Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - ashraful.diss

Pages: [1] 2 3 ... 16
1
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে নতুন সূচনার আহ্বান

“দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে” — এই বাক্যটি শুধু এক ধরনের হতাশার চিত্র নয়, এটি জীবনের এক গভীর বাস্তবতাকে প্রকাশ করে। এমন সময় আসে যখন মনে হয়, সামনে আর কোনো রাস্তা নেই, চারপাশের সব দরজা বন্ধ। এক অদৃশ্য দেওয়ালের সামনে এসে দাঁড়াই, যেখানে পিছু হটার উপায় নেই, আর এগোনোর পথও অস্পষ্ট।

জীবনের এই পর্যায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অফিস কিংবা জাতীয়—যেকোনো ক্ষেত্রেই আসতে পারে। কেউ হয়তো আর্থিক সংকটে জর্জরিত, কেউ মানসিক চাপে ভেঙে পড়েছে, আবার কেউ জীবনের কোনো কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। পরিবারও এমন এক দুঃসময়ে পড়তে পারে, যখন সমাধানের কোনো পথ চোখে পড়ে না। এমনকি একটি জাতিও এমন অবস্থায় পড়তে পারে, যখন ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হয়।

এই অবস্থায় মানুষ নানা আবেগে ভরে যায়—ভয়, হতাশা, অসহায়তা, ক্ষোভ, অনিশ্চয়তা। সবকিছু যেন থমকে যায়। কিন্তু এখানেই লুকিয়ে থাকে এক আশ্চর্য সুযোগ — নতুন করে শুরু করার শক্তি।

সংকটই কখনো কখনো পুনর্জাগরণের সূচনা হয়

যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন বাধ্য হই নতুন করে ভাবতে, নতুনভাবে বাঁচতে। পুরনো পথে চলা বন্ধ হলে, নতুন পথের সন্ধান শুরু হয়। জীবনের অনেক বড় সাফল্যের সূচনা এমন অচল অবস্থাতেই ঘটে।

এই সময়টিতে আমাদের করণীয় হতে পারে—

১। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করুন: শান্তভাবে বসে ভেবে দেখুন, কী কারণে এই অবস্থায় এসেছি। মূল কারণ জানা গেলে সমাধানও স্পষ্ট হয়।
২। সম্ভাবনার দরজা খুঁজুন: মনে হতে পারে, সব দরজা বন্ধ — কিন্তু সত্যিকারে হয়তো কোনো ছোট জানালা খোলা আছে। সেটিই হতে পারে আশার আলো।
৩। সহায়তা নিন: সংকটে একা থাকা নয়, বরং যাদের বিশ্বাস করেন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। পরামর্শ, ভালোবাসা ও সহযোগিতা অনেক সময় অন্ধকারে আলো দেখায়।
৪। মনোবল দৃঢ় রাখুন: ভয় বা হতাশা নয়, বিশ্বাস ও ধৈর্যই এখানে সবচেয়ে বড় শক্তি। মনে রাখুন, রাত যত গভীরই হোক, ভোর আসবেই।
৫। নতুন কৌশল শিখুন: হয়তো পুরনো ধ্যানধারণা আর কাজ করছে না। তাই নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার সময় এসেছে। পরিবর্তনই বেঁচে থাকার প্রমাণ।

দেওয়াল নয়, এটি হতে পারে একটি দরজা

“দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে” — এই বাক্যটি শুধুই অসহায়তার প্রতীক নয়; এটি এক ধরনের জাগরণের আহ্বান। এই দেয়ালই হতে পারে জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। হয়তো এখান থেকেই শুরু হবে নতুন গল্প, নতুন দিগন্ত।

জীবন কখনোই একেবারে শেষ হয়ে যায় না। প্রতিটি কঠিন মুহূর্তের পেছনে লুকিয়ে থাকে শেখার সুযোগ, বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা।
যতক্ষণ আমরা আশাকে বাঁচিয়ে রাখি, ততক্ষণ কোনো দেয়ালই আমাদের আটকে রাখতে পারে না।

শেষ কথা:

যখন মনে হবে, “আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে”, তখন ভেবে দেখুন — হয়তো এই দেয়ালটাই আপনার জীবনের নতুন দরজায় পরিণত হতে যাচ্ছে। দরকার শুধু সাহস, বিশ্বাস, এবং একটুখানি আলো দেখার মন।

2
কখন শিশুরা মিথ্যা বলা শুরু করে?

সাধারণত শিশুদের আট বছর বয়সের আগে পূর্ণ অর্থে মিথ্যা বলার মতো মানসিক বিকাশ ঘটে না।
যেমন, যদি ৩ বছরের শিশুকে জিজ্ঞেস করা হয়, “তুমি কি দুধ খেয়েছো?”—সে দুধ না খেয়েও বলে, “হ্যাঁ, খেয়েছি।”
এক্ষেত্রে শিশুটি আপনাকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য দেয়নি; বরং আপনাকে খুশি করার জন্য বা শাস্তি এড়ানোর জন্য এমনটি বলেছে। তাই এটিকে প্রকৃত মিথ্যা বলা যায় না।

কেন শিশুরা মিথ্যা বলে?

১. শাস্তির ভয়: পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিশু বুঝে যায়—সত্য বললে শাস্তি পেতে হবে। তাই শাস্তি এড়াতে মিথ্যা বলে।
২. লজ্জা ও অস্বস্তি: ভুল করলে শিশু লজ্জায় পড়ে। পূর্বে যদি লজ্জা দেওয়া হয়ে থাকে, তবে শিশুরা লজ্জা এড়াতেও মিথ্যা বলে।
৩. বাস্তবতা ও কল্পনার গুলিয়ে ফেলা: ৮ বছর বয়সের আগে শিশুরা বাস্তব আর কল্পনার পার্থক্য ঠিকভাবে বুঝতে পারে না।
৪. পরিবার থেকে শেখা: শিশুরা বড়দের দেখে মিথ্যা বলতে শেখে। যদি পরিবারের কেউ শিশুর সামনে মিথ্যা বলে এবং বলে “প্রয়োজনে মিথ্যা বলা যায়”, তবে শিশুও একই আচরণে উৎসাহিত হয়।
৫. কিছু পাওয়ার জন্য: যেমন—“রুটি খেলে আইসক্রিম পাবে।” শিশু রুটি না খেয়েই বলে দেয় সে খেয়েছে।
৬. স্কুলের পরিবেশ: গবেষণায় দেখা গেছে—যেসব স্কুলে বেশি শাস্তি দেওয়া হয়, সেসব স্কুলের শিশুরা বেশি মিথ্যা বলে। কারণ শাস্তি এড়াতে তারা গুছিয়ে মিথ্যা বলতে শেখে।

ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজির ব্যাখ্যা

১। ছোট শিশুরা মনে করে, সব পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলা ভুল।
২। ১০ বছর বয়সের পর থেকে তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসে।
৩। ১০–১৮ বছরের মধ্যে শিশু মিথ্যা বলার সঠিকতা বা ভুল হওয়া নির্ধারণ করে ঘটনার ফলাফলের উপর।
৪। যদি মিথ্যা বলে কিছু পাওয়া যায়, তবে তা তাদের কাছে সঠিক মনে হয়।
৫। অন্যকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলাও তখন গ্রহণযোগ্য মনে হয়।

শিশুকে সত্য বলায় উৎসাহিত করার উপায়

গল্প শুনানো: সত্য বলার সুবিধা বা পুরস্কারের গল্প বলুন। ধর্মীয় গল্প বা বয়স অনুযায়ী ছোট-বড় গল্প তৈরি করতে পারেন।
প্রশংসা করা: শিশু সত্য বললে তার সততা প্রশংসা করুন।
নিজে উদাহরণ হওয়া: শিশুর সামনে সবসময় সত্য বলুন এবং কথা দিয়ে কথা রাখুন।
ভিন্ন সমাধান খোঁজা: শিশু মিথ্যা বললে শাস্তি না দিয়ে বিকল্প উপায়ে সমস্যার সমাধান করুন। যেমন—হোমওয়ার্ক না করে বললে করেছে, তখন তাকে হোমওয়ার্ক শেষ করতে বলুন এবং পরে চেক করুন।
কাউন্সেলিং: যদি মিথ্যা বলা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং পরিবারের জন্য সমস্যার কারণ হয়, তবে ফ্যামিলি ও ইন্ডিভিজুয়াল কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। এতে শিশুর উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা কমে, আত্মমর্যাদা বাড়ে এবং ট্রমা থাকলে তা নিয়েও কাজ হয়।

