মাহমুদউল্লাহ-জাদুতে খুলনার জয়

Author Topic: মাহমুদউল্লাহ-জাদুতে খুলনার জয়  (Read 769 times)

Offline Shakil Ahmad

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 374
  • Test
    • View Profile
মাহমুদউল্লাহর বিনয় বলতে হবে! সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে দিতে পারতেন, ‘অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, শেষ ওভারটা আমারই করা উচিত। অধিনায়ক হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে না!’

১৩৩ রান করেও ৩ রানে ম্যাচ জিতেছে খুলনা টাইটানস। শেষ ওভারে হাতে ৩ উইকেট ছিল, তবু জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৭ রান করতে পারেনি রাজশাহী কিংস। উল্টো তিনটি উইকেটই তুলে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ তাদের অলআউট করে দেন। ১৩৩ রান নিয়েও খুলনাকে এভাবে জিতিয়ে অধিনায়ক যেন রূপকথার নায়ক! বিপিএলে দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ৫ উইকেট পাওয়া রাজশাহীর পেসার আবুল হাসানের কৃতিত্ব তাতে ম্লান। সবার মুখে শুধু ‘মাহমুদউল্লাহ...মাহমুদউল্লাহ।’

ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে বাইরের সেই হাওয়া ঢুকতে দিতে চাইলেন না মাহমুদউল্লাহ। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে একটু আগেই টি-টোয়েন্টির যে রোমাঞ্চকর সমাপ্তি হয়ে গেল, সুযোগ পেয়েও শেষ ওভারের সেই নাটকীয় জয়ের মধ্যমণি নিজেকে করতে চাইলেন না খুলনা টাইটানস অধিনায়ক, ‘অন্য কোনো বিকল্প ছিল না বলেই শেষ ওভারে আমাকে বোলিংয়ে আসতে হয়েছে।’

শেষ ওভারে বল হাতে নেওয়ার কারণ যেটাই হোক, মাহমুদউল্লাহই খুলনার জয়ের নায়ক। শেষ চার বলেদরকার ছিল ৪ রান। রাজশাহীর ভেঙে পড়া সেখান থেকেই। প্রথম দুই বলেই মাহমুদউল্লাহ ফেরত পাঠালেন আবুল হাসান আর মোহাম্মদ সামিকে। পরের বলটা রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে কোনোরকমে স্টাম্পিং থেকে বেঁচেছেন নাজমুল ইসলাম। তাতে মাহমুদউল্লাহ হ্যাটট্রিক-বঞ্চিত হলেও তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে রাজশাহীর শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ বলে স্টাম্পড হয়েই দলের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন নাজমুল। ৪ উইকেটে ১১১ রান থেকে মাত্র ১৯ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে একেবারে খাদেই পড়ে যায় ড্যারেন স্যামির দল।

২৩ রানে ৪ উইকেট নেওয়া খুলনার বাঁহাতি পেসার জুনাইদ খানেরও ভূমিকা ছিল তাতে। রাজশাহীকে শেষ ওভারের চাপে ফেলে আতঙ্কিত করে তোলে আসলে সেটাই। আর সেই আতঙ্কে হতে থাকে একের পর এক ভুল। নইলে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের দিক দিয়ে রাজশাহী কিংসই তো এগিয়ে ছিল! প্রথমে আবুল হাসানের ৫ উইকেট। এর চারটিই ১৮ ও ২০তম ওভারে। ১৮তম ওভারের প্রথম দুই বলে ফেরান মাহমুদউল্লাহ ও অলক কাপালিকে। শেষ ওভারে আরিফুল হক আর শফিউল ইসলামকে আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করলেও আরিফুলের এক ছক্কা আর মোহাম্মদ আসগরের দুই বাউন্ডারিসহ হাসান ওই ওভারে দিয়েছেন ১৪ রান। ম্যাচ শেষে ওই ওভারের কথা মনে করিয়ে দিলে মাহমুদউল্লাহও মিটি মিটি হেসে বলেছেন, ‘ওই দুটি চারই ছিল টার্নিং পয়েন্ট।’

রাজশাহীর আরেক ‘কীর্তিমান’ মুমিনুল হক। টি-টোয়েন্টি তো নয়ই, ওয়ানডে ক্রিকেটের ব্যাটিংটাও তিনি পারেন না বলে অলিখিত সনদ দিয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের কোচ-নির্বাচকেরা। কাল তাঁদের লজ্জাই দিলেন মুমিনুল, সেটাও ওপেনিংয়ে নেমে। রাজশাহীর করা ১৩০-এর বলতে গেলে অর্ধেকই তাঁর। ৫৭ বলে ৬৪ করেছেন ছয় বাউন্ডারিতে। অপর প্রান্তে উইকেট পড়ার মিছিল চলতে থাকলেও মুমিনুল মিটিয়ে গেছেন ‘আস্কিং রানরেটে’র চাহিদা। এরপরও কি কেউ বলবেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মুমিনুল ‘চলে না’?

মুমিনুলকে ওপেনিংয়ে নামানোর পরিকল্পনায় সফল হলেও ম্যাচ যত শেষের দিকে গেছে, ততই বেড়েছে রাজশাহীর ভুলভ্রান্তি। শেষ ওভারে পরিকল্পনা কাজে লাগাতে না পারার কথা আবুল হাসানও স্বীকার করেছেন সংবাদ সম্মেলনে। একটা ‘পরিকল্পনা’ তো সবারই কৌতূহলের কেন্দ্রে আসে। এ রকম একটা ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে দারুণ ফর্মে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজকে কেন নামানো হলো ১০ নম্বরে?

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১৩৩/৮ (মজিদ ১৫, পুরান ১৪, ওয়েসেলস ৩২, মাহমুদউল্লাহ ৩২, শুভাগত ৩, অলক ১১, আরিফুল ১৪, শফিউল ০, জুনাইদ ০*, আসগর ৮*; সামি ০/২৩, রেজা ০/৮, মিরাজ ১/১৫, নাজমুল ০/২২, স্যামি ০/১৮, প্যাটেল ১/১৮, হাসান ৫/২৮)। রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৩০ (মুমিনুল ৬৪, নুরুল ৪, সাব্বির ৪, আকমল ০, প্যাটেল ১০, স্যামি ৩১, হাসান ৩, রেজা ৪, সামি ১, মিরাজ ০*, নাজমুল ০; শফিউল ২/২৯, জুনাইদ ৪/২৩, আসগর ১/২১, মোশাররফ ০/২৪, শুভাগত ০/১০, মাহমুদউল্লাহ ৩/৬, অলক ০/১২)।

ফল: খুলনা টাইটানস ৩ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ।