আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বের উপলব্ধি
যারা নাস্তিক তারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। তাদের কথা হল, এই মহাবিশ্বে যা কিছু আছে বা ঘটছে, তা আপনি-আপনিই হচ্ছে বা ঘটছে এবং যাকে দেখা যায় না তাকে মানারও প্রশ্ন আসে না। তাই তো তারা মুক্ত চিন্তার অধিকারী।
১. সেসব অবিশ্বাসীদেরকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, এই বিশ্বের কেউ কি কোন দিন ‘বাতাস' দেখেছে বা দেখতে চেয়েছে। অথচ বেঁচে থাকার জন্য বাতাস একটি অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান। বাতাসের আকার-আকৃতি, বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ কেমন, এই প্রশ্নও কেউ কোন দিন করেছে বলে শুনিনি। অথচ বাতাস একটি অদৃশ্য পদার্থ। তবে হ্যাঁ, বাতাসকে উপলব্ধি করা যায়, অনুভব করা যায়। যেমনঃ বাতাস শরীরে লাগলে শরীরের পশম উড়ে, মাথার চুল উড়ে, পরনের কাপড় উড়ে, গাছের পাতা নড়ে, গাছ-পালা দোলে। বাতাসের গতিবেগ বেশি হলে বাড়িঘর উড়ে যায়, গাছপালা উপড়ে পড়ে, নদীর পানি কূলে আছড়ে পড়ে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয় ইত্যাদি। যদি অদৃশ্য একটি পদার্থকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, অনুভব করতে পারি এবং যার প্রভাব, ক্রিয়াকলাপ দেখতে পারি, বুঝতে পারি এবং অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে পারি, তবে সেই বাতাসের সৃষ্টিকর্তা অদৃশ্য আল্লাহ তায়ালাকে দেখে বিশ্বাস করতে হবে কেন?
২. বিদ্যুতের ব্যবহার আজ সর্বত্র। শিতি-অশিতি প্রায় সবাই বিদ্যুৎ চিনেন। বলতে গেলে বলতে হয়, বর্তমান সভ্যতাই দাঁড়িয়ে আছে এই বিদ্যুতের উপর। অথচ বিদ্যুতকে কেউ কোনদিন দেখেনি বা দেখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে বলে শুনিনি। তবে বিদ্যুৎ কী? এর উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। তবুও এক বাক্যে বলা যায় যে, বিদ্যুৎ এমন এক অদৃশ্য শক্তি বা বল, যা আলো, তাপ, শব্দ, গতি উৎপন্ন করে এবং অসংখ্য বাস্তব কাজ সমাধা করে। কাজেই যদি এমন এক অদৃশ্য শক্তিকে না দেখে, শুধু কাজ দেখে বিশ্বাস করতে পারি, তবে বিদ্যুতের সৃষ্টিকর্তা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে দেখে বিশ্বাস করতে হবে কোন্ যুক্তিতে?
৩. এই পৃথিবীর কোন মানুষ তার পিতাকে কি তাকে জন্ম দিতে দেখেছে? জন্মের পর হতে মা যে ব্যক্তিকে পিতা বলে ডাকতে শিখিয়েছেন, তাকেই পিতা বলে জেনে এসেছে। তার মা তো মিথ্যাও বলতে পারেন। এখন যদি কোন অবিশ্বাসী, যে শুধুই দেখে বিশ্বাস করে, সে কি তার জন্মদাতাকে জন্ম দিতে দেখেনি বলে অস্বীকার করতে পারবে? সব কিছুকে যদি দেখেই বিশ্বাস করতে হয়, তবে মানুষ ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব' হল কী করে? কেউ যদি তেড়ে আসা কোন কুকুরকে বলে, ‘এ দিকে আসিস নে'। তবে কি সে তেড়ে আসা বন্ধ করবে? কিন্তু ওকে যদি লাঠি দেখানো হয়, তবেই সে তেড়ে আসা বন্ধ করবে। কারণ ইতর প্রাণী হলেও সে লাঠি চেনে। এখানেই মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য। মানুষ যদি নিবিষ্ট মনে নিজের দেহের দিকে ল্য করে বা পর্যবেণ করে,তবে সে একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বা প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবে অবশ্যই। আর সে সৃষ্টিকর্তার নামই হচ্ছে আল্লাহ-সুবহানাহুতায়ালা।