যা করবেন না

❌ শিশুকে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা দেবেন না—একবার সত্য বলতে বলে আবার বলবেন, প্রয়োজনে মিথ্যা বলা যায়।
❌ মিথ্যা বললে শাস্তির গল্প শুনাবেন না।
❌ কথা দিলে তা রাখুন। রাখতে না পারলে কারণ ব্যাখ্যা করুন।
❌ শিশুকে “মিথ্যুক” বলে ডাকবেন না বা অন্যদের সামনে হেয় করবেন না।
❌ সত্য বলার জন্য উপহার দিতে শুরু করে আবার বন্ধ করবেন না। উপহারের ওপর নির্ভরশীল হলে উপহার না পেলে শিশু সত্য বলা বন্ধ করে দিতে পারে।

👉 এইভাবে শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল, ধারাবাহিক এবং ইতিবাচক আচরণই তাকে সত্য বলার অভ্যাসে গড়ে তুলবে।


3
🌟 শিশুদের জন্য কিছু নির্দেশনা 🌟

নির্দেশনা কী?

শিশুর বা শিক্ষার্থীর ক্ষমতার সর্বাধিক বিকাশে সাহায্য করার একটি অবিরত প্রক্রিয়া। এটি সহায়তা প্রদান, কিন্তু কখনো জোর প্রয়োগ নয়। নির্দেশনা গণতান্ত্রিক ও সহযোগিতা মূলক।

নির্দেশনার ধরন:

1️⃣ শিক্ষামূলক – জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি
2️⃣ বৃত্তিমূলক – পেশাগত বা কর্মসংক্রান্ত দক্ষতা উন্নয়ন
3️⃣ স্বাস্থ্য – শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
4️⃣ ধর্মবিষয়ক – নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ
5️⃣ অবসর ও বিনোদনমূলক – সৃজনশীলতা ও আনন্দদায়ক কার্যক্রম
6️⃣ সামাজিক ও নৈতিক – দায়িত্বশীল ও নৈতিক আচরণ গঠন

🏫 বিদ্যালয়ে নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা:

✔ শিক্ষার কৌশল আয়ত্ত
✔ শিক্ষোপকরণের সঠিক ব্যবহার
✔ পরীক্ষার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ
✔ নিয়মিত হাজিরা
✔ কার্যক্রম ও সহ-পাঠক্রমিক কর্মসূচীর সমন্বয়
✔ সু-অভ্যাস গঠন
✔ দৈনন্দিন কার্যক্রম ও শিক্ষাক্রম নিয়মিত অনুমোদন
✔ ভবিষ্যৎ গঠনমূলক কর্মসূচি পরিকল্পনায় সহায়তা

📋 নির্দেশনার ধাপ:

1️⃣ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ
2️⃣ পরিবেশগত সুযোগ সুবিধা যাচাই
3️⃣ পরামর্শ প্রদান
4️⃣ অভিযোজন (Adaptation)
5️⃣ সুযোগ ধরে রাখা ও প্রবর্তন

4
🧒👨‍👩‍👧 প্যারেন্টিং: শিশুর আচরণ পরিবর্তন করার আগে নিজেকে পরিবর্তন করুন

সন্তান আমাদের প্রতিচ্ছবি। আমরা যেমন আচরণ করি, তারা তেমনই শিখে নেয়। তাই শিশুর চরিত্র গঠনে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন অভিভাবকের নিজেকে পরিবর্তন করা।

কি করবেন

১। ভালো কাজের জন্য শিশুকে উৎসাহ দিন বা পুরস্কৃত করুন – এতে সে আত্মবিশ্বাসী হবে।
২। শিশুকে প্রশংসা করুন – এতে সে অন্যকেও প্রশংসা করতে শিখবে।
৩। শিশুকে নৈতিকতা শিক্ষা দিন – সে সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত নাগরিক হবে।
৪। শিশুকে স্নেহ ও ভালোবাসা দিন – সে অন্যকে ভালোবাসতে শিখবে।
৫। শিশুর সাথে বন্ধুভাবাপন্ন হোন – তার নিজের জগৎ গড়ে তুলতে পাশে থাকুন।

কি করবেন না

১। শিশুকে নিন্দা করবেন না – এতে তার মনে ঘৃণা তৈরি হবে।
২। শিশুকে মারবেন না – এতে তার মধ্যে অবাধ্যতা জন্ম নেবে।
৩। শিশুকে উপহাস করবেন না – এতে তার মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি হবে।
৪। শিশুকে সকলের সামনে লজ্জা দিবেন না – এতে সে অপরাধী মানসিকতায় ভুগবে।
৫। শিশুর সামনে কোনো অপরাধ করবেন না বা অপরাধের পক্ষ নেবেন না – এতে সে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে।
৬। শিশুর সামনে দাম্পত্য কলহ করবেন না – এতে তার ভবিষ্যৎ পারিবারিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৭। শিশুর সামনে শিক্ষক বা পরিচিত কারো নিন্দা করবেন না – এতে তার শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হবে।

👉 মনে রাখবেন, শিশু আপনার কথায় নয়, আপনার আচরণে গড়ে ওঠে।

5
মাথার চুল কাটার স্টাইল বা ডিজাইন নিয়ে ইসলাম কি বলে?

মাথার চুল কাটা

মহিলারা মাথার চুল কাটা অথবা ফ্যাশনের জন্য চুলকে ছোট ছোট করা, ডানে-বামে, সামনে-পিছনের যে কোন দিক থেকে হোক না কেন তা পুরুষের সঙ্গে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে নাজায়েয ও গোনাহ।

এ সম্পর্কে হাদীসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইরশাদ করেন, "আল্লাহ তা'আলার অভিসম্পাত সে সকল পুরুষের উপর যারা মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং সমভাবে সে সব মহিলাদের উপরও আল্লাহর অভিসম্পাত প্রযোজ্য যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।”

অতএব মহিলাদের জন্য মাথার চুল কাটা জায়েয নেই। স্বামীর জন্য নির্দেশ দিলেও স্ত্রীর জন্য এ আদেশ পালন করা নাজায়েয। কেননা আল্লাহ তা'আলার অবাধ্য হয়ে স্বামীর অনুগত্য করা হারাম। এমতাবস্থায় স্ত্রীর উচিত নম্রতা ও ভদ্রতার সঙ্গে অসম্মতি প্রকাশ করা। স্বামীকে শরীয়তের নির্দেশ জানিয়ে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করা। এতে আমি আশাবাদী যে, স্বামী যেহেতু একজন মুসলমান তাই শরীয়তের নির্দেশ অমান্য করবেনা, এবং শরীয়ত বিরোধী কাজে বাধ্য করতে স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করবেনা। (বুখারী, আবু দাউদ, মেশকাত- ৩৮০ পৃ)

বব কাটিং চুল

মহিলাদের জন্য বব কাটিং চুল রাখা সম্পূর্ণ নাজায়েয সুতরাং তা থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক।

