শিশু রোগ

Author Topic: শিশু রোগ  (Read 35932 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
শিশু রোগ
« on: October 22, 2011, 12:33:36 PM »
নবজাতক

আপনার যদি স্বাভাবিকভাবে প্রসব হয় তবে জণ্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে আপনার কাছে নিয়ে আসবে আপনার ডাক্তার, নার্স বা দাই৷ এটা খুবই জরুরী৷ এর ফলে বাচ্চার সাথে মায়ের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷বাচ্চা জণ্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার হয়তো জানতে ইচ্ছা করবে আপনার ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে, দেখতে কার মতো হয়েছে ইত্যাদি৷ কিন্তু সবার আগে আনপার জানা উচিত বাচ্চা স্বাভাবিক কিনা৷ এখানে স্বাভাবিক নবজাতকের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আপনাকে জানানো হচ্ছে৷ জণ্মের পর হতে একমাস সময়কালকে নবজাতক বলা হয়৷

 
0005.jpg
চিত্র- নবজাতক
চিত্র সূত্র- © ডি.নেট

 



নবজাতকের শরীরের বৈশিষ্ট্য :
ওজন : নবজাতকের ওজন সাধারণভাবে ৩ কিলোর কম বা বেশি হয়ে থাকে৷

লম্বা : স্বাভাবিক শিশু জণ্মের সময় মোটামুটিভাবে ৫০ সেন্টিমিটার বা ২০ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়৷

শরীরের অনুপাত : শিশুর মাথা শরীর হাত-পা-এর অনুপাত বড়দের শরীরের তুলনার অন্যরকম হয়৷ নবজাতকের মাথার মাপ দেহের মাপের এক চতুর্থাংশ হয়ে থাকে৷ দু�বছরে সেটা গিয়ে দঁাড়ায় এক পঞ্চমাংশ এবং আঠারো বছর লাগে বড়দের মতো মাথার মাপ দেহের এক অষ্টমাংশ হতে৷

মাথা:নবজাতকের মাথার মাপ দেহের তুলনায় বেশি হয়, এ সময়ে মাথার মাপ ৩৫ সেন্টিমিটার এর মতো হয়৷নবজাতকের মাথার গঠন নানান রকমের হতে পারে৷ কিছু কিছু গঠন একটু অস্বাভাবিক দেখালেও তা কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ এনিয়ে চিন্তার কোন কারণ নাই৷

চামড়া:জণ্মের সময়ে বাচ্চার সারা শরীর ভার্নিক্স বলে এক ধরণের মোমের মতো জিনিস দিয়ে ঢাকা থাকে৷ এটা স্বাভাবিক, কখনও তুলো বা অন্য কোনও জিনিস দিয়ে এটাকে তুলবার চেষ্টা করবেন না৷ এগুলো ধীরে ধীরে উঠে যাবে৷ ভার্ণিক্স উঠে যাওয়ার কয়েকদিন পর দেখা যায় হাত পায়ের চামড়ার পাতলা খোসার মতো  আবরণ আলগা হয়ে উঠে উঠে যাচ্ছে৷ এতে ভয় পাওয়ার কিছু নাই৷ এটাও খুব স্বাভাবিক৷

চোখ : জণ্মের সময় চোখের পরিমাপ বড়দের এক তৃতীয়াংশের মতো হয়৷ জণ্মের পরে অনেক শিশুরই চোখের পাতা একটু ফোলা লাগে৷ এটা সাধারণত জণ্মের সময়ে যে চাপ পড়ে তার ফলে হয়৷ কয়েকদিনের মধ্যে দেখবেন ফোলা একদম মিলিয়ে গেছে৷ নবজাতকের চোখে যদি পিচুটি দেখেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন৷ নিজে থেকে কোনও সময়েই চোখে মলম বা ড্রপ দেবেন না৷

কান : নবজাতকের কান নিয়ে চিন্তার কিছু নেই৷

মুখ : অনেক বাচ্চার জণ্মের সময়ই দঁাত দেখা যায়৷ এতে ঘাবড়ে যাবেন না৷ এই দঁাত কিছুদিনের মধ্যেই পড়ে যাবে৷অতিরিক্ত দুধ টানার ফলে নবজাতকের ঠেঁাটে ফোস্কার মতো ফুলে উঠতে পারে৷ এজন্য কখনো দুই খাওয়ানো বন্ধ করবেন না৷ নবজাতকের গাল দুটো বেশ ফোলা-ফোলা হয়৷ এর কারণ ওদের গালে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি থাকে৷ যাকে আমরা বলি সাকিং প্যাড্স৷ এ সময়ে যেহেতু শিশু প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ চুষে থাকে সেই জন্যেই এই সাকিং প্যাড বা চোষক গদির দরকার৷ পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই চর্বির পরিমাণ কমতে থাকে এবং গাল ফোলার ভাবটাও কমে আসে৷

গলা : নবজাতকের গলা প্রায় থাকেই না বলা যায়৷ ওদের গলা এতই ছোট থাকে যে মনে হতে পারে মাথাটা সরাসরি ঘাড়ের সঙ্গে লাগানো৷ পরে আস্তে আস্তে গলা লম্বা হতে থাকবে এবং বড়দের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷

বুক : বুকের ভিতরে ফুসফুস বা হার্ট নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই৷ এগুলোর চিন্তা ডাক্তারদের উপরেই ছেড়ে দিন৷

নাভি : আসলে মায়ের শরীর হতে খাদ্য এবং অক্সিজেন ইত্যাদি শিশুর শরীরে নিয়ে যায় একটা গোল ফিতের মতো লম্বা জিনিস দিয়ে৷ এটাকেই আমরা বলি আমবিলিকাল কর্ড বা সাধারণ বাংলায় নাড়ি৷ জণ্মের পরে শিশুর এই নাড়ির আর কোনও প্রয়োজন থাকে না৷ তাই জণ্মের সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার বা নার্সরা নবজাতকের নাভি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে থেকে এই নাড়ি কেটে দিয়ে ভালো করে বেঁধে দেন৷ আর সাত-দশ দিনের মধ্যে এই কাটা নাড়ির অংশটা আস্তে আস্তে কালো হয়ে শুকিয়ে নাভি থেকে খসে পড়ে যায়৷ মনে রাখবেন নাভিতে লাল-নীল ঔষধ লাগালে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়৷

যৌনাঙ্গ : সারা শরীরের তুলনায় নবজাতকের যৌনাঙ্গ একটু বড়ই থাকে৷ সেটা স্বাভাবিক৷

কন্যা নবজাতক : অনেক সময় নবজাতক কন্যা সন্তানের যৌনাঙ্গ দিয়ে সাদাটে এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়৷ অনেক সময় আবার ওতে রক্তের ছিঁটেও থাকতে পারে৷ ভয় নাই এটা মায়ের শরীর হতে ইস্ট্রোজেন হরমোন গর্ভস্থ অবস্থায় শিশুর শরীরে ঢোকার ফল, কয়েকদিনের মধ্যেই এসব ঠিক হয়ে যাবে৷

ছেলে নবজাতক : অনেক সময় অন্ডকোষের থলি (স্ক্রোটাম) একটু বেশি ফোলা থাকে৷ এটা হয়তো জণ্মের সময় ব্যথা লাগার বা ক্ষনস্থায়ী পানি জমার ফল৷ এর কোনও চিকিত্‌সার দরকার হয় না৷

শিশুর কিছু সাধারণ রোগের নাম নিচে দেওয়া হলো-

    ১. প্রতিষেধক টিকা কেন দিবেন
    ২. নবজাতকের যত্ন
    ৩. শিশুর আদর্শ খাদ্য
    ৪. মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু
    ৫. শিশুর জ্বর
    ৬. শিশুর নিউমোনিয়া
    ৭. শিশুদের হৃদরোগ
    ৮. অপুষ্টিজনিত রোগ
    ঌ. ধনুষ্টংকার
    ১০. পোলিও
    ১১. ডিপথেরিয়া
    ১২. শিশুর হাম
    ১৩. হুপিংকাশি
« Last Edit: October 22, 2011, 12:37:31 PM by bbasujon »

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #1 on: October 22, 2011, 12:34:32 PM »
কেন দিবেন প্রতিষেধক টিকা

শিশুদের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি ভ্যাকসিন-এর কথা আলোচনা করা হল৷

বি.সি.জি : শিশু জণ্মাবার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রতিষেধক টিকাটি দিতে হয়, যক্ষ্না রোগের প্রতিষেধক হিসাবে৷ ফলে যক্ষ্না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না৷ বা হলেও অসুখটি বেশিদুর গড়াবে না৷ আমাদের দেশে টিকাকরণ আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে৷ টিকা দেওয়ার ৩-৬ সপ্তাহ পর শরীরের যেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে (বঁা হাতের ওপরের দিকে) সেখানে একটা ছোট ফুস্কুড়ির মতো দেখা দেয়৷ সেটা ফেটে গিয়ে ঘা হয়৷ পরে সেটা শুকিয়ে গিয়ে একটা ছোট দাগ থেকে যায়৷ এই দাগ থেকেই বোঝা যায় টিকা দেওয়াটা কার্যকরী হয়েছে৷

 
bcg-vaccination-01_final.jpg

 
চিত্র- শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া হচ্ছে
চিত্র সূত্র- © ডি.নেট


পোলিও : পোলিও রোগ এমন একটি মারাত্মক অসুখ যা মৃতু্যর হাত থেকে বেঁচে গেলেও শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশেষ করে হাত ও পা বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে৷ এই ভ্যাকসিন ফেঁাটা হিসেবে চালু আছে৷ এই ভাকসিন দেবার ফলে প্রায় ১০০ ভাগ সফল হয় পোলিও রোগ প্রতিষেধক হিসাবে৷ শিশু জণ্মাবার সঙ্গে সঙ্গে এই টিকা চালু করতে হয়৷ তারপর দ্বিতীয় ডোজ ৬ সপ্তাহের মাথায় এবং আরও ২টি ডোজ ৪ সপ্তাহ পর পর৷ অবশেষে দেড় বছর এবং পঁাচ বছরের মাথায় বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়৷ আমাদের সরকার এই পোলিও টিকাকরণ আবশ্যিক করেছে৷

polio_vaccine.jpg

 
চিত্র- শিশুকে পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো হচ্ছে
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


