আবাসনের স্বপ্ন নিয়ে প্রতারণা
রাজধানী ঢাকার ড্যাপ এলাকায় গড়ে উঠা শতাধিক বেসরকারি হাউজিং প্রকল্প বন্ধ করার ফলে হাজার হাজার প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রেতা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রকল্পের আওতাধীন হাজার হাজার প্লট ক্রেতার ভাগ্যে কি হবে বা তারা তাদের সারা জীবনের তিল তিল করে জমানো টাকায় ক্রয়কৃত প্লটের মূল্য ফেরত পাবেন কি না তাও অনিশ্চিত। অথচ হাউজিং কোম্পানিগুলো তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে এসব কোম্পানি বন্ধ হলেও প্রকল্প মালিকদের কোন ক্ষতি হয়নি। বরং তারা প্রকল্পের প্লট বিক্রির টাকায় পুনরায় নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছেন। বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত বা আদায় করার ব্যাপারে এখনো সরকার কিংবা রাজউক কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে রাজউকের অননুমোদিত এলাকায় গৃহীত আবাসন প্রকল্পে প্লট ক্রয় ও বিক্রি উভয়ই দণ্ডনীয় অপরাধ। এটাকে শেয়ার কেলেংকারির চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, প্রকল্পগুলোর অর্থ উদ্ধারে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
প্রসঙ্গত, ডিটেল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) বাস্তবায়নের পক্ষে সরকারের মহাপরিকল্পনার আওতায় রাজধানী ঢাকাকে একটি সুন্দর পরিকল্পিত নগর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা হাউজিং প্রকল্পগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এদের বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বা নগর পরিকল্পনাবিদগণ বারবার সতর্ক বার্তা দিলেও কর্ণপাত করেননি বিনিয়োগকারীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ড্যাপ এলাকায় বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির ৬০ হাজার ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে। এসব ফ্ল্যাটও রাজউক অনুমোদিত নয়। অথচ হাউজিং কোম্পানিগুলো এসব ফ্ল্যাট সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা। ফলে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ এখন হুমকির সম্মুখীন। রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অবস্থিত রাজউক অননুমোদিত ও ড্যাপের আওতাভুক্ত শতাধিক ছোট-বড় আবাসন প্রকল্প রয়েছে। রাজউক, রিহ্যাব ও বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার এসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য মতে, এসব হাউজিং কোম্পানি ২৬ হাজার কোটি টাকার লক্ষাধিক প্লট ও অর্ধ লক্ষাধিক ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে। এসব প্লটের শতকরা ৯৯ ভাগই পানির নিচে অথবা জলাভূমি কিংবা কৃষি জমিতে অবস্থিত। খাল, নদী ও সরকারি জলাভূমি দখল করে হাউজিং গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে প্রায় সব আবাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে। বাস্তবে অধিকাংশ প্রকল্পেরই কোন অস্তিত্ব নেই। কেবল সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই লোপাট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সরকার গৃহীত রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী রাজউক অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পগুলো অবৈধ।