ক. মানুষের দেহ বা শরীর
কথায় বলে, ‘যে নিজেকে চিনেছে, সে আল্লাহকে চিনেছে'। মানুষের দেহ বা শরীর সম্পর্কে ডাক্তার ছাড়া আমাদের মত সাধারণ মানুষ কত টুকুই বা বুঝে। তবে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে বা কিনিকে শিল্পীর আঁকা মানুষের ত্বক বা চামড়াবিহীন যে দেহ-চিত্র টাঙ্গানো দেখা যায়, মাথা হতে পা পর্যন্ত হাড়, মাংসপেশী, জালের মত বেষ্টিত অসংখ্য শিরা-উপশিরা, ধমনী, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, খাদ্যনালী, পাকস্থলী,কিডনি, ইত্যাদি দেখা যায়, তা এক কথায় সত্যিই বিস্ময়কর। আর এসব কিছুকেই ত্বক বা চামড়া দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দিয়ে একজন সুশোভিত সুদর্শন মানুষ হিসেবে অস্তিত্বে আনা হয়েছে, যা ভাবতে শুধু অবাকই লাগে না, মহা বিস্ময়ে মাথা আপনি আপনি নুয়ে আসে। অথচ এ মানুষই মাতৃগর্ভে সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম এক কণা পানি হতে পরিপূর্ণ মানব-অবয়ব নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।
খ. হাত
মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দু'টি হাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দু'টি হাতেই আবার পাঁচটি করে আঙ্গুল আছে এবং আঙ্গুল পাঁচটি আবার সমান নয়। সমান নয় কেন? যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলবে হাতের পাঁচ আঙ্গুল তো সমান হয় না। কিন্তু কেন? বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা বলেন যে, পাঁচটি আঙ্গুল অসমান বলেই তো কোন কিছু ধরতে গেলে আঙ্গুলের মাথাগুলো একত্রিত হয়ে সমান হয় এবং দ্রব্যাদি ধরতে সুবিধা হয়। আঙ্গুলগুলো যদি সমান হতো তবে দ্রব্যাদি ধরতে গেলে আঙ্গুলের মাথাগুলো ছোট-বড় হতো, অসমান হতো, কোন কিছুই ধরা যেত না।
অসতর্ক মানুষ এ হাত দিয়েই সুদ-ঘুষ নিচ্ছি, মানুষ খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, মদ পান, জুয়া খেলা, খাদ্যে ভেজাল মিশানো, ওজনে কম দেয়া, মজুতদারি, অফিসে বসে কলম দিয়ে জালিয়াতি, ইয়াতিমের সম্পদ আÃসাৎ, জুলুম-অত্যাচার ইত্যাদি আল্লাহর নিষেধকৃত হেন অপকর্ম নেই, যা না করছি। আমরা যদি ছেলেবেলা হতেই এ জ্ঞান পেতাম যে, হাত দিয়ে কৃত সব কর্মের সাী আল্লাহপাক স্বয়ং, তবে সমাজে এত বিশৃংখলা, অশান্তি হতো না। আর আমরা পরকালের অনন্ত জীবনে জাহান্নামি হতাম না। পরিবর্তে আল্লাহ-তায়ালার আদেশকৃত কাজ, যেমনঃ মা-বাবার খেদমত, গরীব-দুঃখী, বিধবা, দুস্থ-অসহায়ের উপকার, দুর্বল ও অত্যাচারিতকে রা, আÃীয়-স্বজনদের উপকার, দান-খয়রাত ইত্যাদি যতগুলো হক্কুল ইবাদ আছে, তার সবগুলো করে পরকালে জান্নাতি হওয়ার পথ সুগম করতে পারতাম। তাতে আমাদের ইহ-পরকাল শান্তিময় হতে পারতো।
গ. মুখ
গ্রামাঞ্চলে একটা কথার প্রচলন আছে, আর তা হল, ‘মানুষের মুখই মিঠা, মুখই তিতা'। দু'টি ঠোঁট, একটি জিহ্বা এবং দু'পাটি দাঁত, এই নিয়েই আমাদের মুখ-গহ্বরটা গঠিত। আমরা দু'টি ঠোঁট ও জিহ্বাটা নড়ালেই একটা শব্দ মুখের ভিতর হতে বের হয়। এটাই কথা। এই কথা বাংলা, ইংরেজি, আরবী ইত্যাদি যার যার মাতৃভাষা অনুযায়ী হয়। কীভাবে হয়? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ডাক্তার সাহেবরা দিতে পারবেন, কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষদের সেই তত্ত্ব বুঝার মত জ্ঞান তো নেই। আমি যদি বলি, ‘আমি কিছুই জানিনে'- এটা বাংলা। আর যদি বলি, ‘আই ডোন্ট নো'- এটা ইংরেজি। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম Ñ এটা আরবি। আমার যখন যে ভাষাতে ইচ্ছে , যে কথাগুলো বলতে ইচ্ছে, ভাল মন্দ যাই হোক না কেন, তা আমার ভিতর হতে কীভাবে বের হয়ে আসে , সে কীভাবে এসবের যোগান দিচ্ছে তা কি একবারও আমরা ভেবে দেখেছি কোন দিন কোন সময় ? বোবাও তো কথা বলে । ঠোঁট -জিহ্বা নড়ে , কিন্তু কিছু বুঝা যায় কি? এই যে কথা বলার আমাদের মতা, এটা আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার কত বড় নেয়ামত বা অনুগ্রহ, তা কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? অথচ এই নেয়ামত বা অনুগ্রহের কতই না অপব্যবহার করছি। এই মুখ দিয়ে অনর্গল মিথ্যা বলছি, অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিচ্ছি, অন্যের গীবত, চোগলখুরি করছি ইত্যাদি। আমাদের মুখের এখন বরকতের অভাব এবং তার কারণ আমার মতে তিনটা, যথাঃ
১. মিথ্যা বলা,
২. পরনিন্দা, পরচর্চা করা,
৩. অশ্লীল কথা বলা, অশ্লীল গালাগাল দেয়া।
ইমাম গাজ্জালী (রহ.) ‘কিমিয়ায়ে সা'দাত' বই-এ একটা হাদিস দেখেছিলাম, যা মোটামুটি নিুরূপঃ
একদিন কয়েকজন সাহাবা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তাদের প্রতিবেশী এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, বললেন, “মহিলা প্রতিদিন রোজা রাখে, সারা রাত জেগে এবাদত-বন্দেগী করে, কিন্তু তার অশ্লীল কথাবার্তার জন্য কেউ তার কাছে ভিড়তে পারে না। তার সম্পর্কে ফয়সালা কী?†রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেন, ‘সে জাহান্নামি'। একবার ভাবুন তো, শুধু অশ্লীল কথাবার্তার কারণে মহিলার ভাল আমলগুলোই কীভাবে বরবাদ হয়ে গেল। অথচ আমরা অবলীলাক্রমে হাসি-ঠাট্টা, কৌতুকের ছলে কতই না মিথ্যা, অশ্লীল কথাবার্তা বলে রসিকতা করছি। এতে কত যে পাপ কামাই করছি, তা নিজেরা জানছি নে বা খেয়ালও করছিনে। ফলে আমাদের মুখটাই অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে এবং সেই সাথে আমাদের আÃাটাও। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা মহাপবিত্র। তাই তাঁর কাছে অপবিত্র মুখের কোন আরজি, আবেদন-নিবেদন, অনুরোধ-উপরোধ গ্রহণযোগ্যতা পায় না, অর্থাৎ আমাদের দোয়া কবুল হয় না।
ঘ. দাঁত
কোন মানব সন্তানই দাঁত নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। ৯ থেকে ১০ মাস বা এক বছর বয়স হলে দাঁত গজানো শুরু করে। দাঁত দেহের অতীব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এই দাঁতের জন্যে আল্লাহ-তায়ালার দরবারে আমাদেরকে কোন দরখাস্ত দিতে হয়নি। তিনি অত্যন্ত দয়া পরবশ হয়ে আমাদেরকে এ দাঁত দান করেছেন। এ দাঁত দিয়ে তো বিভিন্ন ধরনের খাবার আমরা মজা করে খাই। শুধু খাওয়াই নয়, আমাদের মুখ নিঃসৃত কথাগুলো স্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত হয়ে বের হয়। যাদের দাঁত নেই তারাই বুঝতে পারে দাঁতের প্রয়োজনীয়তা। অনাদরে, অবহেলায় যাদের দাঁত অসুস্থ হয়ে পড়ে, তারাই বুঝতে পারে দাঁতের যন্ত্রণা, কষ্ট ও ব্যথা কত তীব্র হতে পারে। দাঁত যাতে অসুস্থ না হয়, সেজন্যই তো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে মেসওয়াক করা সুন্নাত করেছেন।
ঙ. জিহ্বা
জিহ্বা এমন এক টুকরা মাংস, যার সাথে দেহের অন্য কোন মাংসের সাদৃশ্য নেই। কথা বলার জন্যে, খাদ্যদ্রব্যকে দাঁতের নিচে পৌঁছানে ছাড়াও কোন কিছুর স্বাদ গ্রহণের জন্যে জিহ্বার কোনই বিকল্প নেই। টক, মিষ্টি, ঝাল, নোন্তা, তিতা- এটা জিহ্বা ছাড়া বুঝার উপায় নেই। আমরা যা কিছুই খাইনা কেন, এ জিহ্বার জন্যই মজা করে খাই। অসুস্থ, বিশেষ করে জ্বরে আক্রান্ত হলে জিহ্বার স্বাদ গ্রহণ মতা লোপ পায়। তখন আমরা বুঝতে পারি জিহ্বার গুরুত্ব। যার জিহ্বায় স্বাদ নেই, তার কাছে পৃথিবীটাই মূল্যহীন।
আমার এক সহকর্মী অফিসে দুপুরের খাবার খেতে খেতে একদিন বলছিলেন, ‘ভাই, কী যে খাই? মাটি, কাদা না অন্য কিছু, কিছুই বলতে পারবো না। ুধা লাগে, খেতে হয়, তাই খাই। গলায় থেরাপি দিতে দিতে জিহ্বার স্বাদ-গ্রহণ মতা একেবারেই নেই।' কাজেই জিহ্বার এ স্বাদ গ্রহণ-মতা আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার কত বড় অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞচিত্তে খাওয়াটা কত বড় ইবাদত, তা আমরা জানিও না। অথচ আল্লাহতায়ালা যে কোন সময় আমাদের জিহ্বার স্বাদ গ্রহণ মতা হরণ করতে পারেন। জিহ্বাকে লোভের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। এই জিহ্বার জন্যে অর্থাৎ উপাদেয় সব খাবারের জন্যে, ভাল ভাল খাবারের জন্য, বেশি বেশি খাবারের জন্যেই তো আমরা বেশি বেশি কামাই-রোজগার করি। আমার এ রোজগার করতে গিয়ে আমরা হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ কোনই বাছ-বিচার করি না। এর কারণেই তো আমাদের দেশে সর্বত্রই সীমাহীন দুর্নীতি।
চ. নাক
এ নাক দিয়েই শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করা ছাড়াও মানুষ বিভিন্ন দ্রব্যের গন্ধ নিতে পারে। এই নাক দিয়ে বাতাস হতে আমরা অক্সিজেন নেই এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি। বাতাস হল কতগুলো গ্যাসের সংমিশ্রণ, যাতে ৭৮% নাইট্রোজেন, ২১%-এর সামান্য বেশি অক্সিজেন এবং অতি সামান্য ভাগ আর্গন ও নিয়ন গ্যাস আছে। নাইট্রোজেন একটি বিষাক্ত গ্যাস এবং এই গ্যাস মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে ভিতরে ঢুকলে মৃত্যু অবধারিত। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কে এবং কীভাবে বাতাস হতে অক্সিজেনকে বিশ্লিষ্ট করে আমাদের ভিতরে ঢুকাচ্ছে? তিনি আর কেউ নন, আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা। আর বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য বিশ্বজুড়ে স্থাপন করে দিয়েছেন অসংখ্য অক্সিজেন প্ল্যান্ট। এ অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলো হল গাছপালা। বিজ্ঞানীরা জানেন এ কথা। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষেরা না জানলেও আমাদের অল্েয যিনি এই কাজটি করে যাচ্ছেন, তিনি মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যেই তো প্রতি মুহূর্তে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার সময়ে সেই মহাপ্রভুর স্মরণ করা উচিত।
ছ. কান
মানুষের কান দু'টি দেখতে কিন্তু গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল বা অন্য কোন প্রাণীর কানের মত নয়, কেমন পেঁচানো পেঁচানো। অথচ দেখতে খারাপতো লাগেই না, বরং সুন্দরই লাগে। সুন্দর দেখানোর পাশাপাশি শব্দ-তরঙ্গের ডাক, পুরুষ নাকি মহিলার, শিশুর নাকি বুড়ার, পরিচিত বা অপরিচিত জনের কণ্ঠস্বর। শুধু কি তাই? পরিচিত জনের পায়ের শব্দ শুনেও আমরা বলতে পারি কে আসছে? এ শ্রবণশক্তিও কি আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার অনুগ্রহ বা নেয়ামত নয়?
