Bangladesh > Heritage/Culture
Birds of Bangladesh
milan:
Nice post
Lazminur Alam:
ছবির এই দুধসাদা পুরুষ পাখিটি বাসায় বসে ডিমে তা দিচ্ছে কী সুন্দর মোহনীয় ভঙ্গিতে! লেজের লম্বা ফিতাপালক দুখানা টানটান করে ছড়িয়ে দিয়েছে। আসলে পুরুষ পাখিরা ডিমে তা দেয় না, ডিমে তা দিতে দিতে ক্লান্ত বা ক্ষুধার্ত হলে মেয়েপাখিটি যখন বাসা ছেড়ে উড়াল দেয় ডানার আড়ষ্টতা কাটানোর জন্য বা খাবার খেতে, তখন পুরুষটি ডিমে বসে, তায়ে সুবিধার জন্য ঠোঁট দিয়ে ডিম উল্টেপাল্টে দেয়। দুঃসাহসী এই পুরুষ পাখিরা বাসার চারপাশ কড়া পাহারায় রাখে। বাসার ত্রিসীমানায় বেজি-বনবিড়াল, পোষা কুকুর-বিড়াল, গুইসাপ-বিষধর সাপসহ শিকারি পাখিরা এলেই বাতাসচেরা কর্কশ ধাতব ডাক ছেড়ে আক্রমণ করে। আক্রমণের গতি ও আকস্মিকতায় শত্রুরা ভড়কে যায়। এই সুবিধা নেওয়ার জন্য এই পাখিদের বাসার কাছাকাছি বাসা করে কমলা দোয়েল, হলদে বউ, চশমা পাখি, নাচুনে, ভ্যাদাটুনি, বুলবুলিসহ নিরীহ ও কিছুটা সাহসী পাখি।
অনেকটাই গেরিলা কৌশলে ওড়াউড়ি এদের। পছন্দ ছায়া ছায়া বনবাগান। সবচেয়ে বেশি পছন্দ বাঁশবন বা বাঁশমহাল। বাঁশের ঝুলন্ত কঞ্চিতে বাসা করতেও পছন্দ করে খুব। আম-কাঁঠালগাছ বেশি পছন্দ। তবে বাসা করবে কিছুটা ঝুলন্ত সরু ডালে। বছর বছর একই এলাকায় বা একই গাছের ভিন্ন ভিন্ন ডালে বাসা বাঁধার প্রবণতা এদের প্রবল। বাসা করে বসন্ত-বর্ষায়। বাসা বাঁধা শেষ করতে সময় লাগে চার থেকে সাত দিন। চারটি গোলাপি রঙের ডিম পেড়ে ১৫-২১ দিনের তায়ে ছানা ফোটায় এরা। মূল খাদ্য এদের উড়ন্ত কীটপতঙ্গ, লার্ভা ও ফুলের নির্যাস। সুযোগ পেলে তাল-খেজুরের রসও পান করে। পুরুষ ছানারা দু-তিন বছর পর্যন্ত লালচে বা লালচে-বাদামি থাকে, তারপরে একেবারে দুধসাদা রঙের হয়ে যায়। মেয়েটি সারা জীবনই লালচে-বাদামি পাখি থাকে, তার লেজে ফিতাপালক থাকে না। পুরুষটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পাখি। সুদৃশ্য লম্বা লেজ দুটি এদের শরীরের তুলনায় চার–পাঁচ গুণ বড়। বাতাসে এই সুদৃশ্য লেজ-ফিতা যখন দোলে, তখন নান্দনিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।
সারা দেশেই আছে এরা; তবে চালচলনে লুকোছাপা থাকার কারণে মানুষের নজরে পড়ে না সহজে।
চতুর-সাহসী-বুদ্ধিমান ও তুখোড় প্রেমিক এই পাখিদের নাম দুধরাজ। মেয়েটি হলো দুধরানি। দুধরানির যেকোনো বিপদে দুধরাজ কী রকম আহাজারি আর ক্রন্দন যে করে! লেজঝোলা, সাদা সিপাহি, লাল সিপাহি ও সাহেব বুলবুলি নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম Asian Paradise Flycatcher। বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradise। লেজসহ দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার। ওজন ২০ গ্রাম।
(সূত্র: প্রথম আলো)
Lazminur Alam:
মুনিয়া এ দেশের আবাসিক পাখি তিনরঙা মুনিয়া। খয়েরি মুনিয়া নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Tricolored Munia, Three-colored Munia Black-headed Munia। একসময় এরা কালোমাথা মুনিয়া নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এরা দুটি আলাদা প্রজাতিতে ভাগ হয়ে গেছে; খয়েরি বা তিনরঙা মুনিয়া ও তামাটে বা কালোমাথা মুনিয়া (Chestnut Munia)। Estrildae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Lonchura malacca।
তিনরঙা মুনিয়া লম্বায় প্রায় ১১ সেন্টিমিটার এবং ওজনে মাত্র ১২ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড়, গলা, বুকের কেন্দ্র, অবসারণী ও লেজের তলা চকচকে কালো। বুকের বাকি অংশ সাদা। ডানা, পিঠ ও লেজ লালচে-বাদামি বা খয়েরি। ঠোঁট বেশ শক্ত, ত্রিকোণাকার ও হালকা নীলচে। পা, আঙুল ও নখ কালো।
তিনরঙা মুনিয়া লম্বা ঘাসবন, জলা, ধানখেত ও ছোট ঝোপে বিচরণ করে। মুনিয়ারা ছোট থেকে বড় মিশ্র ঝাঁকে থাকে। কখনো কখনো ডোরা বাবুই এবং কালোবুক বাবুইয়ের সঙ্গেও চরতে দেখা যায়। ঘাসবীচি, কাউন, ধান ইত্যাদি প্রিয় খাদ্য। ঘাসবন বা ধান-কাউনের খেতে দলে দলে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। এমনিতে নিরীহ হলেও ঝাঁক বেঁধে ফসলের বেশ ক্ষতি করে।
মে-নভেম্বর প্রজননকাল। এ সময় জলার ধারে পাতা ও ঘাস দিয়ে বড় বলের মতো বাসা বানায়। বাসায় ঢোকার জন্য লম্বা সুড়ঙ্গের মতো পথ থাকে, ঘাসফুল দিয়ে যার চারপাশটা মুড়ে নেয়। ডিম পাড়ে চার থেকে সাতটি, ধবধবে সাদা। স্বামী-স্ত্রী মিলে ১২-১৩ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চারা ১৪-১৫ দিনে উড়তে শেখে।
(সূত্র: প্রথম আলো)
Lazminur Alam:
পোড়া ইটের মতো লালচে রঙের বকেরা দিনে ক্যামোফ্লেজ হয়ে চুপচাপ থাকে নলবন, কাশবন, হোগলাবন, বাগানের ঝোপঝাড় ও বাঁশবনের গোড়ায়। কচুরিপানার দঙ্গলের ভেতরে বাসা যখন করে, তখন কচুরিপানার ভেতরেই দিনের আশ্রয় নেয়। এদের ঠোঁট তীক্ষ্ণ, ধারালো। বাসা করে গ্রীষ্ম-শরতে। বাসা তৈরির সময় এরা খুব ভোরে অথবা চাঁদনি রাতে উপকরণ আনে, যেন সহজে কেউ দেখতে না পায়। বাসা বাঁধতে সময় লাগে ৩-৫ দিন। ৩-৪টি ডিমে পালা করে তা দেয় মেয়ে ও পুরুষটি। ডিম ফুটে ছানা বের হয় ১৭-২২ দিনে। ছানারা উড়তে পারে ২৫-২৮ দিনে। সদ্য ফোটা ছানা দেখতে খুবই সুন্দর। ঘন লালচে রঙের শরীরে থাকে বিচিত্র রঙের চমৎকার আঁকিবুঁকি। পাখিটির নাম নলঘোঙ্গা। লালবক নামেও পরিচিত।
নিরীহ-ভীত ও নিজেকে আড়াল করার জন্মগত প্রবণতা এদের প্রবল। বিপদের গন্ধ পেলে দুই পাসহ শরীর ও ঘাড়-মাথা-ঠোঁট নলের মতো সোজা করে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে টানটান থাকে। এমনভাবে থাকে যে দেখাই যায় না।
