৮.৫ থেকে ২৪.৯ পর্যন্ত থাকলে, তা আদর্শ।

এই সূচক ২৫ থেকে ২৯.৯ হলে তা অতিরিক্ত ওজন এবং ৩০–এর বেশি পাওয়া গেলে তাকে স্থূল ধরা হয়।

কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হিসাব শরীরের চর্বিহীন পেশি ও চর্বিযুক্ত পেশির ওজনের পার্থক্য করতে পারে না। ফলে একজন খেলোয়াড় বা পেশিবহুল ব্যক্তির বিএমআই বেশি দেখালেও তাঁর শরীরে চর্বি প্রকৃতপক্ষে কম থাকতে পারে। আবার কারও ওজন ‘আদর্শ’ দেখালেও তাঁর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকতে পারে।

গবেষকদের পরামর্শ, ওজন ও স্বাস্থ্যের সঠিক ধারণা পেতে এককভাবে বিএমআইয়ের ওপর নির্ভর করা যাবে না। এর পাশাপাশি আরও কিছুর পরিমাপ করতে হবে।

বিএমআইয়ের বিকল্প কী
বিএমআইয়ের বিকল্প আদতে নেই, তবে পরিপূরক আছে। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ ও পরিষ্কার ছবি পেতে রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা মাপার পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলো পরিমাপ করতে বলছেন।

১. কোমরের মাপ
এর মাধ্যমে পেটে জমা হওয়া চর্বির পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়। এটি জানার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ বিষয়ে সতর্ক থাকা সম্ভব। এটি সাধারণত নাভির ঠিক ওপরে টেপ দিয়ে মাপা হয়।

২. কোমর–হিপ অনুপাত
স্কিনফোল্ড ক্যালিপার, ডেক্সা স্ক্যান ও বায়োইলেকট্রিক্যাল ইম্পিডেন্স (বিআই)–এর মতো পরিমাপক দিয়ে শরীরের আদর্শ গঠন সম্পর্কে মোটামুটি সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।

স্কিনফোল্ড ক্যালিপার এমন একটি বিশেষ যন্ত্র, যা দিয়ে শরীরের চামড়া ও এর নিচের চর্বির পুরুত্ব মাপা হয়। এটি সাধারণত বাহু, ঊরু, পেট, পিঠ ইত্যাদি জায়গার চামড়া চেপে ধরে চর্বির স্তর মাপতে ব্যবহার করা হয়।

ডেক্সার পূর্ণরূপ হলো ডুয়েল এনার্জি এক্স–রে অ্যাবজর্পশোমেট্রি। এ পরীক্ষার মাধ্যমে ছবি তুলে শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়, পেশি ও চর্বি আলাদা করে মাপা যায়।

বায়োইলেকট্রিক্যাল ইম্পিডেন্স হলো শরীরের চর্বি, পেশি, পানি ইত্যাদির পরিমাণ নির্ণয়ের পদ্ধতি।

৩. শরীর–আকৃতি সূচক (বিএসআই)
স্থূলতাসংক্রান্ত উচ্চঝুঁকি এড়াতে এই পরিমাপ করা হয়। এটি বিএমআই ও কোমরের মাপের সমন্বয়ে একটি পরিমাপের পদ্ধতি।

তবু মিলিয়ে নিন আপনার উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন
যদিও উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের ক্ষেত্রে জীবনযাপনের পদ্ধতি, বংশগতিসহ নানা বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তবুও নিচের হিসাবটি ওজন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনাকে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে।

উচ্চতা যখন ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, ওজন হতে হবে ৪৭–৬১ কেজি

উচ্চতা যখন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, ওজন হতে হবে ৫৩–৬৮ কেজি

উচ্চতা যখন ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, ওজন হতে হবে ৬০–৭৯ কেজি

এই হিসাব বিএমআই অনুযায়ী করা হয়েছে। কাজেই ওজন ও স্বাস্থ্যের সঠিক ধারণা পেতে এর সঙ্গে অন্যান্য পরিমাপকের সুসমন্বয় করতে হবে।


উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের ক্ষেত্রে জীবনযাপনের পদ্ধতি, বংশগতিসহ নানা বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছেছবি: পেক্সেলস

চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন কখন
মনে রাখতে হবে, এই লেখা শুধু সাধারণ তথ্য দেওয়ার জন্যই তৈরি। এটি কোনোভাবেই আপনার চিকিৎসকের পরিপূরক নয়। কাজেই কেউ তাঁর ওজন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক তাঁর জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, বংশগতিসহ যাবতীয় বিষয় জেনে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

সূত্র: দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি

Source: https://www.prothomalo.com/lifestyle/health/1ku5s0yn3p



38
মনোভঙ্গি পরিবর্তনের প্রত্যাশা

চিন্তা থেকে যেহেতু কাজের উৎপত্তি সেহেতু কতিপয়ের নয়, সবার দেশগত ভালোবাসার ইতিবাচক মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছতার শক্তি ও প্রেরণার সংস্কৃতি গড়ে ওঠা নতুন বাংলাদেশে এখন সময়ের দাবি।


মনোভঙ্গি পরিবর্তনের প্রত্যাশা

সেই প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকে গত বছর ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তন এবং বিগত এক বছরে বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক উত্থান-পতনের পথপরিক্রমা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সার্বিকভাবে সবার দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভঙ্গি (attitude) পরিবর্তনের প্রত্যাশাই সবার চিন্তা-চেতনার চৌহদ্দিতে, উপলব্ধির উপলব্ধিতে উঠে আসছে। চিন্তা থেকে যেহেতু কাজের উৎপত্তি সেহেতু কতিপয়ের নয়, সবার দেশগত ভালোবাসার ইতিবাচক মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছতার শক্তি ও প্রেরণার সংস্কৃতি গড়ে ওঠা নতুন বাংলাদেশে এখন সময়ের দাবি। যুগে যুগে মহামারী যেমন মানব মূূল্যবোধে ও আর্থসামাজিক ভাগ্যে ভোল পাল্টানোর, মনোভঙ্গি পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিলেও তা যথাযথ কার্যকর না হওয়ায় গড়পড়তায় প্রতি ১০০ বছর পরপর মহামারী (১৭২০ সালে প্লেগ, ১৮২০ সালে কলেরা, ১৯২০ সালে ফ্লু এবং ২০২০ সালে কোভিড-করোনা) নতুন আকারে ও আঙ্গিকে বিশ্বজনতাকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে জাগাতে এসেছে। ২০২০ সালে করোনার অভীষ্ট লক্ষ্য ছিল- ‘যুগ যুগ ধরে মানবতার অবমাননা, বৈষম্য, লোভ-লালসা, মিথ্যাবাদিতা ও অহমিকার যে পাপাচার বিশ্বকে গ্রাস করছিল তার সমুদয় দূর করতে গোটা বিশ্বময় একটি প্রবল ঝাঁকুনি দিতেই।’ করোনার কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি ও অনুশোচনার শিক্ষা গ্রহণে শুধু দুই হাতকে নয়, বিবেককে বারবার ধৌত করার তাগিদ ছিল। অথচ করোনাকাল শেষ হওয়ার পরপরই বিগত বছরগুলোতে বিশ্ববাসী ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইরান-ইসরাইল সংঘর্ষ, সুদান, তুরস্ক, জাপান, ইরান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মানাবাধিকার আদায় ও প্রত্যাশা প্রত্যয়ে রক্তক্ষয়ী পট-পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করে চলেছে। তেমনি ১৫ বছর (১৯৭৫, ১৯৯০, ২০০৬, ২০০৯-২৪) পরপর বাংলাদেশের সব জনগণের কাছে বা মধ্যে মনোভঙ্গি পরিবর্তনের সুযোগগুলো সমুপস্থিত হয়েছে।

বিভেদ-বিভাজনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ

জাতিকে বিভক্তকরণে দীর্ঘদিনের একদেশদর্শিতা, একক ব্যক্তিবন্দনা, অসংখ্য গোয়ার্তুমি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও ভুল (political blunder, mistakes etc), আত্মশ্লাঘা, অহংবোধ ও অপশক্তির অপব্যবহার ও স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনৈতিক উৎকোচ (political bribing) প্রথার অতি অপব্যবহারের দ্বারা সৃষ্ট নৈরাজ্য দূর করতে বিভেদ-বিভাজন, বিভ্রান্তি-বিচ্যুতির পরিবর্তে অন্তর্র্ভুক্তির চিন্তা ও চেতনায় জাগ্রত হওয়ার আহ্বান ছিল জুলাই বিপ্লবের মর্মবাণী। বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে প্রথমেই ছিল পারস্পরিক দোষারোপের দ্বারা আমরাই যেন আর আমাদের শত্রু না হই। এক নতুন বাংলাদেশের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল সবাই।