রাজউকের নগর পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ড্যাপে সরকারি ১৬টি বৃহত্ প্রকল্প ছাড়াও ২ হাজার ৭২৬টি শিল্প কল-কারখানা, নানা প্রতিষ্ঠান ও শতাধিক আবাসন প্রকল্প রয়েছে, যা ড্যাপের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। এই আবাসন প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ইস্ট-ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্প। এই প্রকল্পে বসুন্ধরা গ্রুপের সাড়ে ৬ হাজার বিঘা জমি রয়েছে। ১৮ হাজার প্লট বিক্রি হয়ে গেছে। প্রকল্পে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্লট গ্রহীতাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই প্রবাসী। এর মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বিডিসিএল) সাউথ টাউনে ৮শ’ বিঘা জমি রয়েছে। তৈরি প্লট আছে দুই শতাধিক। রাজধানীর দক্ষিণখানে আশিয়ান সিটি প্রকল্পে ১০ হাজার প্লট রয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সূত্র মতে, ড্যাপের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ (নন-কনফার্মিং) হিসাবে চিহ্নিত সরকারি বৃহত্ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের সম্প্রসারিত অংশের ১১৩৭ একর জমি, পানগাঁও কন্টেইনার পোর্টের অধিগ্রহণকৃত ৫৮ একর জমি ও স্থাপনা, ৫৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সোনাকান্দা বিসিক শিল্পনগরী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন রাজধানীর আবর্জনা ফেলার সর্ববৃহত্ ডাম্পিং স্টেশন, ৪৯ একরের সাভারের ডিসিসি ল্যান্ডফিল সাইট, ৪৬২ একর অধিগ্রহণকৃত জমিতে বাস্তবায়নাধীন সেনাবাহিনীর ট্রেনিং গ্রাউন্ড এবং ২১১ একর জমির উপর বাস্তবায়নাধীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার প্রকল্প। ইতিমধ্যেই এসব প্রকল্পের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বেসরকারি হাউজিং প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসুন্ধরা রিভার ভিউ প্রকল্প, মধুমতি মডেল টাউন (বিলামালিয়া), ইস্টার্ন মায়া কানন, দক্ষিণ রামচন্দপুরের এডভান্স এনজেল সিটি, খাগান উত্তর দত্তপাড়া, আশুলিয়া মডেল টাউন, রামচন্দপুরে ঢাকা উদ্যান ও অন্যান্য প্রকল্প। এ অবস্থায় এই এলাকাকে অবকাঠামোগত পরিকল্পনায় প্রধান বন্যা প্রবাহ ও উপ-প্রধান বন্যা প্রবাহ এলাকা হিসাবে দেখাতে ড্যাপে সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পগুলো অপসারণের জন্য জোর সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা হাজার হাজার প্লট গ্রহীতা সংকটে পড়েছেন।
এদিকে, রাজউক, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ স্বয়ং পূর্তমন্ত্রী ড্যাপ বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলেও ড্যাপের আওতাধীন বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি থেকে প্লট ক্রেতা বিনিয়োগকারীদের অর্থের ভবিষ্যত্ নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। এমনকি যেসব হাউজিং কোম্পানি ড্যাপের আওতায় অননুমোদিত আবাসিক প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে তাদেরকে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য কোন ধরনের চাপ দিয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি। অথচ প্লটের পাশাপাশি ফ্ল্যাট ক্রেতাদের বিষয়টিও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। অথচ সরকার ও রাজউক ড্যাপের আওতায় গড়ে উঠা হাউজিং প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিলেও প্লট বাণিজ্য এখনও বন্ধ হয়নি। বরং এসব হাউজিং কোম্পানি আগের মতোই সাধারণ ও স্বল্প আয়ের লোকদের কাছে নানাভাবে এসব প্লট বিক্রি করে চলেছে।
অননুমোদিত হাউজিং প্রকল্পের তালিকা
রাজউক সূত্র মতে, ড্যাপ এলাকায় অননুমোদিত হাউজিং প্রকল্পগুলো হচ্ছে-বিডিসিএল-এর টঙ্গীঁর গুটিয়ায় অবস্থিত নর্থ টাউন, কাঁচপুর-মদনপুরে ইস্ট টাউন প্রকল্প। এদের সবগুলো প্রকল্প মিলিয়ে এ পর্যন্ত চার হাজার তৈরি প্লট বিক্রি হয়েছে। বড় কাঠালিয়ায় জানোভ্যালী প্রপার্টিজের পিংক সিটি আবাসিক প্রকল্প, বাড্ডা-সুঁতিভোলায় স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেডের সানভ্যালী আবাসিক প্রকল্প, আশুলিয়ায় পারটেক্স গ্রুপের আশুলিয়া সিটি প্রকল্প ও প্যারাডাইজ রিয়েল এস্টেট, যমুনা সিটি, আশুলিয়ায় আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের আশুলিয়া মডেল টাউন, সবুজবাগের মান্ডায় গ্রীন