চুল ছাঁটা

মাথার চুল কাটার যে হুকুম উপরে আলোচনা করা হয়েছে চুল ছাঁটার হুকুমও তাই। সুতরাং বেকলমাত্র ফ্যাশনের জন্য মাথার চুল ছাঁটা জায়েয নেই। তবে যদি চুলের অগ্রভাগ ফেটে শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়, যার দরুন চুলের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে চুলের 'অগ্রভাগ ছাঁটার অনুমতি আছে। তাছাড়া সাধারণ ভাবে যদি উঁচু বা নীচু হয়ে যায়, অর্থাৎ চুলের অগ্রভাগে সামান্য কটা চুল অসমভাবে লম্বা বা খাটো অবস্থায় থাকে তাহলে অগ্রভাগ থেকে ছেঁটে সমান করার অবকাশ আছে।

চুলে ডিজাইন করা

মহিলাদের জন্য চুল না কেটে বিভিন্ন ডিজাইন করে রাখা জায়েয। তবে এক্ষেত্রে সর্বদা নিম্নোল্যেখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

(১) এর দ্বারা যেন কাফের বা পাপাচারী মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা না হয়।
(২) তা হতে হবে শুধুমাত্র আপন স্বামীর মনোরঞ্জন করার উদ্দেশ্যে।
(৩) এ কাজে এত সময় নষ্ট করা যাবে না, যার প্রেক্ষিতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

চুল বৃদ্ধির জন্য কাটা

অনেক মহিলাদের চুলের শেষপ্রান্তে দু'তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে চিকন চুলে রুপান্তরিত হয়, ফলে চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় তখন যদি সে চুলের অগ্রভাগ কেটে দেয়া হয়, তাহলে আবার নতুন করে সে চুল বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাহলে এ অবস্তায় চুল বাড়ানোর জন্য অগ্রভাগ ছেটে দেয়া নিঃসন্দেহে জায়েয।

রোগ-ব্যাধির কারণে চুল কাটা

কোন মহিলার মাথায় যদি রোগের কারণে চুল কাটার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে অপারগতার কারণে অর্থাৎ শরয়ী ওযরের ভিত্তিতে চুল কাটা জায়েয আছে। কিন্তু যখনই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে তখন চুল কাটার এ অনুমতিও থাকবেনা। অর্থাৎ এর পর আর চুল কাটা জায়েয হবেনা।"

মেয়েদের চুল কাটা

বালেগা (প্রাপ্ত বয়স্কা) বা নিকটবর্তী বালেগা মেয়েদের চুল কাটা জায়েয নেই। উপরে চুল কাটার ব্যাপারে যে সব হুকুম লেখা হয়েছে সে সব বিষয়াবলী তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। কিন্তু, যারা ছোট এখনো প্রাপ্ত বয়স্কা হয়নি অর্থাৎ যাদের বয়স নয় বছরের কম, তাহলে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য বা অন্য কোন ভাল উদ্দেশ্যে তাদের চুল কাটার অনুমতি আছে। তবে কাফের, ফাসেকদের বাহ্যঃ সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে বিরত থাকবে, কেননা শরীয়ত তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে।

চুল রাঙ্গানো

বিউটি পার্লারে মেয়েদেরকে ব্লিচ করা হয়। পরে অন্য রঙ্গে রঙ্গিন করা হয়। এগুলো যদি শরীয়তের পরিসীমার মধ্যে থেকে হয় তাহলে শরয়ী দিক থেকে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই। শরয়ী সীমারেখা কিতাবের প্রারম্ভে বর্ণনা করা হয়েছে। (আল আশ্বাহ ওয়ান্নাযায়ের ২:১৭০, ফতোয়া খানিয়া ৩:৪)

ভ্রু চিকন করা

আজকাল মহিলারা ভ্রু সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্যে ভ্রুর কিছু লোম উপড়ে ফেলে। তাঁর ফলে ভ্রুদ্বয় অর্ধবৃত্ত রেখায় পরিণত হয়। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে না জায়েয। কেননা শরীর আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। শরয়ী ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া এ শরীরের কোন অংশেই পরিবর্তন বা রূপান্তর করা জায়েয নেই। সঙ্গত কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দাতের মধ্যে ফাঁকা সৃষ্টি করা, শরীরে চিত্রাঙ্কন করা বা চিত্রাঙ্কন করানোকে না জায়েয, অভিসম্পাতের উপযুক্ত এবং আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টির মাঝে পরিবর্তন করা আখ্যা দিয়েছেন। তিনি শরীর থেকে লোম উপড়ে ফেলার ব্যাপারে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। সুতরাং ভ্রুর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করা যা আজকাল সাধারণ ফ্যাশনের পরিনত হয়েছে সম্পূর্ণ নাজায়েয।

স্বামীকে খুশী করার উদ্দেশ্যে ও এরূপ করা জায়েয নেই। তবে যদি ভ্রুর লোম অতিরিক্ত লম্বা হয়ে যায় এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকার কারণে খারাপ দেখা যায়, তাহলে তা কেটে কিছুটা ছোট করা নিঃসন্দেহে জায়েয।

চেহারার লোম পরিষ্কার করা

মুখমন্ডলের লোম পরিষ্কা করা জায়েয। তবে তা উপড়ে ফেলা উচিৎ নয়। কেননা এতে শারীরিক কষ্ট হয়ে থাকে, তাই পাউডার জাতীয় (হেয়ার রিমোভার) বস্তু দ্বারা পরিষ্কার করা শ্রেয়।(মেশকাত শরীফ- ৩৮১ পৃঃ)

গোঁফ-দাড়ী পরিষ্কার করা

কোন মহিলার মুখে যদি গোঁফ-দাড়ী গজায়, তা পরিষ্কার করা শুধু জায়েযই নয় বরং অতি উত্তম। কিন্তু উপড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণে তা করা ঠিক নয়। বরং কোন প্রকার পাউডার দ্বারা পরিষ্কার করা উচিত।

ঠোঁটের লোম পরিষ্কার করা

যদি কোন মহিলার ঠোঁটের উপর লোম গজায় তাহলে তা পরিষ্কার করা নিষেধ নয়। বরং তা পরিষ্কার করা মহিলাদের জন্য উত্তম ও মুস্তাহাব।

হাত পায়ের লোম পরিষ্কার করা

মহিলাদের জন্য হাত ও পায়ের লোম পরিষ্কার করা জায়েয। কেননা তাদের জন্য সৌন্দয্য অর্জন করা ন্যায়সঙ্গত অধিকার। তাছাড়া এতে সৃষ্টির মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন বলা যাবেনা। এবং এ ক্ষেত্রে ধোকা দেয়ারও অর্থ বুঝায়না। সুতরাং হাত পায়ের লোম না উপড়িয়ে উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা উত্তম।

শরীরে চিত্রাংকন করা

শরীরে যে কোন ধরণের চিত্রাঅংকন করা বা করানো জায়েয নেই, হারাম। এর পদ্ধতি হলো শরীরে সূঁই জাতীয় কোন কিছু দ্বারা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে এর মধ্যে সুরমা বা নীল ভরে দেয়া এবং এভাবে শরীরে জীব-জন্তু বা অন্য কোন জিনিসের চিত্র আঁকা। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন ধমক দেয়া হয়েছে :

“আল্লাহ তা'আলার অভিসম্পাত সে মহিলার উপর পতিত হোক যে শরীরে চিত্রাংকন করে এবং চিত্রাংকন করায়।” (ফতোয়ায়ে শামী- ৬:৩৭৩ পৃঃ (৮) মেশকাত ৩৮১ পৃঃ, বোখারী ও মুসলিম)


6

কা'বা হল আজরের পুত্র ইব্রাহীম খলিলের বানানো, আর মানুষের হৃদয় হল মহান আল্লাহ্ অবস্থানের পথ

আমরা জানি, কা'বা শরীফ মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান, যার নির্মাণ নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর হাতে সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু কেন একটি মানব হৃদয়কে সেই পবিত্র কা'বার থেকেও অধিক মূল্যবান বলা হচ্ছে? এর কারণটি নিহিত রয়েছে উভয়ের উৎপত্তির মহিমায় এবং উদ্দেশ্যের গভীরতায়।

