Faculty of Science and Information Technology > Environmental Science and Disaster Management
All দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা do not see u 100% miss
Sultan Mahmud Sujon:
ভূমিকম্প মুদ্রণ ইমেল
ভূমিকম্প
earthquake_1.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দালান
চিত্রসুত্র: www-ed.fnal.gov/lincon/w01/projects/earthquakes
প্রকৃতির নিয়মে ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট ভূআলোড়নের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের কোনো কোনো অংশ হঠাত্ কেপেঁ উঠলে তাকে আমরা বলি ভূমিকম্প৷ এধরনের কম্পন প্রচন্ড,মাঝারি বা মৃদু হতে পারে৷ পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬ হাজার ভূমিকম্প হয়৷ কিন্তু এর বেশিরভাগই মৃদু ভূমিকম্প বলে সাধারণত আমরা অনুভব করি না৷ পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে (seisemic zone) বাংলাদেশ অবস্থিত বলে এদেশে মাঝে মাঝে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ প্রায় একশ বছর আগে ১৮ঌ৭ সালে এদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়৷ ১ঌঌ৭ সালের ২১শে নভেম্বর চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রচন্ড এক ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এছাড়া ১ঌঌঌ সালে জুলাই-আগস্ট মাসে মহেশখালী ও পার্শ্ববতী এলাকায় ৪ দফা ভূমিকম্প হয়৷ এসব ভূমিকম্পের ফলে বেশ কিছু মানুষ মারা যায় এবং অনেক বাড়িঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়৷
সুনামি
earthquake_3.jpg
চিত্র: ২০০৪সালের সুনামির ভয়াবহতা
চিত্রসুত্র: alwayswow.blogspot.com
পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ছয় হাজার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ তবে বেশিরভাগই মৃদু আকারে হয় বলে সাধারণত তা অনুভূত হয় না৷ আবার অনেকসময়ই সমুদ্রের তলদেশে ভূকম্পন সংঘটিত হয় যাকে সুনামি বলা হয়৷ যদিও বেশিরভাগ সময় স্থলভাগে এর প্রভাব অনুভূত হয় না৷ কিন্তু অনেকসময় সুনামির কারণে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাস হয় এবং উপকুলীয় লোকজন, সমুদ্রে কর্মরত ব্যক্তিব॔গ ও জেলে-নৌকাসমূহ বিপদের সম্মুখীন হয়৷ গতবছর অথাᐂত্ ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে৷
ভূমিকম্প কেন হয়
ভূবিজ্ঞানীগণ ভূমিকম্পের বিভিন্ন কারণ বা উত্স চিহ্নিত করেছেন ৷ তারমধ্যে প্রধান হচ্ছে:
ক) হঠাত্ আন্দোলন বা টেকোনিক ভূমিকম্প
খ) আগ্নেয়গিরির কারণে ভূমিকম্প
গ) মানুষ সৃষ্ট ভূমিকম্প
ভূমিকম্প পরিমাপ
যে স্থান বা জায়গায় ভূমিকম্পের উত্পত্তি হয় তাকে এর কেন্দ্র বলে এবং কেন্দ্র থেকে তা ঢেউ বা তরঙ্গের মতো চারদিকে প্রসারিত হয়৷ এধরনের তরঙ্গ সিসমোগ্রাফ (Seismograph) বা ভূকম্পন লিখনযন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়৷ সাধারণত অনেক ভূমিকম্প আমরা অনুভব করি না৷ ভূকম্পন যখন মাত্রাধিক হয় এবং ঘরবাড়ি, দালানকোঠা,গাছপালা ইত্যাদি যখন নড়তে থাকে তখন আমরা অনুভব করি৷
ভূমিকম্পের মাত্রা দু'ভাবে পরিমাপ করা হয়-
তীব্রতা (Magnitude)
প্রচন্ডতা বা ব্যাপকতা (Intensity)
ভূমিকম্পের তীব্রতা সাধারণত রিখটার স্কেলে মাপা হয়৷ আর রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ এর উপরে উঠলে যথেষ্ট বিপদের আশন্কা রয়েছে বলে মনে করা হয়৷
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা
তীব্রতা ক্ষয়ক্ষতির আশন্কা
৫-এর বেশি বিপদের সম্ভবনা
৬-৬.ঌ ব্যাপক
৭-৭.ঌ ভয়াবহ
৮ বা এর বেশি অত্যন্ত ভয়াবহ
রিখটার স্কেলের মাত্রা ১ বৃদ্ধি পেলেই ভূকম্পনের মাত্রা ১০ থেকে ৩০ গুণ বেড়ে যায়৷
প্রচন্ডতা বা ব্যাপকতা
ভূমিকম্প হওয়ার পর এর ক্ষয়ক্ষতির মধ্যদিয়ে ব্যপকতাকে মাপা হয়৷ প্রচণ্ডতার দিক দিয়ে একে ভয়াবহ (violent), প্রচন্ড (severe), মাঝারি (moderate), মৃদু (mild) ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়৷
ভূমিকম্পপ্রবন এলাকা
earthqua_map.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পপ্রবন এলাকা
চিত্রসুত্র: www.sos-arsenic.net/ images/earthqua1.jpg
বাংলাদেশে ১ঌঌ৩ সালে ভূমিকম্প বলয় মানচিত্র তৈরি হয়েছে৷ সিসমিক রিস্ক জোন হিসাবে বাংলাদেশকে প্রধান তিনটি বলয়ে ভাগ করা হয়েছে৷ বলয়গুলো হলো :
প্রথম বলয় (প্রলয়ন্কারী ভূমিকম্প) : বান্দরবান, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর এই বলয়ে অবস্থিত এবং এই বলয়ে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭ ধরা হয়েছে৷
দ্বিতীয় বলয় (বিপদজনক ভূমিকম্প) : ঢাকা, টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটি এতে অবস্থিত এবং এখানে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬ ধরা হয়েছে৷
তৃতীয় বলয় (লঘু অঞ্চল) : উপরোক্ত এলাকাগুলো ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকাগুলো যা মোটামুটি নিরাপদ সেগুলো এবলয়ে অবস্থিত৷ এসব অঞ্চলে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬ এর নিচে ধরা হয়েছে৷
বাংলাদেশে ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ
অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা
লালমনিরহাট (প্রায় অর্ধাংশ) পঞ্চগড় চাঁপাইনবাবগঞ্জ (অধিকাংশ)
কুড়িগ্রাম ঠাকুরগাঁও রাজশাহী (অধিকাংশ)
রংপুর (কিছু অংশ) নীলফামারী নাটোর (কিছু অংশ )
গাইবান্ধা (প্রায় অর্ধাংশ) দিনাজপুর পাবনা(কিছু অংশ)
শেরপুর রংপুর (অধিকাংশ) কুষ্টিয়া
জামালপুর (প্রায় অর্ধাংশ) গাইবান্ধা (অর্ধাংশ) মেহেরপুর
ময়মনসিংহ (অধিকাংশ) লালমনিরহাট (প্রায় অর্ধাংশ) লালমনিরহাট (প্রায় অর্ধাংশ)
নেত্রকোনা জয়পুরহাট চুয়াডাঙ্গা
কিশোরগঞ্জ (অধিকাংশ) নওগাঁ ঝিনাইদহ
সুনামগঞ্জ বগুড়া মাগুরা
হবিগঞ্জ জামালপুর (প্রায় অর্ধাংশ)
ফরিদপুর
ব্রাক্ষণবাড়িয়া (কিছু অংশ)
রাজশাহী (কিছু অংশ) যশোর
সিলেট চাঁপাইনবাবগঞ্জ (কিছু অংশ) নড়াইল
মৌলভীবাজার নাটোর (অধিকাংশ) গোপালগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ মাদারীপুর
পাবনা (অধিকাংশ) শরীয়তপুর
টাংগাইল চাঁদপুর (কিছু অংশ)
ময়মনসিংহ (কিছু অংশ) সাতক্ষীরা
কিশোরগঞ্জ (কিছু অংশ) খুলনা
ব্রাক্ষণবাড়িয়া (অধিকাংশ) পিরোজপুর
গাজীপুর বরিশাল
মানিকগঞ্জ লক্ষ্মীপুর
ঢাকা বাগেরহাট
মুন্সিগঞ্জ ঝালকাঠি
নারায়ণগঞ্জ ভোলা
নরসিংদী নোয়াখালী (অধিকাংশ)
কুমিল্লা পটুয়াখালী
চাঁদপুর (অধিকাংশ) বরগুনা
নোয়াখালী (কিছু অংশ) ফেনী (কিছু অংশ)
ফেনী (অধিকাংশ)
খাগড়াছড়ি (পার্বত্য)
রাঙ্গামাটি (পার্বত্য)
চট্টগ্রাম
বান্দরবান (পার্বত্য)
কক্সবাজার
সুত্র : দুর্য়োগ ব্যবস্থাপনা বু᐀রো,২০০১: ৩ঌ-৪০
ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলো
বাংলাদেশে ভূমিকম্প সবসময় না হলেও এর আশংন্কা রয়েছে৷ গত কয়েকবছরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রচন্ডতা ও ব্যাপকতা লক্ষ্যণীয়৷ যেমন,
২০০১ সাল : ঐ বছর ২৬শে জানুয়ারি গুজরাটের ভয়াবহ ভুমিকম্পে প্রায় ২০ হাজার লোক নিহত হয়৷ রিখ্টার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.ঌ৷ এই ভূমিকম্পের কারণে শুধু ভারত নয় পাকিস্তানেরও বেশকিছু অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৷ এমনকি ঐ ভূমিকম্প বাংলাদেশের বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকাতেও মৃদুভাবে অনুভূত হয়৷
১ঌঌঌ সাল : জুলাই-আগস্ট মাসে মহেশখালী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ৪ দফা ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷
১ঌঌ৭ সাল : ২১শে নভেম্বর ১ঌঌ৭ চট্টগ্রাম ও তত্সংলগ্ন এলাকায় এক প্রচন্ড ভূমিকম্পে আঘাত হানে সেসময় একটি পাঁচতলা ভবন মাটির নিচে ডেবে যায় ৷
১৮ঌ৭ সাল : প্রায় একশ বছর আগে ১৮ঌ৭ সালে এ দেশের পূর্বাঞ্চলে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল তা ভুলবার মতো নয়৷ এমন কি কোনো কোনো ভূমিকম্পে নদ-নদীর গতিপথ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে গেছে৷
এছাড়া ভূমিকম্পের কারণে গত কয়েক বছরে তাইওয়ান, তুরস্ক, ভেনিজুয়েলা, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে৷ কোনো কোনো জায়গায় বার বার ভুমিকম্পের ঘটনাও ঘটেছে৷ যেমন তাইওয়ানে একবার প্রচন্ড ভুমিকম্প হওয়ার পরই আবার ভূমিকম্প হয়েছে৷
বিগত দেড় শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলো
তারিখ ভূমিকম্পের নাম সংগঠিত অঞ্চল তীব্রতা (রিখটার) ক্ষয়ক্ষতি
১০ জানুয়ারি, ১৮৬ঌ কাছাড় ভূমিকম্প আসামের মণিপুর ও কাছাড় অঞ্চল (উত্পত্তি: আসামের জৈন্তিয়া পাহাড়) ৭.৫ আসামের মণিপুর, কাছাড় ও বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়৷
১৪ জুলাই, ১৮৮৫ বেঙ্গল ভূমিকম্প জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ এলাকা (উত্পত্তি: বগুড়া অঞ্চলে) ৭.০ সিরাজগঞ্জ-বগুড়া অঞ্চল এবং জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়৷
১২ জুন, ১৮ঌ৭ গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্প সমগ্র আসাম এবং বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ এর উত্তর অঞ্চল এবং রংপুর অঞ্চলসমূহ (উত্পত্তি: আসামের শিলং মালভূমি) ৮.৭ সমগ্র আসাম এবং বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ এর উত্তর অঞ্চল এবং রংপুরের পূর্বাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি ছিল মারাত্মক৷
৮ জুলাই, ১ঌ১৮ শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প শ্রীমঙ্গল, আখাউড়া ও ঢাকা অঞ্চল (উত্পত্তি: শ্রীমঙ্গল সংলগ্ন বালিসেরা উপত্যকা) ৭.৬ শ্রীমঙ্গলে ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা ছিল খুব বেশি এবং ঢাকা পর্যন্ত তীব্রতা অনুভূত হয়৷ আখাউড়া রেল স্টেশনের পাকা অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং ভবনগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
২ জুলাই, ১ঌ৩০ ধুবড়ি ভূমিকম্প রংপুর জেলার পূর্বাঞ্চল (উত্পত্তি : আসামের ধুবড়ি শহর এলাকা) ৭.১ রংপুর জেলার পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়৷
১৫ জানুয়ারি, ১ঌ৩৪ বিহার-নেপাল ভূমিকম্প বিহার, নেপাল ও উত্তর প্রদেশ (উত্পত্তি : দারভাঙ্গার উত্তরে) ৮.৩ বিহার, নেপাল ও উত্তর প্রদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷
১৫ আগস্ট, ১ঌ৫০ আসাম ভূমিকম্প সমগ্র বাংলাদেশ (উত্পত্তি আসামের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অরুণাচল প্রদেশ) ৮.৫ পৃথিবীর প্রচন্ড ভূমিকম্পগুলোর অন্যতম৷ সমগ্র বাংলাদেশে এর তীব্রতা অনুভূত হয়৷
সুত্র : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বু্রো,২০০১:৪১
সহায়ক গ্রন্থাবলী : দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ব্যুরো (২০০১): ভূমিকম্প বিষয়ে গণসচেতনতা
চিত্রসুত্র: ©জfহিদুর রহমান/ ডি.নেট
ভূমিকম্প হলে আমাদের যেসব ক্ষতি হতে পারে
building_crash.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি
© জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
আমাদের মনে রাখা দরকার যে, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদির মতো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার কোনো পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি৷ এটা অত্যন্ত আকস্মিকভাবে ঘটে এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তুলনামূলকভাবে বেশি৷ ভূমিকম্পের কারণে যেধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তা হলো :
বিভিন্ন পাকা ভবন ও ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে বহুসংখ্যক মানুষ মৃতু᐀বরণ করে,
অনেকে আহত হয় ও পঙ্গু হয়ে যায়৷ ঘরবাড়ির নিচে বহু লোক আটকা পড়ে৷
ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়৷
চুলার আগুনে, বৈদু᐀তিক শর্টসার্কিট হওয়ায়, পেট্রোল-কেরোসিন ইত্যাদি বা রাসায়নিক পদার্থসমূহের মিশ্রণে আগুন লেগে অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হয় এবং তাতে বহুসংখ্যক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়, এমনকি মারাও যায়৷
গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী ব্যাপকভাবে মৃতু᐀বরণ করে এবং গাছপালা ও ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়৷
রাস্তা-ঘাটের ক্ষতি; ব্রিজ-কালভার্ট-সেতু ইত্যাদি ধ্বংস হয় এবং রাস্তা-ঘাটে গাছপালা, লাইটপোস্ট ইত্যাদি পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়৷
বৈদু᐀তিক তার বিচ্ছিন্ন হয়ে, বৈদু᐀তিক খুঁটি পড়ে বা ভেঙ্গে গিয়ে, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে আলোর স্বল্পতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়৷
হাসপাতাল, ক্লিনিক ইত্যাদি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে চিকিত্সা ও সেবা কাজ বিঘ্নিত হয় এবং পরিবহণ গাড়ি ও যন্ত্রাদি ধ্বংস হয়ে পরিবহণ ব্যবস্থার মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে৷
অনেক সময় সমুদ্র উপকূল ও বড় নদী-তীরে জলোচ্ছ্বাস হয়৷
অনেক সময় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয় এবং পুকুর, নদী-নালা শুকিয়ে যায়৷
অনেক সময় উঁচুভূমি ডেবে গিয়ে জলাশয়ে পরিণত হয় এবং মাঠে ফাটল সৃষ্টি হয়৷
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে কি করতে পারি
বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা ভূমিকম্প জোনে অবস্থিত তাই সর্বদা এদেশে ভূমিকম্পের আশন্কা রয়েছে৷ এজন্য আমাদের ভূমিকম্পের ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার৷ আমরা ভূমিকম্পকে ঠেকাতে না পারলেও এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি৷ দুইভাবে এই প্রস্তুতি নেয়া যায়-
১) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায় এবং
২) সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় ৷
ভূমিকম্প মোকাবেলায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে করণীয় পূর্বপ্রস্তুতিসমূহ :
ভূমিকম্প সম্পর্কে ধারণা করুন;
আপনার ঘরবাড়ি শক্ত করে তৈরি করুন;
building_repair.jpg
© জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
পুরানো ঘরের খুঁটি ও ভিত মেরামত করুন;
শক্ত মাটিতে ঘর বা ভবন নির্মাণ করুন৷
কখনই গর্ত বা নরম মাটির উপর বাড়ি বা ভবন নির্মাণ করবেন না;
পাকা ভবনের শক্ত ভিত দিন এবং প্রয়োজনে দালান বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর পরামর্শ প্রহণ করুন৷
ভবনের উচ্চতা ও লোডের হিসাব অনুযায়ী ভবনের ভিত্তি দিন৷ এমএস রড ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন ;
অবকাঠামোতে রিইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার করুন;
আপনার বাড়ি বা ভবনটি পার্শ্ববর্তী বাড়ি বা ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে নির্মাণ করুন;
বাড়িতে বৈদু᐀তিক লাইন ও গ্যাস লাইন অত্যন্ত নিরাপদ ও সতর্কভাবে লাগান;
গ্যাসের চুলা ব্যবহারের পর নিভিয়ে ফেলুন এবং ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখুন কেননা ভূমিকম্পের সময় চুলা উল্টে আগুন ধরে যেতে পারে;
chula.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখুন
© জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
বাড়িতে সদস্যের সংখ্যানুযায়ী মাথার হেলমেট কিনে রাখুন যাতে ভূমিকম্পের সময় ব্যবহার করা যায়;
খাট, টেবিল ইত্যাদি শক্ত করে তৈরি করুন যাতে বিপদের সময় তার নিচে আশ্রয় নেওয়া যায়;
ঘর বা পাকা ভবনের একাধিক দরজা রাখুন যাতে বিপদের সময় দ্রুত বের হওয়া যায়;
ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট ও প্রাথমিক চিকিত্সার সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখুন;
পরিবারের সবাইকে বিদু᐀তের মেইন সুইচ,গ্যাসের চুলা,বাল্ব ইত্যাদি বন্ধ করা শেখান;
টিনের ঘর হলে চারের টুঁই - এর সাথে কয়েকটি লম্বা ও শক্ত দড়ি বেঁধে রাখুন যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন;
ভারী কোনো জিনিস উপরে তুলে না রেখে মেঝের কাছাকাছি রাখুন;
পরিবারের সকল সদস্যকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত রাখুন;
awearness.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পের ঝুকি ও করণীয় সম্পকেᐂ পরিবারের সকলে জেনে নিন চিত্রসুত্র: © জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে ভূমিকম্প সম্পর্কিত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করুন এবং অপরকেও অংশগ্রহণ করতে বলুন;
ভূমিকম্প সংক্রান্ত স্থানীয় স্বেচ্
Sultan Mahmud Sujon:
আর্সেনিক দূষণ মুদ্রণ ইমেল
আর্সেনিক
আর্সেনিক হলো এক ধরনের বিষ৷ এর কোনো রং,গন্ধ ও স্বাদ নেই৷ আমাদের দেশের বেশিরভাগ এলাকার টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে৷ আর্সেনিক রয়েছে এমন টিউবওয়েলের পানি খাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ আর্সেনিকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ অনেকে এ রোগের কারণে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাচ্ছে এবং কেউ কেউ মারা যাচ্ছে৷ তাই বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণকে প্রাকৃতিক দুযো॔গ মনে করা হয়৷ বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশের মতো বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত বেশি লোক আর্সেনিক ঝু৺কির মধ্যে নেই৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি লিটার পানিতে .০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে তা মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকর৷
আর্সেনিক দূষণ এলাকা
arsenic_map-3.gif
চিত্রসুত্র: www.sadia.gov/media/NewsRel/NR2000/Arsenic.htp
আর্সেনিক দূষণ একটি মারাত্মক ও ভয়াবহ সমস্যা হিসাবে এদেশে দেখা দিয়েছে৷ এদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫ঌটি জেলার নলকূপের পানিতে আর্সেনিক দূষণ রয়েছে৷ শেরপুর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান এই ৫টি জেলা এখনও আর্সেনিক দূষণমুক্ত বলে মনে করা হয়৷
আর্সেনিক কেন সমস্যাজনক
বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকার নলকূপের পানিতে আর্সেনিক বিষ রয়েছে৷ পানিতে আর্সেনিক বিষ থাকলেও আমরা তা খালি চোখে দেখতে পাই না৷ একারণে আমরা না জেনেই অনেকসময় আর্সেনিক বিষ রয়েছে এমন নলকূপের পানি পান করি৷ আর এভাবে আর্সেনিক বিষ পান করার কারণে আমরা আর্সেনিকে আক্রান্ত হই৷ পানি বা অন্য কোনো মাধ্যম হতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পারিমাণে আর্সেনিক শরীরে প্রবেশ করলে, ধীর ধীরে দেহে তা জমা হতে থাকে এবং মানুষের দেহে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া দেখা দেয়৷ মানুষের দেহে সাধারণত আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার লক্ষণ ২ থেকে ১০ বছর অথবা এরচেয়েও বেশি বছর পর দেখা যায়৷ এটি নির্ভর করে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর৷ আর্সেনিক ছোঁয়াচে বা বংশগত রোগ নয়৷
আমাদের দেশে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর লক্ষণসমূহ
কোনো ব্যক্তির চুল, নখ ও চামড়া পরীক্ষা করলে বোঝা যায় আর্সেনিকে আক্রান্ত কিনা৷ তবে একজনের শরীরে আর্সেনিকের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৬ মাস থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে এবং তিনটি পর্যায়ে লক্ষণগুলো দেখা দেয়৷ লক্ষণগুলো নিচে দেয়া হলো :
প্রথম পর্যায়ে অল্পমাত্রায় আর্সেনিকে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তা হলো:
রোগীর গায়ে (যেমন বুকে, পিঠে, পেটে) কালো কালো দাগ দেখা দেয় ৷ চামড়ার রং কালো হয়ে যায় বা ছোট ছোট কালো দাগ হয়;
melanosis.gif
হাত ও পায়ের তালু শক্ত খসখসে হয়ে যায় ও ছোট ছোট শক্ত গুটি দেখা দিতে পারে৷ পরে কালো কালো দাগ হয়;
keratosis_1.gif
গায়ের চামড়া মোটা ও খসখসে হয়ে যায়;
বমি বমি ভাব এবং বমি হয়; পাতলা পায়খানা হয়;
খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি, রক্ত আমাশয়, মুখে ঘা ইত্যাদি দেখা দেয়;
কখনো কখনো জিহ্বার উপর ও গালের ভিতর কালো হয়ে যেতে পারে৷
দ্বিতীয় পর্যায়ের লক্ষণসমূহ
চামড়ার বিভিন্ন জায়গায় সাদা, কালো বা লাল দাগ দেখা দেয়;
heucomelanosis.gif
হাত -পায়ের তালু ফেটে যায় ও শক্ত গুটি ওঠে;
keratosis.gif
keratosis_2.gif
হাত-পা ফুলে ওঠে ;
arsenic_leg.jpg
তৃতীয় পর্যায়ের লক্ষণসমূহ
কিডনী, লিভার ও ফুসফুস বড় হয়ে যায় ও টিউমার হয়
tumour-due-to-arsenic.gif
হাত ও পায়ে ঘা হয় ,পচন ধরে;
চামড়া, মূত্রথলি, ফুসফুসে ক্যান্সার হয়;
কিডনী ও লিভার অকেজো হয়ে যায়;
জন্ডিস হয়;
পেটে ব্যাথা ও মাথায় ব্যাথা হয়;
রক্তবমি হয়৷
আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে আপনার জন্য করণীয়
ক) আর্সেনিক রোগের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তার অথবা স্থানীয় স্থাস্থ্যকমীর সাথে দেখা করুন ও পরামর্শ মেনে চলুন;
খ) অবশ্যই আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করুন ;
গ) নদী, পুকুর, বিল ইত্যাদির পানি ছেঁকে ২০ মিনিট ফুটিয়ে পান করুন;
ঘ) বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পান করতে পারেন , এজন্য বৃষ্টি শুরু হওয়ার ৫মিনিট পর বৃষ্টির পানি ধরতে হবে;
ঙ) আর্সেনিকে আক্রান্তরোগী সবধরনের খাবার খেতে পারেন৷ তবে শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে হবে;
চ) আমিষ, ভিটামিনযুক্ত (এ, ই, সি) খাবার বেশি করে খাবেন; এতে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠবেন; যে খাবারগুলোতে এসব পাবেন তাহলো -
আমিষ জাতীয় খাবার : মুগ, মসুর ও ছোলার ডাল, সয়াবিন, চীনাবাদাম, শিমের বীচি, কাঁঠালের বীচি৷
ভিটামিন 'এ' জাতীয় খাবার : তাজা শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমানেভিটামিন 'এ' রয়েছে যেমন, সজিনাশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, লালশাক, কচুশাক, পাটশাক, কলমিশাক, শিম, মিষ্টিকুমড়া, গাজরে৷
ভিটামিন 'সি' জাতীয় খাবার : সরিষাশাক, ছোলাশাক, শসা, পুঁইশাক, লালশাক, সজিনাশাক, কলমিশাক, কচু, মূলা, বাঁধাকপি, শিম, করলা, কাঁচা পেপে, টমেটো, আমলকি, পেয়ারা, লেবু, কামরাঙ্গা, করমচা ইত্যাদিতে ভিটামিন 'সি' রয়েছে৷
ভিটামিন 'ই' জাতীয় খাবার : সয়াবিন, বাদাম, মলা ও ঢেলা মাছ, ডিমের কুসুম, সুজি ইত্যাদি থেকে আমরা ভিটামিন 'ই' পাবো৷
আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা
প্রতি লিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা .০৫ মিলিগ্রাম৷ ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে সে পানি পান করা ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে না৷
আর্সেনিক দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কি করবেন
নলকূপ বসানোর আগে মাটির নিচের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে,
পুরানো নলকূপের পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে,
আর্সেনিকযুক্ত পানি রান্না ও খাওয়ার জন্য ব্যবহার করবেন না,
পাতকুয়ার পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা পরীক্ষা করে পান করুন
পুকুর বা নদীর পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে পারেন৷ এজন্য এক কলসি (২০ লিটার) পানিতে আধা চামচ (১০ মিলিগ্রাম) ফিটকিরি মিশিয়ে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন৷ ফিটকিরি মিশালে পানির ময়লা কলসির নিচে জমা হবে৷ সাবধানে পাত্রের উপরের পরিষ্কার পানি অন্যপাত্রে ঢেলে নিয়ে ফুটিয়ে পান করুন ৷
বৃষ্টির পানি আর্সেনিকমুক্ত৷ তাই বৃষ্টি শুরু হওয়ার ৫মিনিট পর পরিষ্কার পাত্রে পানি ধরে সেই পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করতে পারেন৷
তথ্যসুত্র
হীরেন্দ্র কুমার দাস (২০০১) : বাংলাদেশ আর্সেনিক ভয়াবহতা ও সম্ভব্য প্রতিকার
ঢাকা আহছানিয়া মিমন : আর্সেনিকমুক্ত পানি
চিত্র : Dr. Rubaiul Murshed et.al: Health Services Management In Bangladesh & The Problems of Arsenicosis
Sultan Mahmud Sujon:
নদী ভাঙ্গন
river_bank_erosion.jpg
বন্যা, ঘুর্ণিঝড়ের মতো নদী ভাঙ্গনও আমাদের দেশের জন্য একটি দুর্যোগ৷ এদেশের বড় বড় নদীগুলোতে ভাঙ্গন এখন স্বাভাবিক ঘটনা, নদীভাঙ্গন এমন এক ধরনের দুর্যোগ যা মূলত আস্তে আস্তে ঘটে৷ '৭০ ও ৮০'র দশক থেকে এদেশে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা যেমন বেড়েছে তেমনি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে অনেক৷ প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে ৮৭০০ হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়৷ যার অধিকাংশই হলো কৃষি জমি৷ এছাড়া প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ এই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজনের অর্ধেকের বেশির পক্ষে টাকার অভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয় না৷ তারা পরিনত হয় গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষ৷ এধরনের গৃহহীন, ভূমিহারা মানুষেরা সাধারণতঃ বাঁধ, রাস্তা, পরিত্যাক্ত রেলসড়ক, খাসচর, খাসজমিতে ভাসমান জীবনযাপন করে৷ অনেকেই আবার কাজের খেঁাজে শহরে চলে আসে৷ নদী ভাঙ্গনের কারণে তাই বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্ব, নানা রকমের সামাজিক ও পারিবারিক সংকট ।
নদী ভাঙ্গন কেন হয়
বাংলাদেশের প্রায় সব নদীই সর্পিল বা বিনুনী ধরনের যা নদী ভাঙ্গনের কারণ৷ এছাড়া এদেশে বন্যা প্রায় প্রতিবছরই হয়৷ বন্যার সময় নদীতে পানি ও স্রোত বেড়ে যায় একারণেও নদী ভাঙ্গে৷
নদী ভাঙ্গন এলাকা
আমাদের দেশের প্রায় সব এলাকাই নদী ভাঙ্গনের শিকার৷ তবে সব জায়গায় এর তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সমান নয়৷ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷
বাংলাদেশের যে নদীগুলোতে নদী ভাঙ্গন হয়
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধলেশ্বরী, মহানন্দা, মধুমতি, ধরলা, কুশিয়ারা, কীর্তিনখোলা, আঁড়িয়ালখাঁ, শংখ, সুরমা, কর্ণফুলী, গড়াই, কপোতাক্ষ ইত্যাদি৷ ক্ষতিগ্রস্থ জেলা: চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, রংপুর, গাইবান্ধা, ইশ্বরদী, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, নারায়নগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নড়াইল, কক্সবাজার৷
নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কি করবেন
নিরাপদ জায়গায় ঘরবাড়ি বানাতে হবে;
নদী ভাঙ্গনের গতি বুঝে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হবে;
ভাঙ্গন শুরু হলে ভাঙ্গনের জায়গায় পাথর, বালির বস্তা ফেলতে হবে;
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুপাশে গাছ লাগাতে হবে;
নদীভাঙ্গন প্রবণ এলাকায় স্থায়ী স্থাপনা না করা;
কৃষি ছাড়া অন্য কাজ যেমন অকৃষি নানা কাজ করা;
উপকূলীয় এলাকায় ও নদীভাঙ্গন প্রবণ এলাকায় প্রশিক্ষিত ও সচেতন গ্রুপ তৈরি করা৷
নদী ভাঙ্গনের শিকার হলে কি করবেন
যদি কারো কোনো জমি / ভূমি নদী ভাঙ্গনের কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তবে একে সিকস্তি বলে৷ আবার যদি কোনো জমি সাগর বা নদীর গতিপথের পরিবর্তনের কারণে কিংবা নদীর পানি সরে যাওয়ার ফলে জেগে উঠলে বা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া জমি আবার জেগে উঠলে তাকে পয়োস্তি বলা হয়৷ পয়োস্তি বা জেগে ওঠা জমি দুই ধরনের হতে পারে:
ভেঙ্গে যাওয়া জমি আবার জেগে ওঠা
নতুন কোনো জমি জেগে ওঠা
নদীতে জমি ভেঙ্গে গেলে যা করণীয়
কারো জমি সিকস্তি বা নদীতে ভেঙ্গে গেলে সংগে সংগে জমির মালিক ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের জন্য রাজস্ব অফিসারের কাছে আবেদন করবেন৷ আবেদনের জন্য নির্দ্দিষ্ট ফরম রয়েছে৷
রাজস্ব অফিসার জমি ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে জমির মালিককে একটি খাজনার রশিদ দেবেন যা কিনা জমি জেগে উঠলে পয়োস্তি বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জমির মালিকানা নির্ণয়ের প্রমান হিসাবে বিবেচিত হবে৷
কোনো জোতের জমি বা অংশ বিশেষ ভেঙ্গে গেলে ভেঙ্গে যাওয়া অংশের জন্য কর দিতে হবে না৷
সিকস্তি বা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ৩০ বছরের মধ্যে জমি জেগে উঠলে বা পয়োস্তি হলে জমির মালিক বা মালিকের উত্তরাধিকারগণ জমি দাবি করতে পারবেন৷ তবে ৬০ বিঘার বেশি জমি থাকলে সে নদীতে ভেঙ্গে যাওয়া জমি ফেরত পাবে না ৷ তবে ৬০ বিঘার কম জমি থাকলে ৬০ বিঘা হতে যেটুকু জমি প্রয়োজন সেটুকু পাবেন৷
নদী ভাঙ্গনের কারণে কেউ যদি ভূমিহীনে পরিণত হন তবে তিনি খাসজমি পাবার জন্য আবেদন করতে পারেন৷ এজন্য থানা/উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে৷
Sultan Mahmud Sujon:
পৌরসভা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি
চেয়ারম্যান, পৌরসভা - সভাপতি
পৌরসভার সকল কমিশনার - সদস্য
পৌরসভার মেডিক্যাল অফিসার/ স্যানিটারি পরিদর্শক - সদস্য
পৌরসভার নির্বাহী/ সহকারী প্রকৌশলী - সদস্য
পৌরসভা এলাকায় নিয়োজিত কৃষি বিভাগীয় কর্মকর্তা - সদস্য
পৌরসভা এলাকায় নিয়োজিত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা- সদস্য
পৌরসভা এলাকায় নিয়োজিত বিআরডিবি কর্মকর - সদস্য
পৌরসভার দুইজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি - সদস্য
সংশ্লিষ্ট পৌরসভায় কর্মরত সকল এনজিও- এর প্রতিনিধ - সদস্য
জেলা সিভিল সার্জন এর প্রতিনিধ - সদস্য
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা/ পৌরসভার সচিব - সদস্য-সচিব
(প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকলে পৌরসভার সচিব কমিটির সদস্য থাকবেন)
সংশ্লিষ্ট মাননীয় সংসদ সদস্য/ সদস্যাবৃন্দ উক্ত কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন৷ এ কমিটি প্রতি দুই মাস অন্তর সভা করবে৷ দুর্যোগকালে প্রতিদিন একবার এবং পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলে প্রতি সপ্তাহে দু'বার সভায় মিলিত হবে৷
পৌরসভা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব
দুর্যোগের আগে / স্বাভাবিক সময়ে:
ব্যক্তিগত বা দলীয়ভাবে ঝু৺কি কমানোর জন্য বাস্তব কর্মপন্থা কি হবে সে সম্পর্কে স্থানীয় জনসাধারণ কে জানাবে, কমিউনিটি পর্যায়ে ঝু৺কি কমানো এবং বেঁচে থাকার উপায়গুলোর ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করবে;
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বু᐀রোকে অবহিত করে নিয়মিত দুর্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা;
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা সংক্রান্ত পূর্বাভাস অতি দ্রুত ও কার্যকরভাবে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ ও জনসাধারণকে তাদের জানমাল রক্ষায় কী কী করণীয় সে সম্পর্কে অবহিত করা;
জেলা/ উপজেলা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয়স্থলসমূহে পানি সরবরাহ এবং প্রয়োজনে অন্যান্য সেবা প্রদানের বিষয় নিশ্চিত করা;
স্থানীয় উদ্ধারকাজ পরিকল্পনা, প্রাথমিক ত্রাণকার্য পরিচালনা, উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের স্থানীয় ব্যবস্থা সম্বলিত আনুসঙ্গিক পরিকল্পনা প্রণয়ন৷
