Recent Posts

Pages: 1 ... 3 4 [5] 6 7 ... 10
41
পাঁচ বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের তুলা কিনেছে বাংলাদেশ

তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। দেশীয় উৎপাদন একেবারেই নগণ্য হওয়ায়, প্রায় শতভাগ তুলাই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) বাংলাদেশ ৩৬টি দেশ থেকে ৩৯ দশমিক ৬১ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করেছে, যার ব্যয় প্রায় ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে কৃষিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিকস (বিএই) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছরই তুলা আমদানি ও ব্যয়ের অঙ্ক উল্লেখযোগ্য, যদিও বছরভেদে কিছুটা ওঠানামা রয়েছে।

বছরভিত্তিক তুলা আমদানির চিত্র

২০২০ সালে ৬.৫২ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছিল ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। পরের বছর ২০২১ সালে আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ১০.০৮ মিলিয়ন বেলে, ব্যয় হয় ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে ৮.৩৭ মিলিয়ন বেল হলেও মূল্য দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৫.০৪ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে তুলা আমদানি আরও কমে ৬.২৬ মিলিয়ন বেলে নেমে এলেও, ২০২৪ সালে তা আবার বেড়ে পৌঁছায় ৮.৩৮ মিলিয়ন বেলে। এই বছর তুলা আমদানিতে ব্যয় হয় ৩.৯২ বিলিয়ন ডলার।

তুলা আমদানির প্রধান উৎস

প্রধান উৎস আফ্রিকা

তুলা আমদানির ক্ষেত্রে আফ্রিকা এখন বাংলাদেশের প্রধান উৎস। এছাড়া বেনিন, মালি, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, ঘানা ও কেনিয়া থেকে মোট ১৬.৩২ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করা হয়েছে, যার মূল্য ৮.১৬ বিলিয়ন ডলার— মোট আমদানির প্রায় ৪১ শতাংশ। আফ্রিকার তুলা মানসম্মত, সহজলভ্য এবং তুলনামূলক কমদামে পাওয়া যায়— যার ফলে বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলো এই উৎসের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।

দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ভারত

পাঁচ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৯.৫২ মিলিয়ন বেল তুলা, যার বাজারমূল্য ৪.৮৩ বিলিয়ন ডলার। ভারতীয় তুলা বাংলাদেশের মোট তুলা আমদানির প্রায় ২৪ শতাংশ।

ভৌগোলিকভাবে কম দূরত্ব, স্থলবন্দরের সুবিধা (বেনাপোল, ভোমরা) ও দ্রুত সরবরাহ ভারতীয় তুলাকে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎসে পরিণত করেছে। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “তৈরি পোশাক শিল্প একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজার। এখানে অনেক সময় মাত্র এক-দুই সেন্টের পার্থক্যেই ক্রয়াদেশ হারাতে হয়। তাই কারখানাগুলোর টিকে থাকতে হলে সুতা প্রতিযোগিতামূলক দামে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। দেশি সুতা ব্যবহার অবশ্যই করবো, তবে তা যেন মানসম্পন্ন ও মূল্যসাশ্রয়ী হয়— সেটাই মূল কথা।”

তিনি আরও বলেন, “স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ হওয়ার পর দেশি মিলগুলোর অনেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনও তদারকি নেই। ফলে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে সুতা কিনছেন। এর ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হুমকির মুখে পড়ছে।”

যুক্তরাষ্ট্র: উচ্চমানের তুলার উৎস

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ বছরে ২.৮৪ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১.৮৭ বিলিয়ন ডলার— মোট আমদানির ৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার মান উচ্চতর এবং ফাইবার স্ট্যাপল দীর্ঘ হওয়ায় এটি মূলত বড় মিল ও স্পেশাল রফতানির কাজে ব্যবহৃত হয়।

অস্ট্রেলিয়া ও সিআইএস দেশগুলো

অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত তুলার পরিমাণ ২.২৪ মিলিয়ন বেল, মূল্য ১.১৬ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ সিআইএস দেশগুলো থেকে ০.৭৯ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

অন্যান্য উৎস দেশ

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চীন, কানাডা, গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে মোট ৭.৯ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ৩.৮৭ বিলিয়ন ডলার—মোট আমদানির প্রায় ১৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে ছাড়ের সম্ভাবনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তুলাভিত্তিক পোশাক রফতানিতে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, কোনও পোশাক পণ্যে যদি অন্তত ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল থাকে, তবে সেই অংশের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।

তিনি বলেন, “আমরা যদি ইউএস কটন বা কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করি, তাহলে ওই অংশে শুল্ক ছাড় পাওয়া যেতে পারে।”

বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ডলারের সুতা আমদানি করে। বিজিএমইএ মনে করে, এই আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নেওয়া গেলে রফতানিকারকরা উল্লেখযোগ্য শুল্কছাড় পেতে পারেন।

বিশ্বের শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশের পথে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর ইউএসডিএ’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় তুলা আমদানিকারক দেশে পরিণত হবে। এ সময় ৮৪ লাখ বেল তুলা আমদানি করা হবে, যা বৈশ্বিক তুলা বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশ।

তুলা ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ অবস্থানে। চীন, ভারত ও পাকিস্তানের পরেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এখানে বছরে ব্যবহৃত হচ্ছে ৮৫ লাখ ৫০ হাজার বেল তুলা।

তুলার বিপুল আমদানির পেছনে কারণ

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৮৪৯টি স্পিনিং মিল রয়েছে, যাদের তুলার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। চীনের তৈরি পোশাক ও কাপড় উৎপাদনে কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে অনেক বিদেশি ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশমুখী, যার ফলে তুলার আমদানিও বাড়ছে।

তবে তুলা উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মাত্র ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১.৫৩ লাখ বেল তুলা উৎপাদিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে তুলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই খরচ হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই এই ব্যয় ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে তুলা উৎপাদন বাড়ানো গেলে এই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে বছরে একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতো।

তুলা উৎপাদন বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা

তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ লাখ বেল এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১৯ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল ও চরের জমিকে তুলা চাষের আওতায় আনলে উৎপাদন ২০ লাখ বেল পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব বলে ইউএসডিএ মনে করছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তুলা আমদানির পরিমাণ এখন শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের এক বড় প্রতিচ্ছবি। স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং উৎসভেদে কৌশলগত বৈচিত্র্য আনাই হতে পারে এ খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি।

Source: https://www.banglatribune.com/business/news/910310/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%9A-%E0%A6%AC%E0%A6%9B%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A7%A8%E0%A7%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A8-%E0%A6%A1%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6
42
অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম

গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ‘অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম?’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। সেই সেমিনারের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে লেখাটি লেখা হয়েছে। কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে লেখাটা প্রকাশ করা হলো।


জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তার অন্যতম প্রধান অংশ জুড়ে ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মুক্তি, চিন্তার স্বাধীনতা, জ্ঞানচর্চার স্বায়ত্তশাসন এবং সত্যিকারের মানুষ গড়ার আঙিনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা। আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন এক ব্যবস্থার, যেখানে দলীয় লেজুড়বৃত্তি, প্রশাসনিক স্বৈরাচার ও বাণিজ্যিক মুনাফার ঊর্ধ্বে থাকবে শিক্ষা ও গবেষণার আদর্শ; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পেরিয়ে আমরা কী দেখছি? আমরা কি সত্যিই কোনো পরিবর্তন পেয়েছি?

তথ্য-উপাত্ত বলছে, আমরা কেবল কিছু ‘নিয়ন্ত্রক’ পরিবর্তন করেছি, কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাটিকেই ভাঙতে পারিনি। শীর্ষস্থানীয় কিছু মুখ বদল হয়েছে; ভেতরের গতানুগতিক কায়দার শিক্ষা-গবেষণা, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ও দমনমূলক কাঠামোটি রয়ে গেছে আগের মতোই।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান সংকট বুঝতে হলে শিক্ষাবিদ হেনরি গিউরোর একটি পর্যবেক্ষণ আমাদের পথ দেখাতে পারে। তিনি দেখান যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ‘নিরীক্ষা-সংস্কৃতি’ (অডিট কালচার) নামে এমন এক রীতি চালু হয়েছে, যেখানে সবকিছুর বিচার হয় সংখ্যা বা ম্যাট্রিক্স দিয়ে। এই সংখ্যা-নির্ভরতার ফলে সৃজনশীলতা ও মৌলিক চিন্তা গুরুত্ব হারায়। কারণ, যা পরিমাপ করা যায় না, তাকে মূল্যহীন ভাবা হয়।

গিউরো এই ব্যবস্থাকে একটি বদ্ধ খাঁচা বা অদৃশ্য কারাগারের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মূল দায়িত্ব অর্থাৎ অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার সাহস জোগানো থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। গিউরোর এই পর্যবেক্ষণ সামনে রেখেই আমরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করব।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: নতুন মোড়কে পুরোনো ‘স্বৈরাচার’

জুলাই জাগরণের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফ্যাসিবাদী আমলের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা থেকে মুক্ত করা; কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার একেকটি উপশাখা হয়েই রয়ে গেছে। উপাচার্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ বা প্রক্টরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে এখনো দলীয় আনুগত্য ও ব্যক্তিগত পছন্দই মূল মানদণ্ড হিসেবে কাজ করছে, যা আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের বিকাশ তো দূরের কথা, ক্যাম্পাসগুলোতে একমুখী স্বৈরাচারী ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যের হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকার যে সংস্কৃতি, তা আজও বদলায়নি। আর পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসনের নামে যা চলছে, তা মূলত ‘সরকারদলীয় শিক্ষকদের’ বা ‘সম্ভাব্য সরকারদলীয় শিক্ষকদের’ আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হয়েই রয়েছে। ভিন্নমত দমন করার প্রবণতা কমেনি।

দেশে সার্বিকভাবে ডানপন্থী উগ্রবাদের উত্থান এবং নারীবিদ্বেষী দমনমূলক পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে, যার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়েও এসে পড়ছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নীরব সম্মতি হিসেবেই প্রতিভাত হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও উচ্চশিক্ষার মতো একটি মৌলিক খাত নিয়ে কোনো শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। ফলে নিয়োগ থেকে শুরু করে ভর্তিপ্রক্রিয়া, আবাসন–সংকট থেকে ছাত্ররাজনীতি—সব ক্ষেত্রেই পুরোনো অনিয়মগুলোই ভিন্ন চেহারায় ফিরে আসছে।

কী চেয়েছিলাম: দলীয় রাজনীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসিত একটি ব্যবস্থা, যেখানে উপাচার্য থেকে শুরু করে সব প্রশাসনিক পদে নিয়োগ হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও যোগ্যতার ভিত্তিতে, দলীয় আনুগত্যে নয়। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। গেস্টরুম সংস্কৃতি, র‍্যাগিং ও সরকারি ছাত্রসংগঠনের দমনমূলক রেজিমেন্টেশনের অবসান হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘সরকারি চাকরির প্রস্তুতিকেন্দ্র’–এর পরিবর্তে জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়বে এবং দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে তা বণ্টন করা হবে। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের অপব্যবহার রোধে সংস্কার এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগুলোকে গণতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসনের আলোকে ঢেলে সাজানো হবে।

কী পেলাম: উপাচার্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ বা প্রক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে এখনো দলীয় আনুগত্য ও ব্যক্তিগত পছন্দই মূল মানদণ্ড। শিক্ষক নিয়োগেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি বা পরিবর্তন হয়নি; বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে।

প্রতিবাদী কণ্ঠকে পরিকল্পিতভাবে স্তব্ধ করে দেওয়ার আয়োজন চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌক্তিক প্রতিবাদের জবাবে ছাত্রীদের বহিষ্কার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে মনীষীদের নাম মুছে ফেলা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক চক্রান্তের মাধ্যমে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা প্রমাণ করে যে নিপীড়নের কাঠামোটি কতটা শক্তিশালী।

বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে কোনো কার্যকর উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। সরকার বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও উচ্চশিক্ষার মতো একটি মৌলিক খাত নিয়ে কোনো শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজন অনুভব করেনি। ফলে কাঠামোগত সংকটগুলো আগের মতোই বর্তমান। কোনো ধরনের আইনি বা কাঠামোগত সংস্কারের বিন্দুমাত্র লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা এবং প্রশাসনের একচ্ছত্র আধিপত্য আজও অটুট, যা আদতে একটি নতুন স্বৈরাচারী ব্যবস্থারই পুনঃপ্রবর্তন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: মুনাফার মডেলে কোনো আঘাত আসেনি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রধান অভিযোগ ছিল যে এগুলো মুনাফাকেন্দ্রিক ‘সার্টিফিকেট বিক্রির ভবনে’ পরিণত হয়েছে। গবেষণার দিকটি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অনুপস্থিত। আশা ছিল, নতুন বাস্তবতায় এই নয়া উদারবাদী মডেলকে চ্যালেঞ্জ করা হবে, শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে দেখার মানসিকতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসব; কিন্তু এখানেও আমরা পেয়েছি কেবলই হতাশা।


কী চেয়েছিলাম: শিক্ষাকে মুনাফার ঊর্ধ্বে রাখা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য যৌক্তিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ফি কাঠামো এবং শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত বেতন ও চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। খণ্ডকালীন শিক্ষকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পূর্ণকালীন, স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হবে, যা শিক্ষার মান ও গবেষণার পরিবেশ উন্নত করবে। মাতৃভাষায় পাঠদান এবং গবেষণার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক হীনম্মন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া। গবেষণা, বিশেষ করে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্রে পরিণত হওয়া।

কী পেলাম: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো মুনাফাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচালিত হচ্ছে। ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’-এর অধীন ইউজিসির আমলাতান্ত্রিক খবরদারি রয়ে গেছে; কিন্তু চিন্তার স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসনের কোনো রক্ষাকবচ তৈরি হয়নি। ফি এবং বেতনের বৈষম্য আগের মতোই প্রকট। খরচ বাঁচাতে খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের প্রবণতা এখনো প্রবল। এর ফলে শিক্ষকেরা যেমন ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও একজন স্থায়ী মেন্টরের নিবিড় তত্ত্বাবধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি অতি নির্ভরশীলতা এবং বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার অবমূল্যায়ন আগের মতোই চলছে, যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইংরেজির ওপর দখল দুর্বল।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি): নিয়ন্ত্রক না নিয়ন্ত্রিত?

কী চেয়েছিলাম: আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত একটি সত্যিকারের স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, ইউজিসি নিজেই তার কার্যক্রম, তহবিল ও নীতি নির্ধারণে সক্ষম হবে এবং এর ভেতরেই স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও সাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম এমন একটি প্রতিষ্ঠানের, যার নিয়োগপ্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক; যেখানে স্বজনপ্রীতি বা রাজনৈতিক আনুগত্যের বদলে উচ্চশিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ ও নিবেদিতপ্রাণ পেশাদারেরাই নিয়োগ পাবেন। সর্বোপরি, আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি ইউজিসি, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর আমলাতান্ত্রিক বোঝা না হয়ে; বরং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন কেন্দ্র করে একটি সহায়ক ও গতিশীল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করবে।

কী পেলাম: বাস্তবে আমরা যা পেয়েছি, তা হলো পুরোনো ব্যবস্থারই একটি অচলায়তন। ইউজিসি আজও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান, যার কার্যক্রম ও তহবিলের জন্য পুরোপুরি আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। এটি একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বদলে মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত অংশ হিসেবেই রয়ে গেছে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও অনুসারীতোষণের সংস্কৃতি বদলায়নি, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি জনবলের তীব্র অভাব ও অদক্ষ কর্মশক্তিতে ভুগছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করার বদলে ইউজিসি নিজেই একটি ‘আমলাতান্ত্রিক দুঃস্বপ্নে’ পরিণত হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ‘লাগামহীন খবরদারি’ করে; কিন্তু তাদের মানোন্নয়ন বা সংকট নিরসনে কোনো কার্যকর ও যুগোপযোগী সংস্কার আনতে পুরোপুরি ব্যর্থ।

পরিমাপের সংস্কৃতি ও অবিকশিত বিশ্ববিদ্যালয়

ওপরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাকের বাইরেও পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে। যেমন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানি করা র‍্যাংকিং প্রতিযোগিতা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি বিভাগ র‍্যাঙ্কিংয়ে ওঠানামা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।

এই র‍্যাঙ্কিংগুলোতে গবেষণার গুরুত্ব অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিসার্চ এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। এসবই ভালো উদ্যোগ। কারণ, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মপরিধির মধ্যে গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়; কিন্তু যেসব বিষয় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তবে র‍্যাঙ্কিং পরিমাপে গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেই বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

ক্লাসরুম শিক্ষার মান একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই মান জানার সবচেয়ে প্রচলিত যে পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সেটিই চালু হয়নি। সত্যি বলতে শিক্ষার মান–সংক্রান্ত কোনো ধরনের জবাবদিহির মুখোমুখি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা হন না। সেই সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন এবং খাদ্যের মান বেশ নিম্নমানের; কিন্তু এই বিষয়গুলো যেহেতু র‍্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই এগুলোর উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাস এবং নিপীড়ন অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। আওয়ামী রেজিমের পতনের পর খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই দু–দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন আগের রেজিমের মতোই অপ্রকাশিত রয়ে গেছে কিংবা তদন্তকাজের কোনো অগ্রগতি নেই। কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলা হয়েছে। এসব ঘটনা বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং তো দূরের কথা, কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যাওয়ার কথা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণভাবে এ ধরনের সন্ত্রাস ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত থাকলেও সেখানে বেশ গুরুতর সমস্যা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মানের দিক থেকেও বেশ বড় বিভাজন রয়েছে। ওপরের দিক থেকে চার-পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় মোটামুটি মান ধরে রাখলেও তারপরের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী চলছে, তা নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন।

গিউরোর যে কথাগুলো দিয়ে আমরা আমাদের বক্তব্য শুরু করেছিলাম, তা–ই যেন আমাদের বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিচ্ছবি। অভ্যুত্থানের পরেও আমরা সেই ‘অডিট সংস্কৃতি’ থেকে বের হতে পারিনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ‘ভোটার’ নিয়োগ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুনাফার হিসাব—উভয় ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতা বা গভীর জ্ঞানের চেয়ে পরিমাপযোগ্য ‘পারফরম্যান্স’ মুখ্য। পাসের হার, প্রকাশনার সংখ্যা (মান যা–ই হোক), ভর্তি পরীক্ষার এমসিকিউর নম্বর—এসব সংখ্যা দিয়ে আমরা জ্ঞানকে পরিমাপ করতে চাইছি।

এ রকম ব্যবস্থা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি বদ্ধ খাঁচায় পরিণত করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নজরদারির অধীন থাকেন এবং শিক্ষকেরা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ভয়ে থাকেন। আমরা হয়তো কয়েকজন ‘কারারক্ষী’কে পরিবর্তন করেছি; কিন্তু ‘কারাগারের দেয়াল’, পরিমাপের শৃঙ্খল এবং নিয়ন্ত্রণের দর্শন—সবই আগের মতো রয়ে গেছে।

এ ব্যবস্থা দিয়ে হয়তো তথ্য দেওয়া যায়; কিন্তু জ্ঞান সৃষ্টি করা যায় না। এই কাঠামো দিয়ে হয়তো চাকরিজীবী তৈরি করা যায়; কিন্তু ন্যায়বিচার ও সাম্যের স্বপ্ন দেখতে সক্ষম মুক্তচিন্তার নাগরিক তৈরি করা যায় না। জুলাই জাগরণের স্বপ্ন ছিল এই কারাগার ভাঙার, কিন্তু আমরা এখনো সেই ভাঙনের কোনো বাস্তব রূপ দেখতে পাচ্ছি না।

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/mq2hqq3qex
43
ওবিই শিক্ষাক্রমের সমস্যা কোথায়, সমাধান কী


বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কয়েক বছর আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ শিক্ষাক্রম প্রস্তাব করে। এর নাম দেওয়া হয় আউটকাম বেজড এডুকেশন, সংক্ষেপে ওবিই। ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী বর্তমানে দেশের প্রায় সব কটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওবিইভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ওবিই প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ব্যাহত হওয়ার সমূহ কারণ রয়েছে।

 প্রথম কথা, ওবিইকে শিক্ষাক্রম বলা হলেও তা পুরোপুরি শিক্ষাক্রম নয়। এটি বিদ্যমান সিলেবাসকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার টেমপ্লেট বা কাঠামোমাত্র। ফলে আগের সিলেবাসে যদি সমস্যা থেকে থাকে, তবে নতুন কাঠামোতেও সমস্যা রয়ে যাবে। উচ্চশিক্ষার মৌলিক পরিবর্তন এভাবে আশা করা যায় না। দ্বিতীয়ত, সিলেবাস তৈরি করার আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যেসব সিলেবাস চালু রয়েছে, তা প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে তৈরি হয়নি। ফলে ওবিই নাম দিয়ে সিলেবাসের কাঠামোয় বদল আনা হলেও তাতে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।

আমরা বরাবরই বলে আসছি, সিলেবাস তৈরির আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা জরুরি। এ কাজে বিষয়-বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি শিক্ষাক্রম-বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করতে হবে। ইউজিসি উচ্চশিক্ষার মান বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তা করছে, ভালো কথা। কিন্তু মুশকিল হলো তারা পুরোনো সিলেবাসকে নতুন কাঠামোয় ফেলে সমাধান আশা করছে। ওবিই টেমপ্লেট অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে তাদের নিজ নিজ বিভাগের সিলেবাস সাজিয়েছে। অর্থাৎ আগের সিলেবাসই নতুন কাঠামো বা চেহারায় হাজির হয়েছে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপযুক্ত মূল্যায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কারণ, এখানে ত্রুটি রয়ে গেলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে না

এর আগে ওবিই শিক্ষাক্রমের কাঠামো বোঝানোর জন্য ইউজিসি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সেই প্রশিক্ষণেও যে ঘাটতি রয়ে গেছে, এটি বোঝা যায় বিভাগগুলোর সিলেবাসের দিকে তাকালেই। পরীক্ষার কাজে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি, সেসব কাঠামোর মধ্যে সমরূপতা নেই। শিক্ষাক্রম সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষকদের ধারণা না থাকার কারণে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে এটি ঠিকমতো বুঝেও উঠতে পারেননি।

সিলেবাসের আগে শিক্ষাক্রম কেন প্রণয়ন করতে হবে, সেটি বোঝা দরকার। শিক্ষাক্রম মূলত পদ্ধতি ও কাঠামোগত পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও মূল্যায়নের পদ্ধতি কেমন হবে, সেটি শিক্ষাক্রমে উল্লেখ থাকে। তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক শিক্ষার একেকটি স্তরে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও দক্ষতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। সেই লক্ষ্যমাত্রার সূত্র ধরেই পরে বিষয় অনুযায়ী সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম রচিত হয়।

এই লক্ষ্যমাত্রাকেই অন্যভাবে বলা যায় শিখনফল, ইউজিসি যাকে বলছে আউটকাম। উচ্চশিক্ষার স্তরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে যদি আগেই সিলেবাস তৈরি করা হয়, তবে তাকে কীভাবে আউটকাম বেজড এডুকেশন বলা যাবে?