ভূ-রাজনীতির কূটক্রীড়াকৌশলে দেশ অভ্যন্তরে বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টির প্রয়াস দুরারোগ্য ব্যাধির মতো গেঁড়ে বসেছিল। দগদগে ঘা যেমন, তেমনি ৫৩ বছর বয়েসী বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির শিরোনামে বিভক্ত করা হয়েছিল। সেই ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যেকার দেয়াল উধাও, দ্বিধাবিভক্ত প্রশাসন জনসেবা আইনের শাসন সবই। বাংলাদেশের জনপ্রশাসন দলীয়করণ গ্রেশাম সিনড্্েরামের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত। পিএসসিতে সর্বোচ্চ পদে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী নিয়োগই পায়নি অদৃশ্য কারণে। মেধার অবমূল্যায়নের দ্বারা প্রকারান্তরে দেশ ও জাতিকে মেধাশূন্য করার, বৈষম্যের বিরোধী কণ্ঠরোধ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন উদগ্র বাসনা ছিল ঘরে-বাইরের কারোর না কারো স্বার্থে। এই বিভেদ ও বিভাজনের, বৈষম্যের বেড়াজালে আটকানোর চেষ্টা চলে, রাজনীতি-দুর্বৃত্তায়ন-দলীয়করণের দ্বারা বিভেদ সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভ- বিচার বিভাগ, সংসদ বা আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে। এমনকি চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়ার মধ্যেও। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের দ্বারা, রাষ্ট্রীয় চাকরিতে সরকারের ওএসডি কালচারের নামে প্রশাসনের মেধাবী ও করিৎকর্মাদের সরিয়ে হাজার হাজার কর্মকর্তাকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিয়ে পাবলিক মানির ক্ষতিসাধনসহ প্রশিক্ষিত মানবসম্পদকে অকর্মণ্য করে অপচয় এবং তদস্থলে দলীয় অদক্ষ প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয় বড় বড় পদে নিয়োগের পাঁয়তারাটি ছিল দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের স্বরূপ। চব্বিশের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত, অন্যের ভেদ বুদ্ধি, প্ররোচনা ও প্রযোজনায় নিজের নাক কেটে (নিজের ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস করে) হলেও বিভেদ-বিভাজন ও বৈষম্যের শিকার জনগণের কণ্ঠরোধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কোণঠাসা এমনকি গুম (আয়নাঘরে আটকিয়ে) হত্যার তৎপরতাই ছিল একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনাকে দলীয় রাজনীতিকরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাঠঘাট পয়মাল করতেই এই বিভেদ-বিভাজন, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয় বাংলাদেশের জনগণ।

সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি বিভেদ-বিভাজনের বেড়াজাল, যা সমতাভিত্তিক সমাজ ও সহজাত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য ব্যবধান বেড়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য সর্বত্র, সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী যে, তারা রাষ্ট্র ও সরকার সামলানোর ভূমিকাতে (এমনকি এখনো নেপথ্যে সক্রিয়) অবতীর্ণ। এর প্রতিকারার্থে জবাবদিহিতার পরিবেশে নাগরিকের সব মৌলিক অধিকার ও দাবি পূরণে রাষ্ট্রের স্বচ্ছতাসুলভ আচরণ ও সেবা প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হলেই বিভেদ-বিভাজন, বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে মুক্তি মিলবে। নতুন বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি সবই এখন সবার। দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করে নয়- ছাত্র, শিক্ষক, বার কাউন্সিল, ট্রেড ইউনিয়ন, ব্যবসায়-বাণিজ্য সংগঠন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা, পেশাজীবীদের সমিতির রাজনীতি যদি হয় বাংলাদেশপন্থী, তাহলেই মিলবে প্রকৃত মুক্তি।