সদ্য উড়তে শেখা ছানাদের নিরাপত্তার জন্য এরা প্রথম প্রথম ফুটফুটে জোছনা রাতে বেরোবে। মূল খাদ্য এদের বিভিন্ন রকম পোকামাকড়-কীটপতঙ্গ। মেটেসাপ বা জলসাপসহ ব্যাঙ-কাঁকড়াও গেলে। এরা হাঁটে একেবারে পেশাদার সৈনিকের মতো প্যারেড করে বা মার্চ করে।
অপেক্ষাকৃত খাটো লেজের লাজুক স্বভাবের এই বকদের ইংরেজি নাম Cinnamon Bittern. বৈজ্ঞানিক নাম ixobrychus cinnamomeus. দৈর্ঘ্য ৩৬-৩৮ সেন্টিমিটার। হলুদাভ ঠোঁট ও পায়ের অধিকারী এই পাখিদের পুরুষটি খুবই সুন্দর। চকচকে গলা-বুক। মেয়েটির ঘাড়-গলায় কালচে-বাদামি রেখা টানা থাকে। ঢাকা শহরতলি থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশেই আছে এরা।
Lazminur Alam:
এরা বনমোরগ। বনমুরগি বা জংলি মুরগি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Red Jungle Fowl। Phasianidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Gallus gallus murghi. গৃহপালিত মুরগির উৎপত্তি কিন্তু এই বনমোরগ থেকেই। তবে এ নিয়ে মতপার্থক্য আছে।
বনমোরগ ও মুরগি লম্বায় ৬৫-৭৫ ও ৪২-৪৬ সেন্টিমিটার। মোরগের ওজন এক কেজি, আর মুরগির কিছুটা কম। মোরগের মাথার খাঁজকাটা বড় ঝুঁটি, মুখমণ্ডল ও ঠোঁটের নিচের লতিকা টকটকে লাল। পিঠ কমলা-লাল। ডানার পালক লাল-কালো-সোনালি। ঘাড় থেকে সোনালি-হলুদ সরু পালক পিঠে নেমে গেছে। কাস্তের মতো লম্বা কেন্দ্রীয় পালকসহ লেজের পালক সবুজাভ কালো। বুক-পেট কালচে-বাদামি। মুরগি একনজরে বাদামি। মাথা তামাটে, ঝুঁটি ছোট ও লাল। মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে লাল। লেজ কালচে। পিঠ ও ডানা কালচে-বাদামি, তাতে অসংখ্য ছোপ। উভয়েরই ঠোঁট কালচে-বাদামি এবং পায়ের পাতা, নখ ধূসর-বাদামি।
বনমোরগ সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের সব বনে এবং সুন্দরবনে বাস করে। ভারত, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে দেখা যায়। এককালে দেশের প্রায় সব বনজঙ্গলেই দেখা যেত। ব্যাপক শিকারের কারণে পাহাড়ি বনে এরা হুমকির মুখে। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো কোনো হাটবাজারে বনমোরগ বিক্রি হয়। তবে সিলেটের চা-বাগান ও সুন্দরবনে এরা ভালো আছে। খুব ভোরে ও সন্ধ্যার আগে মাটি থেকে কুড়িয়ে বিভিন্ন শস্যদানা, ঘাসের গোড়া, কীটপতঙ্গ, ফল ইত্যাদি খায়। রাত কাটায় উঁচু গাছের ডালে বা বাঁশঝাড়ে। ভালো উড়তে পারে। কক্ কক্ শব্দে ডাকে।
মার্চ-মে প্রজননকাল। বনের মধ্যে পায়ের নখ আঁচড়িয়ে মাটিতে সামান্য গর্ত করে শুকনো ঘাস ও কাঠিকুটি বিছিয়ে বাসা বানায়। ৪-৬টি ডিম পাড়ে। ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে। বাচ্চাগুলো ফোটার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসা ছাড়ে ও মায়ের সঙ্গে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। প্রায় পাঁচ বছর বাঁচে।
Source: Prothom Alo
Navigation
[0] Message Index
[#] Next page
[*] Previous page
Go to full version