ডিপিটি : শিশুদের তিনটি মারাত্মক রোগের ভ্যাকসিন ৷ এই তিনটি রোগ হল ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ও ধনুষ্টংকার৷ এই তিনটি রোগের মিশ্রিত ভ্যাকসিন (DPT) একসঙ্গে একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়৷ এর চালু নাম হল �ট্রিপল অ্যান্টিজেন�৷ শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ হলেই এই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়৷ ইনজেকশন দেবার পর শিশুর ২/৩ দিন জ্বর ও ব্যথা হতে পারে৷ এই ভ্যাকসিন ডিপথেরিয়া এবং ধনুষ্টংকারের ক্ষেত্রে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ প্রতিষেধক হিসাবে সফল৷ কিন্তু হুপিং কাশির ক্ষেত্রে সফলতা ৭০-৮০ ভাগ৷ দেড় বছরের মাথায় একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়৷ এরপর দ্বিতীয় বুস্টার ৫ বছরের মাথায় দেওয়া হয়৷ কিন্তু তখন ওই ডোজটিতে হুপিং কাশির ভ্যাকসিন বাদ থাকে৷

dpt-vaccination-03_final.jpg

 
চিত্র- শিশুকে ডিপিটি টিকা দেওয়া হচ্ছে
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


হামের টিকা : এই টিকা মিজিলস ভ্যাকসিন নামে চালু৷ শিশুর ঌ মাস বয়সে দিতে হয়৷ এর ফলে শিশুটির হাম হয় না বা হলেও জটিলতা কম হবে৷ ঌ মাস বয়সের আগে দিলে  এই ভ্যাকসিন কার্যকরী নাও হতে পারে৷ এই টিকা অবশ্যই দেওয়া উচিত কারণ এই রোগ থেকে অনেক জটিল রোগ দেখা দিতে পারে যেমন-নিউমোনিয়া, এনকেফালইটিস, ব্রস্কাইটিস ইত্যাদি৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

তথ্যসূত্র :
ডা: তাহিরা নাসরীন

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #2 on: October 22, 2011, 12:35:36 PM »
 নবজাতকের যত্ন

গর্ভাবস্থায় মায়ের কোন প্রকার জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই কোনও দক্ষ ডাক্তার, নার্স বা দাইয়ের কাছে  প্রসব করানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোনও জরুরি সমস্যা দেখা দিলে তার তাত্‌ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ যেন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে৷
স্বাভাবিক জণ্মের পর শিশুকে একটি শুকনো কাপড়ে ভাল করে মুছে নিয়ে আর একটি শুকনো কাপড়ে জড়িয়ে রাখতে হবে৷ নাভি দুই ইঞ্চি পরিমাণ রেখে কমপক্ষে ২টি শক্ত বঁাধন দিয়ে নতুন ব্লেড বা পরিষ্কার চাকু দিয়ে কাটতে হবে৷ মায়ের ফুল পড়তে দেরি হলে বা শিশুর কঁাদতে দেরি হলেও নাভি কাটা বন্ধ রাখা চলবে না৷

জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশু কেঁদে না উঠলে পিঠে ও পায়ে একটু ঘষা দিয়ে তাকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করতে হবে৷ এতে ফল না হলে শিশুকে চিত্‌ করে শুইয়ে ঘাড়ের নিচে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাপড় দিয়ে তার ওপরে হাল্কাভাবে মিনিটে ৩০-৪০ বার শ্বাস দিয়ে শিশুর বুক ফুলয়ে দেবার চেষ্টা করতে হবে৷ এমনিভাবে অল্পক্ষণ শ্বাস দিলেই শিশু নিজে থেকে শ্বাস নেয়া শুরু করতে পারে৷ কখনোই শিশুর পা উঁচু করে উল্টো করে ধরে পিঠ থাপড়ানো উচিত না৷

শিশু কঁাদার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শালদুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে৷ নবজাতকটির ওজন নিতে হবে৷ ওজন জানা থাকলে পরবর্তী সময়ে তার সঠিক বৃদ্ধি নির্ণয় করা যায়৷

 
newborn.jpg

 
চিত্র- নবজাতক
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


জণ্মের কয়েকদিনের মধ্যেই কিছু কিছু স্বাভাবিক সমস্যা হয়৷ যেমন -

১) প্রস্রাব হতে দেরি হওয়া
বেশিরভাগ নবজাতকের জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে একবার প্রস্রাব হয় এবং পরে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আর প্রস্রাব নাও হতে পারে৷ এটি স্বাভাবিক৷ জণ্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাধারণত পায়খানা হয় এবং তা কালো রঙের৷

২) বুকের দুধ আসতে বিলম্ব হওয়া
প্রথম ২/৩ দিন মায়ের দুধ কম আসে এবং এ সময় শিশুর কম দুধেরই প্রয়োজন থাকে৷ অন্য কোন খাবার না দিয়ে বারবার দুধ টানাতে থাকলে সাধারণত তৃতীয় দিনে দুধের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এ সময় শিশুর পায়খানা একটু পাতলা ও দিনে আট দশ বারও হতে পারে৷ শিশু বুকের দুধ যখনই খেতে চাইবে তখনই তাকে খেতে দিতে হবে৷ সময় বেঁধে বা ঘুম থেকে জাগিয়ে খাওয়ানো ঠিক নয়৷ দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের স্তনের বেঁাটা-সহ কালো অংশের যতটুকু সম্ভব শিশুর মুখের ভেতর দিতে হবে৷ এক স্তন থেকে দুধ খাওয়া শেষ হলে অপর স্তনের দুধ খাবে৷

৩) নবজাতকের জন্ডিস
জণ্মের তিন-চার দিন পর প্রায় সকল নবজাতকের শরীরই কমবেশি হলদে দেখায় বা জন্ডিস হয়৷ এটি স্বাভাবিক৷ এক সপ্তাহ থেকে দশ দিনের মধ্যে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ কিন্তু নিচের লক্ষণগুলো থাকলে তাকে অস্বাভাবিক জন্ডিস ভাবতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

    *      যদি জণ্মের পরের দিন জন্ডিস ভালভাবে বোঝা যায়৷
    *      যদি কোনও সময় জন্ডিসের মাত্রা অনেক বেশি মনে হয় যেমন- চোখ-মুখ শরীর ছাড়াও হাত ও পায়ের তালু পর্যন্ত হলুদ মনে হয়৷
    *      শিু কম খেতে চায় বা তাকে নিস্তেজ মনে হয়৷
    *      যদি শিশুর পায়খানার রঙ ফেকাসে বা সাদা সাদা হয়৷
    *      যদি জন্ডিসের সঙ্গে শিশুর জ্বর/বমি ইত্যাদি থাকে৷
    *      দুই সপ্তাহ বয়সের পরও যদি বেশ স্পষ্ট জন্ডিস থাকে৷
    *      যদি মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয়৷

৪) গায়ে লাল লাল দানা
প্রথম সপ্তাহে অনেক শিশুর গায়ে লাল দানা ওঠে, একে অনেকে মাসিসিপি বলেন, যা স্বাভাবিক এবং কয়েকদিনের মধ্যে আপনা থেকেই তা ভাল হয়ে যায়৷ এ সময় শিশুর গায়ে কোনও তেল বা লোশন লাগানো ঠিক নয় তাতে এটি আরো বাড়তে পারে৷ নবজাতকের ত্বকের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার না করাই ভাল৷ অলিভ ওয়েল, বেবি ওয়েল দেয়া উত্তম৷

৫) নাভির যত্ন
নাভিতে কোনও কিছু না লাগিয়ে শুকনো রাখতে হবে৷ যদি নাভির চারপাশ লাল হয় অথবা পঁুজের মতো রস আসে, তখনই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে৷ নাভিতে কোনও প্রকার সেঁক দেবার প্রয়োজন নেই৷

৬) চোখ ওঠা
যদি চোখে ময়লা আসে বা ভোরবেলা চোখ এঁটে থাকে তাবে চোখে রোজ চারবেলা চোখের ড্রপ (ক্লোরামফোনিকল আই ড্রপ) সপ্তাহখানেক দিতে হবে, কিন্তু অবশ্যই তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী৷

৭) গোসল করানো
জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে গোছল না করিয়ে পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে ভাল করে মুছে শিশুকে আরএকটি পরিষ্কার কাপড়ে দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা উচিত৷ শিশুর গায়ে ও হাত-পায়ের ভঁাজে যে সাদা অঁাঠাল প্রলেপ থাকে (শণরভধস) তা কিন্তু খারাপ কিছু না৷ অপরিণত শিশুদের বেলা এটি বেশি থাকে৷ এই প্রলেপ শিশুর ত্বককে রক্ষা করে৷ জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে ফেলার প্রয়োজন নেই৷ শিশু পরিণত ও সঠিক ওজনের হলে ২/১ দিন পর গোছল করানো যায় তবে নাভি শুকানো না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে৷ প্রতিদিন উষ্ঞ গরম পানিতে ভাল করে সমস্ত শরীর মুছে দেয়া উচিত৷ শিশু যদি অপরিণত ও কম ওজনের হয় তবে অন্তত প্রথম দুসপ্তাহ গোসল না করানোই ভাল৷

৮) চুল কাটা
জণ্মের অল্প দিনের মধ্যেই মাথার চুল না কেটে কিছু দেরিতে কাটা উত্তম৷ চুলগুলো পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে৷ এগুলো শিশুকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে৷

অপরিণত ও কম ওজনের শিশু
শিশু যদি ৩৬ সপ্তাহ পূর্ণ হবার পূর্বেই জণ্ম নেয় তবে তাকে অপরিণত নবজাতক এবং শিশুর ওজন যদি ২.৫ কেজি ওজনের কম হয় তবে তাকে কম ওজনের নবজাতক বলে৷দুই কেজির বেশি ওজন হলে সাধারণত তেমন কোন অসুবিধা হয় না তবে তার কম হলে নানাবিধ সমস্যা হতে পারে - যেমন ঠিকমত খেতে না পারা, সহজে রোগ সংক্রমিত হওয়া, অতিরিক্ত জন্ডিস হওয়া ইত্যাদি৷ এসব শিশুর যত্নের ব্যাপারে আরো বেশি খেয়াল রাখতে হবে৷ এসব শিশুকে ভালভাবে উষ্ঞ রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ মায়ের দুধ ভালমতো টেনে খেতে না পারলে হাতে গালিয়ে চামচে বা ড্রপারে বারেবারে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে৷ নবজাতক যদি খুব কম ওজনের (১.৫ কেজির কম) হয় তবে তাদেরকে ঘরে উষ্ঞ রাখা কঠিন হয় এবং চামুচেও তারা দুধ গিলতে পারে না সেক্ষেত্রে তাদেরকে হাসপাতালে বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে হবে৷