বর্তমানের প্রতি মনোযোগ

বর্তমান হচ্ছে অতীতের আলোকে এই মুহূর্তের অবস্থান যা ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণ করে। বর্তমান মুহূর্তের মধ্যে অতীত হয়ে যায় এবং ভবিষ্যতের পথ নির্মাণ করে। বর্তমানের ভালো-মন্দ অতীতের বিচার্য বিষয় হয়ে যায় এবং ভবিষ্যৎ কেমন হবে তার একটি দিক-নির্দেশনা নির্ধারিত হয়ে যায়। বর্তমানকে বাদ দিয়ে তাই অতীত হয় না এবং ভবিষ্যৎ ভাবা যায় না। বর্তমানের প্রতি মনোযোগী না হলে বর্তমানের কর্মকাণ্ড বা ফলাফল ভবিষ্যতের ইতিহাসে অতীতের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর বর্তমানের অমনোযোগিতার খেসারত দিতে হবে ভবিষ্যতে। সে কারণে সবারই বর্তমানের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। টলস্টয় যথার্থই বলেছেন-‘The most important time is Now’.

যার যার কাজে ফিরে যাওয়া, দায়িত্বশীল আচরণে নিষ্ঠাবান হওয়া

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারি চাকরিতে মেধার কোটা বাড়ানোকে কেন্দ্র করে। মেধার অবমূল্যায়ন ও তদস্থলে বিশেষ কোটার আওতায় নিয়োগের সুযোগ থাকায় চাকরি বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হতো মেধাবীদের। মানবিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির কারণ ও উপলক্ষ এটিই। ’২৪-এর জুলাই আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত স্বৈরাচার পতনের পর্বটি সমাপ্ত হয়। এখন সেই বিজয়কে অর্থবহ করতে সবাইকে যার যার ক্ষেত্রে দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে আপাতত আন্দোলনের দুই মাসের শিক্ষা ও আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা, যথা সচেতন ও সবেগে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অর্থ খাতে অতীতের ক্ষরণ কাটিয়ে-মাড়িয়ে নিরাপদ ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে ওঠা বা প্রাগ্রসরমান থাকা। বিপ্লবোত্তর এই সফল সময়ে হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের অপ্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা চটজলদি পেতে চাওয়া, দাবি দাওয়া পেশের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় ও সামর্থ্যরে ওপর চড়াও হওয়া, সরকারকে সুস্থির থাকার পথে এ ব্যাপারে তাদের বিব্রত করা আদৌ দায়িত্বশীল আচরণের পর্যায়ে পড়বে না। পরিবহন ও যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটিয়ে কিংবা রাষ্ট্রীয় সেবা বা সম্পদের ক্ষতিসাধন করে দাবি আদায়ের চেষ্টা রীতিমতো আত্মঘাতী। নিজেকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার কাজে পড়াশুনায় ফিরে না গিয়ে বিনা পরীক্ষায় পাস কিংবা পেশাদারিত্বে পারঙ্গমতা লাভে তাৎক্ষণিক প্রতিকার পেতে চাওয়ার মতো আত্মঘাতী প্রবণতা প্রতিরোধে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।

একসাথে পাঁচ ইঁদুর ধরতে চেষ্টা না করা

এটি একটি জাপানি প্রবাদ। পাঁচ ইঁদুর একসাথে ধরতে চাইলে চালাক ইঁদুর ফসকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা বৈষম্য দূর কিংবা সর্বত্র সমতা বিধান তথা সংস্কার প্রণয়ন প্রচেষ্টার অনেকগুলো দাবি পূরণের কর্মসূচি একসাথে না নিয়ে যে কাজ এই মুহূর্তে সুচারুরূপে সম্পাদনের সামর্থ্য আছে সেটির প্রায়োরিটি ঠিক করা উচিত। অনেকগুলো কাজ একত্রে করার সক্ষমতা ও দক্ষতা না থাকলে কোনো কাজই সুচারুরূপে শেষ করা যায় না। ফলে একপর্যায়ে হতাশা চলে আসে, হতোদ্যম হয়ে পড়তে হয়। যে পরিমাণ খাবার খাওয়া এবং হজম করার শক্তি আছে প্লেটে তত পরিমাণ খাবার নেয়া উচিত।

প্রতিপক্ষ যেন জিতে না যায়, প্রতিবিপ্লব যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে

সংস্কার, সংশোধন, প্রতিকার, প্রতিরোধ কাজে সবসময় প্রতিপক্ষের গতিপ্রকৃতি ও অস্তিত্বের ধারণা রাখতে হয়। শয়তান যেমন খোদাবিশ্বাসী বান্দাকে বিপথে নেয়ার সার্বক্ষণিক প্রয়াস প্রচেষ্টায় থাকে। তেমন দীর্ঘসময়ে অন্যায়-অনিয়মে নিয়োজিত কোনো শক্তিকে পরাস্ত, প্রতিরোধ করার কাজটিকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতি ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের গতিবিধির দিকে, ষড়যন্ত্র পাকানোর দিকে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কড়া নজর রাখতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শোচনীয় পরাজয়ের পর জার্মানিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে প্রধান বাধা ছিল, ঘাপটি মেরে থাকা নিকট প্রতিপক্ষ, ভোল পাল্টানো সুযোগসন্ধানীরা, পরাশক্তি প্রথিত গুপ্তচর বা এজেন্ট।

যে লাউ সেই কদু যেন না হয়

রাষ্ট্র মেরামতের অতি প্রয়োজনীয়তার তাগিদের মুখে যদি দেখা যায়, আগের অপশক্তি ভিন্ন নামে ভিন্ন কায়দায় একই অপকর্ম, অপচেষ্টা, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেটেড তৎপরতা, দখলদারিত্বের মনোভাব নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও তৎপর, এমনকি ভাবিকালে ক্ষমতাধর হওয়ার আগেই নিজেদের মতো করে সব কিছু খবরদারি বা প্রত্যাবর্তনের ভূমিকায় নামে তাহলে দিনের শেষে দেখা যাবে, অবস্থার একই পরিণতি অর্থাৎ- যে লাউ সেই কদু পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। তাতে মনে হবে, নতুন বোতলে পুরনো মদ ঢালা হয়েছে মাত্র। এটি পরিবর্তন প্রত্যাশাকে মারাত্মকভাবে বিভ্রান্ত করতে পারে। অতীতে ব্যক্তি বন্দনার, উন্নয়ন বয়ান এবং পাড়া-মহল্লায় ক্ষমতার কাছাকাছি দেন ‘পরিচিতি’ তুলে ধরার জন্য বড় মাঝারি ছোট বিলবোর্ড, ড্যাশবোর্ড, পোস্টারের ছড়াছড়ি ছিল। এসব মুদ্রণ ও প্রচারের খরচ চাঁদাবাজির মাধ্যমে মেটানো হতো, প্রতিপক্ষের বিলবোর্ড তো দূরের কথা- পুচকে পোস্টার পর্যন্ত প্রচারে বিরোধিতা ছিল। এখন আবার যদি পাড়ায়-মহল্লায় গলির মুখে নতুন সাজে নতুন করে পোস্টার, বোর্ড প্রদর্শনের মহড়া শুরু হয় তাতে ঘাড়ের ওপর নয়া দৈত্য ও অপশক্তির উদ্ভব ঘটবে। কেউ অধম ছিল বলে আমি কেন উত্তম হবো না, এ মূল্যবোধ ও চেতনা সবার মধ্যে জাগা আবশ্যক।

গৃহস্তকে সবসময় সজাগ থাকতেই হবে

ব্রিটিশ প্রবাদ ‘চোর তো চুরি করবেই গৃহস্থকে সজাগ থাকতে হবে’। অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি দুঃশাসন শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরক্ষা ব্যূহ যদি ভেঙে পড়ে খাঁটি বাংলা প্রবাদের মতো ‘বেড়ায় যদি ফসল খায়’ কিংবা ‘রক্ষক যদি ভক্ষক হয়’ তাহলে তার মতো দীর্ঘস্থায়ী দুর্যোগ আর হতে পারে না। এক্ষেত্রে গৃহস্থ অর্থাৎ জাতীয় স্বার্থ রক্ষাকারী সবারই অয়োময় প্রত্যয়ী হতে হবে যে, অন্যায়ের প্রশ্রয় কেউ পাবে না, প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত হবে দুর্নীতিবাজের, কর ফাঁকিবাজের, সিন্ডিকেটের, দলবাজির বিরুদ্ধে। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে ভোটাধিকার প্রয়োগসহ সামাজিক আন্দোলনে সচেতন সক্রিয় ও সজাগ থাকলে সবার ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের বিপরীতে মহা দুর্নীতি প্রশ্রয়দানকারীও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

আত্মসমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি

নিজের ভালো-মন্দ জ্ঞান সজাগ রাখতে হলে সবসময় নিজের দোষগুণ নিজেকে বুঝতে হবে। ঘরে-বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় এবং স্বনির্ভর স্বদেশ গড়তে সব নাগরিককেই তার একক ও দলগত শক্তি (Strength), দুর্বলতা (weakness), সুযোগ (opportunity) এবং ঝুঁকি (threats) সম্পর্কে সজ্ঞান অনুধাবন করতে হবে ।