জেলা/উপজেলা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সতর্কবাতাᐂ/পূর্বাভাস প্রচার, অপসারণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক ত্রাণ কার্য পরিচালনা বিষয়ে মহড়া অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা৷
দুর্যোগকালে করণীয়
স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ পরিচালনা এবং নির্দেশ হলে অন্যদেরকে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা প্রদান;
দুর্যোগের ক্ষতি সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ ও তা উপজেলা কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো;
স্থানীয়ভাবে এবং অন্য কোনো উত্স বা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর থেকে প্রাপ্ত পুনর্বাসন উপকরণাদি বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ;
প্রাপ্ত সম্পদ বিতরণের হিসাব উপজেলা কর্তৃপক্ষ বা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো৷
সুত্র: দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ব্যুরো (২০০১): ভূমিকম্প বিষয়ে গণসচেতনতা
Sultan Mahmud Sujon:
সিটি কর্পোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি
মাননীয় মেয়র, সিটি কর্পোরেশন - সভাপতি
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশন - সদস্য
সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক - সদস্য
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনার - সদস্য
সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা - সদস্য
মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি - সদস্য
মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রতিনিধি - সদস্য
প্রধান প্রকৌশলী, এলজিইডি- এর প্রতিনিধি - সদস্য
প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিনিধি - সদস্য
চেয়ারম্যান/এমডি, ওয়াসা (সংশ্লিষ্ট) - সদস্য
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি - সদস্য
সংশ্লিষ্ট বিদু্যত্ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি - সদস্য
টি এন্ড টি বোর্ডের প্রতিনিধি- সদস্য
এডাব মনোনীত একজন এনজিও প্রতিনিধি - সদস্য
ওয়ার্ড কমিশনারবৃন্দ - সদস্য
সচিব, সিটি কর্পোরেশন - সদস্য-সচিব
সিটি কর্পোরেশন এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য/সদস্যাগণ কমিটির উপদেষ্টা থাকবেন৷ স্থানীয় পরিস্থিতি ও বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে কমিটির সভাপতি প্রয়োজনবোধে আরও সদস্য কমিটির সদস্যদের ভোটে বা অনুমোদন সাপেক্ষে অন্তর্ভক্ত করতে পারবেন৷কমিটি বছরে অন্তত চারবার সভা করবে তবে দুর্যোগকালীন সময়ে কমিটির সভাপতি প্রয়োজনে আরো সভা আহ্বান করবেন৷
সিটি কর্পোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব
দুর্যোগের আগে/স্বাভাবিক সময়ে করণীয়:
ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পূর্বাভাস দ্রুত সিটি এলাকার সকল কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ/প্রতিষ্ঠান এবং এবিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ;
আশ্রয়কেন্দ্র ও আশ্রয়স্থল পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া;
দুর্যোগকালে করণীয়:
সিটি কর্পোরশনের এলাকাতে উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ এবং প্রাথমিক পুনর্বাসন সংক্রান্ত কাজ ও এর সমন্বয়ের জন্য জরুরি পরিচালনা কেন্দ্র (তথ্য কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ কক্ষ) পরিচালনাকরণ৷ প্রয়োজনে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা ও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজের জন্য উদ্ধারকারী দল প্রেরণ করা ও সামগ্রিক কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধন করা;
দুর্যোগের ক্ষতি সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ এবং তা ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ;
পুনর্বাসন কাজের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, মন্ত্রণালয়, জেলা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ বস্তুনিষ্ঠভাবে বিতরণের ব্যবস্থাকরণ৷ ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত সহায়ক সামগ্রীর হিসাবাদি সংরক্ষণ এবং তা ত্রাণ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ৷
সুত্র: দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ব্যুরো (২০০১): ভূমিকম্প বিষয়ে গণসচেতনতা
Navigation
[0] Message Index
[#] Next page
[*] Previous page
Go to full version