হান্নান সরদার
হান্নান সরদার
রেসিপি দিয়েছেন ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পার্টি শেফ (বেঙ্গলি কিচেন) হান্নান সরদার
একই গরুর মাংসের রান্না, একেক হাতে একেক রকম স্বাদ। তেল, মসলা এক হলেই তো হবে না। রান্নায় থাকে বিশেষ কিছু কৌশল। একই সঙ্গে খাবার পরিবেশনার উপস্থাপনের কারণেও বিশেষভাবে খেতে ইচ্ছে করে। পাঁচ তারকা হোটেলে খাবারের এসব নিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা হয় যত্নভরে। তবে রোজ রোজ না হোক, বিশেষ দিনে তো বাড়িতে এমন রান্না হতেই পারে।
ঈদের দিন পাঁচ তারকা হোটেলের রান্না নিজের হেঁশেলেই রেঁধে ফেলতে পারবেন। তবে সেসব খাবার রাঁধতে সবার আগে দরকার আত্মবিশ্বাস। ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পার্টি শেফ (বেঙ্গলি কিচেন) হান্নান সরদার রান্না করলেন ঈদের পাঁচটি বিশেষ খাবার। সেসব খাবার বাসায় তৈরির জন্য রেসিপি ছাড়াও কিছু পরমর্শ দিলেন পাঠকদের। হান্নান সরদার জানালেন, ঈদের দিন মসলাযুক্ত খাবার সুস্বাদু করতে চাইলে অবশ্যই মসলা ভালো করে কষাতে হবে। আর খাবার ঠিকমতো রান্নার পর পরিবেশন করতে হবে উপযুক্তভাবে। অনেক সময় ভালো রান্না করেও পরিবেশন খারাপ হলে খাবারে অরুচি তৈরি হতে পারে।
পাঁচতারা হোটেলের এই শেফ মনে করেন, গরুর মাংস দিয়ে যখন কাবাব তৈরি করবেন তার সঙ্গে কী সস দেবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। বাসায় কাবাব বানাতে শক্ত ও মোটা ফ্রাইপ্যান ব্যবহার করে কম তাপে ভাজতে হবে। এতে কাবার ভাজা হবে তবে পুড়বে না। কাবাব ভেজে একটা কাঠিতে হালকা ভাজা চাকা চাকা পেঁয়াজ, শসা ইত্যাদি গেঁথে লম্বা প্লেটে পরিবেশন করুন। প্লেটটি টেবিলে রেখে ওপর থেকে একদিকে ঢেলে দিন রায়তা সস। দেখলেই খেতে ইচ্ছে করবে।
তেহারি-মসলা কষানো হলে তারপর মাংস রান্না করতে হবে। গোলাকার সসপ্যানে তেহারি রান্না করলে ভালো হবে। কারণ, ঠিকমতো নাড়তে না পারলে খাবারের স্বাদ বদলে যাবে। তেহারির চালের সঙ্গে যখন মাংস মেশানো হবে তখন বেশি ঘাঁটলে ভাত ভেঙে যাবে, তাই আলতো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
পাঁচ তারা হোটেলের খাবার বাসায় রান্না করে চমকে দিতে পারেন অতিথিকে। কৃতজ্ঞতা: প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, ঢাকা, ছবি: খালেদ সরকার
পাঁচ তারা হোটেলের খাবার বাসায় রান্না করে চমকে দিতে পারেন অতিথিকে। কৃতজ্ঞতা: প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, ঢাকা, ছবি: খালেদ সরকার
একইভাবে মাটন রোগান জোস রান্না করতে চাইলে মাংসের আকারটা কেমন হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক শেপে মাংস কেটে নিতে হবে। শুধু মাংস নিলে রোগান জোস হবে না। হাড়সহ কাটতে হবে। নিয়মিত হাড়সহ মাংস কাটার অভ্যাস না থাকলে নিজে কাটা যাবে না। ভালো হয়, বাজার থেকে মাংস সঠিক শেপে কেটে আনলে। মাংস ধোয়ার জন্য গরম পানিতে ছেড়ে কয়েক মিনিট রাখলেই এর থেকে রক্ত আলাদা হয়ে যাবে। পরে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
বিফ ভিন্দালু রান্না করার সময় সরাসরি কাঁচা আলু ব্যবহার না করা ভালো। এতে নাড়াচাড়ার কারণে আলুর কোনা ভেঙে যায়। দেখতে ভালো লাগে না। তাই আলু আগে সেদ্ধ করে রেখে নামানোর আগে মিশিয়ে নিতে হবে।
পরিবেশনে বিশেষ নজর
রান্নার পর কোন খাবার কোন পাত্রে পরিবেশন করবেন সেটা আগেই ঠিক করে নিন।
কাবাব জাতীয় খাবার হলে চার কোনা পাত্রে রাখতে পারেন। পাশে লেটুসপাতা, গাজর, শসা, টমেটো ইত্যাদি প্রয়োজনমতো দিয়ে সাজাতে পারেন।
গোলাকার বাটিতে খাবার বাড়লে তার নিচে একটা বড় গোল প্লেট রাখতে পারেন।