কা'বা শরীফ, নিঃসন্দেহে, আল্লাহর এক বিশেষ নিদর্শন। এটি সেই কিবলা, যেদিকে মুখ করে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ সালাত আদায় করেন। এর ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় তাৎপর্য অপরিসীম। নবী ইব্রাহীম (আঃ), যিনি আল্লাহর একনিষ্ঠ বন্ধু (খলিল) ছিলেন, তিনি স্বহস্তে এই ঘর নির্মাণ করেছিলেন আল্লাহর ইবাদতের জন্য। এটি আল্লাহর একত্ববাদের প্রতীক এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু।

কিন্তু যদি আমরা গভীরভাবে চিন্তা করি, তবে দেখব যে কা'বা একটি কাঠামো, যা পাথর ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে নির্মিত। এর একটি নির্দিষ্ট স্থান এবং আকার রয়েছে। এটি আল্লাহর ইবাদতের জন্য একটি পবিত্র স্থান হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে, যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের আনুগত্য প্রকাশ করে।

অন্যদিকে, মানুষের হৃদয় – এটি কোনো বস্তু নয়। এটি মহান আল্লাহ্ তায়ালার এক বিশেষ সৃষ্টি, যেখানে তিনি স্বয়ং অবস্থান করেন। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, "আমার আকাশ ও পৃথিবী কিছুই আমাকে ধারণ করতে পারে না, কিন্তু মুমিনের হৃদয় আমাকে ধারণ করতে পারে।" (আল-হাদীস আল-কুদসী)।

এই হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি, মানুষের হৃদয় আল্লাহর এক বিশেষ আবাসস্থল। যখন কোনো মুমিনের হৃদয় ঈমান, ভালোবাসা, এবং আল্লাহর স্মরণে পরিপূর্ণ থাকে, তখন সেই হৃদয় আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়। সেই হৃদয় যেন এক জীবন্ত কা'বা, যেখানে সর্বদা আল্লাহর জিকির ও মহিমা ধ্বনিত হয়।

নবী ইব্রাহীম (আঃ) কর্তৃক নির্মিত কা'বা যেমন আল্লাহর ইবাদতের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান, তেমনি প্রতিটি মুমিনের হৃদয় আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি ব্যক্তিগত ক্ষেত্র। বাহ্যিক কা'বার দিকে মুখ করে আমরা যেমন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি, তেমনি আমাদের ভেতরের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করি।

একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, বাহ্যিক ইবাদতের গুরুত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। কা'বা শরীফের সম্মান ও মর্যাদা আমাদের হৃদয়ে সর্বদা অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্তরের দিকেও নজর দিতে হবে। যদি আমাদের হৃদয় কলুষিত থাকে, হিংসা-বিদ্বেষে পরিপূর্ণ থাকে, তাহলে শুধু বাহ্যিক ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা কঠিন।

আমরা আমাদের বাহ্যিক ইবাদতের পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ জগতকে সুন্দর ও পবিত্র করি। আমাদের হৃদয়কে আল্লাহর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করি। কারণ যে হৃদয় আল্লাহর মহব্বতে পূর্ণ, সেই হৃদয় নিঃসন্দেহে হাজার হাজার কা'বার থেকেও উত্তম। এটি মহান আল্লাহর অবস্থানের পথ, যেখানে তিনি সর্বদা বিরাজমান।

আমাদের লক্ষ্য হোক এমন একটি হৃদয় গড়ে তোলা, যা সর্বদা আল্লাহর স্মরণে সজীব থাকে, যা অন্যের কষ্টে ব্যথিত হয় এবং অন্যের সুখে আনন্দিত হয়। এই প্রকার হৃদয়ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং এটাই হল আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ শিখর।


7
মনকে নিজের আয়ত্বে আনুন

মনকে নিজের আয়ত্বে আনুন, এটাই হল আকবরী হজ; হাজার হাজার কা'বা থেকে একটি হৃদয় অতি উত্তম

একটি প্রবাদ যা আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে আলোড়ন সৃষ্টি করে, আমাদের জীবনের লক্ষ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়। সেই প্রবাদটি হলো – "মনকে নিজের আয়ত্বে আনুন, এটাই হল আকবরী হজ; হাজার হাজার কা'বা থেকে একটি হৃদয় অতি উত্তম।"

এই বাক্যটি আপাতদৃষ্টিতে সরল মনে হলেও, এর গভীরতা অসীম। হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়। কা'বা শরীফ মুসলিমদের পবিত্রতম স্থান, যেখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় ছুটে যান। তাহলে কেন একটি হৃদয়কে হাজার হাজার কা'বার থেকেও উত্তম বলা হচ্ছে?

এর কারণ হলো, বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা এবং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হজ একটি শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত, যা আমাদের পাপ মোচনের এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। কিন্তু যদি আমাদের মন কলুষিত থাকে, হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার আর পার্থিব লোভ-লালসায় পরিপূর্ণ থাকে, তাহলে শুধু বাহ্যিক হজের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়।

অন্যদিকে, একটি বিশুদ্ধ হৃদয় আল্লাহর আরশস্বরূপ। যে হৃদয়ে ভালোবাসা, সহানুভূতি, ক্ষমা, এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বিদ্যমান, সেই হৃদয় আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। যখন আমরা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কুপ্রবৃত্তি দমন করতে পারি এবং সৎগুণাবলী অর্জন করতে পারি, তখন আমরা যেন আমাদের অন্তরেই এক পবিত্র কাবা নির্মাণ করি।

আকবরী হজ বলতে এখানে সেই আধ্যাত্মিক যাত্রাকে বোঝানো হচ্ছে, যেখানে একজন মানুষ তার ভেতরের কুপ্রবৃত্তি ও অন্ধকারকে পরাজিত করে আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হয়। এই যাত্রা কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সাধনা।

হাজার হাজার কা'বা প্রদক্ষিণ হয়তো বাহ্যিক দিক থেকে অনেক বড় ইবাদত মনে হতে পারে, কিন্তু একটি বিশুদ্ধ হৃদয় আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসার আবাসস্থল। যে হৃদয় অন্যের কষ্টে ব্যথিত হয়, অন্যের সুখে আনন্দিত হয়, এবং সর্বদা ন্যায় ও কল্যাণের পথে অবিচল থাকে – সেই হৃদয় নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে অধিক মূল্যবান।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহ আমাদের বাহ্যিক রূপ বা সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি আমাদের অন্তরের পবিত্রতা ও ভালোবাসার গভীরতা দেখেন। তাই আসুন, আমরা আমাদের বাহ্যিক ইবাদতের পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ জগতকে পরিশুদ্ধ করার দিকে মনোযোগ দেই।

আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি। লোভ, মোহ, অহংকার, ঘৃণা – এই সমস্ত নেতিবাচক আবেগ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখি। ধৈর্য, সহনশীলতা, ক্ষমা, এবং ভালোবাসার মতো গুণাবলী নিজেদের মধ্যে লালন করি।

যখন আমরা আমাদের মনকে আয়ত্তে আনতে পারব, তখন আমাদের প্রতিটি কাজ ইবাদতে পরিণত হবে। আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস আল্লাহর স্মরণে ভরে উঠবে। তখন আমাদের হৃদয়ই হবে আমাদের আকবরী হজ, এবং সেই পবিত্র হৃদয় নিঃসন্দেহে হাজার হাজার কা'বার চেয়েও উত্তম হবে।

আমাদের অন্তরকে পবিত্র করি, আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করি এবং একটি সুন্দর, সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তুলি।

8
 
🔥 শরাব পান করো, কোরআন পোড়াও, কাবায় আগুন লাগাও, মন্দিরে আস্তানা গাড়ো – কিন্তু মানুষকে কষ্ট দিও না!🔥