আমাদের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে কিছু বিষয় বা কনটেন্ট রয়েছে কেবল। সেগুলো শিক্ষাক্রমের কোন লক্ষ্যকে বিবেচনায় রেখে করা, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, আদতে কোনো বিভাগেরই শিক্ষাক্রম নেই। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। সেই শিক্ষাক্রমের দুটি অংশ থাকবে।

একটি অংশে সামগ্রিক উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি ও কাঠামো কেমন হবে, সেটি বলা হবে। সেখানে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষাদানের পদ্ধতি, শ্রেণি কার্যক্রম, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধরন, পরীক্ষার পদ্ধতি ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। সেমিস্টারের পরিসর কত মাসের হবে, একেকটি কোর্স কত ক্রেডিটের হবে, অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য কত নম্বর থাকবে, ফলাফল জিপিএ বা নম্বর কিসের ভিত্তিতে হবে—এগুলোরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। আরও নির্দেশ করতে হবে অ্যাসাইনমেন্ট, শ্রেণি-উপস্থাপনা, কুইজ, উপস্থিতি, মিডটার্ম ইত্যাদির জন্য নম্বর বরাদ্দ থাকবে কি না, থাকলে তা শতকরা কত ভাগ হবে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি অংশে বিষয় বা বিভাগ অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশিত থাকবে। সে কাজ বিভাগগুলোকে আলাদাভাবে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকেরাই ঠিক করবেন, ওই বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হলে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার কী রূপান্তর ঘটবে। এটি না থাকার দরুন সমস্যা কী হয়, তা তো দেখাই যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও বিষয়গত জ্ঞান ও দক্ষতায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

ইউজিসি যদি আসলেই ‘শিখনফলভিত্তিক’ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে চায়, তবে নামে ‘ওবিই’ রাখলেই হবে না। আসলেই শিক্ষাক্রমকে ফলদায়ক করে তুলতে হবে। এ জন্য পুরোনো সিলেবাসকে নতুন মোড়ক দেওয়ার এই প্রকল্প নিয়ে আর এগোনো ঠিক হবে না; বরং আগে শিক্ষাক্রম-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি ও কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। এরপর বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে স্তর অনুযায়ী ওই বিষয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক করার। পরে সেই অনুযায়ী নতুন করে সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপযুক্ত মূল্যায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কারণ, এখানে ত্রুটি রয়ে গেলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে না। সিলেবাস তৈরি করার আগে মূল্যায়নের পদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবা দরকার। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়নের বিকল্প উপায় রাখতে হবে।

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/0nhups0xdx
44
Introduction


This pack synthesizes key insights from Chairman Sir speech at the Entrepreneurs Gala Night 2025. It focuses on entrepreneurship, personal growth, networking, resilience, and mindset. Designed for Entrepreneurship Department students and teachers at Daffodil University, it provides actionable wisdom in a concise format. Use this as a self-study resource or training module to internalize these principles, reducing the need for repeated discussions and respecting time efficiency.
Core Philosophy: Opportunities are inevitable but unpredictable. Maintain a positive mindset, pure intentions ("niyat"), and ethical behavior. Every interaction is a potential door—treat it with respect and openness.

Key Principles (These foundational ideas form the backbone of entrepreneurial success.)
1. Embrace Opportunity & Positive Mindset: Opportunities will come, though timing is unknown ("Opportunity কখন আসবে আমরা কেউ জানি না। বাট অপরচুনিটি আসবেই।"). Believe in divine planning: every encounter may be pre-ordained. Stay positive—negativity or one bad action can derail destiny, while positivity attracts rewards. Pure intention ("niyat") is key; it's the first thing accepted by the Creator.
2. Networking & Relationship Building: Build wide networks early (e.g., with university batchmates). Never underestimate anyone—treat all as potential opportunities. Maintain contacts; their value may emerge later. Seek unfamiliar interactions for growth.
3. Etiquette & Behavior: Good manners create lasting impressions. Even minor lapses (e.g., sitting without asking) signal poor culture. One negative act can outweigh 90 positive ones. Always be polite, humble, and proactive.
4. Big Dreams with Step-by-Step Execution: Dream big (aim for the roof) but progress gradually (climb stairs, not jump). Balance ambition with calculated risks using earned capital—avoid debt or public obligations.
5. Resilience & Integrity: View setbacks as divine mysteries. If honest and non-deceptive, losses will lead to greater gains. "If you don't cheat anyone, you will never be cheated." Move forward without revenge or demotivation.
6. Family Confidence & Self-Marketing: Convince parents first—they're your "softest corner." Demonstrate accountability, humility, and vision (e.g., symbolically acknowledge their sacrifices). If you can't market to family, you can't lead in business.
7. Motivation & Stress Management: "Always be positive"—change your demeanor to change your life. Faith in justice reduces stress. Focus on integrity; rewards follow pure actions.

Practical Strategies (Apply these in daily life, social settings, and business.)

Networking in Events/Dining: Sit with strangers to expand connections. Introduce yourself immediately (name + business card). Ask permission before sitting. Know basics (e.g., right-hand glass is yours). At public Q&A, introduce yourself even if just to appreciate—make your presence known.
Handling Interactions: Engage everyone patiently, even if irritating—divine equations may be at play. Save contacts; call when opportunities arise.
Convincing Family: For middle/lower-middle-class backgrounds, "roar like a tiger" with confidence. Humbly address fears: "Hit me if I fail to explain." Prove reliability through household help and clear plans.
Risk-Taking: Start small; use personal funds. Accept 1-in-10 success rate—learn from failures.
Daily Habits: Build networks from school/college. Attend diverse events (e.g., mosques, dinners) as networking hubs. Stay open in travel/meetings.

FAQ: Common Questions & Answer (Quick-reference for key queries.)
1. How to stay motivated amid setbacks? Maintain positivity and integrity. View losses as divine lessons; move forward trusting rewards will come.
2. Why prioritize etiquette in interactions?It opens doors—poor behavior closes them. Every encounter could change destiny; one lapse has outsized impact.
3. Big dream vs. step-by-step? Have the vision but execute incrementally to avoid failure. Like stairs to a roof.
4. Convincing risk-averse families? Build confidence via actions and humility. Parents' support is foundational—if you can't convince them, rethink leadership.
5. Networking with strangers? Be proactive: introduce, exchange cards, engage. Sit unknown tables; never dismiss anyone.
6. Role of intention ("niyat")? Pure heart ensures divine acceptance. Like AI responding to commands—Creator knows true motives.
7. Handling irritating people? Be patient; they may be pre-destined opportunities. Engage briefly—could lead to breakthroughs.

Glossary
Opportunity: Favorable chance from interactions; always imminent.
Etiquette: Polite codes for impressions and respect.
Mindset: Attitudes; positive ones attract success.
Networking: Building contacts for support/opportunities.
Niyat: Pure intention; foundation for divine favor.
Resilience: Recovering from setbacks with faith.
Big Dream: Ambitious goals pursued gradually.
Risk: Calculated exposure using earned resources.
Confidence: Earned trust, starting with family.
Integrity: Honesty ensures long-term rewards.

Usage Tips
Students: Read in one sitting (30-45 mins); quiz yourself
Teachers: Use for classes—discuss anecdotes, assign essays on principles.
Next Steps: Apply one strategy (e.g., network at an event). Share feedback for updates.

45
Innovation Over Bureaucracy: Why Private Universities Require a Distinct Governing Structure

The Promise and Paradox of Private Higher Education

Private universities in South Asia and Southeast Asia have evolved over the past three decades as crucial drivers of higher education expansion. They have facilitated access where state universities were unable to keep pace with population expansion, brought competitive learning environments, and injected entrepreneurial energy into schooling systems long controlled by the state. Private universities in countries like Bangladesh, Malaysia, India, and Sri Lanka now account for a significant proportion of the student enrollments, especially within the urban centers and professional schools.

But paradoxically, the very institutions created to be agile, creative, and sensitive to the marketplace are constrained by regulatory systems designed for slow-moving public universities. The University Grants Commission (UGC) of Bangladesh—like its counterparts elsewhere—was built to regulate and subsidize public universities. Its structures, processes, and calendars reflect that original intent. By applying the same governance model to private institutions, these commissions unintentionally constrain the very strengths that justify private universities.

This is why the existence of a separate Higher Education Commission (HEC) for private universities is not a matter of administrative expediency, but one of strategic imperative. A separate regulatory agency would enable Innovation, streamline processes, and ensure quality assurance without stifling responsiveness to global academic trends. Comparative experience from Malaysia, India, and Sri Lanka indicates how specialized regulation can stimulate and not stifle academic excellence. This piece marks the opening installment in a ten-part series titled Reimagining Governance: The Case for a Separate Higher Education Commission for Private Universities in Bangladesh.

The Structural Mismatch: Why One Size Doesn’t Fit All

The University Grants Commission (UGC) system of governance, which has been inherited from an era when almost all universities were government-funded, relies on a set of assumptions that once served but no longer are fittingly aligned with the conditions of private higher education. This model, designed for universities that are wholly dependent on public funds and operating in a system of centralized higher education, imposes constraints that eliminate the dynamism and entrepreneurial nature of private universities. To understand this incompatibility, we need first to dismantle the original tenets that inform the UGC’s approach and then contrast them with the operating imperatives of private universities.

APUB President and Board of Trustees Chairman of Daffodil International University, Dr. Sabur Khan, confirmed, “We believe in accountability, because it lies at the heart of quality and trust. But accountability must not be a straitjacket. We will agree to be held accountable to the highest standards—but not to be bogged down by processes of yesteryears, whimsical delays, or regulations that do not factor in the pace at which higher education must move.”. The measure of good governance is not how much it controls, but how much it enables institutions to function, to innovate, and to serve the nation.”

Equal Funding and Governance

The UGC model assumes that all universities share one unified fiscal dependence on state funding, justifying strict budgetary control and centrally mandated controls of governance. This can be justified in the case of public universities, where public tax dollars justify strict audits and compliance with government expenditure standards. But imposing the same bureaucratic structure on private universities—those sustained by revenues from tuition, gift funding, and endowment—engenders unnecessary bureaucratic expense. Private universities must compete for students and funds in a free market and thus require efficient decision-making. Forced to operate under the same administrative structure as state universities, they lose the necessary operational efficiency for their sustained existence and growth.

As NSU Trustee Board Chair A. A. Kaiser Tito aptly put it, “The private university sector was built on speed and vision. But today, we are run by an old system, where speed never was a choice. As a matter of fact, there is no priority. The world is changing so fast, and we are going in the opposite direction.”

Centralized Curriculum Oversight


In the public sector, curricula remain static for many years, subject only to long review cycles designed to permit political supervision, faculty consensus formation, and limited resource allocation. This is compatible with a conservative academic change policy, based on a requirement to offer stability in the national education system. Private universities, however, operate in a climate where curriculum applicability is equated with institutional survival. Their edge lies in being able to design, re-design, and launch programs over a shorter period to respond to new emerging global patterns of knowledge, occupational needs, and technological advancements. If such institutions are forced to adopt the same lengthy approval process of public universities, they risk offering outdated programs that fail to meet students’ and employers’ expectations.

A senior NSU teacher observed, “In research, timing is everything. A delay of one year can mean missing a whole wave of worldwide discovery.”

Congruence with State Priorities

Public universities align their research agenda with national development plans, sectoral priorities, and politically endorsed objectives. While this ensures that public spending on research furthers the overall policy aims of the government, it also diminishes the potential for experimental, cross-disciplinary, or paradigm-shaking research. Private universities, by contrast, have the freedom to pursue research driven by international market imperatives, intellectual interest, and industry interactions. They can invest in new or emerging fields—e.g., artificial intelligence ethics, renewable energy innovation, or indigenous culture studies—without any hope of state endorsement or funding allocation. Forcing them to the exact conformity demands of state universities not only limits intellectual diversity but also stifles Innovation that can grant the nation a competitive edge in the global research landscape.

Private Universities: A Different Operating DNA

Private universities, unlike their public counterparts, are entrepreneurial in nature and self-supporting. They fund their operations from tuition, endowments, and, increasingly today, corporate partnerships, which require efficient administration and aggressive program choices to survive. They possess market-aware curricula that adapt rapidly to emerging industries and global standards and also forecast shifts in student trends. They also value independent research agendas, with the freedom to launch interdisciplinary or specialty scholarly research without interference by national funding cycles. Such features—efficiency, responsiveness, and autonomy—are the lifeline of private higher education.