প্রবাসে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত ব্যান্ডশিল্পী বিপ্লব গত বছর বাঁধা তার একটি নতুন গানে যেমনটি চেয়েছিলেন, ‘দ্বিধাদ্বন্দ্ব, বৈষম্য, দলমত-নির্বিশেষে একটি সুন্দর বাংলাদেশ। আর কোনো রক্তপাত নয়, নয় কোনো হানাহানি। সবাই মিলে বাংলাদেশটিকে নিয়ে এগিয়ে নিতে চাই, আমাদের কাছে কোনো দল মুখ্য নয়। দেশটা যারা সুন্দরভাবে পরিচালিত করবে, তাদের সাথেই আছি। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে নতুন একটি বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। নতুন এই বাংলাদেশে আমার যে চাওয়া, প্রত্যাশা তা-ই এই গানে তুলে ধরেছি। একজন শিল্পী হিসেবে এটুকুই আমি করতে পারি।’ সবারই যার যা অবস্থান থেকে যা করা উচিত বা সম্ভব সে মর্মে মনোভঙ্গির পরিবর্তন প্রত্যাশা সবার।

Source: https://dailynayadiganta.com/printed-edition/f4i79kD3kWbd
39
কখন শিশুরা মিথ্যা বলা শুরু করে?

সাধারণত শিশুদের আট বছর বয়সের আগে পূর্ণ অর্থে মিথ্যা বলার মতো মানসিক বিকাশ ঘটে না।
যেমন, যদি ৩ বছরের শিশুকে জিজ্ঞেস করা হয়, “তুমি কি দুধ খেয়েছো?”—সে দুধ না খেয়েও বলে, “হ্যাঁ, খেয়েছি।”
এক্ষেত্রে শিশুটি আপনাকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য দেয়নি; বরং আপনাকে খুশি করার জন্য বা শাস্তি এড়ানোর জন্য এমনটি বলেছে। তাই এটিকে প্রকৃত মিথ্যা বলা যায় না।

কেন শিশুরা মিথ্যা বলে?

১. শাস্তির ভয়: পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিশু বুঝে যায়—সত্য বললে শাস্তি পেতে হবে। তাই শাস্তি এড়াতে মিথ্যা বলে।
২. লজ্জা ও অস্বস্তি: ভুল করলে শিশু লজ্জায় পড়ে। পূর্বে যদি লজ্জা দেওয়া হয়ে থাকে, তবে শিশুরা লজ্জা এড়াতেও মিথ্যা বলে।
৩. বাস্তবতা ও কল্পনার গুলিয়ে ফেলা: ৮ বছর বয়সের আগে শিশুরা বাস্তব আর কল্পনার পার্থক্য ঠিকভাবে বুঝতে পারে না।
৪. পরিবার থেকে শেখা: শিশুরা বড়দের দেখে মিথ্যা বলতে শেখে। যদি পরিবারের কেউ শিশুর সামনে মিথ্যা বলে এবং বলে “প্রয়োজনে মিথ্যা বলা যায়”, তবে শিশুও একই আচরণে উৎসাহিত হয়।
৫. কিছু পাওয়ার জন্য: যেমন—“রুটি খেলে আইসক্রিম পাবে।” শিশু রুটি না খেয়েই বলে দেয় সে খেয়েছে।
৬. স্কুলের পরিবেশ: গবেষণায় দেখা গেছে—যেসব স্কুলে বেশি শাস্তি দেওয়া হয়, সেসব স্কুলের শিশুরা বেশি মিথ্যা বলে। কারণ শাস্তি এড়াতে তারা গুছিয়ে মিথ্যা বলতে শেখে।

ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজির ব্যাখ্যা

১। ছোট শিশুরা মনে করে, সব পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলা ভুল।
২। ১০ বছর বয়সের পর থেকে তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসে।
৩। ১০–১৮ বছরের মধ্যে শিশু মিথ্যা বলার সঠিকতা বা ভুল হওয়া নির্ধারণ করে ঘটনার ফলাফলের উপর।
৪। যদি মিথ্যা বলে কিছু পাওয়া যায়, তবে তা তাদের কাছে সঠিক মনে হয়।
৫। অন্যকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলাও তখন গ্রহণযোগ্য মনে হয়।