অপরিণত ও কম ওজনের শিশু জণ্ম প্রতিকারের জন্য গর্ভধারণের আগে ও গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষার দিকে নজর রাখতে হবে ৷ এ ব্যাপারে চিকিত্‌সক ও স্বাস্থ্যকমীর পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ে মায়ের খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে৷ যেহেতু মায়ের খাবারেরই একটি অংশ বাচ্চা গ্রহণ করে থাকে৷ একসময় একটা ভুল ধারণা চালু ছিল যে, মা পর্যাপ্ত খাবার খেলে পেটের বাচ্চা আকারে বড় হবেÐ এতে বাচ্চা প্রসবে অসুবিধা হবে৷ ধারণাটা মোটেই ঠিক নয়৷ গর্ভকালীন সময়ে অন্য সময়ের তুলনায় মায়ের ২০%-২৫% খাবার বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হয়৷ এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল, শাক-সবজি ও পানিসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷ কম আয়ের লোকদের জন্য এরকম একটা সাধারণ হিসাবে হতে পারে যেÐ বাচ্চা পেটে এলে মাকে প্রতিদিন এক মুঠ চাল, এক মুঠ ডাল, কিছু শাক-সবজি, অর্ধেক কলা ও এক চামচ তেল বাড়তি খেতে হবে৷

তাছাড়া কিছুরোগ আছে যাতে পূর্ণ মেয়াদের আগেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রেও বাচ্চা কম ওজনের হতে পারে৷ এক্লামশিয়া, প্রস্রাব ইনফেকশন, প্রজননতন্ত্রের ইনফেকশন, জণ্মনালি থেকে রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন কারণে পূর্ণতা প্রাপ্তির আগেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যেতে পারে৷ এসব ক্ষেত্রে চিকিত্‌সকের পরামর্শাধীন থাকতে হবে৷

নবজাতকের টিকা
নবজাতক অবস্থায় টিকা শুরু করতে হবে৷ এ সময় বিসিজি, প্রথম ডোজ পলিও ও জন্ডিসের প্রথম টিকা দিতে হবে৷

একটি সুস্থ নবজাতকের যদি কখনও নিচের যে কোন সমস্যা দেখা দেয় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে৷ যেমন -

    - যদি হঠাত্‌ করে শিশু খাওয়া কমিয়ে দেয় বা দুধ টানতে না পারে,

    - যদি জন্ডিস বেশ বেড়ে যায়,

    - অনেক বমি বা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়,

    - হঠাত্‌ একদিকে চোখ ঘুরিয়ে রাখা,

    -চোখ-মুখের মাংসপেশী হঠাত্‌ কেঁপে ওঠা,

    -কোন হাত বা পা হঠাত্‌ একদিকে ঝঁাকানো বা সোজা করে রাখা, মাঝে মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি৷

সকল নবজাতকের যত্নে একটি জিনিস ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে যে, সব সময় পরিষ্কার হাতে তাকে ধরতে হবে এবং তার কাপড় চোপড় বিছানা যেন শুকনো ও পরিষ্কার থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷আসুন আমরা সবাই আমাদের এই অবুঝ সোনামণিদের যত্নের ব্যাপারে আও সচেতন হই এবং তাদের সুস্থ সবল হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করি৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

তথ্য সূত্র:
দৈনিক প্রথম আলো

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #3 on: October 22, 2011, 12:36:27 PM »
শিশুর আদর্শ খাদ্য


জণ্মের পর শিশুর প্রথম খাবার: জণ্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্বভ (আধাঘন্টার মধ্যে) শিশুকে স্তন দান করতে হবে৷ অনেকে জণ্মের পর পরই স্তন দান করতে বলেন৷ তবে এত তাড়াতাড়ি সম্বভ না হলে, জণ্মের তিন-চার ঘন্টার ভেতর, অর্থাত্‌ মা যখন প্রসবের ধকল কাটিয়ে ওঠেন এবং শিশু বেশ ভালভাবে চুষতে পারে, তখন তাকে অবশ্যই খেতে দিতে হবে৷ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য উত্‌সাহ দিন৷

 
breast-feeding_final.jpg
চিত্র- শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে
চিত্র সূত্র-ডি.নেট


শালদুধ:শিশু জণ্মের পর যে হলুদাভ ঘন দুধ বেরিয়ে আসে তাকে বলা হয় শালদুধ বা কোলস্ট্রাম-যা শিশুর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ এ দুধ ফেলে না দিয়ে অবশ্যই খেতে দিবেন৷শালদুধ পরিমাণে কম হলেও নবজাতকের জন্য তা যথেষ্ট৷জণ্মের পর শিশুর যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই শালদুধে আছে৷ শালদুধে অনেক বেশি রোগ-প্রতিরোধ ইপাদান ও শ্বেতকণিকা থাকে৷ এসব উপাদান শিশুকে বিভিন্ন রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে৷ তাই শালদুধকে বলা হয় শিশুর প্রথম টিকা৷ শালদুধে যে সব উপাদান আছে তা শিশুর অপরিণত অন্ত্রকে পরিপক্ক হতে সাহায্য করে৷ এসব গ্রোথ ফ্যাক্টর শিশুর অন্ত্রনালীকে দুধ হজম করতে সাহায্য করে৷শালদুধ একটি রেচকের মতো কাজ করে ও শিশুর পেটের প্রথম কালো পায়খানা বা মিকোনিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে৷ মিকোনিয়াম বেশিক্ষণ পেটে থাকলে নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার আশংকা থাকে৷

মধু বা অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার:বহুদিন থেকে আমাদের দেশে প্রচলিত আছে শিশু জণ্মের পরই তার মুখে মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন-মধু বা চিনির পানি দেয়া৷ কিন্তু যেহেতু এগুলো জীবাণুমুক্ত নয় তা খাওয়ানোর পর শিশুর বমি, পাতলা পায়খানা বা অন্যান্য পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে৷ তাই নবজাতক শিশুকে চিনির পানি বা মধু খাওয়ানো মোটেই উচিত নয়৷

১ঌঌ২ সাল হতে প্রতি বছর আগষ্টের প্রথম সপ্তাহ বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে ৷ বিশ্বব্যাপী এক সপ্তাহব্যাপী শিশুর জন্য আদর্শ খাদ্য তথা মাতৃদুগ্ধের গুণাগুণ নিয়া আলোচনা চলে৷ ১ঌঌ২ সাল হতে প্রতি বছর িশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে৷ শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সুফলের সঠিক চিত্র তুলে  ধরে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মাতৃদুগ্ধের ব্যাপারে জনসাধারণের মাঝে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করাই ঘটা করে এই সপ্তাহ পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য৷

মায়ের বুকের দুধ শিশুদের জন্য সঠিক, উপযোগী তথা সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার এই সত্য আজ সুপ্রতিষ্ঠিত৷ মায়ের দুধে শিশুর জন্য সর্বপ্রকার অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে৷ মায়ের দুধ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রোগ-প্রতিরোধক উপাদান সরবরাহ করে৷ শাল দুধের রোগ-প্রতিরোধক বিশেষ ক্ষমতার জন্য তো ইহাকে শিশুর জীবনে প্রথম টিকা বলা হয়ে থাকে৷ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারেঃ যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের আইকিউ (I.Q) সেসব শিশুর তুলনায় তিন হইতে পঁাচ পয়েন্ট বেশী যেসব শিশু মায়ের দুধ হতে বঞ্চিত হয়৷

গবেষকরা আরো লক্ষ্য করেছেন যে, বুকের দুধ হতে বঞ্চিত শিশুরা সমাজে সহজে (তুলনামূলকভাবে) খাপ খাইয়ে চলতে পারে না৷ গবেষণা হতে বেড়িয়ে আসা আরেকটি সত্যি হচ্ছে ঃ শিশুরা যত বেশীদিন মায়ের দুধ খাবে, ততই মঙ্গল৷ অন্যদিকে ইউনিসেফের এক হিসাব মতে ঃ তৃতীয় বিশ্বের সব মা যদি তাদের শিশুদের সঠিক নিয়মে বুকের দুধ খাওয়ান, তবে ফি বছর ১০ লক্ষেরও বেশী শিশুর জীবন বঁাচানো সম্ভব৷
একটা সময় ছিল, যখন মনে করা হত যে, বুকের দুধ খাওয়ালে মায়েদের শারীরিক ক্ষতি হয়৷ আজ এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত  হয়েছে৷ বিজ্ঞান বলছে বরং উল্টা কথা৷ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফল ঘেঁটে বলছেন যে, যেসব মা শিশুদের বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ান তাহাদের ব্রেষ্ট (স্তন)ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ কম৷ অনেক চিকিত্‌সকের মতে এতে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনাও অনেক হ্রাস পায়৷

মোদ্দাকথা, শুধু শিশুর মঙ্গলের জন্য নয়, মায়ের মানসিক ও শারীরিক কল্যাণের জন্যও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত নিয়মিতভাবে৷ আর স্বাভাবিকভাবেই শিশু ও মায়ের কল্যাণ মানেই সমাজের কল্যাণ৷ শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হলে শিশু খাদ্য বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয় না৷ অন্যদিকে শিশু ও মা যেহেতু বুকের দুধ খাওয়া ও খাওয়ানোর মাধ্যমে অনেক ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে রক্ষা পায়, সেহেতু চিকিত্‌সার জন্যও সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম অর্থ খরচ হবার সম্ভাবনা৷ অর্থাত্‌ বুকের দুধ পরিবার তথা সমাজকে আর্থিক দিক দিয়াও লাভবান করতে পারে৷
মাতৃদুগ্ধের এত গুণের পরও বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী শিশুকে কমবেশী বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ আদর্শ খাদ্য হতে বঞ্চিত শিশুদের কথা ভেবেই বিশ্বে মাতৃদুগ্ধ দিবস পালনের আয়োজন৷ অনেকে বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের মায়েরা এমনিতেই শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান, সেহেতু এই দেশে মাতৃদুগ্ধের পক্ষে প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন নাই৷ কিন্তু তঁারা ঠিক বলেন না৷ বাংলাদেশ ব্রেষ্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের এক জরিপ মতে, বাংলাদেশে মাত্র ৩২.১ শতাংশ মা শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাইয়ে থাকেন৷ অর্থাত্‌ বাংলাদেশেও মাতৃদুগ্ধের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দরকার৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

শিশুর সুস্থতায় মায়ের দুধ(ডা.সুমন চৌধুরী)
 

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #4 on: October 22, 2011, 12:38:03 PM »
মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু

আমাদের আশপাশে একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে অনেক পরিবারেই মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে৷ মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিবারের চিন্তার শেষ নেই৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, গড় হিসাবে পৃথিবীর শতকরা যেকোন দেশের ৩ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী৷