The Consequence of a Uniform Regulatory Regime

When the same regulations and timeline are imposed by a regulatory body like the UGC on private and public universities, what follows is inevitable: bureaucratic bottlenecks, tardy programme launching, and lost opportunities in research and industry connections. The mismatch between governance structure and institutional purpose not only bars private universities from reaching their optimum potential but also deprives the national education system of a significant source of Innovation, competitiveness, and international orientation.

Bureaucracy in Practice: The Cost of Delay

Private universities in Bangladesh under the current regulatory regime are not abstract arguments about policy-they have actual, tangible impacts on foregone opportunities that affect industries, students, and national competitiveness in the world. Consider an example that, posed hypothetically, captures the truth in much of what currently happens.

One of EWU’s professors stated, “Our students are world-ready—but the system is not world-ready for them. That’s why the reform needs to be done, this urgently.”

Uncovering a Market Opportunity
A forward-thinking private university finds a global surge in demand for cybersecurity professionals driven by mounting cyber risks, business digitalization, and new data protection laws worldwide. Industry forecasts predict a shortage of skilled professionals within the next five years, so this is an area of high-priority workforce development. Recognizing its capacity to meet a national need and position itself as a regional leader, the university is prepared to invest in a creative academic program.

Developing a World Class Curriculum
The institution quickly assembles an international team of industry practitioners, senior faculty, and global subject-matter experts to create a curriculum development team. These experts collaborate to ensure the program effectively combines theory and practice with industry-relevant skills. Courses are designed based on globally accepted cybersecurity frameworks, include hands-on lab simulations, and offer paths to leading professional certifications. The course is not only reactive, but also anticipatory, looking to the future wave of digital security threats so that graduates are a notch above their local and global competition.

APUB Executive Council member and former Chairperson of the Board of Trustees of Eastern University, Mr. Abul Quasem Haider, added, “This is not a cry for fewer rules—it is an appeal for wiser ones. Regulation must be attuned to the pace and realities of private higher education, or risk becoming the very stumbling block to the progress it seeks to safeguard.”

Entering the UGC Approval Pipeline
Once the curriculum is set, it is submitted by the university to the University Grants Commission (UGC) for approval. This is where the momentum gets stuck. The program undergoes numerous committee reviews, each with more paperwork, rewriting, and explanations—sometimes independent of academic content. Ministerial signoffs add more layers of delay because approval hinges on political calendars and shifting administrative priorities. The process also requires compliance with out-of-date template requirements that fail to acknowledge emerging fields like cybersecurity, putting innovative programs into molds appropriate for traditional disciplines.

As one IUB faculty member summed it up, “Our curriculum update process is stuck in the 20th century. The world’s knowledge frontier changes every quarter.”

The Cost of Time in a Fast-Moving Field
When the program finishes all approvals—often 18 to 24 months later—the market environment has altered drastically. Competing institutions abroad have already implemented comparable programs, working intensively to promote them to the same student base. Industry needs, while still strong, may have shifted to emphasize nascent sub-specialties such as cloud security, AI-threat detection, or blockchain-enabled data defense. The university’s once-pioneering curriculum may become outdated even before its first cohort begins.

A DIU professor lamented, “We lose good students to foreign universities every year because of sluggish approvals in our hands.”

Lost Opportunities for Students and the Nation
Students suffer most acutely. With no timely local alternatives, most have to look abroad, denying the nation talent and resources. Others bypass the traditional university track altogether, pursuing instead shorter-term industry certifications that are nearer the target straight away but lack the depth and breadth of a full degree. For the nation as a whole, the deferment is a double loss: it misses the potential to develop homegrown experts in a strategic field and the economic benefit of retaining tuition charges, research initiatives, and educated graduates at home.

Not an Exception, but the Rule
This is not an isolated event or a poor coincidence—but the everyday experience for private universities under regulatory regimes designed for a bygone world. Fields such as artificial intelligence, renewable energy technology, data science, and biotechnology all have the same fate: groundbreaking programs are planned but mired in bureaucratic limbo until their competitive advantage expires. In the modern global knowledge economy, where speed is as important as quality, such delays are not only frustrating—they are crippling.

The Case for a Separate Higher Education Commission for Private Universities

A Higher Education Commission for Private Universities (HEC-PU) with specialized responsibilities would not be more bureaucracy. Still, a specialized body molded to recognize, build on, and oversee the unique strengths of private higher education. Its purpose would be to maintain academic standards while enabling the flexibility and responsiveness necessary to succeed in the knowledge economy. The following functions illustrate how such a commission would transform the private university sector.

Mr. Mohammad Shajahan, esteemed Trustee and ex-Chairman of NSU Trustee Board, challenged the norm with an incisive question: “If an entire industry can be thought of, constructed, and launched in six months, why must two long years be taken to approve and introduce an academic degree program? In a time when knowledge, technology, and the needs of the marketplace evolve at lightning speed, such delays are not merely inefficient—they can render our graduates obsolete even before they get to the workplace.”

Streamline Academic Approvals
One of the most critical challenges facing private universities is the lengthy process of approval for launching new programs. Under a committed commission, approval times can be shortened from years to a matter of months by providing for expedited procedures for institutions possessing well-established quality assurance systems and excellent records. This would pay premiums for excellence in speed, allowing universities to respond in near real-time to emerging academic and professional demands. Rather than see hopes fade through slow bureaucratic approvals, institutions might go from idea to classroom with the nimbleness today’s education requires.

An APUB elected member of the Executive Council, Mr. Qayum Reza Chowdhury, and the former Chair of the Trustee Board of the University of Asia Pacific, pointed out, “The very guidelines that are meant to guide us are the very ones that hold us back. When approval cycles drag along at a snail’s pace, our students pay the highest price—graduating into industries that have already moved ahead, where knowledge that was good yesterday no longer translates into requirements today.”

Facilitate Quick Curriculum Revision
In the era of artificial intelligence, the renewable energy revolution, and rapidly changing global economies, curricula within academies might become outdated within less than a year. A special HEC-PU might create rolling review cycles so programs might be updated annually or every other year without shutting down the entire approval process. This would enable institutions to integrate the latest industry standards, integrate recent research outputs, and maintain global competitiveness. By making it a routine procedure instead of a bureaucratic process, the commission would ensure that students graduate with the skills and knowledge necessary to apply in the world they are entering.

APUB Executive Council Member and NSU Board of Trustees Member, Mr. Benajir Ahmed, said, “Private higher education is not a peripheral player, it is a national engine of Innovation, talent, and competitiveness. If regulation cannot keep pace with its dynamism, it will choke the very progress it seeks to nurture. We need governance that empowers excellence, not bureaucracy that punishes it.”

Encourage International Collaborations
International outreach is no longer an option for universities seeking top-tier status. HEC-PU could proactively encourage and expedite partnerships with foreign universities, industry groups, and research networks. Joint degrees, exchange of faculty, and collaborative research programs would be approved with ease, free from political or procedural hindrances. This would not only enhance the international status of private universities but also prepare students for cross-cultural abilities, global connections, and familiarity with a diversity of intellectual traditions that are increasingly important in today’s globalized world.

Mr. Towhid Samad, Trustee and former Chairman of IUB’s Board of Trustees, captured the frustration with striking clarity: “As President Warren G. Harding once observed, there should be less government in business and even less business in government—a lesson our lawmakers would do well to embrace. Education, like any other offering, is packaged and presented by universities as a product, and it is parents, guardians, and students who act as discerning buyers, determining which institution offers good, better, or best value. The government’s role should be akin to that of a rating agency—assigning clear, transparent grades such as A, AA, or AAA to guide informed choices. Ultimately, only market forces can hold delinquent providers accountable. The UGC neither funds private universities nor should it interfere with their innovation and research activities.”

Enhance Quality without Stifling Innovation
The most effective regulatory frameworks guard quality without stifling Innovation. An energetic HEC-PU could establish quality assurance mechanisms attuned to the circumstances of private universities, which usually have entrepreneurial organizational structures and diverse funding arrangements. Rather than imposing rigid, prescriptive requirements, the commission could monitor outcomes—such as graduate employability, research impact, and intellectual creativity—while giving institutions the freedom to experiment with new pedagogies, transdisciplinary curricula, and technology-enabled learning models. This three-way balance between regulation and freedom of action would create a space that enables Innovation without compromising academic standards.

An NSU professor also stated, “In the global race for knowledge, one month is a considerable margin. We cannot lag behind in seeking programs for emerging fields.”

Encourage Research Agility
Private universities can pioneer areas that are slow to act on the part of public institutions, particularly in niche and interdisciplinary research. An engaged commission would provide these institutions with the freedom to define their research agendas, both by world possibility and national need, without waiting for state funding cycles or political fiat. From front-line climate adaptation studies to culturally embedded AI models to the seeking of indigenous knowledge forms, private universities could be labs of Innovation, going at the speed of the best-of-the-best to confront both societal demand and market potential.

In summarizing the prevalent mood, as APUB President Dr. Sabur Khan stated: “The cost of delay is not measured in paperwork—it is measured in lost futures.” Across NSU, IUB, DIU, EWU, AIU, EU, and all other private universities, the message is clear: a standalone commission is not about shirking standards; it is about making a system where high standards and quick response are compatible.

Learning from the Region: Case Studies

Malaysia: The Malaysian Qualifications Agency (MQA)


Perhaps the best example of a specialized quality assurance and accreditation system is that of Malaysia, with both private and public institutions, but also with space for Innovation by the private sector.

Key Feature: MQA has strict standards but is independent of the budget mechanisms that prevail in public universities.
Impact: Private universities such as Monash University Malaysia and Sunway University have introduced innovative courses in data science, hospitality, and biomedical sciences much more quickly than their public counterparts.
India: National Accreditation and Specialized Councils

While India’s University Grants Commission (UGC) continues to oversee most of the higher education, professional courses in fields like engineering, management, and law are under the purview of specialized councils (such as AICTE for technical education, BCI for legal education).

Key Feature: The councils allow private schools to propose and implement programs more rapidly, provided they are capable of meeting specified levels of quality.

Effect: ISB, a private school, has become an internationally recognized brand for management education by applying flexible program architecture and industry engagement, something that a public-sector model of approval would have placed on hold.
Sri Lanka: Non-State Higher Education Directorate

Sri Lanka created a Non-State Higher Education Directorate under its Ministry of Higher Education to regulate and assist specifically private higher education.

Keystone Feature: Private university departments handle program approval, accreditation, and monitoring as individual entities apart from public university administration.

Impact: This has enabled private universities to expand in specialized areas such as maritime studies and tourism management—areas critical to Sri Lanka’s economy—without being bogged down by bureaucracy from the public sector.
Global Knowledge Trends Demand Agility

The knowledge economy of the 21st century has no room for slow bureaucracies:

  • Artificial Intelligence & Machine Learning – Curricula need to be revised annually, if not every quarter.
    Sustainable Development Goals (SDGs) – Institutions of higher learning must align instruction and research with shifting global sustainability agendas.
    Interdisciplinary Learning – The pace of convergence of STEM with social sciences and humanities necessitates structural agility.
    Government department administrative models were built to provide stability, not to be agile.
Agility in the knowledge economy is not a luxury; it is the minimum to be competitive.

Addressing Quality and Oversight Concerns

Critics of autonomous regulatory institutions, of course, brandish “dilution of quality” or profit-for-lucrative-interest motives fatal to scholarship in academia. Though these are real concerns, they can be addressed short of shooting back at the choking bureaucracy.

An autonomous HEC for private universities could be implemented:

Tiered Accreditation – Provide greater autonomy to high-performing institutions.
Transparent Review Panels – Include international scholars, business leaders, and student representatives on them.
Annual Public Reporting – Compel all institutions to publish audited academic and financial performance measures.
By focusing on results rather than procedural uniformity, an independent commission can ensure accountability along with Innovation.