আজ আমি আপনাদের সামনে এমন একটি বিস্ফোরক বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি যা হয়তো অনেকের কাছে বিতর্কিত মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে এর গভীরতম সত্য উপলব্ধি করা যায়। কথাটি হলো – তুমি যাই করো না কেন, যত বড় পাপই করো না কেন, এমনকি যদি তুমি ধর্মীয় অনুশাসনও ভেঙে দাও – তবুও কোনো মানুষকে কষ্ট দিও না।

হয়তো শুনে আপনারা চমকে উঠছেন। ভাবছেন, একজন মানুষ কিভাবে এমন কথা বলতে পারে? শরাব পান করা, ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করা, পবিত্র স্থানে আগুন লাগানো – এগুলো তো জঘন্য অপরাধ। হ্যাঁ, বাহ্যিকভাবে দেখলে এগুলো অবশ্যই গর্হিত কাজ। কিন্তু এর পেছনের গভীর অর্থ অনুধাবন করা জরুরি।

🤔 আসুন, আমরা একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করি 🤔

একজন মানুষ যখন মাদকাসক্ত হয়, তখন সে নিজের ক্ষতি করে। যখন সে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, তখন সে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর বিশ্বাসে আঘাত হানে। যখন সে পবিত্র স্থানে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তখন সে অনেকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। কিন্তু এই কাজগুলো মূলত বস্তুগত বা ধারণাগত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।

অন্যদিকে, যখন একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে কষ্ট দেয় – সেটা শারীরিক, মানসিক বা আবেগগত যাই হোক না কেন – তখন সে সরাসরি একটি জীবন্ত আত্মার উপর আঘাত হানে। একটি হৃদয়ের স্পন্দন থামিয়ে দেয়, একটি মুখের হাসি কেড়ে নেয়, একটি জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই কষ্টের দাগ সহজে মোছার নয়।

কোরআন, কাবা বা মন্দির – এগুলো সবই শ্রদ্ধার স্থান, পবিত্রতার প্রতীক। কিন্তু মানুষের জীবন তার থেকেও মূল্যবান। কারণ প্রতিটি মানুষের মধ্যেই সেই মহান স্রষ্টার আত্মা বিদ্যমান। যখন আমরা কাউকে কষ্ট দেই, তখন আমরা প্রকারান্তরে সেই ঐশ্বরিক সত্তাকেই আঘাত করি।

🕊️ ধর্মের মূল শিক্ষা কী? 🕊️

ভালোবাসা, সহানুভূতি, পরোপকার। কোনো ধর্মই মানুষকে ঘৃণা করতে, কষ্ট দিতে শেখায় না। বরং সকল ধর্মই শান্তি ও সহানুভূতির কথা বলে। যদি কোনো ধর্মীয় আচার বা বিশ্বাস মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কারণ হয়, তবে সেই আচার বা বিশ্বাসের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

আসুন, আমরা বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের ভেতরের সত্তাকে সম্মান করি। ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষকে ভালোবাসি। কারণ মানবতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম।

হয়তো কেউ শরাব পান করে নিজের ক্ষতি করছে, হয়তো কেউ ভিন্ন পথে হেঁটে নিজের বিশ্বাস নষ্ট করছে, হয়তো কেউ পবিত্র স্থানের অবমাননা করছে – কিন্তু যদি তারা অন্য কোনো মানুষের ক্ষতি না করে, তবে তাদের বিচার করার অধিকার আমাদের নেই। তাদের কর্মের ফল তারা অবশ্যই ভোগ করবে।

কিন্তু যদি আমরা সামান্যতম কারণেও কোনো মানুষের মনে আঘাত দিই, তার জীবন দুর্বিষহ করে তুলি, তবে তার জন্য আমাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। মানুষের চোখের জল কখনো বৃথা যায় না।

🤝 আসুন, আমরা মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াই 🤝

তাই আজ আমি আহ্বান জানাই – আসুন, আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলি যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি বা ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। যেখানে প্রতিটি মানুষ সম্মানের সাথে বাঁচতে পারে। যেখানে একজন মানুষ তার বিশ্বাস অনুযায়ী চলতে পারে, যতক্ষণ না সে অন্য কারো কষ্টের কারণ না হয়।

মনে রাখবেন, সবচেয়ে বড় ইবাদত হলো মানুষের সেবা করা, সবচেয়ে বড় পুণ্য হলো কারো মুখে হাসি ফোটানো এবং সবচেয়ে বড় পাপ হলো কারো মনে কষ্ট দেওয়া।

ভালোবাসা আর সহানুভূতির বন্ধনে আবদ্ধ হই। এই হোক আমাদের জীবনের মূলমন্ত্র।

আপনারা কি আমার এই ভাবনার সাথে একমত? আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টে জানান। 👇

#মানবতাই_সর্বোত্তম #মানুষকে_ভালোবাসো #কষ্ট_দিও_না #শান্তির_পথে

9

এই মিছে দুনিয়ায় তুমি থাকবে কতদিন?

ফোরামের এই শান্ত সন্ধ্যায়, আসুন আমরা জীবনের এক গভীর সত্য নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবি। এই যে জগত, যেখানে আমরা হাসি, কাঁদি, স্বপ্ন দেখি, অর্জন করি – এই দুনিয়ায় আমরা কতদিন থাকব? একটু থমকে ভাবুন তো।

আমাদের জীবন যেন এক ক্ষণিকের অতিথি। এক পথিক, যে পথ চলতে চলতে কোথাও একটু বিশ্রাম নেয়, আবার গন্তব্যের পানে যাত্রা করে। এই পৃথিবীর চাকচিক্য, এর সম্পদ, এর ক্ষমতা – সবই ক্ষণস্থায়ী। আজ যা আমার, কাল তা অন্যের হতে পারে। কালের স্রোতে সবকিছু ভেসে যায়, ধুয়ে যায়।

আমরা কত মায়া জড়াই এই পৃথিবীর সাথে। সুন্দর বাড়ি, দামি গাড়ি, অগুনতি সম্পর্ক – কত কিছুর পেছনে আমরা ছুটে চলি। কিন্তু একবারও কি গভীরভাবে ভেবে দেখেছি, যখন ডাক আসবে, তখন এসব কিছুই কি সাথে যাবে? এই ধন-সম্পদ, এই আত্মীয়-পরিজন – সবাই তো এই পৃথিবীতেই রয়ে যাবে।

আমাদের জীবনটা একটা পদ্মপাতার জলের মতো। টলমল করছে, একটু বাতাসেই পড়ে যাবে। কখন যে এই নশ্বর দেহের বাঁধন ছিঁড়ে যাবে, তা আমরা কেউই জানি না। অথচ আমরা কত অহংকারে মত্ত থাকি, কত অন্যায় করি, কত মানুষের মনে কষ্ট দেই।

আসুন, আমরা একটু আত্মসমালোচনা করি। এই অল্প সময়ের জীবনে আমরা কী করছি? শুধু কি নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আর ভোগ-বিলাসের পেছনে ছুটছি? নাকি এমন কিছু করছি যা এই পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পরেও টিকে থাকবে?