জ. চোখ
মানুষের দু'টি চোখ মহান আল্লাহ-তায়ালা সৃষ্টির মধ্যে এক অতি বিস্ময়কর সৃষ্টি। এ চোখ নিয়েই কত কবি কত কবিতাই না লিখেছেন। কত কিছুর সাথে উপমা খুঁজেছেন। দর্শনীয় উপভোগ্য বস্তু ছাড়াও চোখের দর্শন-কার্যক্রম বর্ণনাতীত। এই চোখ দিয়েই আমরা উঁচু-নিচু, পাহাড়-পর্বত, নদীনালা, গাছপালা, পশু-পাখি, সব কিছুই চিনতে পারি। শুধু কি তাই? লাল-নীল, সাদা-কালো, সবুজ-হলুদ ইত্যাদি যত রকম রঙ আছে, তা সবই বুঝতে ও চিনতে পারি। কিন্তু কীভাবে পারি? তা কিন্তু বিজ্ঞানী ডাক্তার ছাড়া আমরা সাধারণ মানুষেরা কিছুই জানি না। অথচ মানুষ যা কিছুই শিখে বা জ্ঞানার্জন করে, তার ৯০% ভাগই শিখে বা অর্জন করে এ দু'টি চোখ দিয়েই। মাত্র ১০% শিখে দু'টি কান দিয়ে শুনে।
মস্তিষ্ক ও চোখ কয়েক ল সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম রগ বা নার্ভ দিয়ে সংযুক্ত। যার ফলে আমরা চোখ দু'টিকে ডানে-বামে, উপরে-নিচে ঘুরাতে পারি। এই চোখ দিয়ে শুধু সাদা-কালো দেখি না, বরং বিভিন্ন রঙ বা বর্ণের দেখি। কিন্তু কীভাবে? তা কি জানি? এই চোখ দিয়ে প্রাত্যহিক সকল কাজকর্ম সম্পন্নই শুধু করছি না, বরং আল্লাহ-সুবহানাহুতায়ালার অপূর্ব সৃষ্টি এই বিশ্বকে দেখছি, উপভোগ করছি। এর জন্যে কোন মূল্যই আমাদেরকে দিতে হচ্ছে না। তাই বলে কি মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কোন শুকরিয়া আদায় করেছি? কোনই কৃতজ্ঞতা? চোখবিহীন অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষের জীবনটাই মূল্যহীন। আমরা পরম সৌভাগ্যবান যে, মানুষের জন্যে শ্রেষ্ঠতম নেয়ামতের একটি নেয়ামত দু'টি চোখ, যা আমাদেরকে দান করেছেন মহান আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা। আমরা কি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবো না? তাঁর অনুগত হবো না?
ঝ. মস্তিষ্ক
আধুনিককালে কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার উদ্ভাবনের ফলে মানুষের মস্তিষ্কের বা মগজের কাজ বুঝা আমাদের জন্য কত সহজ হয়ে গেছে। আমরা যা কিছু করি, ধরি,দেখি, শুনি, বুঝি, চিন্তাভাবনা করি, উপলব্ধি, অনুভব যা কিছুই করি না কেন, সব কিছুরই উৎপত্তিস্থল এই মস্তিষ্ক বা মগজ বা ব্রেইন। পরিচিত কাউকে বহুদিন পর দেখলে আমরা চিনতে পারি। এখা