Economic and Social Imperatives

In Bangladesh and the northeast region, higher education is now not just a social good but an economic imperative. Countries that align higher education management with market and technological conditions see:

Reduced Brain Drain – Students favor local institutions with competitive products.
Industry-Academia Synergy – Companies work with universities on research, internships, and pipelines for talent.
Global Competitiveness – Nations position themselves as knowledge hubs, attracting international students and research funding.
Malaysia’s 2015–2025 Education Blueprint aimed at the country’s emergence as an education hub in the region—a path made easier by loose accreditation and governance structures. Bangladesh could take a similar path with a dedicated private-sector higher education commission.

Roadmap for Implementation

Legislative Framework

Pass a Higher Education Commission for Private Universities Act defining mandate, scope, and governance structure.

Stakeholder Engagement
Involve private universities, industry leaders, students, and foreign advisors in policy formulation for the commission.

Phased Transition
Begin with pilot schools in the new commission, followed by pilot procedures, and then scale across the country.

Alignment with Global Standards
Harmonize accreditation systems with global bodies like the Quality Assurance Agency (UK) or Council for Higher Education Accreditation (US).

Digital Governance
Utilize online portals for program submissions, evaluation, and reporting compliance to avoid administrative delay.

Conclusion: Innovation Needs the Right Environment

In the global race for dominance in knowledge, responsiveness, and speed are as important as quality. Private universities were founded to be fast, innovative, and responsive—but current governance structures incline towards the slow lanes of public-sector bureaucracy.

The solution is not deregulation—it is wise regulation by an independent Higher Education Commission for Private Universities. As Malaysia, India, and Sri Lanka have proved, targeted regulation can preserve quality while unleashing Innovation. For Bangladesh and others like it, the reform is not just welcome—it is an imperative of economic development, social mobility, and global competitiveness.

By embracing a governance structure that recognizes the unique contribution of private universities, we can ensure that they realize their potential: producing graduates who can confront tomorrow’s challenges, carrying out research in emerging areas, and driving their nations to the head of the world knowledge economy.

Merely renaming the UGC as the Higher Education Commission, without seeking earnest restructuring and establishing autonomous governance mechanisms for private and public universities, would be no change whatsoever. It would amount to nothing less than offering old wine in a new bottle.

Source: https://southasiajournal.net/innovation-over-bureaucracy-why-private-universities-require-a-distinct-governing-structure/
46
পাঁচ বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের তুলা কিনেছে বাংলাদেশ


তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। দেশীয় উৎপাদন একেবারেই নগণ্য হওয়ায়, প্রায় শতভাগ তুলাই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) বাংলাদেশ ৩৬টি দেশ থেকে ৩৯ দশমিক ৬১ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করেছে, যার ব্যয় প্রায় ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে কৃষিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিকস (বিএই) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছরই তুলা আমদানি ও ব্যয়ের অঙ্ক উল্লেখযোগ্য, যদিও বছরভেদে কিছুটা ওঠানামা রয়েছে।

বছরভিত্তিক তুলা আমদানির চিত্র

২০২০ সালে ৬.৫২ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছিল ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। পরের বছর ২০২১ সালে আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ১০.০৮ মিলিয়ন বেলে, ব্যয় হয় ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার।

২০২২ সালে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে ৮.৩৭ মিলিয়ন বেল হলেও মূল্য দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৫.০৪ বিলিয়ন ডলারে।

২০২৩ সালে তুলা আমদানি আরও কমে ৬.২৬ মিলিয়ন বেলে নেমে এলেও, ২০২৪ সালে তা আবার বেড়ে পৌঁছায় ৮.৩৮ মিলিয়ন বেলে। এই বছর তুলা আমদানিতে ব্যয় হয় ৩.৯২ বিলিয়ন ডলার।

তুলা আমদানির প্রধান উৎস

প্রধান উৎস আফ্রিকা


তুলা আমদানির ক্ষেত্রে আফ্রিকা এখন বাংলাদেশের প্রধান উৎস। এছাড়া বেনিন, মালি, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, ঘানা ও কেনিয়া থেকে মোট ১৬.৩২ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করা হয়েছে, যার মূল্য ৮.১৬ বিলিয়ন ডলার— মোট আমদানির প্রায় ৪১ শতাংশ।

আফ্রিকার তুলা মানসম্মত, সহজলভ্য এবং তুলনামূলক কমদামে পাওয়া যায়— যার ফলে বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলো এই উৎসের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।

দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ভারত

পাঁচ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৯.৫২ মিলিয়ন বেল তুলা, যার বাজারমূল্য ৪.৮৩ বিলিয়ন ডলার। ভারতীয় তুলা বাংলাদেশের মোট তুলা আমদানির প্রায় ২৪ শতাংশ।

ভৌগোলিকভাবে কম দূরত্ব, স্থলবন্দরের সুবিধা (বেনাপোল, ভোমরা) ও দ্রুত সরবরাহ ভারতীয় তুলাকে বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎসে পরিণত করেছে। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “তৈরি পোশাক শিল্প একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজার। এখানে অনেক সময় মাত্র এক-দুই সেন্টের পার্থক্যেই ক্রয়াদেশ হারাতে হয়। তাই কারখানাগুলোর টিকে থাকতে হলে সুতা প্রতিযোগিতামূলক দামে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। দেশি সুতা ব্যবহার অবশ্যই করবো, তবে তা যেন মানসম্পন্ন ও মূল্যসাশ্রয়ী হয়— সেটাই মূল কথা।”

তিনি আরও বলেন, “স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ হওয়ার পর দেশি মিলগুলোর অনেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনও তদারকি নেই। ফলে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে সুতা কিনছেন। এর ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হুমকির মুখে পড়ছে।”

যুক্তরাষ্ট্র: উচ্চমানের তুলার উৎস

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ বছরে ২.৮৪ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১.৮৭ বিলিয়ন ডলার— মোট আমদানির ৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের তুলার মান উচ্চতর এবং ফাইবার স্ট্যাপল দীর্ঘ হওয়ায় এটি মূলত বড় মিল ও স্পেশাল রফতানির কাজে ব্যবহৃত হয়।

অস্ট্রেলিয়া ও সিআইএস দেশগুলো

অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত তুলার পরিমাণ ২.২৪ মিলিয়ন বেল, মূল্য ১.১৬ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ সিআইএস দেশগুলো থেকে ০.৭৯ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

অন্যান্য উৎস দেশ

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চীন, কানাডা, গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে মোট ৭.৯ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ৩.৮৭ বিলিয়ন ডলার—মোট আমদানির প্রায় ১৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কে ছাড়ের সম্ভাবনা

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তুলাভিত্তিক পোশাক রফতানিতে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, কোনও পোশাক পণ্যে যদি অন্তত ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল থাকে, তবে সেই অংশের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।

তিনি বলেন, “আমরা যদি ইউএস কটন বা কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করি, তাহলে ওই অংশে শুল্ক ছাড় পাওয়া যেতে পারে।”

বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ডলারের সুতা আমদানি করে। বিজিএমইএ মনে করে, এই আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত নেওয়া গেলে রফতানিকারকরা উল্লেখযোগ্য শুল্কছাড় পেতে পারেন।

বিশ্বের শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশের পথে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর ইউএসডিএ’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় তুলা আমদানিকারক দেশে পরিণত হবে। এ সময় ৮৪ লাখ বেল তুলা আমদানি করা হবে, যা বৈশ্বিক তুলা বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশ।

তুলা ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ অবস্থানে। চীন, ভারত ও পাকিস্তানের পরেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এখানে বছরে ব্যবহৃত হচ্ছে ৮৫ লাখ ৫০ হাজার বেল তুলা।

তুলার বিপুল আমদানির পেছনে কারণ

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৮৪৯টি স্পিনিং মিল রয়েছে, যাদের তুলার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। চীনের তৈরি পোশাক ও কাপড় উৎপাদনে কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে অনেক বিদেশি ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশমুখী, যার ফলে তুলার আমদানিও বাড়ছে।

তবে তুলা উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মাত্র ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১.৫৩ লাখ বেল তুলা উৎপাদিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে তুলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। শুধু ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই খরচ হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই এই ব্যয় ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে তুলা উৎপাদন বাড়ানো গেলে এই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে বছরে একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতো।

তুলা উৎপাদন বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা

তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ লাখ বেল এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১৯ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল ও চরের জমিকে তুলা চাষের আওতায় আনলে উৎপাদন ২০ লাখ বেল পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব বলে ইউএসডিএ মনে করছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তুলা আমদানির পরিমাণ এখন শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের এক বড় প্রতিচ্ছবি। স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং উৎসভেদে কৌশলগত বৈচিত্র্য আনাই হতে পারে এ খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি।

গোলাম মওলা

Source: https://www.banglatribune.com/
47
অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম

গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ‘অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম?’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। সেই সেমিনারের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে লেখাটি লেখা হয়েছে। কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে লেখাটা প্রকাশ করা হলো।


অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম

জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, তার অন্যতম প্রধান অংশ জুড়ে ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মুক্তি, চিন্তার স্বাধীনতা, জ্ঞানচর্চার স্বায়ত্তশাসন এবং সত্যিকারের মানুষ গড়ার আঙিনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা। আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন এক ব্যবস্থার, যেখানে দলীয় লেজুড়বৃত্তি, প্রশাসনিক স্বৈরাচার ও বাণিজ্যিক মুনাফার ঊর্ধ্বে থাকবে শিক্ষা ও গবেষণার আদর্শ; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পেরিয়ে আমরা কী দেখছি? আমরা কি সত্যিই কোনো পরিবর্তন পেয়েছি?

তথ্য-উপাত্ত বলছে, আমরা কেবল কিছু ‘নিয়ন্ত্রক’ পরিবর্তন করেছি, কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাটিকেই ভাঙতে পারিনি। শীর্ষস্থানীয় কিছু মুখ বদল হয়েছে; ভেতরের গতানুগতিক কায়দার শিক্ষা-গবেষণা, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ও দমনমূলক কাঠামোটি রয়ে গেছে আগের মতোই।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান সংকট বুঝতে হলে শিক্ষাবিদ হেনরি গিউরোর একটি পর্যবেক্ষণ আমাদের পথ দেখাতে পারে। তিনি দেখান যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ‘নিরীক্ষা-সংস্কৃতি’ (অডিট কালচার) নামে এমন এক রীতি চালু হয়েছে, যেখানে সবকিছুর বিচার হয় সংখ্যা বা ম্যাট্রিক্স দিয়ে। এই সংখ্যা-নির্ভরতার ফলে সৃজনশীলতা ও মৌলিক চিন্তা গুরুত্ব হারায়। কারণ, যা পরিমাপ করা যায় না, তাকে মূল্যহীন ভাবা হয়।

গিউরো এই ব্যবস্থাকে একটি বদ্ধ খাঁচা বা অদৃশ্য কারাগারের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মূল দায়িত্ব অর্থাৎ অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার সাহস জোগানো থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। গিউরোর এই পর্যবেক্ষণ সামনে রেখেই আমরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করব।


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: নতুন মোড়কে পুরোনো ‘স্বৈরাচার’

জুলাই জাগরণের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফ্যাসিবাদী আমলের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা থেকে মুক্ত করা; কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার একেকটি উপশাখা হয়েই রয়ে গেছে। উপাচার্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ বা প্রক্টরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে এখনো দলীয় আনুগত্য ও ব্যক্তিগত পছন্দই মূল মানদণ্ড হিসেবে কাজ করছে, যা আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের বিকাশ তো দূরের কথা, ক্যাম্পাসগুলোতে একমুখী স্বৈরাচারী ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যের হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকার যে সংস্কৃতি, তা আজও বদলায়নি। আর পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসনের নামে যা চলছে, তা মূলত ‘সরকারদলীয় শিক্ষকদের’ বা ‘সম্ভাব্য সরকারদলীয় শিক্ষকদের’ আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হয়েই রয়েছে। ভিন্নমত দমন করার প্রবণতা কমেনি।