আমাদের মনে রাখা উচিত, এই জীবন একটা সুযোগ। ভালো কাজ করার সুযোগ, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ, ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়ার সুযোগ। আমরা যদি এই সুযোগ হেলায় হারাই, তাহলে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

আসুন, আমরা এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের গুরুত্ব বুঝি। প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান মনে করি। এমন কিছু কাজ করে যাই, যা আমাদের মৃত্যুর পরেও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে। ভালোবাসা, সহানুভূতি আর সততার আলোয় আলোকিত করি আমাদের পথ।

মনে রাখবেন, এই মিছে দুনিয়ায় আমরা বেশি দিন থাকব না। তাই আসুন, আমরা এমন কিছু করে যাই, যা আমাদের পরকালের পাথেয় হবে। যা আমাদের আত্মাকে শান্তি দেবে।


10

খারাপ সময়ে যখন সব দরজা বন্ধ, তখনো খোলা আল্লাহর রহমতের দুয়ার

জীবনের পথ সবসময় মসৃণ থাকে না। ঝড়-ঝঞ্ঝা, দুঃখ-বেদনা, অভাব-অনটন আমাদের জীবনে নেমে আসতে পারে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, যেন চারপাশ থেকে সব দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আপনজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, বন্ধু-বান্ধব দূরে সরে গেছে, সহায়তার সকল পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। হতাশা আর নিরাশার কালো মেঘ আমাদের আকাশ ছেয়ে ফেলে।

কিন্তু এই ঘোর অন্ধকারেও এক ক্ষীণ আলোর রেখা আমাদের অন্তরে আশা জাগাতে পারে। সেটি হলো মহান আল্লাহ তা'আলার দরজা। মানুষের দরজা হয়তো কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, স্বার্থপরতা, ভয় বা অক্ষমতা তাদের সরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যিনি সর্বশক্তিমান, যিনি দয়াময়, যাঁর রহমতের কোনো সীমা নেই, সেই আল্লাহর দরজা কখনোই তাঁর বান্দাদের জন্য বন্ধ হয় না।

কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
   
"আর যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন বলো, নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

এই আয়াতে আল্লাহ তা'আলা স্পষ্ট ঘোষণা করছেন যে তিনি তাঁর বান্দাদের অতি নিকটে। যখন কোনো বান্দা আন্তরিকভাবে তাঁকে ডাকে, তখন তিনি সেই ডাকে সাড়া দেন। খারাপ সময়ে যখন আর কোনো আশ্রয় থাকে না, তখন আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করাই মুমিনের শান।

কেন আল্লাহর দরজা কখনো বন্ধ হয় না?

অসীম দয়া ও ক্ষমা: আল্লাহ তা'আলার দয়া ও ক্ষমা অসীম। তিনি তাঁর বান্দাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করতে সদা প্রস্তুত। খারাপ সময়ে অনুতপ্ত হয়ে তাঁর কাছে আশ্রয় নিলে তিনি কখনোই ফিরিয়ে দেন না।

সর্বশক্তিমান: তিনি সর্বশক্তিমান। মানুষের সাধ্য সীমিত হলেও আল্লাহর ক্ষমতার কোনো সীমা নেই। কঠিনতম পরিস্থিতিতেও তিনি সাহায্যের হাত বাড়াতে পারেন।

বান্দার প্রতি ভালোবাসা: আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভালোবাসেন। তিনি চান তাঁর বান্দারা কষ্টের সময় তাঁর কাছে সাহায্য চাক এবং তিনি তাদের সেই কষ্ট দূর করবেন।

হতাশ হওয়া নিষেধ: ইসলামে হতাশ হওয়া কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। খারাপ সময়েও আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা রাখা মুমিনের কর্তব্য।

খারাপ সময়ে আমাদের করণীয়:

আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া: যখন সব দরজা বন্ধ মনে হয়, তখন একমাত্র আল্লাহর দিকেই আন্তরিকভাবে প্রত্যাবর্তন করুন।

দু'আ ও কান্নাকাটি: নিজের অসহায়তা আল্লাহর কাছে পেশ করুন, চোখের পানি ফেলে সাহায্য চান। আল্লাহ অবশ্যই শুনবেন।

ধৈর্য ধারণ: খারাপ সময়ে ধৈর্য ধারণ করা ঈমানের পরীক্ষা। বিশ্বাস রাখুন, কষ্টের পরেই শান্তি আসবে।

ক্ষমা চাওয়া: নিজের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। হয়তো আপনার কোনো ভুলের কারণেই এই বিপদ এসেছে।

আশা রাখা: কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না। মনে রাখবেন, রাতের পরেই দিন আসে।

পরিশেষে, আসুন আমরা এই বিশ্বাস রাখি যে খারাপ সময়ে যখন পৃথিবীর সকল দরজা আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তখনও মহান আল্লাহ তা'আলার রহমতের দরজা সবসময় খোলা থাকে। একমাত্র তাঁর কাছেই আমরা প্রকৃত আশ্রয় ও সাহায্য লাভ করতে পারি। তাই আসুন, সকল পরিস্থিতিতে আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করি এবং তাঁর অসীম দয়া ও ক্ষমার ছায়াতলে নিজেদের জীবনকে সমর্পণ করি।

আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে কঠিন সময়ে তাঁর উপর ভরসা রাখার এবং তাঁর সাহায্য লাভের তাওফিক দান করুন। আমীন।


11

ইসলামের আলোকে ভয়ের নিরাময় - আশার আলোয় উদ্ভাসিত জীবন

জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে অজানা আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা আর ভয়ের সম্মুখীন হই। ভবিষ্যতের ভাবনা, প্রিয় হারানোর বেদনা, ব্যর্থতার ভয় - কত না দুশ্চিন্তা আমাদের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। মনে হয় যেন চারপাশ অন্ধকার, আর সামনে এগোনোর কোনো পথ নেই। কিন্তু এই অস্থির সময়ে একটি শান্ত ও দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের হৃদয়ে সাহস যোগাতে পারে - ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

এই বাক্যটি কেবল কয়েকটি শব্দের সমষ্টি নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী মন্ত্র, যা আমাদের মানসিক শক্তিকে জাগিয়ে তোলে এবং আশার আলো দেখায়। যখন ভয় আমাদের গ্রাস করতে চায়, তখন এই বিশ্বাস আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দেয় যে, সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি।

ভয়ের উৎস ও তার মোকাবিলা:

আমাদের ভয়ের প্রধান উৎস হলো অজানা ভবিষ্যৎ এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের পরিস্থিতি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। আমরা সেইসব বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করি যা হয়তো কখনোই ঘটবে না। এই কাল্পনিক ভয় আমাদের বর্তমানের শান্তি কেড়ে নেয় এবং সামনে এগোনোর পথে বাধা সৃষ্টি করে।

ভয়ের মোকাবিলা করতে হলে প্রথমে এর উৎস চিহ্নিত করতে হবে। কোন বিষয়গুলো আমাদের মনে ভীতির সঞ্চার করে? একবার কারণ জানা গেলে, সেই ভয়কে যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, অনেক ভয়ই আমাদের মনের projection, বাস্তবের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই।

ইসলামের আলোকে ভয়ের নিরাময়:

ইসলাম আমাদের ভয় মোকাবিলা করার জন্য শক্তিশালী দিকনির্দেশনা দেয়। একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় হলো আল্লাহ তা'আলার উপর অবিচল বিশ্বাস। কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বলেন:

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

"জেনে রাখো, যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।" (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬২)

যারা আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখে এবং তাঁর পথে জীবন পরিচালনা করে, তাদের কোনো ভয় থাকার কারণ নেই। কারণ আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং তিনি তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের রক্ষা করেন।

ভয় দূর করার উপায়:

আল্লাহর উপর ভরসা: সকল পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। বিশ্বাস করুন, তিনি যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন।

ধৈর্য ধারণ: কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরুন। মনে রাখবেন, কষ্টের পরেই শান্তি আসে।

দু'আ করা: আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। নিজের ভয় ও দুর্বলতার কথা তাঁর কাছে বলুন।

ইতিবাচক চিন্তা: নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করুন।

বর্তমানকে গুরুত্ব দেওয়া: ভবিষ্যতের অজানা ভয় নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বর্তমানে মনোযোগ দিন এবং নিজের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যান।

জ্ঞান অর্জন: জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অনেক অজানা ভয়কে জয় করা যায়। পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

সাহসী পদক্ষেপ: ভয়কে জয় করতে হলে মাঝে মাঝে Comfort Zone থেকে বেরিয়ে এসে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হয়। ছোট ছোট ঝুঁকি নেওয়ার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

প্রকৃতির সান্নিধ্য: প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানো মনকে শান্ত করে এবং ভয় কমাতে সাহায্য করে।

সৎসঙ্গ: ইতিবাচক ও সাহসী মানুষদের সাথে মেলামেশা করুন। তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করুন।

ভয় যখন স্বাভাবিক:

অবশ্য কিছু ভয় স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয়। যেমন - বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার ভয়, অন্যায় কাজের পরিণতির ভয়। এই ধরনের ভয় আমাদের সতর্ক করে এবং ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। কিন্তু যখন অমূলক ভয় আমাদের জীবনকে স্থবির করে দেয়, তখনই তা মোকাবিলা করা জরুরি।

পরিশেষে:

আসুন, আমরা সকলে ভয়কে জয় করার জন্য নিজেদের মনকে প্রস্তুত করি। আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস রাখি এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করি। মনে রাখবেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ মহান আল্লাহ সবসময় আমাদের সাথে আছেন। তাঁর অসীম দয়া ও করুণা আমাদের সকল ভয়কে জয় করতে সাহায্য করবে।

আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে সাহসী ও প্রশান্ত হৃদয় দান করুন। আমীন।


12
তাওবা: ফিরে আসার অনন্ত আহ্বান

আজ আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে আশার আলো দেখাতে পারে, আমাদের ভুলগুলোকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ উন্মোচন করতে পারে। আর সেটি হলো - তাওবা।

তাওবা আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হলো ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, অনুতপ্ত হওয়া। ইসলামী শরীয়তে তাওবা বলতে বোঝায় কোনো ভুল বা পাপ কাজ করার পর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, ভবিষ্যতে সেই পাপ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা এবং সাধ্যমত অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করা।

তাওবা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশাল অনুগ্রহ। মানুষ স্বভাবতই ভুল করে, পদস্খলিত হয়। কিন্তু আল্লাহ চান তাঁর বান্দা হতাশ না হোক, বরং ভুলের অন্ধকার থেকে ফিরে এসে তাঁর রহমতের আলোয় আশ্রয় নিক। তিনি তাওবার দরজা সর্বদা খোলা রেখেছেন।

কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বারবার তাওবার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং তাওবাকারীদের ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন:

وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ

"আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন; এবং তোমরা যা কর, তিনি তা জানেন।" (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ২৫)

অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
 
"হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।" (সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৮)

তাওবার শর্তসমূহ:

একটি গ্রহণযোগ্য তাওবা হতে হলে প্রধানত কিছু শর্ত পূরণ করা জরুরি:

১. অনুতপ্ত হওয়া (নাদামাহ): কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা ও লজ্জিত হওয়া। হৃদয় থেকে অনুভব করা যে কাজটি ভুল হয়েছে এবং এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

২. তাড়াতাড়ি পরিত্যাগ করা (ইক্বলা'): যে পাপ কাজটি করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেওয়া। যদি পাপটি চলমান থাকে, তবে তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।

৩. পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প (আজম): ভবিষ্যতে আর কখনো সেই পাপ কাজটি না করার জন্য মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। শুধু মুখে মুখে বললে হবে না, অন্তর থেকে সেই বিষয়ে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হতে হবে।

৪. অধিকার ফেরত দেওয়া (রাদ্দুল হুকুক): যদি পাপটি অন্য কোনো মানুষের অধিকারের সাথে জড়িত থাকে, যেমন - কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা, কারো মানহানি করা - তাহলে সাধ্যমত সেই অধিকার ফেরত দিতে হবে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

৫. নির্দিষ্ট সময়ে তাওবা করা: তাওবার দরজা সর্বদা খোলা থাকলেও এর কিছু নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। যেমন - মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার আগে এবং সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার আগে তাওবা কবুল করা হয়। এই সময়ের পর তাওবা আর গ্রহণযোগ্য হবে না।

তাওবার তাৎপর্য ও উপকারিতা:

তাওবা আমাদের জীবনে অসংখ্য কল্যাণ বয়ে আনে:

আল্লাহর ক্ষমা লাভ: তাওবার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত লাভ করে। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

পাপ মোচন: খাঁটি তাওবার মাধ্যমে অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়, যেন সেই ব্যক্তি কখনো কোনো পাপই করেনি।

আত্মশুদ্ধি: তাওবা আমাদের অন্তরকে কলুষতা থেকে পরিষ্কার করে এবং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে।

মানসিক শান্তি: অনুশোচনার দহন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।

আল্লাহর নৈকট্য লাভ: তাওবার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর আরও কাছে চলে আসে এবং তাঁর ভালোবাসা অর্জন করে।

জীবনের দিক পরিবর্তন: তাওবা আমাদের জীবনের ভুল পথ থেকে সঠিক পথে ফিরে আসতে সাহায্য করে।

আমাদের করণীয়:

আমাদের সকলের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে তাওবা করতে থাকা। আমরা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে প্রতিনিয়ত ভুল করি। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন নিজেদের ভুলগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সেগুলো আর না করার প্রতিজ্ঞা করা। বিশেষ করে যখন কোনো পাপ কাজ হয়ে যায়, তখন বিলম্ব না করে দ্রুত তাওবা করা উচিত।

আসুন, আমরা সকলে মিলে খাঁটি অন্তরে আল্লাহর কাছে তাওবা করি এবং তাঁর ক্ষমা ও রহমত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করি। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে তাওবা করার এবং সেই তাওবার উপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।


13

বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্ব: প্রকাশ্য ও গোপন জীবনের চালিকাশক্তি

আজ আমি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আলোকিত করতে পারে, আমাদের আমলগুলোকে অর্থবহ করে তুলতে পারে এবং আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিতে পারে। আর সেটি হলো - প্রত্যেক কাজ, কথা এবং প্রকাশ্য-গোপনীয় অবস্থায় নিয়তকে বিশুদ্ধ করা।

নিয়ত আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো সংকল্প, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় বা আকাঙ্ক্ষা। ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের প্রতিটি কাজের বাহ্যিক রূপ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সেই কাজের পেছনের উদ্দেশ্য বা নিয়তও আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى

"নিশ্চয়ই সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।" (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

এই একটি হাদীসই নিয়তের গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কথা এবং এমনকি আমাদের গোপন চিন্তাভাবনারও একটি নিয়ত থাকে। এই নিয়ত যদি বিশুদ্ধ হয়, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হয়, তাহলে সেই কাজ, কথা বা চিন্তাও ইবাদতে পরিণত হতে পারে এবং আল্লাহর কাছে পুরষ্কারের যোগ্য হতে পারে। পক্ষান্তরে, যদি নিয়তে ভেজাল থাকে, লোক দেখানো উদ্দেশ্য থাকে অথবা অন্য কোনো পার্থিব লাভের আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে সেই কাজের বাহ্যিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও তা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে।

প্রকাশ্য জীবনে বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্ব:

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা কিছু করি, যেমন - সালাত আদায় করা, যাকাত দেওয়া, রোজা রাখা, হজ পালন করা, দান-সাদাকা করা, জ্ঞান অর্জন করা, পরিবার ও সমাজের জন্য কাজ করা - এই সমস্ত কাজের নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। যদি আমাদের সালাত লোক দেখানোর জন্য হয়, যাকাত সুনাম অর্জনের জন্য হয়, অথবা দান-সাদাকা পার্থিব কোনো স্বার্থের জন্য হয়, তাহলে সেই আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ   

"তাদেরকে কেবল এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং সালাত কায়েম করবে ও যাকাত দেবে। এটাই সঠিক দ্বীন।" (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫)

অতএব, আমাদের প্রকাশ্য জীবনের প্রতিটি ইবাদত ও সৎকাজের নিয়ত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কোনো প্রকার খ্যাতি, প্রশংসা বা পার্থিব লাভের উদ্দেশ্য যেন আমাদের আমলকে কলুষিত না করে।

গোপন জীবনে বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্ব:

আমাদের গোপন জীবনও আমাদের ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা যখন একান্তে থাকি, তখন আমাদের অন্তরে যে চিন্তাগুলো আসে, আমাদের যে গোপন আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেগুলোরও একটি নিয়ত থাকে। যদি আমাদের গোপন নিয়ত আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়, যেমন - কুচিন্তা করা, হারাম কাজের পরিকল্পনা করা, কারো ক্ষতি কামনা করা - তাহলে এর খারাপ প্রভাব আমাদের আত্মাকে কলুষিত করে।

অন্যদিকে, যদি আমাদের গোপন নিয়ত বিশুদ্ধ হয়, যেমন - একান্তে আল্লাহর যিকির করা, নিজের ভুলত্রুটির জন্য অনুতপ্ত হওয়া, অন্যের জন্য কল্যাণ কামনা করা - তাহলে এর মাধ্যমে আমাদের ঈমান মজবুত হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।

কথা বলার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্ব:

আমাদের প্রতিটি কথারও একটি নিয়ত থাকে। আমরা যখন কারো সাথে কথা বলি, তখন আমাদের উদ্দেশ্য কী? কি উদ্দেশ্যে আমরা সেই কথা বলছি? যদি আমাদের কথা বলার উদ্দেশ্য হয় কাউকে কষ্ট দেওয়া, কারো সম্মানহানি করা, মিথ্যা প্রচার করা অথবা অনর্থক আলোচনা করা, তাহলে সেই কথা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।

পক্ষান্তরে, যদি আমাদের কথা বলার উদ্দেশ্য হয় সত্য বলা, ভালো উপদেশ দেওয়া, মানুষের মাঝে মীমাংসা করা অথবা আল্লাহর যিকির করা, তাহলে সেই কথা সদকাহ হিসেবে গণ্য হতে পারে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِنْ نَجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ ۚ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَٰلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا 

"তাদের অধিকাংশ গোপন আলোচনায় কোনো কল্যাণ নেই; তবে কল্যাণের কথা হলো যে দান-খয়রাত, সৎকাজ অথবা মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার নির্দেশ দেয়। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তা করে, অচিরেই আমি তাকে মহা পুরস্কার দেব।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৪)

অতএব, আমাদের প্রতিটি কথার নিয়ত হতে হবে কল্যাণকর এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে।

নিয়ত বিশুদ্ধ করার উপায়:

নিয়তকে বিশুদ্ধ করা একটি Continuous process। এর জন্য আমাদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে এবং নিজেদের অন্তরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো:

আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া: নিয়তকে বিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত দু'আ করা।

আত্মপর্যালোচনা করা: প্রতিটি কাজ ও কথার আগে নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা।

ইখলাসের গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা: কোরআন ও হাদীসে ইখলাসের ফজিলত এবং রিয়ার (লোক দেখানো) ভয়াবহতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।

সৎসঙ্গ অবলম্বন করা: এমন ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা যারা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ এবং যাদের সংস্পর্শে নিজের নিয়ত বিশুদ্ধ রাখার প্রেরণা পাওয়া যায়।

অহংকার ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করা: নিজের আমল ও জ্ঞানের উপর গর্ব করা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।

গোপনে সৎকাজ করা: লোক দেখানোর প্রবণতা কমানোর জন্য মাঝে মাঝে গোপনে এমন কিছু সৎকাজ করা যা অন্য কেউ জানে না।

পরিশেষে, আসুন আমরা সকলে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে - প্রকাশ্য ও গোপনে, কথা ও কাজে - নিয়তকে বিশুদ্ধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। একমাত্র বিশুদ্ধ নিয়তই আমাদের আমলগুলোকে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে এবং আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে শান্তি ও সফলতা এনে দিতে পারে।

আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।


14

অন্ধকার রাতের ন্যায় একের পর এক ফিতনায় ছেয়ে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী………………।

অন্ধকার রাতের ন্যায় একের পর এক ফিতনায় ছেয়ে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবীর সাদাসিধে আপন মানুষগুলি। চোখ ধাঁধানো ফিতনার আক্রমণে আমরা হারিয়ে ফেলছি সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকরণ ক্ষমতা। কারা আল্লাহর বন্ধু (ভাল মানুষ) আর কারা শয়তানের বন্ধু (খারাপ মানুষ), তা চিহ্নিত করতে গিয়ে ধোঁকায় পতিত হচ্ছি আমরা। আমরা আজ শয়তানের দোসরদের আল্লাহর বন্ধু ভাল মানুষ ভেবে বসি, আর আল্লাহর বন্ধুদের অর্থাৎ ভাল মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হই। আজ থেকে শত শত বছর পূর্বে মহান আল্লাহ তায়ালা এই ফিতনার মোকাবিলায় একটি কালজয়ী গ্রন্থ আল-কুরান রচনা করে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাজিল করেছেন।

এই ‘আল-কুরকানে বাইনা আউলিয়া-উর-রহমান ওয়া আউলিয়া-উশ-শাইত্বান’ নামের সেই মানুষগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আলোচনা করেছেন কারা আল্লাহর বন্ধু আর কারা শয়তানের বন্ধু। ঠিক কোন কোন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলে একজন ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু ভাল মানুষ হয়ে ওঠে, আর কোন কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে একজন ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু খারাপ মানুষ হয়ে যায়, কিন্তু আমরা বুঝবো কি করে! আমরাতো কুরআনের ব্যাখা বিশ্লেষণ জানিনা। তাহলে উপায় কি? ঘোর অমানিশার এই সময়ে আপনার উচিৎ আপনার জীবনকে পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন দ্বীনদার জ্ঞানী অভিভাবক নিযুক্ত করা। আপনার যে কোন ভাল-মন্দ উনার কাছে শেয়ার করবেন আর তিনি আপনাকে দুনিয়ার খারাপ মানুষের ফেতনা থেকে কিভাবে বাঁচা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিবেন। আল্লাহ যদি চান তাহলে এভাবে এক সময় আমরা আল্লাহর বন্ধু আর শয়তানের বন্ধু চিহ্নিত করার বেশ কিছু সূত্র জানতে পারব ইনশা আল্লাহ। অন্যথায় আপনি দুনিয়ার বহুরুপী খারাপ মানুষের পালায় পরে নিজে পথ ভ্রষ্ট হবেন এবং দুনিয়ার ভালো মানুষের সান্নিধ্য হারাবেন। দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জগতেই আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

তাই আমার পরামর্শ বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন। সাহায্যকারী, হেল্পিহ্যান্ড, অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ আপনার সাথী হতে পারে আপনার দুনিয়া ও পরকালের পার হওয়ার কারণ। আবার হতে পারে জীবনের চরম অশান্তি, কষ্ট, ব্যর্থতা, জাহান্নামের কারণ। যেমন একটি নেশাখোর বন্ধু আপনাকে শুধু সিগারেট টানতে আর মদ খেতে ডাকবে। সে আপনাকে তার কাজে লিপ্ত করবে। আর একজন দ্বীনদার ভাল মানুষ আপনাকে ভাল পরামর্শ দিয়ে কুরআন শিক্ষায় উৎসাহিত করবে। আপনার হাশর, মিযান,পুলসিরাত সহজ করে দিবে।

একজন ভালো বন্ধু ভাল মানুষ একটা দুনিয়ার সমান।
🌺🌺🌺


15
Hadith / হাদীস নং ৩১
« on: November 20, 2024, 12:17:03 PM »
হাদীস নং ৩১

স্মার্ট মানুষ মাত্রই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। তা ছাড়া পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ

অর্থঃ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা হল ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম,২২৩;মুসনাদু আহমাদ,২২৯০২)

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও হাদিসে নির্দেশনা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা লানতকারী (অভিশাপে আক্রান্ত হতে হয় এমন) দুইটি কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল, লানতকারী কাজ দুইটি কী তিনি বলেন, যে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (আবু দাউদ ২৫, মুসনাদ আহমদ ৮৮৫৩)

বন্ধুরা, তোমরাও সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। তা হলে তোমাদের শরীর-মন সবকিছুই ভালো থাকবে ইনশা আল্লাহ।

Pages: [1] 2 3 ... 16