মডেল টাউন। এছাড়াও রয়েছে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট, মধুমতি মডেল টাউন, আশুলিয়ায় ব্র্যাক কনকর্ডের রেইনবো টাউন প্রকল্প, আশুলিয়ায় নিউ উত্তরা মডেল টাউন, বাড্ডায় নতুনধারা হাউজিং কোম্পানি, ধউর-রানাভোলায় মিশন এনার্জি এ্যান্ড প্রপার্টিজ, বাউনিয়ায় এম এন হাউজিং, কেরানীগঞ্জ ও রানাভোলায় যুবক হাউজিং প্রকল্প, রিয়েল এস্টেট প্রকল্প, ধউরে নিউ হ্যাভেন, গোড়ান চটবাড়িতে বায়তুল আমান, সাঁতারকুলে হিরাঝিল প্রকল্প, কেরানীগঞ্জে রিভারভিউ প্রকল্প, রিভারভিউ দক্ষিণা প্রকল্প, সাউথ টাউন, কিংডম হাউজিং, তানশির প্রকল্প, নিউভিশন, সবুজছায়া, সিলভার টাউন, সবুজছায়া গোল্ডেন সিটি, সবুজছায়া মডেল টাউন, আরকে হা্উজিং, মধুসিটি, রমজাননগর হাউজিং, খোলামোড়ায় বিসমিল্লাহ রিয়েল এস্টেট, মেসার্স আমির এন্টারপ্রাইজ, মাওলানা রিয়েল এস্টেট, সাঁতারকুলে নূরনগর হাউজিং, কাঁঠালদিয়ায় টাউনভিউ আবাসিক প্রকল্প, মোহাম্মদপুরে নবীনগর ও মীনাবাজার প্রকল্প, মোহাম্মদী হাউজিং, ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি, আলী নূর রিয়েল এস্টেট, জনক-জননী মডেল টাউন, রায়েরবাজার মডেল টাউন, ফেন্সী ইন্টারন্যাশনাল প্রকল্প, সাভার ভোকেশন সিটি প্রকল্প, সাভার বিসিএস পুলিশ অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং প্রকল্প, সাভার বাইপাস প্রকল্প, আশুলিয়া আবাসিক প্রকল্প, রংধনু আবাসিক প্রকল্প, প্রত্যাশা হাউজিং প্রকল্প, লতিফ রিয়েল এস্টেট প্রকল্প, মধুমতি আবাসিক প্রকল্প ও নর্দান হোল্ডিং প্রকল্প।
থেমে নেই প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি
রাজউকের অননুমোদিত ও ড্যাপ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্পগুলোতে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি থেমে নেই। আদালত ও রাজউকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই অবৈধভাবে হাউজিং ব্যবসায়ীরা প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। কেউ কেউ সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছে। আবার কোন কোন হাউজিং কোম্পানি কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলা দিয়ে রিহ্যাব মেলা বা হাউজিং ফেয়ারের নামে ড্যাপের ফ্ল্যাড ফ্লো জোনে গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্পে প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি করে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে নিঃস্ব বা প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
এ ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: নূরুল হুদা ইত্তেফাককে বলেন, অননুমোদিত ও ড্যাপ এলাকায় গড়ে তোলা একাধিক আবাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে রিয়েল এস্টেট ও ব্যবস্থাপনা আইনে মামলা করা হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মান্নান খান ইত্তেফাককে বলেন, আইন অমান্যকারী ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় আনতেই রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। মন্ত্রী পরিষদের সাত সদস্যকে নিয়ে গঠিত ড্যাপ পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশের পরই ক্ষতিগ্রস্তদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিক্রিয়া
ক্ষতিগ্রস্ত প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নানাভাবে। কানাডা প্রবাসী ডা. সাবরিনা মমতাজ ইত্তেফাককে বলেন, ৩৮ লাখ টাকা কাঠা দরে ২০০৫ সালে বারিধারা সংলগ্ন এলাকার একটি বেসরকারি হাউজিং কোম্পানি থেকে ৫ কাঠার প্লট ক্রয় করি। ইতিমধ্যে প্লটের সমস্ত কিস্তির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। দেশে ফিরে তিনি জানতে পেরেছেন, তার ক্রয়কৃত প্লটসহ প্রকল্পের একটি বৃহত্ অংশ ড্যাপের আওতায় পড়েছে। রাজউকে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পেরেছেন, ওই