দেশে সার্বিকভাবে ডানপন্থী উগ্রবাদের উত্থান এবং নারীবিদ্বেষী দমনমূলক পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে, যার প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়েও এসে পড়ছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নীরব সম্মতি হিসেবেই প্রতিভাত হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও উচ্চশিক্ষার মতো একটি মৌলিক খাত নিয়ে কোনো শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। ফলে নিয়োগ থেকে শুরু করে ভর্তিপ্রক্রিয়া, আবাসন–সংকট থেকে ছাত্ররাজনীতি—সব ক্ষেত্রেই পুরোনো অনিয়মগুলোই ভিন্ন চেহারায় ফিরে আসছে।

কী চেয়েছিলাম: দলীয় রাজনীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসিত একটি ব্যবস্থা, যেখানে উপাচার্য থেকে শুরু করে সব প্রশাসনিক পদে নিয়োগ হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও যোগ্যতার ভিত্তিতে, দলীয় আনুগত্যে নয়। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। গেস্টরুম সংস্কৃতি, র‍্যাগিং ও সরকারি ছাত্রসংগঠনের দমনমূলক রেজিমেন্টেশনের অবসান হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘সরকারি চাকরির প্রস্তুতিকেন্দ্র’–এর পরিবর্তে জ্ঞান সৃষ্টি ও গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়বে এবং দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে তা বণ্টন করা হবে। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের অপব্যবহার রোধে সংস্কার এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগুলোকে গণতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসনের আলোকে ঢেলে সাজানো হবে।

কী পেলাম:
উপাচার্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ বা প্রক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে এখনো দলীয় আনুগত্য ও ব্যক্তিগত পছন্দই মূল মানদণ্ড। শিক্ষক নিয়োগেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি বা পরিবর্তন হয়নি; বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে।

প্রতিবাদী কণ্ঠকে পরিকল্পিতভাবে স্তব্ধ করে দেওয়ার আয়োজন চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌক্তিক প্রতিবাদের জবাবে ছাত্রীদের বহিষ্কার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে মনীষীদের নাম মুছে ফেলা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক চক্রান্তের মাধ্যমে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা প্রমাণ করে যে নিপীড়নের কাঠামোটি কতটা শক্তিশালী।

বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে কোনো কার্যকর উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। সরকার বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন করলেও উচ্চশিক্ষার মতো একটি মৌলিক খাত নিয়ে কোনো শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজন অনুভব করেনি। ফলে কাঠামোগত সংকটগুলো আগের মতোই বর্তমান। কোনো ধরনের আইনি বা কাঠামোগত সংস্কারের বিন্দুমাত্র লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা এবং প্রশাসনের একচ্ছত্র আধিপত্য আজও অটুট, যা আদতে একটি নতুন স্বৈরাচারী ব্যবস্থারই পুনঃপ্রবর্তন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: মুনাফার মডেলে কোনো আঘাত আসেনি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রধান অভিযোগ ছিল যে এগুলো মুনাফাকেন্দ্রিক ‘সার্টিফিকেট বিক্রির ভবনে’ পরিণত হয়েছে। গবেষণার দিকটি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অনুপস্থিত। আশা ছিল, নতুন বাস্তবতায় এই নয়া উদারবাদী মডেলকে চ্যালেঞ্জ করা হবে, শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে দেখার মানসিকতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসব; কিন্তু এখানেও আমরা পেয়েছি কেবলই হতাশা।

কী চেয়েছিলাম: শিক্ষাকে মুনাফার ঊর্ধ্বে রাখা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য যৌক্তিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ফি কাঠামো এবং শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত বেতন ও চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। খণ্ডকালীন শিক্ষকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পূর্ণকালীন, স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হবে, যা শিক্ষার মান ও গবেষণার পরিবেশ উন্নত করবে। মাতৃভাষায় পাঠদান এবং গবেষণার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক হীনম্মন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া। গবেষণা, বিশেষ করে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্রে পরিণত হওয়া।

কী পেলাম:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো মুনাফাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচালিত হচ্ছে। ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’-এর অধীন ইউজিসির আমলাতান্ত্রিক খবরদারি রয়ে গেছে; কিন্তু চিন্তার স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসনের কোনো রক্ষাকবচ তৈরি হয়নি। ফি এবং বেতনের বৈষম্য আগের মতোই প্রকট। খরচ বাঁচাতে খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের প্রবণতা এখনো প্রবল। এর ফলে শিক্ষকেরা যেমন ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও একজন স্থায়ী মেন্টরের নিবিড় তত্ত্বাবধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি অতি নির্ভরশীলতা এবং বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার অবমূল্যায়ন আগের মতোই চলছে, যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইংরেজির ওপর দখল দুর্বল।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি): নিয়ন্ত্রক না নিয়ন্ত্রিত?
কী চেয়েছিলাম: আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত একটি সত্যিকারের স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, ইউজিসি নিজেই তার কার্যক্রম, তহবিল ও নীতি নির্ধারণে সক্ষম হবে এবং এর ভেতরেই স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও সাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম এমন একটি প্রতিষ্ঠানের, যার নিয়োগপ্রক্রিয়া হবে সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক; যেখানে স্বজনপ্রীতি বা রাজনৈতিক আনুগত্যের বদলে উচ্চশিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ ও নিবেদিতপ্রাণ পেশাদারেরাই নিয়োগ পাবেন। সর্বোপরি, আমরা চেয়েছিলাম এমন একটি ইউজিসি, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর আমলাতান্ত্রিক বোঝা না হয়ে; বরং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন কেন্দ্র করে একটি সহায়ক ও গতিশীল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করবে।

কী পেলাম: বাস্তবে আমরা যা পেয়েছি, তা হলো পুরোনো ব্যবস্থারই একটি অচলায়তন। ইউজিসি আজও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান, যার কার্যক্রম ও তহবিলের জন্য পুরোপুরি আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। এটি একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বদলে মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত অংশ হিসেবেই রয়ে গেছে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও অনুসারীতোষণের সংস্কৃতি বদলায়নি, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি জনবলের তীব্র অভাব ও অদক্ষ কর্মশক্তিতে ভুগছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করার বদলে ইউজিসি নিজেই একটি ‘আমলাতান্ত্রিক দুঃস্বপ্নে’ পরিণত হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ‘লাগামহীন খবরদারি’ করে; কিন্তু তাদের মানোন্নয়ন বা সংকট নিরসনে কোনো কার্যকর ও যুগোপযোগী সংস্কার আনতে পুরোপুরি ব্যর্থ।

পরিমাপের সংস্কৃতি ও অবিকশিত বিশ্ববিদ্যালয়
ওপরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাকের বাইরেও পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে। যেমন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানি করা র‍্যাংকিং প্রতিযোগিতা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি বিভাগ র‍্যাঙ্কিংয়ে ওঠানামা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।

এই র‍্যাঙ্কিংগুলোতে গবেষণার গুরুত্ব অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিসার্চ এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। এসবই ভালো উদ্যোগ। কারণ, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মপরিধির মধ্যে গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়; কিন্তু যেসব বিষয় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তবে র‍্যাঙ্কিং পরিমাপে গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেই বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।

ক্লাসরুম শিক্ষার মান একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই মান জানার সবচেয়ে প্রচলিত যে পদ্ধতি, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সেটিই চালু হয়নি। সত্যি বলতে শিক্ষার মান–সংক্রান্ত কোনো ধরনের জবাবদিহির মুখোমুখি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা হন না। সেই সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন এবং খাদ্যের মান বেশ নিম্নমানের; কিন্তু এই বিষয়গুলো যেহেতু র‍্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই এগুলোর উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাস এবং নিপীড়ন অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। আওয়ামী রেজিমের পতনের পর খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই দু–দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন আগের রেজিমের মতোই অপ্রকাশিত রয়ে গেছে কিংবা তদন্তকাজের কোনো অগ্রগতি নেই। কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলা হয়েছে। এসব ঘটনা বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং তো দূরের কথা, কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যাওয়ার কথা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণভাবে এ ধরনের সন্ত্রাস ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত থাকলেও সেখানে বেশ গুরুতর সমস্যা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মানের দিক থেকেও বেশ বড় বিভাজন রয়েছে। ওপরের দিক থেকে চার-পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় মোটামুটি মান ধরে রাখলেও তারপরের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী চলছে, তা নিয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন।

গিউরোর যে কথাগুলো দিয়ে আমরা আমাদের বক্তব্য শুরু করেছিলাম, তা–ই যেন আমাদের বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিচ্ছবি। অভ্যুত্থানের পরেও আমরা সেই ‘অডিট সংস্কৃতি’ থেকে বের হতে পারিনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ‘ভোটার’ নিয়োগ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুনাফার হিসাব—উভয় ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতা বা গভীর জ্ঞানের চেয়ে পরিমাপযোগ্য ‘পারফরম্যান্স’ মুখ্য। পাসের হার, প্রকাশনার সংখ্যা (মান যা–ই হোক), ভর্তি পরীক্ষার এমসিকিউর নম্বর—এসব সংখ্যা দিয়ে আমরা জ্ঞানকে পরিমাপ করতে চাইছি।

এ রকম ব্যবস্থা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি বদ্ধ খাঁচায় পরিণত করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নজরদারির অধীন থাকেন এবং শিক্ষকেরা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ভয়ে থাকেন। আমরা হয়তো কয়েকজন ‘কারারক্ষী’কে পরিবর্তন করেছি; কিন্তু ‘কারাগারের দেয়াল’, পরিমাপের শৃঙ্খল এবং নিয়ন্ত্রণের দর্শন—সবই আগের মতো রয়ে গেছে।

এ ব্যবস্থা দিয়ে হয়তো তথ্য দেওয়া যায়; কিন্তু জ্ঞান সৃষ্টি করা যায় না। এই কাঠামো দিয়ে হয়তো চাকরিজীবী তৈরি করা যায়; কিন্তু ন্যায়বিচার ও সাম্যের স্বপ্ন দেখতে সক্ষম মুক্তচিন্তার নাগরিক তৈরি করা যায় না। জুলাই জাগরণের স্বপ্ন ছিল এই কারাগার ভাঙার, কিন্তু আমরা এখনো সেই ভাঙনের কোনো বাস্তব রূপ দেখতে পাচ্ছি না।

মতামত শিক্ষক নেটওয়ার্কের নিজস্ব

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/mq2hqq3qex
48
ওবিই শিক্ষাক্রমের সমস্যা কোথায়, সমাধান কী


বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কয়েক বছর আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ শিক্ষাক্রম প্রস্তাব করে। এর নাম দেওয়া হয় আউটকাম বেজড এডুকেশন, সংক্ষেপে ওবিই। ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী বর্তমানে দেশের প্রায় সব কটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওবিইভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ওবিই প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ব্যাহত হওয়ার সমূহ কারণ রয়েছে।

 প্রথম কথা, ওবিইকে শিক্ষাক্রম বলা হলেও তা পুরোপুরি শিক্ষাক্রম নয়। এটি বিদ্যমান সিলেবাসকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার টেমপ্লেট বা কাঠামোমাত্র। ফলে আগের সিলেবাসে যদি সমস্যা থেকে থাকে, তবে নতুন কাঠামোতেও সমস্যা রয়ে যাবে। উচ্চশিক্ষার মৌলিক পরিবর্তন এভাবে আশা করা যায় না। দ্বিতীয়ত, সিলেবাস তৈরি করার আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যেসব সিলেবাস চালু রয়েছে, তা প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে তৈরি হয়নি। ফলে ওবিই নাম দিয়ে সিলেবাসের কাঠামোয় বদল আনা হলেও তাতে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।

আমরা বরাবরই বলে আসছি, সিলেবাস তৈরির আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা জরুরি। এ কাজে বিষয়-বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি শিক্ষাক্রম-বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করতে হবে। ইউজিসি উচ্চশিক্ষার মান বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তা করছে, ভালো কথা। কিন্তু মুশকিল হলো তারা পুরোনো সিলেবাসকে নতুন কাঠামোয় ফেলে সমাধান আশা করছে। ওবিই টেমপ্লেট অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে তাদের নিজ নিজ বিভাগের সিলেবাস সাজিয়েছে। অর্থাৎ আগের সিলেবাসই নতুন কাঠামো বা চেহারায় হাজির হয়েছে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপযুক্ত মূল্যায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কারণ, এখানে ত্রুটি রয়ে গেলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে না
এর আগে ওবিই শিক্ষাক্রমের কাঠামো বোঝানোর জন্য ইউজিসি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সেই প্রশিক্ষণেও যে ঘাটতি রয়ে গেছে, এটি বোঝা যায় বিভাগগুলোর সিলেবাসের দিকে তাকালেই। পরীক্ষার কাজে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি, সেসব কাঠামোর মধ্যে সমরূপতা নেই। শিক্ষাক্রম সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষকদের ধারণা না থাকার কারণে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে এটি ঠিকমতো বুঝেও উঠতে পারেননি।

সিলেবাসের আগে শিক্ষাক্রম কেন প্রণয়ন করতে হবে, সেটি বোঝা দরকার। শিক্ষাক্রম মূলত পদ্ধতি ও কাঠামোগত পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও মূল্যায়নের পদ্ধতি কেমন হবে, সেটি শিক্ষাক্রমে উল্লেখ থাকে। তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক শিক্ষার একেকটি স্তরে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও দক্ষতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। সেই লক্ষ্যমাত্রার সূত্র ধরেই পরে বিষয় অনুযায়ী সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম রচিত হয়।

এই লক্ষ্যমাত্রাকেই অন্যভাবে বলা যায় শিখনফল, ইউজিসি যাকে বলছে আউটকাম। উচ্চশিক্ষার স্তরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে যদি আগেই সিলেবাস তৈরি করা হয়, তবে তাকে কীভাবে আউটকাম বেজড এডুকেশন বলা যাবে?

আমাদের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে কিছু বিষয় বা কনটেন্ট রয়েছে কেবল। সেগুলো শিক্ষাক্রমের কোন লক্ষ্যকে বিবেচনায় রেখে করা, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, আদতে কোনো বিভাগেরই শিক্ষাক্রম নেই। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। সেই শিক্ষাক্রমের দুটি অংশ থাকবে।

একটি অংশে সামগ্রিক উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি ও কাঠামো কেমন হবে, সেটি বলা হবে। সেখানে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষাদানের পদ্ধতি, শ্রেণি কার্যক্রম, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধরন, পরীক্ষার পদ্ধতি ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। সেমিস্টারের পরিসর কত মাসের হবে, একেকটি কোর্স কত ক্রেডিটের হবে, অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য কত নম্বর থাকবে, ফলাফল জিপিএ বা নম্বর কিসের ভিত্তিতে হবে—এগুলোরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। আরও নির্দেশ করতে হবে অ্যাসাইনমেন্ট, শ্রেণি-উপস্থাপনা, কুইজ, উপস্থিতি, মিডটার্ম ইত্যাদির জন্য নম্বর বরাদ্দ থাকবে কি না, থাকলে তা শতকরা কত ভাগ হবে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি অংশে বিষয় বা বিভাগ অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশিত থাকবে। সে কাজ বিভাগগুলোকে আলাদাভাবে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকেরাই ঠিক করবেন, ওই বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হলে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার কী রূপান্তর ঘটবে। এটি না থাকার দরুন সমস্যা কী হয়, তা তো দেখাই যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও বিষয়গত জ্ঞান ও দক্ষতায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

ইউজিসি যদি আসলেই ‘শিখনফলভিত্তিক’ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে চায়, তবে নামে ‘ওবিই’ রাখলেই হবে না। আসলেই শিক্ষাক্রমকে ফলদায়ক করে তুলতে হবে। এ জন্য পুরোনো সিলেবাসকে নতুন মোড়ক দেওয়ার এই প্রকল্প নিয়ে আর এগোনো ঠিক হবে না; বরং আগে শিক্ষাক্রম-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি ও কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। এরপর বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে স্তর অনুযায়ী ওই বিষয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক করার। পরে সেই অনুযায়ী নতুন করে সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপযুক্ত মূল্যায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কারণ, এখানে ত্রুটি রয়ে গেলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে না। সিলেবাস তৈরি করার আগে মূল্যায়নের পদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবা দরকার। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়নের বিকল্প উপায় রাখতে হবে।

তারিক মনজুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/0nhups0xdx
49
অভ্যুত্থানের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন ব্রাত্য


গত বছরের ১৭ জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ–সমাবেশে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছবি: সুমন ইউসুফ

বাংলাদেশ হলো আত্মমুগ্ধ ব্যক্তিদের (নার্সিসিস্টদের) দেশ। এ জনপদের মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতার মধ্যে তাই ‘নার্সিসিস্ট পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার’ (এনপিডি) থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। মনোবিজ্ঞানীরা অবশ্য একাডেমিকভাবে এ প্রবণতার ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। তবে জুলাই অভ্যুত্থানকে মানদণ্ড ধরলে এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে ‘নার্সিসিস্টদের দেশ’ বললে অত্যুক্তি হবে না!

জুলাই অভ্যুত্থানকে নানা রঙে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। জাতিগতভাবে এটিও সম্ভবত আমাদের সাধারণ প্রবণতা। যে কারণে এই গণ-অভ্যুত্থানকে কখনো ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘বিপ্লব’, কখনোবা ‘মেটিকিউলাস ডিজাইন’ কিংবা ‘মাস্টারমাইন্ড তত্ত্ব’ দিয়ে আবরণ পরানো হয়েছে। এটা হয়েছে নিজেকে অধিপতিশীল ভাবার কারণে কিংবা নিজের সময়কে বৃহৎ ইতিহাসের নিক্তিতে অনেক বড় করে দেখার আরোপিত ভ্রান্তি থেকে।

একটা গণ-অভ্যুত্থান যে ‘মেটিকিউলাস’ কিংবা একক ভরকেন্দ্রিক হতে পারে না এবং সর্বোপরি গণ-অভ্যুত্থানকে অর্গানিক উপায়ে বিপ্লবে রূপান্তর করতে যে ‘উৎপাদন পদ্ধতি’ (মোড অব প্রোডাকশন) ও ‘উৎপাদন সম্পর্ক’ (রিলেশনস অব প্রোডাকশন) পরিবর্তন অনিবার্য, এটা ক্রিটিক্যালি পাঠ না করেই গণ-অভ্যুত্থানে আপামর শ্রেণির অবদানকে খাটো করে দেখেছেন হালের অধিপতিশীলরা।

আমি যা করেছি, সেটিই মহীয়ান, বাদ বাকি সব ‘অপর’—এই প্রবণতা থেকেই জন্ম হয় ফ্যাসিবাদের; আধিপত্যবাদী বয়ানের। এই মননের অন্তরেই ঘুমিয়ে থাকে নার্সিজম; অর্থাৎ নার্সিজম খোদ নিজেই এমন একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভরকেন্দ্র সৃষ্টিকারী, যা অধিকতর সংকটের মুখোমুখি করে ফেলে সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে।

অভ্যুত্থান–উত্তর প্রথমবর্ষের মধ্যেই তার দিক উন্মোচন হতে শুরু করেছে, যা অভ্যুত্থানের প্রকৃত স্পিরিটকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক-গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বয়ান ও ক্ষমতাচর্চা তো জুলাইয়ের স্পিরিট নয়!

অতীতের নিক্তিতে চব্বিশের ঐতিহাসিক অবস্থান

চব্বিশের গুরুত্ব–বীরত্ব নিঃসন্দেহে নানামাত্রিকভাবে অভূতপূর্ব। তবে এই বীরত্বকে সাতচল্লিশ ও একাত্তরের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে দেখার নিক্তিটিও ‘অভূতপূর্বভাবে’ বিপজ্জনক! এই বয়ান কয়েকটি দুর্দান্ত ঐতিহাসিক লড়াইকে একবারে নাকচ করে দিয়েছে। তার মধ্যে উনসত্তর ও নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান অন্যতম।

আশির দশকে প্রায় দশকব্যাপী আন্দোলনে ছাত্রসংগঠনগুলো একত্র হয়ে ১০ দফা দিয়েছিল। সেসব দাবির মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ও সর্বোপরি শ্রেণিবৈষম্য দূরীকরণে উৎপাদন সম্পর্ক বদলের তৎপরতা ছিল। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ছয় ছফাকে বিস্তৃত করে ছাত্রসমাজের যে ১১ দফার ওপর দাঁড়িয়েছিল, তার কাছাকাছি দূরদর্শী রাজনৈতিক এজেন্ডা এর আগে-পরে বলতে গেলে তৈরিই হয়নি।

নতুন রাষ্ট্রপ্রকল্পের স্বপ্নে বিভোর শিক্ষার্থীদের আটষট্টি-উনসত্তরের ১১ দফার মধ্যে তিন–চতুর্থাংশ দাবি ছিল শ্রমজীবী শ্রেণির প্রশ্নে, যেগুলো উৎপাদন সম্পর্ক পরিবর্তন ও সামাজিক বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরেছিল। আর প্রথম দফাতেই ছিল শিক্ষার আশু সংস্কারকল্পে হামুদুর রাহমান শিক্ষা কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় আইন বাতিল ও শিক্ষার্থীদের মাসিক ফি কমানোর দাবি। আশ্চর্যই বৈকি, বর্তমানের শক্তিশালীদের বয়ানে উনসত্তর নিয়ে কোনো কথাই নেই!

এরও আগে দুর্দান্ত দূরদর্শী ছিল যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনকেন্দ্রিক ২১ দফা, যার প্রথম আটটির মধ্যে সাতটিই ছিল কোনো না কোনোভাবে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের অধিকার রক্ষার্থে। ৯ থেকে ১১ পর্যন্ত তিনটি দফা ছিল শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার সংস্কার প্রশ্নে।

পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের নিপীড়নমূলক স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ওই ২১ দফা হয়ে উঠেছিল সত্যিকার অর্থেই জনগণের জন্য মুক্তির মেনিফেস্টো। তবে সেটা ছিল রাজনীতিকদের ভূমিকায় ঋদ্ধ আর আমাদের এই আলোচনা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বিচারে সীমাবদ্ধ।

চব্বিশের ‘৯ দফা’ কি মনে থাকবে

সময়ের জীবিত সন্তান হিসেবে নিজেদের সময়কে আমরা যতই বীরত্ববাচক বলি না কেন, চব্বিশের ৯ দফা পূর্ববর্তী সময়গুলোর দাবি-দফার তুলনায় বরং অনেক বিবর্ণ-ম্রিয়মাণ। এগুলো দিয়ে অতীতের ধারাবাহিকতাকেও স্পর্শ করা যায় না, আবার ভবিষ্যতের রাজনৈতিক গতিপথও নির্ধারণ করা যায় না। তা ছাড়া একাত্তরের পর সবচেয়ে বৃহদাকার হত্যাকাণ্ড ও জুলুমের পর ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া’র মতো নিরীহ দাবি যেখানে সর্বাগ্রে অলংকৃত হয়, সেই দাবিনামা আন্দোলনের নেতারা স্বভাবতই ভুলে যেতে চাইবেন, এ আর আশ্চর্য কী!