শিশুকে সত্য বলায় উৎসাহিত করার উপায়

গল্প শুনানো: সত্য বলার সুবিধা বা পুরস্কারের গল্প বলুন। ধর্মীয় গল্প বা বয়স অনুযায়ী ছোট-বড় গল্প তৈরি করতে পারেন।
প্রশংসা করা: শিশু সত্য বললে তার সততা প্রশংসা করুন।
নিজে উদাহরণ হওয়া: শিশুর সামনে সবসময় সত্য বলুন এবং কথা দিয়ে কথা রাখুন।
ভিন্ন সমাধান খোঁজা: শিশু মিথ্যা বললে শাস্তি না দিয়ে বিকল্প উপায়ে সমস্যার সমাধান করুন। যেমন—হোমওয়ার্ক না করে বললে করেছে, তখন তাকে হোমওয়ার্ক শেষ করতে বলুন এবং পরে চেক করুন।
কাউন্সেলিং: যদি মিথ্যা বলা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং পরিবারের জন্য সমস্যার কারণ হয়, তবে ফ্যামিলি ও ইন্ডিভিজুয়াল কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। এতে শিশুর উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা কমে, আত্মমর্যাদা বাড়ে এবং ট্রমা থাকলে তা নিয়েও কাজ হয়।

যা করবেন না

❌ শিশুকে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা দেবেন না—একবার সত্য বলতে বলে আবার বলবেন, প্রয়োজনে মিথ্যা বলা যায়।
❌ মিথ্যা বললে শাস্তির গল্প শুনাবেন না।
❌ কথা দিলে তা রাখুন। রাখতে না পারলে কারণ ব্যাখ্যা করুন।
❌ শিশুকে “মিথ্যুক” বলে ডাকবেন না বা অন্যদের সামনে হেয় করবেন না।
❌ সত্য বলার জন্য উপহার দিতে শুরু করে আবার বন্ধ করবেন না। উপহারের ওপর নির্ভরশীল হলে উপহার না পেলে শিশু সত্য বলা বন্ধ করে দিতে পারে।

👉 এইভাবে শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল, ধারাবাহিক এবং ইতিবাচক আচরণই তাকে সত্য বলার অভ্যাসে গড়ে তুলবে।

40
🌟 শিশুদের জন্য কিছু নির্দেশনা 🌟

নির্দেশনা কী?

শিশুর বা শিক্ষার্থীর ক্ষমতার সর্বাধিক বিকাশে সাহায্য করার একটি অবিরত প্রক্রিয়া। এটি সহায়তা প্রদান, কিন্তু কখনো জোর প্রয়োগ নয়। নির্দেশনা গণতান্ত্রিক ও সহযোগিতা মূলক।

নির্দেশনার ধরন:

1️⃣ শিক্ষামূলক – জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি
2️⃣ বৃত্তিমূলক – পেশাগত বা কর্মসংক্রান্ত দক্ষতা উন্নয়ন
3️⃣ স্বাস্থ্য – শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
4️⃣ ধর্মবিষয়ক – নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ
5️⃣ অবসর ও বিনোদনমূলক – সৃজনশীলতা ও আনন্দদায়ক কার্যক্রম
6️⃣ সামাজিক ও নৈতিক – দায়িত্বশীল ও নৈতিক আচরণ গঠন

🏫 বিদ্যালয়ে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা:

✔ শিক্ষার কৌশল আয়ত্ত
✔ শিক্ষোপকরণের সঠিক ব্যবহার
✔ পরীক্ষার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ
✔ নিয়মিত হাজিরা
✔ কার্যক্রম ও সহ-পাঠক্রমিক কর্মসূচীর সমন্বয়
✔ সু-অভ্যাস গঠন
✔ দৈনন্দিন কার্যক্রম ও শিক্ষাক্রম নিয়মিত অনুমোদন
✔ ভবিষ্যৎ গঠনমূলক কর্মসূচি পরিকল্পনায় সহায়তা

📋 নির্দেশনার ধাপ:

1️⃣ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ
2️⃣ পরিবেশগত সুযোগ সুবিধা যাচাই
3️⃣ পরামর্শ প্রদান
4️⃣ অভিযোজন (Adaptation)
5️⃣ সুযোগ ধরে রাখা ও প্রবর্তন
Pages: 1 2 3 [4] 5 6 ... 10