মানসিক প্রতিবন্ধী কী?
মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের অর্থ হলো, বয়স অনুপাতে শিশুটির যে বুদ্ধি থাকার কথা ছিল তা থাকে কম মাত্রায়৷ বুদ্ধি বা আইকিউর(IQ) পরিমাণ কতটুকু কম তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবন্ধিত্বকে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়৷

মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর লক্ষণ:

    *

      জণ্মের পর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের হামাগুড়ি দিয়ে হঁাটা, বসতে শেখা, দঁাত ওঠা, কথা বলা ইত্যাদি কিছুটা দেরিতে শুরু হয়৷ একটু বয়স হয়ে গেলেও তারা নিজেদের পোশাক নিজেরা পড়তে পারে না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না, আকস্মিক বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না৷ কখনো কখনো আগুন শব্দ বলতে পারে না, পানি শব্দ বলতে পারে না, একটু দূরে ছেড়ে দিলে বাড়িতে একা একা ফিরে আসতে পারে না, রাস্তাঘাটে ঠিকঠাকমতো চলাচল করতে পারে না৷
    *

      মানসিক প্রতিবন্ধীদের মানসিক গঠন, মস্তিষ্কের গড়ন, মস্তিষ্ক বা ব্রেনের কাজ ইত্যাদি ধীর গতিতে হয়৷ অন্য সাধারণ দশটি শিশু থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের কথাবর্তা, চলাফেরা, শারীরিক গঠন, আচার-আচরণ ও ব্যবহার দ্বারা সহজেই পৃথক করা যায়৷
    *

      মানসিক প্রতিবন্ধী অল্প থেকে মাঝারি বা তীব্র মাত্রায় হতে পারে৷

মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের কারণগুলো হলো -
সংক্রমণ -
শিশুর শৈশবকালীন বয়সে যে সংক্রমণ হয় তা যদি শশুর ওপর ভয়াবহ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে তবে তা শিশুকে মানসিক প্রতিবন্ধী করে ফেলতে পারে৷ সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে নানা ধরণের সংক্রমণ৷ যেমন -

মেনিনজাইটিস:
মানবমস্তিষ্কে এবং স্পাইনাল কর্ড বা সুষুম্নাকাণ্ডকে ঘিরে এক ধরণের আবরণী পর্দা রয়েছে, একে বলা হয় মেনিনজেস৷ ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল এবং প্রোটোজোয়াজনিত সংক্রমণের কারণে মানবমস্তিষ্কের সেই পর্দা আক্রান্ত হতে পারে৷ এভাবে মানবমস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেলে শিশু মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে৷

অপুষ্টি:
আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে থাকে৷  পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি, যা মস্তিষ্ক বা নার্ভাস সিস্টেম গঠন করার জন্য এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন, তা থেকে এক বিশাল জনগোষ্ঠী বঞ্চিত৷ সে হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আমিষ, শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাবারের স্বল্পতার জন্য অল্প বয়সে অনেক শিশুই মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হয়ে থাকে৷

বংশগত কারণে:
বংশগত বা জেনেটিক কারণেও ব্যক্তির মাঝে মানসিক প্রতিবন্ধীত্ব দেখা দিয়ে থাকে৷ এগুলো হলো-উইলসন্স ডিজিজ,ক্রমোজোমাল ডিজঅর্ডার, যেমন- ডাউন সিনড্রোম,ফিনাইল কেটোনইউরিয়া,নিউরাল টিউবের সমস্যা, যেমন- পলিজেনিক ডিজঅর্ডার,ক্লিনফেলটার্স সিনড্রোম,রুবেলা/সিফিলিস বা টক্সোপ্লাজমোসিসজণিত কারণে স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কীয় সমস্যা, যেমন- হাইড্রোকেফালাস, মাইক্রোকেফালি ইত্যাদি৷

প্রসবকালীন জটিলতা:
মায়ের গর্ভ থেকে বাচ্চা জণ্ম নেয়ার সময় মস্তিষ্কে কোন ধরনের আঘাত পেলে বাচ্চা মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে৷ আবার অনেক বাচ্চা রয়েছে, যারা পূর্ণতা পাওয়ার আগেই পৃথিবীর আলো দেখে৷ এ ধরনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শারীরিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়৷ যেসব শিশু এ সমস্যায় ভোগে তাদের স্নায়ুতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করে না৷ ফলে এরা পরে মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হয়৷

রাসায়নিক পদার্থ (ফিজিক্যাল ও রাসায়নিক এজেন্ট):
বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণে শিশুর মানসিক প্রতিবন্ধিত্বের সৃষ্টি হতে পারে৷

সমাজ থেকে বঞ্চিত হওয়া:
সমাজ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলেও কোনও কোনও মানুষের মানসিক প্রতিবন্ধিত্বের সৃষ্টি হতে পারে৷

অজানা কারণ:
এমন অনেক কারণ রয়েছে, যা জানা নেই৷

মানসিক প্রতিবন্ধিদের মূল্যায়ন
বিভিন্ন প্রক্রিয়া, ইতিহাস ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের মূল্যায়ন করা যায়৷ যেমন-

    *

      শিশুর কর্মদক্ষতার বিশ্লেষণ
    *

      আইকিউ বা বুদ্ধ্যন্ক
    *

      পেশি-চলত্‌শক্তির বিকাশ
    *

      শিশুর ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা
    *

      কানে কম শোনা
    *

      দৃষ্টিশক্তিহীনতা
    *

      সামাজিক বিকাশ এবং ব্যক্তিগত ও অন্যান্য শারীরিক ও সাইকিয়াট্রিক সমস্যার সামঞ্জস্য বিধান৷
    *

      শরীরের বিকলাঙ্গতা বের করতে পূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন৷
    *

      মেডিকেল ইতিহাস

    শিশুর মা-বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন মেডিকেল ইতিহাস নিতে হবে৷ এগুলো হলো -

        *

          প্রসবকালীন কোন জটিলতা হলো কি না
        *

          গর্ভাবস্থায় মেডিকেল ইতিহাস
        *

          বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ধাপ
        *

          বাচ্চা হওয়ার সময় মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছে কি না
        *

          শিশুর সংক্রামক ব্যাধি, যেমন - মেনিনজাইটিস
        *

          রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন আত্মীয়স্বজনের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক ইত্যাদি৷

চিকিত্‌সা ব্যবস্থা
অপ্রিয় হলেও সত্য, মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মা-বাবার অবগত হওয়া প্রয়োজন যে, পৃথিবীতে কোথাও এখনো কোন ওষুধ বা চিকিত্‌সা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, যা দ্বারা এই মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের বুদ্ধি বাড়ানো যেতে পারে৷ তবে আশ্বস্ত হওয়ার মতো সংবাদ হলো, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক উন্নতি করা সম্ভব৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্য সূত্র :

দৈনিক প্রথম আলো

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #5 on: October 22, 2011, 12:38:56 PM »
 শিশুর জ্বর হলে করণীয়

জ্বর একটা উপসর্গ, এটা নিজে কোনও রোগ নয়৷ উল্লে­খ্য যে, ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে ঘন ঘন জ্বর হয়৷ জ্বর হলো একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা শিশুকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে৷ তবে জ্বর যে কারণেই হোক জ্বরের চিকিত্‌সা করা প্রয়োজন৷ পাশাপাশি প্রয়োজন শিশুর সঠিক যত্ন৷আপনার শিশুর জ্বর কমিয়ে স্বস্তিকর অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নিচের ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করুন-
 

তাপমাত্রা পরিমাপ: সঠিক সময়ে তাপমাত্রা মাপুন শরীরের তাপমাত্রা সারাদিন ওঠা-নামা করে৷ তাপমাত্রা সাধারণভাবে শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার শুরুতে সবচেয়ে বেশি থাকে, আর সবচেয়ে কম থাকে সকাল বেলা৷ কিন্তু বিভিন্ন অসুখে জ্বরের ওঠা-নামা বিভিন্ন রকম৷ তাই জ্বরের এই ওঠা-নামা লক্ষ্য করে সঠিক সময়ে তাপমাত্রা মাপা খুবই জরুরি৷ ব্যায়াম করলে এবং গরম খাবার খেলে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটতে পারে৷ তাই বাচ্চা গরম দুধ বা পানীয় পান করে থাকলে তার ৩০ মিনিট পর তাপমাত্রা পরিমাপ করবেন৷ |

ঠিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রা মাপুন -  শিশুর তাপমাত্রা সবচেয়ে ঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় পায়ুপথের থার্মোমিটারের (রেক্টাল থার্মোমিটার) সাহায্যে৷ এটা মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) চেয়ে ছোট এবং এর বাল্ক বেশি পুরু৷ প্রথমে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে এটাকে পিচ্ছিল করে নেবেন, তারপর থার্মোমিটারটা ধীরে ধীরে পায়ুপথে ঢোকাবেন, লক্ষ রাখবেন দেড় ইঞ্চির বেশি যেন না ঢোকে৷ আর এটা আস্তে করে কমপক্ষে তিন মিনিট ধরে রাখবেন৷ এটা করার সময় শিশুকে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে অথবা আপনার কোলের মধ্যে নিয়ে ডায়াপার পাল্টানোর পজিশনে এটা করতে পারেন৷ সহজে যাতে ঢোকে সেজন্য শিশুর পা দুটো উঁচু করে ধরতে পারেন৷ অথবা, আপনি শিশুকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে তারপর থার্মোমিটার ঢোকাতে পারেন৷
বড় বাচ্চাদের মুখে অথবা বগলে মাপুন - যদি শিশুর বয়স চার বা পঁাচ বছর হয়, তা হলে মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) সাহায্যে তার মুখে তাপমাত্রা মাপতে পারেন৷ এক্ষেত্রে বাচ্চার জিভের নিচে ওরাল থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে৷ ডিজিটাল থার্মোমিটারগুলোতে দ্রুত ও ঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপা যায় এবং এগুলো কাচপারদ থার্মোমিটারের চেয়ে কিছুটা নিরাপদও৷ কিন্তু এগুলো খুব দামি৷ এছাড়া শিশুর তাপমাত্রা বগলের নিচেও মাপা যায়৷ এক্ষেত্রে বাচ্চার বগলের নিচে থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে৷
পরিমাপ যাচাই করুন- ঌ৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রাকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা হয়৷ যদি আপনার শিশুর তাপমাত্রা পায়ুপথে ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, বগলে ঌঌ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, অথবা মুখে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয় তা হলে বুঝবেন আপনার শিশুর জ্বর হয়েছে৷
 

জ্বর কমানো
শিশুর যে কোন অসুখে অবশ্যই চিকিত্‌সকের পরামর্শ নেবেন৷ শিশুর জ্বর কমাতে চিকিত্‌সকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ান৷

স্পঞ্জ বাথ করান
শিশুকে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্পঞ্জ বাথ করাবেন৷ পানি শরীর থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যাবার সময় শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে যার ফলে জ্বর কমে যায়৷কখনও বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না কারণ এতে শিশুর কঁাপুনি ওঠে৷ কঁাপুনি প্রকৃতপক্ষে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে যার ফলে স্পঞ্জ বাথের পুরো উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে৷

শিশুকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাওয়ান
জ্বর হলে শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, ফলে তার শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল ক্ষয় হয়৷ যদি তার ডায়রিয়া থাকে তা হলে আরও বেশি তরল ক্ষয় হয়৷ সুতরাং নিশ্চিত করবেন আপনার শিশু যেন এসময়ে তরল পান করে৷ শিশুকে ঠাণ্ডা তরল পান করাবেন, গরম নয়, আর তাকে একবারে অনেক পান না করিয়ে, অল্প করে ঘন ঘন দেবেন৷

এ সময়ে শিশুর খাবারে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে পারেন, শিশুকে সুপ, জাউ ও হালুয়া খাওয়াবেন৷ যে সব শিশু বুকের দুধ খায়, তাদের নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াবেন, এতে শরীরে তরলের অভাব পূরণ হবে৷ যদি শিশুর জ্বরের সাথে ২৪ ঘণ্টার বেশি ডায়রিয়া থাকে তা হলে অবশ্যই চিকিত্‌সকের পরামর্শ নেবেন এবং খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন৷

শিশুকে হালকা পোশাক পরান
শিশুকে লেপ, কঁাথা, তোষক ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাবে, এর ফলে জ্বরের অবনতি ঘটবে৷ তাই আপনার শিশুকে হালকা পোশাক পরাবেন, এবং ঘুমানোর সময় একটা পাতলা কম্বল বা চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে দেবেন৷শিশুকে পছন্দমত খেতে দিন
জ্বর হলে শিশুরা খেতে চায় না৷ যদি শিশু জ্বরের সময় খেতে না চায়, তাকে খাবার জন্য বেশি জোরাজুরি করবেন না৷ যদি আপনার শিশু নির্দিষ্ট কোন খাবার খেতে চায়, তাকে সেই খাবার খেতে দেবেন৷

শিশুকে ঘরে রাখুন
শিশুর যতদিন জ্বর থাকে, তখন তাকে বাইরে বেড়াতে না দিয়ে ঘরে রাখা সবচেয়ে ভাল৷ শিশুর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবার ২৪ ঘণ্টা পর তাকে স্কুলে যেতে দিতে পারেন৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে জ্বর চলে যাবার পরও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়৷
 

জ্বর থেকে শিশুর বিভিন্ন জটিলতা

জ্বর থেকে শিশুর খিঁচুনি -
খিঁচুনি রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে৷ তবে শিশুর সাধারণত যে কারণে খিঁচুনি হয়ে থাকে তা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা হঠাত্‌ বৃদ্ধি পাওয়া৷ আর জ্বরের কারণে যে খিঁচুনি হয় সেটাকে চিকিত্‌সা পরিভাষায় বলে ফেব্রাইল কনভালশন (Febrileconvulsion)জ্বরের কারণে খিঁচুনি সাধারণত ছয় মাস থেকে পঁাচ বছর বয়সী শিশুদের হয়ে থাকে৷ সাধারণত জ্বর হয়ে খিঁচুনি শিশুর দু বছর বয়সের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ এ ক্ষেত্রে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের ওপরে থাকবে৷ খিঁচুনির সময়কাল কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত হতে পারে৷ অনেকের ১০ মিনিট পর্যন্তু থাকতে পারে, যদি দ্রুত চিকিত্‌সা করা না হয়৷
জ্বর থেকে শিশুর খিঁচুনির লক্ষণ-

    *

      শিশুর হাত-পা ও ঘাড় শক্ত হবে৷
    *

      শরীরে ঝঁাকুনি দেবে
    *

      চোখ ওপরে নেবে বা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে৷
    *

      শরীর বেঁকে যাবে৷
    *

      শ্বাস কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ হতে পারে৷
    *

      মুখ দিয়ে ফেনা বা লালা পড়বে৷
    *

      শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে৷ ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা বেশিও হতে পারে৷

জ্বর থেকে শিশুর খিঁচুনি হলে কী করবেন

    *

      দেরি না করে শিশুকে হাসপাতাল বা নিকটবতী© শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন৷ বাসায় রেখে অযথা সময় নষ্ট করলে শিশুর সমূহ ক্ষতি হতে পারে এমনকি শিশুর মৃতূ্যও হতে পারে৷   শিশুর মাথা একদিকে কাত করে রাখবেন৷
    *

        শিশুর মুখের লালা মুছে দেবেন৷
    *

        শিশুর জিভে যেন কামড় না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখবেন৷
    *

        জ্বরের কোনো ডুস বা সাপোজিটরি থাকলে তা দেবেন৷
    *

      জ্বর বেশি হলে পানি দিয়ে স্পঞ্জিং করবেন৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে খিঁচুনি কমানোর ওষুধ দেওয়ার জন্য৷এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হয়৷ কেননা বাসায় যত্নের অভাবে বা অসতর্কতার কারণে আবার খিঁচুনি হতে পারে৷ আর বারবার খিঁচুনি হলে শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়৷ কাজেই প্রথম ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে চিকিত্‌সকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত

অনেকে বাসায় কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক, জুতো মারা ইত্যাদি করে থাকে, যা ঠিক নয়৷ অনেকে মনে করেন শিশুকে ভূতে ধরেছে বা জিনে আছর করেছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা৷

 

পরীক্ষা
শিশুর জ্বরের কারণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে৷ প্রথম অবস্থায় রক্তের এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করা৷ বারবার খিঁচুনি হলে পিঠের মেরুদণ্ড অংশের পানি নিয়ে পরীক্ষা (এলপি করে সিএসএফ অ্যানালাইসিস করা, মেনিনজাইটিস হয়েছে কি না জানার জন্য) করতে হবে৷ এ ছাড়া এপিলেপসি বা মৃগীরোগ কি না তা জানার জন্য ইইজি করা৷

 

পরামর্শ
জ্বর থেকে শিশুর একবার খিঁচুনি হলে, এ ধরনের শিশুর পঁাচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত খিঁচুনি হওয়ার আশন্কা থাকে৷ তাই শিশুকে নিয়ে যেখানেই যাবেন সঙ্গে প্যারাসিটামল ও ডায়াজেপাম সিরাপ বা বড়ি সঙ্গে রাখবেন৷
মনে রাখবেন, আপনার অবহেলার কারণে আপনার সন্তানের মস্তিষ্কে গুরুতর ক্ষতি হতে পারে৷ ঘন ঘন খিঁচুনি  হলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধীও হতে পারে৷


ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্যসূত্র:

দেহের যত অসুখ বিসুখ- ডা. বরেন চক্রবতী©

মাসিক রহস্যপত্রিকা- আপনার স্বাস্থ্য - ডা. মিজানুর

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #6 on: October 22, 2011, 12:39:55 PM »
শিশুর নিউমোনিয়া

নিউমোনিয়া সাধারণত বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এটা কোনও কোনও ক্ষেত্রে জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণও হতে পারে৷ তাই শিশুর নিউমোনিয়া হলে কখনোই তা অবহেলা করা উচিত নয়৷

শিশুর নিউমোনিয়ার লক্ষণ
প্রথমে দেখুন শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অথাᐂত্‍ মিনিটে বুক কয়বার ওঠানামা করছে৷ বয়স অনুসারে এই গতি বেশি-কম হতে পারে৷ দু মাস বয়সের নিচে যাদের বয়স তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি মিনিটে ৬০ বার বা তার বেশি, দু মাস থেকে ১২ মাস পযᐂন্ত শিশুদের ৫০ বার বা তার বেশি এবং ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ৪০ বার বা তার বেশি হলে আমরা বলি শিশু দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে৷

তারপর দেখুন বুকের নিচের অংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে দেবে যাচ্ছে কিনা বা ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে কিনা৷ কাশি বা ঠান্ডার সঙ্গে যদি বুক দেবে যায় এবং শিশু দ্রুত নিঃশ্বাস নেয় তাহলে ধরে নিতে হবে শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত৷ নিউমোনিয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে  ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ কারণ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর প্রথম কারণ হলো নিউমোনিয়া৷

চিত্র- নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


শিশুর নিউমোনিয়া হলে করণীয়
শিশুর নাক বন্ধ থাকলে নরম কাপড় বা কটনবাড দিয়ে নাক পরিস্কার করে দিন৷ প্রয়োজনে নরসল ড্রপ বা  লবন-পানির মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন৷

শিশুর কাশি থাকলে পানি জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে দিন৷ স্বাভাবিক খাবারও দিন৷ একেবারে খেতে না পারলে অল্প অল্প করে বারবার দিন৷ শিশু বুকের দুধ খেলে বারবার বুকের দুধ দিন৷ মায়ের খাবারের সঙ্গে শিশুর ঠান্ডা লাগা বা নিউমোনিয়ায় কোনও সম্পকᐂ নেই৷ তাই মাকে সব খাবার খেতে দিন৷ এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতকᐂ থাকুন৷

একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন অযথা শিশুর ঠান্ডা বা কাশিতে এ্যান্টিবায়োটিকের কোনও প্রয়োজন নেই৷ এ্যান্টিবায়োটিক শিশুর নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করে না, বরং শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ নিউমোনিয়া হলেই কেবল এ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে৷ বারবার ব্যবহারে শিশুর শরীরে এ্যান্টিবায়োটিকের কাযᐂকারিতা নষ্ট হয়ে যায়৷ রাখাল বালক এবং বাঘের গল্পটি মনে করুন৷ বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে বলে রাখাল চিত্‌কার করত - সবাই লাঠিসোটা নিয়ে হাজির হলে  রাখাল মজা পেত৷ অবশেষে একদিন যখন সত্যিই বাঘ এল রাখাল অনেক চিত্‌কার করল কিন্তু কেউ এল না৷ বাঘ রাখালকে খেয়ে ফেলল৷ শিশুর ঠান্ডা লাগলে নিউমোনিয়া হবে মনে করে বারবার এ্যান্টিবায়োটিক দিলে যখন আসলেই নিউমোনিয়া হবে তখন আর এ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্য সূত্র: Principle & Practice of Medicine by Davidson,

দৈনিক প্রথম আলো,

দেহের যত অসুখ বিসুখ- ডা. বরেন চক্রবতীᐂ,

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #7 on: October 22, 2011, 12:40:45 PM »
শিশুদের হৃদরোগ

শিশু হৃদরোগ প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় -
১৷ জণ্মগত হৃদরোগ ও ২৷ জণ্ম-পরবর্তী হৃদরোগ

জণ্মগত হৃদরোগের কারণ:
ভ্রূণ অবস্থায় জীবকোষের জিনগত বা জেনেটিক ত্রুটিই মূলত এর প্রধান কারণ৷ এছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের (বিশেষ করে গর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যে) ভাইরাল ইনফেকশন, রেডিয়েশন, ক্ষতিকর ওষুধ সেবন অথবা গর্ভপাত ঘটানো অসফল প্রচেষ্টা থেকেও জণ্মগত হৃদরোগ হয়ে থাকে৷
জণ্ম-পরবর্তী হৃদরোগের কারণ:

    * জণ্ম-পরবর্তী সুস্থ শিশুরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ জীবাণু সংক্রমণের ফলে শিশুর হৃত্‌পিণ্ডের বিভিন্ন অংশ প্রদাহজনিত কারণে বিকল হয়ে যেতে পারে৷
    * জণ্মগত হৃদরোগ -
    * ক. হৃদপিণ্ডের চারটি পৃথক প্রকোষ্ঠ আছে৷ কোনও ছিদ্রের দ্বারা এদের একটি প্রকোষ্ঠ অন্যটির সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে এবং এটি একটি জণ্মগত ত্রুটি৷
    * তিন প্রকারের ছিদ্র -
    * এট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্ট বা এ এসডি (ASD)
    * ভেন্ট্রিকুলার সেপটাল ডিফেক্ট বা ভিএসডি (VSD)
    * প্যাটেন্ট ডাকটাস আরটারিওসাস বা পিডিএ (PDA)

    * তিন প্রকার রক্তনালীর প্রবাহ প্রতিবন্ধকতা -
    * এওরটিক স্টেনোসিস বা এএস (AS)
    * পালমোনারি স্টেনোসিস বা পিএস (PS)
    * কোআরকটেশন অফ এওরটা বা বিওএস (COA)
    * হৃদপিণ্ডে প্রধান দুটি রক্ত নালীর মাধ্যমে রক্ত ফুসফুস ও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে৷ এই প্রধান দুই রক্তনালীর জণ্মগত ত্রুটিও হৃদরোগের প্রধাণ কারণ৷

    ফুসফুসে কম রক্ত প্রবাহ গ্রুপ -

        টেট্রালজি অব ফেলট পালমনারি এট্রেসিয়া (পিএ)

        ট্রাইকাসপিড এট্রোসিয়া (টিএ)

        অ্যাবস্টেইন এনাম্যালি (ইএ)

        ফুসফুসে অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ গ্রুপ -

        ট্রান্সপজিশন অব গ্রেট আরটারিস

        টোটাল এনোম্যালাস পালমোনারি ভেনাস ড্রেনেজ

        সিঙ্গল ভেন্ট্রিকল

        এট্রিও ভেনট্রিকুলার ক্যানাল ডিফেক্ট

    * এছাড়া হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন অংশের ত্রুটির সমন্বেয় গঠিত হয় জটিল জণ্মগত হৃদরোগ৷

জণ্ম-পরবর্তী শিশু হৃদরোগ
সাধারনত জণ্ম-পরবর্তী সুস্থ শিশুরা জীবাণু সংক্রমণের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়৷ সাধারণত যে সব জণ্ম-পরবর্তী শিশু হৃদরোগ দেখা যায় সেগুলো হলো -

    *

       বাতজ্বর এবং বাতজ্বরজনিত ভালভের হৃদরোগ৷
    *

       হৃদপিণ্ডের ভাইরাল ইনফেকশন ( এর পরবতী©তে মাইয়োকার্ডাটিস, ডাইলেটেড কার্ডিওমাইওপ্যাথি)
    *

        জীবাণু সংক্রমণের ফলে হৃত্‌পিণ্ডের প্রদাহ (ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকটিভ এন্ডোকার্ডাটিস)
    *

        যক্ষ্না বা অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের ফলে হৃত্‌পিণ্ডের পদায় পানি জমা (পেরিকার্ডাল ইফিউশন) ইত্যাদি রোগ বেশি দেখা যায়৷
    *

       ডিপথেরিয়া আক্রান্ত শিশুদের অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনজনিত হৃদরোগ দেখা যায় (যেমন-সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া ও বিভিন্ন প্রকার হার্ট  ব্লক ইত্যাদি)

শিশু হৃদরোগের লক্ষণ :

    *

      কান্না বা খাওয়ার সময় শ্বাস কষ্ট হওয়া বা খেতে বেশি সময় লাগা
    *

      সব সময় দ্রুত শ্বাস নেওয়া
    *

      বুক ধড়ফড় করা
    *

      বেশি বেশি ঘাম হওয়া
    *

      ঘন ঘন ফুসফুসের প্রদাহ বা নিউমোনিয়া হওয়া
    *

      শরীর ফুলে যাওয়া
    *

      সামান্য দৌড়-ঝাঁপে বা খেলাধুলায় দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
    *

      ক্ষুদামন্দা
    *

      শরীরের বৃদ্ধি না হওয়া
    *

      নীল বা কালো বর্ণ হয়ে যাওয়া (বিশেষ করে ঠেঁাট, জিহ্বা ও আঙুলের মাথা)
    *

      এমনকি কালো বর্ণ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা খিঁচুনি হওয়া
    *

      বুকে ব্যথা হওয়া
    *

      অস্থিসন্ধি বা গিঁটা ফুলে যাওয়া বা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি৷

শিশুর হৃদরোগের করণীয়
শিশুর জণ্মগত হৃদরোগের চিকিত্‌সা সঠিক সময়ে করা অতীব জরুরি৷ চিকিত্‌সা দেরি হলে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়, (যেমন- আইসেনমেঞ্জার সিন্ড্রোম- যেখানে ফুসফুসের রক্ত চাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাতে ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়)৷ তখন চিকিত্‌সা করেও কোনও লাভ হয় না এবং রোগী ধীরে ধীরে নিশ্চিত মৃতু্যর দিকে এগিয়ে যায়৷ শিশুর বাতজ্বরের নির্ণয় ও চিকিত্‌সা দেরি হলে জটিলতা বৃদ্ধি পায় এবং হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়ে যায়, যা পরে চিকিত্‌সার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়৷ তাই বড় শিশুদের টনসিলাইটিস থাকলে বাতজ্বর আছে কি না সে ব্যাপারে মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করে দেখা দরকার৷

রোগ প্রতিরোধ
একটি কথা সব সময় বলা হয়ে থাকে যে, চিকিত্‌সার চেয়ে প্রতিরোধই রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা৷ শিশুর হৃদরোগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷যেহেতু জণ্মগত হৃদরোগ মায়ের গর্ভবস্থায় সৃষ্টি হয়, তাই মাকে গর্ভের আগে ও গর্ভের সময় উপযুক্ত যত্ন নিতে হবে৷ জার্মান মিসেল্স বা রুবেলা নামক একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণের মাধ্যমে মায়ের গর্ভস্থ সন্তানটির জণ্মগত হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় শত ভাগ৷ অথচ মাকে গর্ভধারণের ছয় মাসের আগেই যদি একটি এমএমআর টিকা দেওয়া যায় তাহলে মা ও শিশু উভয়েই নিরাপদ হয়ে যায়৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

তথ্যসূত্র :
দৈনিক প্রথম আলো

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #8 on: October 22, 2011, 12:41:33 PM »
অপুষ্টিজনিত শিশুরোগ (ম্যারাসমাস ও কোয়াশিয়রকর )

  আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্যের অভাবে শিশুদের ম্যারাসমাস ও কোয়াশিয়রকর নামক  অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়৷ আমাদের দেশে এ রোগে শিশু মৃতু্যর হার অনেক৷ ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়৷ সাধারণত দুইটি রোগের উপসর্গ একত্রে দেখা যায়৷
ম্যারাসমাস : শর্করা জাতীয় খাদ্যের অভাবে শিশুরা এরোগে আক্রান্ত হয়৷ ১ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়৷
কোয়াশিয়রকর : প্রোটিন জাতীয়  খাদ্যের অভাবে শিশুরা এরোগে আক্রান্ত হয়৷ ১ বছরের বেশি বয়সের বাচ্চারা এরোগে বেশি আক্রান্ত হয়৷
marasmus.jpg
চিত্র- অপুষ্টিজনিত শিশু
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


কারণ :
ম্যারাসমাস

    *      দ্রুত মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া৷
    *     ৫ মাসের পূর্বে দুধের বদলে অন্য খাবার শুরু করা৷
    *     অতিরিক্ত পাতলা খাবার খাওয়ানো৷
    *     সময় মতো খাবার না দেওয়া৷
    *     বারবার পেটের অসুখ হওয়া৷
    *     কোয়াশিয়রকর
    *     বুকের দুধের সাথে অন্যান্য খাবার (খিচুরী, ডিম, কলা ইত্যাদি) দেরী করে ৬ মাসের বেশি বয়সে শুরু করা৷
    *     শর্করা জাতীয় খাবার বেশি দেওয়া৷
    *     অতিরিক্ত রোগে ভুগলে৷

উপসর্গ
ম্যারাসমাস

    *      অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়া৷
    *     হাড্ডিচর্মসার চেহারা৷
    *     চামড়ার নিচে কোনও চর্বি থাকে না৷

অন্যান্য

    *     মাংসপেশি শুকিয়ে যায়৷
    *     চুল রুক্ষ হয়ে যায়৷
    *     চামড়া খসখসে হয়ে যায়৷
    *     ঘনঘন ডায়রিয়া ও নিওমোনিয়া দেখা দেয়৷
    *     নোখ ভংগুর হয়ে পরে৷
    *     খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়৷
    *     বাচ্চা ঘ্যানঘ্যানে হয়ে পড়ে৷
    *     যকৃত (লিভার) বড় হয়ে যেতে পারে৷

কোয়াশিয়রকর

    *     শিশু বেশি শুকায় না৷
    *     চেহারা ফোলাফোলা থাকে৷
    *     চামড়ার নিচে চর্বি বর্তমান থাকে৷
    *     শরীরে পানি জমে৷

অন্যান্য

    *       মাংসপেশি শুকিয়ে যায়৷
    *       চুল রুক্ষ হয়ে যায়৷
    *       চামড়া খসখসে হয়ে যায়৷
    *       ঘনঘন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া দেখা দেয়৷
    *     নোখ ভংগুর হয়ে পড়ে৷
    *       খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়৷
    *      বাচ্চা ঘ্যানঘ্যানে হয়ে পরে৷
    *     যকৃত (লিভার) বড় হয়ে যেতে পারে৷

পরীক্ষা নিরীক্ষা

    *       রক্ত পরীক্ষা৷
    *      প্রস্রাব পরীক্ষা৷
    *       পায়খানা পরীক্ষা৷

করণীয়

    *     বাচ্চাকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে৷   

 উপদেশ

    *     বাচ্চাকে ২বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো৷
    *     ৬মাসের পর অন্যান্য খাবার শুরু করা৷
    *     বাচ্চাকে নিয়মিত টিকা দেওয়ানো৷
    *     বাচ্চার নিয়মিত ওজন নিতে হবে৷
    *     পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্যসূত্র -

Essence of pediatrics by Prof M. R.  Khan

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #9 on: October 22, 2011, 12:42:26 PM »
ধনুষ্টংকার প্রতিরোধে করণীয়

টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার রোগ একটি ঘাতক ব্যাধি এতে কোনও সন্দেহ নেই৷ এ রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে৷ আমাদের দেশে প্রতিবছর গড়ে বিশ থেকে পঁচিশ হাজার লোক শুধু এ-রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা যায়৷ মূলত অজ্ঞতা আর মূর্খতা এ রোগের জন্য দায়ী৷ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত শতকরা আশি থেকে নব্বই জনই উপযুক্ত চিকিত্‌সা এবং ভুল চিকিত্‌সার কারণে প্রাণ হারায়৷ তবে এ রোগ সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং উন্নত চিকিত্‌সা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, হয়তোবা রোগী মৃতু্যর হাত থেকে রেহাই পেতে পারে, অন্যথায় মৃতু্য ছাড়া অন্য কোন বিকল্প রাস্তা নেই৷

কারণ:

    *      সাধারণত যেসব কারণে এ রোগ হয় সেগুলো হচ্ছে শরীরের কোন স্থান কেটে গেলে ঐ স্থানে সামান্য ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং সেখানে রোগজীবাণু বাসা বাধে, অতঃপর ক্ষতস্থান হতে টক্সিন নামক এক প্রকার পদার্থ সৃষ্টি হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার ফলে ধনুষ্টংকার রোগ সৃষ্টি হয়৷
    *      সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে বা গর্ভপাত হওয়ার ফলে মা-ও এ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে৷
    *      শিশুর নাড়ি কাটার সময় পুরাতন ব্লেড কিংবা চাকু দিয়ে নারি কাটার ফলেও এ রোগে মা ও শিশু উভয়েই আক্রান্ত হতে পারে৷
    *      আবার জুতার ছিদ্র দিয়ে পেরেক ঢোকার ফলে, কিংবা অপারেশনের পরে রোগী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷

লক্ষণসমূহ :

    (ক) প্রথম অবস্থায় চোয়াল লেগে যায়, মুখ খোলা যায় না- ইহাকে লক্-জ্ব বলে৷
    (খ) রোগীর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়৷
    (গ) ধীরে ধীরে হাত-পায়ের মাংসপেশী এবং সমস্ত শরীরের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়৷
    (ঘ) রোগীর খিঁচুনি শুরু হয় এবং ঘাড় পিছনের দিকে ধনুকের ন্যায় বেঁকে যায়৷
    (ঙ) খিঁচুনির পর বিরতি দিয়ে আবার খিঁচুনি হয়৷
    (চ) খিঁচুনির সময় রোগী গোঙাতে থাকে৷ রোগ যত কঠিনের দিকে যায় ততই রোগীর ঘন ঘন খিঁচুনি হয়৷
    (ছ) কপালে মাংসপেশী কুঁচকিয়ে যায়, নাড়ির গতি স্বাভাবিক থাকে কিংবা বৃদ্ধি পায়৷

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও চিকিত্সা পদ্ধতি
উপরেই বর্ণনা করা হয়েছে সে, শরীরের কোনও জায়গায় কেটে গেলে, পায়ে পেরেক ঢুকলে, অপারেশন করার পর নবজাত শিশুর নাড়ি কাটবার পরে আগুনে পুড়লে ধনুষ্টংকার রোগ হবার সম্ভবনা থাকে অনেক বেশি৷ তাই যে কোনও সময় উপযু©ক্ত যে কোনও একটি অবস্থার সম্মুখীন হয়ে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ইনজেকশন টিটেনাস টক্সেয়ড ০.৫ মিলিগ্রাম গভীর মাংসে নিতে হবে৷ এর জন্য কোনওরূপ স্কিন টেস্ট করার প্রয়োজন নেই৷ পুনরায় ১ মাস পর আরেকটা ইনজেকশন টিটেনাস টক্সয়েড নিতে হবে৷


প্রতিরোধক হিসেবে

    ১. শিশুর জণ্মের পর পরই সবগুলো টিকা নেওয়া৷
    ২. মা গর্ভবতী হলে পর্যায়ক্রমে ৩টি টি.টি ইনজেকশন নেওয়া৷
    ৩. ১৫ থেকে ৩০ বত্‌সর মধ্যে ৫টি টি.টি. ইনজেকশন পর্যায়ক্রমে নেয়া৷
    ৪. মহিলার প্রসবের পর ১টি টি.টি ইনজেকশন নেয়া৷

চিকিত্সা ব্যবস্থাসমূহ :
আক্রান্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে কোলাহলহীন অন্ধকার ঘরে শোয়া অবস্থায় রাখতে হবে৷ অতঃপর তত্‌ক্ষণাত্‌ কোন ডাক্তার ডেকে চিকিত্‌সা শুরু করতে হবে৷ তারপর রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

তথ্যসূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #10 on: October 22, 2011, 12:43:12 PM »
পোলিও

পোলিও ভাইরাস সংক্রামিত রোগ৷ পোলিও আক্রান্ত রোগীর পায়খানার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়৷ জীবাণু শরীরে প্রবেশের ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে পোলিও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়৷ শিশু ও ছোট বাচ্চাদের এই রোগ বেশি হয়ে থাকে৷ পোলিও আক্রান্ত শিশু সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়৷
polio.jpg
চিত্র- পোলিও আক্রান্ত শিশু
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


লক্ষণ :

    *      বাচ্চার সর্দি কাশির সঙ্গে জ্বর থাকে৷
    *     মাথা ব্যথা হয়৷
    *     সারা শরীরে ব্যথা হয়৷
    *     গলা ব্যথা হতে পারে৷
    *     বমিবমি ভাব হতে পারে৷
    *     ঘাড় ও পিঠ শক্ত হয়ে যায়৷
    *     হাত ও পা অবশ হয়ে যায়৷
    *     মুখের একপাশ অবশ হয়ে যেতে পারে৷
    *     মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিলে ঢোক গিলতে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়৷

চিকিত্সা :

    *     দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে৷
    *     বিশ্রাম নিতে হবে৷

প্রতিরোধ :

    *     জণ্মের পর থেকে প্রত্যেক শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে৷
    *     প্রত্যেকটি কাজে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে৷
    *     স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে৷
    *     নোংরা অপরিষ্কার কাপড় পুকুরে ধোয়া যাবে না৷

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্যসুত্র - ড্রাগ ডিরেক্টরি

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #11 on: October 22, 2011, 12:43:51 PM »
ডিপথেরিয়া

ডিপথেরিয়াতে সাধারণত আমাদের দেশের বাচ্চারাই বেশি আক্রান্ত হয় তবে বড়রাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ করাইনিব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়৷ এ জীবাণুটি গলা এবং উপরের শ্বাসনালীকেই বেশি আক্রমণ করে৷ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কমে যায় সাধারণত তাদের ক্ষেত্রে ক্ষত স্থান, চোখের কনজাংটিভা, জননাঙ্গ ইত্যাদি স্থানও আক্রান্ত হতে পারে৷  অনেক উন্নত দেশে এরোগ নিমূল করা সম্ভব হয়েছে টিকা দান কর্মসূচির মাধ্যমে৷ কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে এরোগের প্রকোপ এখনও অনেক বেশি৷

কীভাবে সংক্রমণ ঘটে-

    *

      রোগটি বহন করছে এরকম রেগী দ্বারা  সংক্রমণ ঘটতে পারে যেমন-রোগীর সংস্পর্শে আসা, বিছানা, জামাকাপড় ইত্যাদি
    *

      রোগীর থুতুর মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটতে পারে৷
    *

      সংক্রামিত দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবার দ্বারাও রোগ  সংক্রমণ ঘটতে পারে৷

লক্ষণসমূহ-

    *

      জ্বর আসে,
    *

      ঠাণ্ডা লাগার মতো সাধারণ সর্দি কাশি হয়
    *

      গলা ব্যথা হয়
    *

      গা ম্যাজম্যাজ করে
    *

      রোগী ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না
    *

      শিরার গতি দ্রুত এবং অনিয়মিত হয়
    *

      দূর্বল লাগে
    *

      রোগী খেলাধূলা করে না
    *

      গলা ব্যথা হওয়ার ২-১ দিনের মধ্যে গলার ভিতরের দিকে একটা হলদেটে বা ধূসর রঙের একটা পর্দা তৈরি হয়৷
    *

      মুখের ভেতর তালুতে হলে তালু অবশ হয়ে যায়৷ রোগী কোন খাবার এমন কি তরল খাবারও খেতে পারে না৷
    *

       অনেক সময় তরল খাবার নাক দিয়ে বেড়িয়ে আসে৷
    *

      নাকের ভিতর হলে নাকের মধ্যে একটি পর্দা পড়ে ৷ নাক থেকে সর্দি ঝরতে থাকে, সাথে মাঝেমাঝে রক্ত মেশানো পানি বের হয়ে আসে৷
    *

      স্বরযন্ত্রে রোগ হলে কথা বলতে কষ্ট হয় এবং ফ্যাসফ্যাসে শব্দ হয়
    *

      শ্বাসনালীতে রোগ হলে শ্বাসকষ্ট হয় এমনকি রোগীর দম বন্ধ হয়ে রোগী মারা যেতে পারে
    *

      রোগ শুরু হবার ১০-১২ দিনের মধ্যে এসব মারাত্মক উপসর্গ দেখা যায় ৷

রোগ নির্ণয়

ডিপথেরিয়া সাধারণত টনসিলে বেশি হয়৷ ডিপথেরিয়া আক্রান্ত টনসিলের রং কালছে বা ধূসর হয়৷ টনসিলের উপর যে পর্দা পড়ে তা সহজে তুলা যায় না , তুলতে গেলে রক্ত ঝরে৷

