নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির দিকে তাকিয়ে আছে দেশের সব রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে পাওয়া প্রস্তাব থেকে অনুসন্ধান কমিটি যে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে, তাঁদের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন কমিটির ছয় সদস্য।
অনুসন্ধান কমিটিকে সব দল মেনে নেওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে সন্তুষ্টি রয়েছে। অপর দিকে বিএনপি ফলাফল দেখার অপেক্ষায় আছে। এর আগে দলটি এ নিয়ে কোনো বিতর্কে জড়াতে চায় না। তাই কথা বলার ক্ষেত্রে আপাতত সাবধানতা অবলম্বন করছেন দলটির নেতারা।
অনুসন্ধান কমিটির একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, কমিটির সুপারিশ করা নাম ও প্রস্তাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এমনকি কমিটি কী সুপারিশ করেছে, সেটাও প্রকাশ করার সম্ভাবনা আছে। তবে তা রাষ্ট্রপতির দপ্তরে জমা দেওয়ার আগে, নাকি পরে প্রকাশ করা হবে, এই বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল বুধবার চার বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত নেওয়ার মাধ্যমে বাইরের মতামত নেওয়ার পর্ব শেষ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। নতুন করে আনুষ্ঠানিকভাবে আর কারও মতামত নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন রাজনৈতিক দলের দেওয়া নাম থেকে করা সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ব্যক্তি এবং অনুসন্ধান কমিটির নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যেকের অতীত ও বর্তমান বৃত্তান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।
অনুসন্ধান কমিটি সূত্র জানায়, ২৬টি রাজনৈতিক দল যেসব নাম দিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৭০ বছরের অধিক বয়সী ও সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লেষ আছে এমন ব্যক্তিদের প্রথমেই বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর যোগ্যতা ও দক্ষতার ঘাটতি বিবেচনায় নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গতকাল মতবিনিময়ের সময় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের পাঁচজন সদস্যের মর্যাদার ক্রম বিবেচনা করার সুযোগ নেই। একটা দল তৈরি করতে হবে। যাতে সবাই সবাইকে প্রয়োজনীয় মনে করেন, সেভাবে কাজ করেন। আর নির্বাচন কমিশন কোনো সরকারি চাকরি নয়। এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব। যাঁরা এটা বুঝতে পারেন, তাঁদেরই বিবেচনায় নিতে হবে।
অনুসন্ধান কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, যোগ্যতা ও দক্ষতা আছে কিন্তু একটি দল হয়ে কাজ করার মতো মানসিকতা আছে কি না, সেটাও বিবেচনায় নেবেন তাঁরা। কমিটির সদস্যরা বৈঠকে আলোচনার পাশাপাশি নিজেদের যোগাযোগ কাজে লাগিয়েও প্রস্তাবিত নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করবেন। শতভাগ যদি সম্ভব না-ও হয়, সর্বোচ্চ বিচার-বিশ্লেষণই প্রয়োগ করা হবে।
ওই সদস্য আরও বলেন, কেউ ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছেন, রাজনৈতিক পরিবেশেও ছিলেন, কিন্তু কর্মজীবন বা বর্তমান কর্মকাণ্ডে এর কোনো প্রভাব পড়েনি, এমন ব্যক্তিরা বিবেচনা থেকে বাদ যাবেন না। কিন্তু ছাত্রজীবনের রাজনীতি কর্মজীবনে টেনে নেওয়া ব্যক্তিরা বিবেচনায় থাকবেন না। এ ছাড়া কর্মজীবনে রাজনৈতিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন কিংবা পদ ভাগিয়েছেন মনে হলে ওই ব্যক্তিদেরও বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে এ পর্যন্ত যা হয়েছে, তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে সন্তোষ রয়েছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, অনুসন্ধান কমিটিকে প্রায় সব রাজনৈতিক দল মেনে নেওয়ায় এটা আওয়ামী লীগের অর্জন।
দলের দুজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যা যা হচ্ছে, সবই দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য খুব ইতিবাচক। সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এতে খুশি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং তাঁর গঠিত অনুসন্ধান কমিটির যেকোনো উদ্যোগে আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে। অনুসন্ধান কমিটি যেভাবে রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনকে সম্পৃক্ত করেছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার অনুসন্ধান কমিটির কাছে নামের তালিকা দেওয়ার পর থেকে বিএনপির নেতারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলছেন না। তাঁরা চুপচাপ আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি, সার্চ কমিটি এমন একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন করবে, যাদের অধীন সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে এবং হারানো ভোটাধিকারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারা পুনঃপ্রবর্তন হবে। যদি তা না হয়, সার্চ কমিটির ফল দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনুসন্ধান কমিটির একজন সদস্য গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ৭ বা ৮ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নামের তালিকাসহ সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাথার ওপর বিরাট দায়িত্ব। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা প্রয়োগ করছি। শতভাগ নিখুঁত না হলেও সর্বোচ্চ মানদণ্ড বজায় রেখে আমরা আমাদের প্রস্তাব মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে দেব। বাকি দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির।’