খাবার পাত্রে ঢালার পর সস বা অন্য কিছু দিলে সেটা একটু শৈল্পিকভাবে রাখুন।
খাবার টেবিলের ওপর একটি পরিষ্কার কাপড় বিছিয়ে তারপর একে একে খাবারগুলো সাজান।
মাটন তেহারি
মাটন তেহারি
মাটন তেহারি
উপকরণ
খাসির মাংস ১ কেজি, পোলাওয়ের চাল ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, মাখন পৌনে এক কাপ, আদা ১ টেবিল চামচ, রসুন ১ টেবিল চামচ, মরিচ ৫০ গ্রাম, টক দই আধা কাপ, দুধ ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, জিরার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, দারুচিনি ৪ টুকরা (গুঁড়া), এলাচি ৪টা (গুঁড়া), কালো গোলমরিচ ৬টা (গুঁড়া) ও জায়ফল ১টা ফলের সিকি ভাগ (গুঁড়া)।
প্রণালি
প্রতি টুকরা মাংস ২ সেন্টিমিটার মাপে কাটুন। ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পোলাওয়ের চাল ধুয়ে পানি ঝরান। একটি পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি ভাজুন হালকা বাদামি করে। আদা, রসুন, মাংস, দই, লবণ, কাঁচা মরিচ এবং অর্ধেক করে গুঁড়া মসলাগুলো দিয়ে দিন। নাড়াচাড়া করে ঢেকে দিয়ে রান্না করুন। তেল মসলার ওপরে ভেসে ওঠা পর্যন্ত রান্না করতে থাকুন। একটি সসপ্যানে মাংসের ওই তরকারি থেকে তেল ও ঝোল নিন। সেটায় আড়াই কাপ পানি যোগ করে ফুটিয়ে নিন। এরপর দুধ, চাল, চিনি ও লবণ দিয়ে নাড়ুন। ফুটে উঠলে কাঁচা মরিচ ও বাকি গুঁড়া মসলা দিয়ে দিন। জ্বাল কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিন। ২০ মিনিটের মতো রান্না করুন। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর চালের ওপর মাংসগুলো ছড়িয়ে দিন। ঢেকে রাখুন আরও ২০ মিনিট। পরিবেশন করার আগে চালের সঙ্গে ভালোভাবে মাংস মিশিয়ে নিন। সালাদ ও বোরহানির সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।
বিফ টিক্কা কাবাব
বিফ টিক্কা কাবাব
বিফ টিক্কা কাবাব
উপকরণ
গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম (দেড় ইঞ্চি আকারে টুকরা করা), আস্ত ধনিয়া ২ চা-চামচ, আস্ত জিরা ১ চা-চামচ, দই ৩ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ ১টি, মরিচ ৮টি, লবঙ্গ ৪টি ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি
মাংসের টুকরাগুলোতে আদা-রসুন বাটা, ফেটানো দই ও পেঁয়াজ বাটা মাখিয়ে নিন। হালকা করে ভেজে নিন। এরপর মাংসের সঙ্গে আস্ত ধনিয়া ও জিরা, লবঙ্গ, মরিচ ও লবণ ভালো করে মাখিয়ে মেরিনেট করে রাখুন ৬-৮ ঘণ্টা। এবার শিকে মাংস গেঁথে, তেল লাগিয়ে কয়লার ওপর ভাজুন। অনিয়ন রিংয়ের সঙ্গে গরম বিফ টিক্কা কাবাব পরিবেশন করুন।
মাটন রেজালা
মাটন রেজালা
মাটন রেজালা
উপকরণ
খাসির মাংস ২ কেজি, মিহি পেঁয়াজকুচি ২০০ গ্রাম, আদাবাটা ৫০ গ্রাম, রসুনবাটা ৫০ গ্রাম, এলাচি ৫টি, দারুচিনি ৩ টুকরো, টক দই ৫০ মিলিলিটার, লবণ ১ টেবিল চামচ, ঘি বা মাখন ৫০ গ্রাম, তেল ১০০ মিলিলিটার, কাঁচা মরিচ ২০টি, কেওড়া জল ২ টেবিল চামচ, রাইসিন ৫০ গ্রাম, কাঠবাদামের কুচি ৫০ গ্রাম, মাওয়া ৫০ গ্রাম, লাল মরিচের গুঁড়া ১০ গ্রাম ও আস্ত জিরা ৫ গ্রাম।
প্রণালি
খাসির মাংস কেটে ১৮-২০ টুকরা করে নিন। একটি পাত্রে মাংস, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, দারুচিনি, এলাচি, দই, লবণ আর ঘি নিয়ে ভালো করে মাখুন। ঢেকে দিয়ে অল্প আঁচে প্রায় ২৫ মিনিট রান্না করুন। ঝোল ঘন হয়ে এলে কেওড়া জল ও চিনি দিয়ে অল্প আঁচে ৪৫ মিনিটের মতো রান্না করুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন। কাঁচা মরিচ, রাইসিন দিয়ে মৃদু আঁচে ঘণ্টাখানেক রান্না করুন। ওপরে কাঠবাদামের কুচি দিয়ে দিন। সাদা পোলাও, ভাত, চাপাতি কিংবা পরোটার সঙ্গে এই রেজালা পরিবেশন করুন।
