নতুন মা-বাবা যখন সন্তানের যত্ন নেবেন

Author Topic: নতুন মা-বাবা যখন সন্তানের যত্ন নেবেন  (Read 1858 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
গর্ভপূর্ব, গর্ভকাল ও প্রসবকালের নানা অনুভূতি, উত্তেজনা পেরিয়ে এখন নতুন মা-বাবার ঘরে ফুটফুটে এক নবীন আগন্তুক। তাকে ঘিরে শুরু হয় জীবনযাত্রার নতুন চালচিত্র। নতুন মা-বাবাসহ অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না সোনামণিকে কীভাবে যত্নআত্তি করতে হয়।

প্রচুর পরামর্শ থেকে সাবধান
বন্ধু, আত্মীয়-পরিজন নবজাতকের যত্নে নানা উপদেশ দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে থাকাকালীন নার্স ও পরামর্শকরা নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো ও অন্যান্য যত্নের যে দিকনির্দেশনা দেন, তা মনোযোগ সহকারে জেনে নিন। শিশুকে বাসা বা বাড়িতে নিয়ে আসা কিছুটা অশোভনীয় দেখালেও যাতে নবজাতককে একাধিক লোক ধরাছোঁয়া না করে, সে বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায়, নবজাতক ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।

শিশুকে ধরার আগে হ্যান্ডলিং-সম্পর্কিত
 নবজাতক শিশুর রোগ প্রতিরোধক ইমিউন সিস্টেম তত শক্ত নয়, কাজেই তাকে কেউ ধরতে চাইলে, আগে নিজের হাত দুটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে বলুন।
 শিশুকে কোথাও নেওয়া বা ওপর-নিচ করার সময় মাথা ও ঘাড়ের নিচে হাত রাখুন।
 আনন্দ কিংবা বিষণ্নতার মুহূর্তে শিশুকে দেখাশোনার সময় যেন তার শরীরে বেশি ঝাঁকুনি না লাগে—সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ঝাঁকুনি-চোট থেকে অনেক সময় শিশুর মস্তিষ্কের রক্তপাত হয় এবং শিশুর মৃত্যু ডেকে আনে। শিশুকে যদি জাগাতে চান, এ রকম জোরে ঝাড়া দেওয়া চলবে না, প্রয়োজনে পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিতে পারেন। সব সময় মনে রাখতে হবে, শিশুকে নিয়ে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ খেলা করা চলবে না।

আদর-সোহাগের উদ্দীপনা
ভূমিষ্ট হওয়ার পর প্রথম ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ পান করানো হলে মা ও সন্তানের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন গভীরতর হয়। জন্মের প্রথম ঘণ্টা বা দিবসগুলো এ ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। স্তন্য পানের সময় মায়ের ত্বকের উষ্ণতা শিশুকে উষ্ণতা, মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। এ সময় মা-বাবা শিশুর ত্বকে পরশের সোহাগ বুলিয়ে দিতে পারেন। আলতোভাবে ম্যাসাজ করে দিন। এতে নিবিড় সম্পর্ক রচিত হবে।
 কোনো কোনো শিশু স্পর্শ, আলো বা শব্দে খুব সংবেদনশীল। সামান্য শব্দে জেগে বা কেঁদে ওঠে। আপনি যা ভাবছেন, তার চেয়ে কম ঘুমায়। এ সময় আপনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কথা বলুন। শব্দ ও আলোর মাত্রা খানিক নিচুতে রাখুন।

ডায়াপার-বিষয়ক
দৈনিক ১০ বারের মতো কাপড় বা ডায়াপার বদলাতে হতে পারে।
 পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত পোশাক-পরিচ্ছদ বা ডায়াপার লাগবে।
 ঈষদুষ্ণ জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবহার।
 কিছু জীবাণুমুক্ত তুলোর বান্ডিল।
প্রতিবার পায়খানা-প্রস্রাবের পর অপরিষ্কার কাপড় বদলিয়ে ফেলুন। পায়খানা-প্রস্রাবের স্থান জীবাণুমুক্ত তুলো, ঈষদুষ্ণ পানিতে ডুবিয়ে আলতোভাবে পরিষ্কার করে দিন। মেয়েশিশুর বেলায় সামনে থেকে পেছন দিকে নরম স্পর্শে পরিষ্কার করতে হবে। এতে মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ হওয়ার হার বা ঝুঁকি কমে আসে।
ডায়াপারে র‌্যাশ দেখা গেলে অল্প ক্ষারযুক্ত সাবানজলে ধুয়ে নিন। জিংক অক্সাইড যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তা যদি আরও বিস্তৃত হয় বা তিন দিনের মধ্যে না সারে, তবে ফ্যানগাল ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকতে পারে বিধায় শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

গোসল করানো
নবজাতক শিশুর নাড়ি ঝরতে, নাভি শুকাতে এক থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এ সময় পর্যন্ত সপ্তাহে দু-তিনবার স্পঞ্জ বাথ দিতে হবে। যেসব সামগ্রীর প্রয়োজন:
 পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ঈষদুষ্ণ জল।
 অল্প ক্ষারের সাবান।
 শুকনো, পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত পোশাক ও তোয়ালে।
 ইনফ্যান্ট বাথটাব ব্যবহার করা হলে দু-তিন ইঞ্চির মতো হালকা গরম জলে ভর্তি রাখতে হবে। তবে, নিজের কবজি ডুবিয়ে আগেই গরম অনুভব করে নিন। শিশুর নাক, কান, কানের পাশ, দেহের ভাঁজ ও যৌনাঙ্গ পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেষ্ট হোন।

বুকের দুধ খাওয়ানো ও বার্পি
নবজাতক শিশুকে ‘যখন চায়, যতক্ষণ চায়’—এ নীতিতে বুকের দুধ পান করাবেন। প্রতিবার বুকের দুধ পানকালে শিশু কিছু না কিছু বাতাস গেলে।
এ বাতাস বের করে দেওয়ার জন্য দুধ পানের পর শিশুর মাথা আলতোভাবে কাঁধে রেখে পিঠে হাত বোলানো হলে বাতাস বের হয়ে আসে। বুকের দুধ পানের পর ১০-১৫ মিনিট বসিয়ে রাখার পজিশনে রাখা বাঞ্ছনীয়। স্তনদানের সঙ্গে সঙ্গে শুইয়ে দিলে পান করা দুধের উদিগরণ ঘটে বেশি।

ঘুমানোর কলাকৌশল
নবজাতক শিশু ২৪ ঘণ্টার প্রায় ১৬ ঘণ্টা বা এরও বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটায়। প্রতিবার প্রায় তিন-চার ঘণ্টা করে ঘুমোয়। খুব নরম বা তুলতুলে নয়—এমন বিছানার ওপর শিশুকে শোয়াতে হবে; যাতে সে উল্টে গিয়ে তার নাক-মুখ গুঁজে না যায়, যা শ্বাসরোধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আর শিশু যদি ভালোভাবে বুকের দুধ পান করে, ঘুমায়, দৈনিক ছয়বার প্রস্রাব করে, ওজন বাড়ে যথাযথ—তবে নিশ্চিত থাকুন, আপনার সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ আছে, তার যত্ন সঠিক আছে।

প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ছবিতে প্রথম সন্তান আর্যকে নিয়ে বীথি ও রাহুল মজুমদার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৬, ২০১০