জিনেদিন জিদান প্রসঙ্গে যেকোনো আলোচনায় বিজেন্তে লিজারাজুর সেই কথাটির উপস্থিতি নিশ্চিত৷ ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের লেফট ব্যাক একবার বলেছিলেন, ‘বল নিয়ে যখন আমরা বুঝে উঠতে পারি না কী করব, বল দিই জিজুকে৷ জিজু ঠিকই একটা পথ বের করে ফেলে৷’
জিদানের উচ্চতা ছুঁতে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে নেইমারকে৷ তবে এই ব্রাজিল দলের কাছে নেইমারই যেন লিজারাজুদের জিদান! আপনি তাতে চোখ কপালে তুলতে পারেন৷ কিন্তু স্বয়ং ব্রাজিল দলের একজনই তো বলছেন এই কথা! দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে সাফল্যের ওষুধ বাতলে দিয়েছেন ফ্রেড। সতীর্থদের প্রতি এই ফরোয়ার্ডের সোজাসাপটা প্রেসক্রিপশন—‘ঠিক করণীয় বুঝে উঠতে না পারলে বল দিয়ে দাও নেইমারকে’!
বিশ্বকাপে স্বাগতিক ব্রাজিল দলকে ভাবা হচ্ছে এবারের শিরোপার প্রধান দাবিদার। তবে প্রত্যাশার ভারে হোঁচট খাওয়ার সুযোগও কিন্তু যথেষ্টই রয়েছে। কিন্তু দলে রয়েছে একজন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। মাত্র ২২ বছর বয়সী নেইমারই ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্নের সারথি।
নেইমারের নিষ্পাপ চাহনিই বলে দেয় সদ্য কৈশোর পেরিয়েছে যুবকটি। কিন্তু রেফারির বাঁশি বাজার পরই তাঁর চোয়াল হয়ে যায় ইস্পাতদৃঢ়। বল পায়ে এলেই দূরন্ত হয়ে উঠেন তিনি। বুদ্ধিমত্তার ছাপ রেখে দুর্দান্ত ক্রস, নিখুঁত পাসে নেইমার এগিয়ে যান প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে। গোলমুখে মাথা ঠান্ডা রেখে হেড, জোরালো শট, চিপ—গোলের সব সুযোগই কাজে লাগাতে জানে ছেলেটা। বল পায়ে তাঁর কারিকুরি চোখ ধাঁধিয়ে দেয় পুরো ফুটবলবিশ্বকেই। এরই মাঝে জাতীয় দলের হয়ে ৪৭ ম্যাচে করেছেন ৩০টি গোল। নেইমারকে নিয়ে যে সতীর্থদের এমন উচ্চাশা থাকবে, সেটাই তো স্বাভাবিক! ফ্রেডও তাই-ই বলেছেন, ‘সবাই জানে দলের আসল তারকা নেইমার। দিনটি যখন আমাদের নয়, তখন আমাদের ওর পায়ে বল তুলে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কারণ নেইমারেরই রয়েছে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য৷’
শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে ফ্রেডের গোলেই জিতেছে ব্রাজিল। তবে ম্যাচটি জিততে হয়েছে যথেষ্ট ঘাম ঝরিয়েই। স্বভাবতই এতে হতাশ সমর্থকেরা। তবে এখনই সমর্থকদের হতাশ হতে মানা করছেন ফ্রেড, ‘দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে দুটিতেই জিতেছি আমরা। দুটি সপ্তাহই কেটেছে দারুণ৷ অবশ্য টুকটাক ভুলও করেছি। তবে আশার কথা হচ্ছে, ভুলগুলো এখনই হয়ে যাওয়ায় সংশোধনেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।’
একসময় দলে নিজের জায়গা নিয়েই সংশয়ে ছিলেন ফ্লুমিনেন্সের এই ফরোয়ার্ড। তবে পাকা জহুরি স্কলারি ব্রাজিলের দায়িত্ব নিয়েই দলে থিতু করেছেন ফ্রেডকে। গত কনফেডারেশনস কাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে কোচের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপেও প্রতিপক্ষের গোলমুখকে পাখির চোখ করেই নামবেন এই তারকা, ‘আমি সব সময়ই গোল পেতে উন্মুখ হয়ে থাকি৷ সব সময় প্রস্তুতও থাকি যেন পুরো ম্যাচে গোলের সুযোগ দু-তিনবারের জন্য এলেও কাজে লাগাতে পারি৷’
তারকাবহুল ব্রাজিল দলে প্রচারের আলোটা ঠিক সেভাবে পড়ে না ফ্রেডের ওপর৷ সেই ফ্রেডই দৃঢ় চোয়ালবদ্ধ বিশ্বকাপে কিছু করে দেখানোর জন্য৷ সেলেসাওদের ওপর আস্থা রাখতেই পারেন সমর্থকেরা! এএফপি৷