প্রকল্পটি ড্যাপের ফ্ল্যাড ফ্লো জোন হিসাবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া আবাসন প্রকল্পটিও রাজউকের অনুমোদনহীন। এমন অবস্থায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। ডা. সাবরিনা মমতাজ দুঃখ করে বলেছেন, তার সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়েই তিনি প্লটটি ক্রয় করেন। দেশে ফিরে এবার প্লটে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, তাও ভেস্তে গেছে। এখন রাজউক ও হাউজিং কোম্পানিতে গণধরনা দিয়েও তিনি সমস্যার কোন কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। হাউজিং কোম্পানির পক্ষে বলা হয়েছে, ড্যাপ কাটানোর চেষ্টা চলছে। কোম্পানির কাছে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত চাইলে তারা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি নিরুপায় হয়ে গুলশান থানায় একটি জিডি করেছেন। ডা. সাবরিনার মতো অভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন আরো অনেকেই।
ঢাকার বনশ্রী, বসুন্ধরা-বারিধারা, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনে সর্বস্বান্ত হয়েছেন দিলারা জামান, আফজাল হোসেন, আক্তার হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল হক, কবির আহমেদ, কাওছার রহমান, আবুল কালাম আজাদ, দুলাল হোসেন, হামিদা বেগম, কনক রানী দাশ ও শিক্ষক আলী আজগার কাঞ্চন। এসব ভুক্তভোগী বলেন, কিছু কিছু হাউজিং কোম্পানি ড্যাপের দোহাই দিয়ে প্লট গ্রহীতাদের কিস্তি নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু হাউজিং কোম্পানিগুলো গোপনে তাদের প্লটগুলো অন্যত্র বিক্রির পাঁয়তারা করছে। ভুৃক্তভোগীরা আরো জানান, তারা নানা তথ্য জানতে গিয়ে হাউজিং কোম্পানিগুলোর লোকদের হাতে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছেন। তারা সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু প্রতিকারের দাবি করছেন।
রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০’-এ যা আছে
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার নিবন্ধন ক্ষেত্রে বলা হয়, কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট হতে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। ডেভেলপারের দায়-দায়িত্বের বিষয়ে বলা হয়, কোন ডেভেলপার রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন এবং হস্তান্তর দলিল সম্পাদনের ক্ষমতা বা অধিকার প্রাপ্তির পূর্বে রিয়েল এস্টেট ক্রয়-বিক্রির জন্য প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রচার করতে পারবে না। প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে ক্রেতার নিকট ডেভেলপার কোন প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে বা বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না। হস্তান্তর দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে বলা হয়েছে, রিয়েল এস্টেটের সমুদয় মূল্য পরিশোধের পর ডেভেলপার অনূর্ধ্ব তিন মাসের মধ্যে ক্রেতাকে রিয়েল এস্টেটের দখল হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন কার্যাদি সম্পন্ন করে দেবেন। রিয়েল এস্টেট হস্তান্তরে ব্যর্থতা বিষয়ে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেভেলপার রিয়েল এস্টেট হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে রিয়েল এস্টেটের মূল্যবাবদ পরিশোধিত সমুদয় অর্থ চুক্তিতে নির্ধারিত পরিমাণ ক্ষতিপূরণসহ ৬ মাসের মধ্যে প্রাপকের হিসাবে প্রদেয় চেকের মাধ্যমে ফেরত প্রদান করবেন।
অপরাধ, বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি নিবন্ধন গ্রহণ না করে কোন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করলে তিনি অপরাধ করেন বলে গণ্য হবে। এ অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ২ বছর কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্÷