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা: টনসিলের উপর থেকে লালা নিয়ে ডিপথেরিয়ার জীবাণু পরীক্ষা করা যায়৷

 

চিকিত্‌সা :

    *

      ডিপথেরিয়ায় রোগী খুব দ্রুত মৃতু্য মুখে ঢলে পরে তাই  ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে সন্দেহ হলেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷
    *

      ডিপথেরিয়ার জীবাণুর বিষ নিষ্ক্রিয় করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব এন্টিটক্সিন প্রয়োগ করতে হবে৷
    *

      ডিপথেরিয়ার জীবাণু সনাক্ত হবার পূর্বেই এ্যান্টিবায়েটিক(পেনিসিলিন বা ইরাথ্রোমাইসিন) জাতীয় ওষধ দিতে হবে৷গলার পর্দা আটকে দম বন্ধ হয়ে গেলে ট্রাকিয়োসটোমি করতে হবে৷

জটিলতা :

    *

      ডিপথেরিয়ার জীবাণুর বিষ হৃদপিণ্ড এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে৷ ফলে রোগীর শিরার গতি প্রথমে দ্রুত ও পরে অনিয়মিত হয়ে যায়৷
    *

      হৃদপিণ্ডের মাংসপেশীতে প্রদাহ হয় এবং এক সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে৷
    *

      স্নায়ুতন্ত্র আক্রমনের ফলে বিভিন্ন অঙ্গ অবশ হয়ে যেতে থাকে৷ ফুসফুসের বিভিন্ন মাংসপেশী অবশ হয়ে গেলে রোগী মৃতু্যর মুখে ঢলে পড়ে৷

ডিপিটি টিকা:
 শিশুর জণ্মের পর দেড় মাস বয়স হতে শুরু করে প্রতি এক মাস অন্তর তিনটি ডিপিটি টিকা দিতে হবে৷

আশেপাশের কোন শিশু ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হলে সুস্থ শিশুকে রোগীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে৷

রোগীর সংস্পর্শে কেউ চলে এলে অবশ্যই তাকে এ্যান্টিবায়েটিক ঔষধ খেতে হবে৷


ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্যসূত্র: ড্রাগ ডিরেক্টরি

DAVIDSON’S Principles and Practice of Medicine
 

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #12 on: October 22, 2011, 12:44:41 PM »
শিশুর হাম

হাম একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি৷ শিশুদের সংক্রামক রোগের ভেতরে হামই সবচেয়ে ভয়াবহ৷ সাধারণত ২-৫ বছর বয়সী শিশুদের এটা হয়, তবে অনুন্নত দেশগুলোতে ৪ মাস থেকে ২ বছর বয়সেই এটা বেশি ঘটে৷ সারা বিশ্বে প্রতি বছর হামের কারণে প্রায় ১০ লাখ  শিশু মারা যায়৷আরএনএ প্যারামিক্সো (RNA Paramixo Virus) ভাইরাস দ্বারা এই রোগ হয়৷ হামে আক্রান্ত কোনো শিশুর কাছ থেকে জীবাণুটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এবং সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে, তবে সময় মতো টিকা দেয়া থাকলে এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম থাকে৷
measles.jpg
চিত্র- হাম আক্রান্ত শরীর
চিত্র সূত্র-ডি.নেট


রোগের উপসর্গ :

    *      হামের শুরুতে অর্থাত্‌ প্রথম ১-২ দিন জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি উঠতে পারে৷
    *     গা ম্যাজ ম্যাজ করে,
    *     নাক দিয়ে পানি পড়ে,
    *     হঁাচি হয়,
    *     চোখ লাল হয় এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে৷
    *     দ্বিতীয় দিন থেকে কাশি হয়,
    *     আলোর প্রতি সংবেদশীলতা দেখা দেয়,
    *     মুখের ভিতরের আবরণীতে লবণদানার মতো ছোট ছোট দাগ ওঠে (যাকে চিকিত্‌সা পরিভাষায় কপলিক�স স্পট (Koplik's Spot) বলে)৷ এ সময়ে গলার স্বর ভেঙ্গে যেতে পারে৷
    *     ৩-৪ দিন পর মুখের ভিতরের এই দাগগুলো মিলিয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচির মতো লাল লাল দানা বা র্যাশ দেখা দেয়৷ র্যাশ প্রথমে ওঠে কানের পেছনে এবং কপাল ও চুলের সংযোগ স্থলে৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে র্যাশগুলো সমস্ত শরীরের ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে৷ কয়েকদিন পর (৬-৭ দিন) র্যাশগুলো বিবর্ণ হয়ে ক্রমশ বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং মিলিয়ে যেতে থাকে৷ এ সময়ে জ্বরও চলে যায়৷
    *     শিশুরা খাবার খেতে চায় না৷
    *     শিশুরা নেতিয়ে পরে বা অবসন্ন হয়ে পরে৷

হামের জটিলতাসমূহ -

    *     হাম হলে প্রথমেই সতর্কতা অবলম্বন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমন কি শিশু মারাও যেতে পারে৷ হামের কারণে সাধারণত যে জটিলতাগুলো দেখা দেয় সেসব হলো
    *     মস্তিষ্কের প্রদাহ
    *     মুখের প্রদাহ
    *     অন্ত্রের প্রদাহ
    *     পেটের অসুখ
    *     নিউমোনিয়া
    *     শ্বাস নালীর প্রদাহ (ব্রংকো নিউমোনিয়া)
    *     চোখের কর্নিয়ার প্রদাহ, কর্নিয়াতে (অক্ষিগোলকের স্বচ্ছ আবরণ) আলসার বা ঘা হওয়া
    *     কানের প্রদাহ
    *     পুষ্টিহীনতা
    *     শরীরের ওজন মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া ইত্যাদি৷

হামহামহলে করণীয় -

হামমের লক্ষণ দেখা দেবার সঙ্গে সঙ্গেই রোগীকে অন্যদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে হবে, সম্ভব হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতেহবে৷ জ্বর না সারা পর্যন্ত রোগীকে বিছানায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে৷ জ্বর কমানোর জন্য চিকিত্‌সকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে, সেই সঙ্গে মাথায় পানি ঢালাসহ সমস্ত শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে৷ চিকিত্‌সকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় কার্যকর এন্টিবায়োটিক দিতে হবে৷ রোগীকে প্রচুর তরল ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে৷ প্রয়োজনে রোগীকে ভিটামিন-এ দেয়া যেতে পারে৷ রোগীর শরীর সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে৷
 

রোগ প্রতিরোধ

একটি কথা সব সময় বলা হয়ে থাকে যে, চিকিত্‌সার চেয়ে প্রতিরোধই রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা৷ হামের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য৷ বাচ্চার বয়স ঌ মাস হলে তাকে নিকটস্থ হাসপাতাল থেকে এক ডোজ হামের টিকা দিলে সে পরবতীকালে হামের হাতথেকেরক্ষাপাবে৷


ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্যসূত্র :

Principle & Practice of Medicine by Davidson

মাসিক রহস্যপত্রিকা - আপনার স্বাস্থ্য - ডা. মিজানুর
 

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: শিশু রোগ
« Reply #13 on: October 22, 2011, 12:45:23 PM »
হুপিং কাশি(ঘুড়িং কাশি):

হুপিং কাশি একটি বিশেষ ধরণের সংক্রামক ব্যাধি৷ এখনও বাংলাদেশের অনেক শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়৷ইহা শ্বাস তন্ত্রের একটি  সংক্রামক ব্যাধি৷

কারণ:

    *     বরডেটেলা পারটুসিস বা বরডেটেলা প্যারাপারটুসিস নামক জীবাণু দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে৷
    *     এই রোগটি খুবই ছোয়াচে৷ ছোট শিশুরাই সাধারণতঃ এ রোগে বেশি ভোগে৷
    *     ইহা সহজে প্রতিরোধ যোগ্য একটি অসুখ৷ডিপিটি টিকা দানের মাধ্যমে হুপিং কাশি রোগটি  প্রতিরোধ করা সম্ভব৷

লক্ষণ:

    *     ঠান্ডা লাগার মতো এই রোগ জ্বর,নাক দিয়ে পানি পরা এবং কাশি দিয়ে শুরু হয়৷
    *     দুই সপ্তাহ পর  বুকের ভিতর ঘড়ঘড়ানি শব্দ শুরু হয়৷
    *     রোগী একবারও শ্বাস না নিয়ে ঘনঘন একটানা কেশে যায়- যতক্ষণ না কাশির সঙ্গে এক দলা চটচটে শ্লেষা বেরিয়ে আসে আর একটা জোর ঘড়ঘড়ানির সঙ্গে রোগীর ফুসফুসে জোরে বাতাস ঢুকে যায়৷
    *     কাশির সময় বাতাসের (অক্সিজেনের) অভাবে রোগীর ঠেঁাট ও নখ নীল হয়ে যেতে পারে৷
    *     ঘড়ঘড়ানির পর বমি হতে পারে৷
    *     কাশির মাঝখানের সময়টুকুতে শিশুকে বেশ সুস্থ দেখায়৷
    *     হুপিং কাশি ৩ মাস বা তারও বেশি দিন ধরে স্থায়ী হয়৷

১ বছরের কম বয়সের শিশুদের পক্ষে হুপিং কাশি বেশ বিপদজনক৷ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ঠিক ঘড়ঘড়ানি হয় না রসকারণে হুপিং কাশি চেনা খুব মুসকিল৷ পাড়ার কোন শিশুর হুপিং কাশি হয়ে থাকলে অন্য শিশুর দমকা কাশির সাথে চোখ দুটো ফোলা ফোলা লাগলে তক্ষনাথ চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিতে হবে৷

চিকিত্সা:

    *     রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই রোগীকে চিকিত্‌সা করাতে হবে এবং চিকিত্‌সকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ তাছাড়া রোগ লক্ষণ বা উপসর্গ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ যেমন-
    *     শ্বাস কষ্ট বা অক্সিজেনের অভাব হলে তাকে অক্সিজেন দিতে হবে৷
    *     পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷ প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার শিশুকে বেশি করে খাওয়াতে হবে৷
    *     চিকিত্‌সকের পরামর্শ অনুযায়ী কাশি কমানোর ওষুধ দিতে হবে৷
    *     রোগীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং খোলামেলা ঘরে তাকে রাখতে হবে৷

জটিলতা:

    *     চোখের ভিতর রক্তক্ষরণ হতে পারে
    *     ফিট
    *     নিউমোনিয়া
    *      মেনিনজাইটিস৷

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

তথ্যসুত্র-যেখানে ডাক্তার নেই, ডেভিড ওয়ার্নার