বস্তুত, চব্বিশের যে ৯ দফা, তার কটিই–বা মনে রেখেছেন খোদ নেতারা কিংবা সাধারণ মানুষ? এগুলো কি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা কিংবা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিশা দিতে পারে? অনিবার্যভাবেই না।

এই ৯ দফার প্রতিটিই ইস্যুভিত্তিক ও চব্বিশের আন্দোলনকেন্দ্রিক। ভবিষ্যতের রাষ্ট্র ও রাজনীতি পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা এই দাবিগুলোতে স্থান পাওয়ার যোগ্যই বিবেচিত হয়নি; কিংবা দাবিদাওয়ার প্রণেতারা সম্ভবত অতীতের ছাত্রনেতাদের মতো দূরদৃষ্টি দিয়ে ভাবেনইনি বিষয়গুলো।


চব্বিশের ‘ব্রাত্যকরণ প্রকল্প’

চব্বিশের জুলাইয়ের ‘৩৬ দিন’ ছিল বিপুল সম্ভাবনা ও অসামান্য বীরত্বময়। জুলুমের অপর পৃষ্ঠে একটা অসাধারণ সম্ভাবনাময় সময়ের জন্ম দিয়েছিল চব্বিশের জুলাই। কিন্তু সালতামামিতেই প্রশ্নটা আসবে, সেই সম্ভাবনাকে কি রক্ষা করা গেল? দঙ্গলবাজি ও মবতন্ত্রের বাড়বাড়ন্ত কি গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণা করেনি?

নানা শ্রেণি–পেশা, জাতি–ধর্ম–বর্ণ–গোত্রের বিপুল প্রান্তিক মানুষ কীভাবে শুধু সংখ্যাগুরু ও ক্ষমতাবানের অহমিকার বলি হয়ে গেল অভ্যুত্থানের পর, সেই প্রশ্নের জবাব তো সরকার ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে দিতে হবে। অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেলেও ন্যূনতম কোনো ভাবনা-ভাবনান্তর প্রান্তজনদের জন্য বরাদ্দ নেই। উল্টো জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নারীরা অভ্যুত্থানের পর আরও কোণঠাসা হয়েছেন।

সত্যের খাতিরে স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে শিক্ষাব্যবস্থার ভয়ংকর দার্শনিক সমস্যা থেকে উদ্ভূত রাষ্ট্রীয় কর্মসংস্থানব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলনটির দর্শনগত সীমা খুবই সংকুচিত। যে কারণে দাবিদাওয়ায় নেই কৃষক-শ্রমিকের কথা; অথচ সরকারি গেজেটভুক্ত ৮৪৪ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮৪ জন সাধারণ শ্রমজীবী ও ১২০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন (দৈনিক প্রথম আলো, ২০ জুলাই, ২০২৫)।

এই যে সমাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বর্গকে অপর ও ব্রাত্য করার প্রকল্প, তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি লোপাট করা, এগুলো কি বৈষম্যবিরোধী অবস্থান?

আরও নেই শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো রূপরেখা; কথা নেই অভূতপূর্ব সাড়া দেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত কলেজ ও অপরাপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর—যাদের শহীদের সংখ্যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। বিশেষত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝাঁপিয়ে না পড়লে অভ্যুত্থান আদৌ সফল হতো কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। অথচ সেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই আজ ব্রাত্য!

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভূমিকা

ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে বড়দের পাঠশালায় ‘কোমলমতি’ ভাবা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। নামের সংক্ষিপ্ত রূপটিও (বেবি) কী আশ্চর্যজনক আক্ষরিক সার্থকতায় ভাস্বর! অবস্থাপন্নদের সন্তান, রাজনীতি-সমাজবিমুখ, দেশ নিয়ে ভাবনাহীন, বিদেশে এক পা দেওয়া, সারাক্ষণ শুধু সিজি সিজি (সিজিপিএ) জপা, পশ-জোস-বস করপোরেট কালচার সিনড্রোম, ফাস্ট ফুড, আপেল ও ব্রয়লার খাওয়া এবং সর্বোপরি, ‘আই হেট পলিটিকস’—কোমলমতি, তথা বেবি অভিধা দেওয়ার জন্য এর চেয়ে বেশি আর কী প্রয়োজন! বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এভাবে দেখার প্রবণতা ‘প্রাচীন প্রস্তর যুগ’ থেকেই চলে আসছে। অথচ তাঁরাই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন!

আন্দোলনের একপর্যায়ে গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে ইউজিসি একযোগে সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার এখতিয়ার-বহির্ভূত আদেশ দেয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ থেকে ছাত্র হত্যাকাণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আদেশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক, যেখানে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক অংশ নেন। শিক্ষকদের এই প্রতিবাদী অবস্থান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক পরোক্ষ দাবানলের সৃষ্টি করে।

হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৮ জুলাই, যে সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী উপায়ন্তর না পেয়ে শহর ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় রাষ্ট্র ও সরকারকে প্রত্যাঘাত করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশেষত ঢাকার রামপুরা থেকে উত্তরা পর্যন্ত পুরো প্রগতি সরণি ও কুড়িল বিশ্বরোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।


রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। ২ আগস্ট শুক্রবার, ২০২৪ছবি: প্রথম আলো

যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে স্থানাভাবে রাজপথের ধারণা অনেক সংকুচিত, সেহেতু শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মঞ্চ হয়ে ওঠে মহাসড়ক। আন্দোলনকে মহাসড়কে আনতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা—এই ধারণাই তখন ক্ষমতাসীন রেজিমের ছিল না। সেই অর্থে, মহাসড়ক দখল করে সারা দেশকে ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার প্রথম কৃতিত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক নড়াচড়ায় যখন কোনো কিছুই টলানো যাচ্ছিল না, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক দখলের প্রত্যাঘাত, জীবনবাজি রাখা, শহীদ হওয়া ছিল ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব বড় ঘটনা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জুলাইয়ে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়–সংক্রান্ত ইতিহাসের সব মিথ ভেঙে দিয়েছিল। ধসিয়ে দিয়েছিল পাবলিক-প্রাইভেট শ্রেণিভেদের বাইনারি। গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বিগত সব অবজ্ঞার ভাষা।

 গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৮ জুলাইকে তাই যথার্থই ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই দিবস পালনে অভ্যুত্থান–উত্তর সুবিধাভোগীদের কোনো দায়িত্ববোধের অনুভূতি হয়নি!

একেই কি বলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র

কোনো বস্তুগত আকাঙ্ক্ষা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেননি। সরকারি চাকরির প্রতি তাঁদের মোহ কম আর রাষ্ট্রীয় চাকরিনীতির সংস্কৃতিও তাঁদের প্রতি সদয় নয়। তাঁদের গন্তব্য হয় তাই বিদেশ, লক্ষ্য বড়জোর একটা ভালো আইএলটিএস স্কোর। মানে, তাঁরা স্বভাবজাত ‘আইএলটিএসপন্থী’। সেই তাঁরাই ‘বিসিএসপন্থী’ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন মূলত একটা ‘ফেলো-ফিলিংস’ থেকে। সঙ্গে শিক্ষকেরাও লড়লেন।

বিস্ময়করভাবে দেখা গেল, অভ্যুত্থানোত্তর সরকার ১০ শতাংশ ট্যাক্স বসিয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর; আগের ‘নো ভ্যাট’ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বলে, যেটা শিক্ষার্থীদেরই দিতে হবে। অথচ রাষ্ট্রের প্রতি প্রভূত অবদানস্বরূপ নয়া বন্দোবস্তে উল্টো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারি ছাত্রাবাসের সুবিধা দেওয়া উচিত ছিল।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হয়রানি, বহিষ্কার ও পুলিশি হামলার শিকার হয়েছেন। কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে শিক্ষকেরা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। বেতন-ফি বেড়েছে কোথাও কোথাও। আন্দোলনের অংশীদারত্ব দখলের চেষ্টাও হয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সরকারে গেছেন, নানা সংস্কার কমিশনে গেছেন; কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল অংশীজনের কথা কেউ মনেও রাখেননি। এমনকি খোদ ইউজিসিতেও নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি! মানে, ৫৫ বছরের বৈষম্যের ধারা চলমান রয়েছে।

এ–ই তাহলে বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের চরিত্র? এমন মহাকায় অভ্যুত্থানের পরও চলতে থাকবে নার্সিসিস্ট গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব আর বাকিরা হবেন ব্রাত্যকরণের শিকার?

ড. সৌমিত জয়দ্বীপ সহকারী অধ্যাপক, স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/egwl7rbw6d
50
10 Habits That Separate Rich and Successful Founders From Wannabe Entrepreneurs

Successful entrepreneurs adopt rich habits. Unsuccessful entrepreneurs ignore their habits.

1. Successful entrepreneurs dream big and set goals

Successful entrepreneurs are dreamers who take massive action on their dreams. In my study, 80% of wealthy entrepreneurs had clearly defined goals, compared to only 12% of those struggling financially. They write down their dreams and break them into daily tasks.

Unsuccessful entrepreneurs, on the other hand, lack focus or have vague ideas and are unable to commit to a plan of action.

2. They build relationships daily

Relationships are the true currency of the successful. Successful entrepreneurs dedicate time every day to nurturing their network, calling clients, mentoring employees or connecting with mentors. My research showed that 88% of wealthy entrepreneurs, on a daily basis, actively built relationships, while only 17% of the unsuccessful did the same.

A simple hello call, life event call or happy birthday call can open doors to partnerships or opportunities. Unsuccessful entrepreneurs often isolate themselves, neglecting the power of a strong network.

3. They read to learn, not to escape

Successful entrepreneurs are lifelong learners. In my study, 85% of the wealthy read 30 minutes or more daily, focusing on self-improvement, industry trends, or business strategies. They consume books by other entrepreneurs to gain insights.

Unsuccessful entrepreneurs, by contrast, read mostly for entertainment or not at all — only 11% engaged in daily self-education reading.

4. They take calculated risks

Successful entrepreneurs do not take speculative risks. Rather, they take what I call analytical risk — they analyze, research and weigh options before taking action. In my study, 91% of wealthy entrepreneurs said they took analytical risks, often piloting ideas on a small scale before rolling their product or service out to the world.

Unsuccessful entrepreneurs either avoid risks altogether, are paralyzed by fear or take speculative risks, not doing the homework, like successful entrepreneurs do. This causes mistakes and costs them precious working capital.

5. They wake up early and maximize their day

Successful entrepreneurs start their day early — 67% of the wealthy in my study woke up at least three hours before their workday began. They use this time for planning, exercise or creative thinking. Unsuccessful entrepreneurs often sleep in or waste mornings, leaving them reactive instead of proactive. Getting a head start gives successful entrepreneurs an edge in productivity.

6. They focus on one thing at a time

Multitasking is a myth. Successful entrepreneurs practice single-tasking, pouring their energy into one project or goal until it's complete. My research found that 81% of wealthy entrepreneurs focused on one major objective at a time, compared to just 19% of the unsuccessful.

7. They want feedback and embrace criticism

Successful entrepreneurs actively seek feedback from customers, mentors, and peers to improve their products or services. In my study, 79% of wealthy entrepreneurs valued constructive criticism, using it to refine their approach. Unsuccessful entrepreneurs often take feedback personally or avoid it altogether, missing opportunities to grow. Embracing criticism isn't easy, but it's a hallmark of those who succeed.

8. They exercise and prioritize health

Running a business is a marathon, not a sprint. Successful entrepreneurs know that physical and mental health fuel their performance. My research showed that 76% of the wealthy exercised aerobically for 30 minutes or more daily, compared to only 23% of the unsuccessful. They also eat healthier, avoiding junk food that saps energy. Unsuccessful entrepreneurs often neglect their health, leading to burnout or diminished focus. A strong body supports a strong business.

9. They persist through adversity and failure

Failure is inevitable in entrepreneurship, but successful entrepreneurs view it as a learning opportunity. In my study, 84% of wealthy entrepreneurs said they had faced significant setbacks but kept going, pivoting when needed to alter their strategies or processes. Unsuccessful entrepreneurs often give up after a single failure, letting fear or discouragement take over. Persistence turns dreams into reality.

10. They control their emotions

Entrepreneurship is an emotional rollercoaster. Successful entrepreneurs stay calm under pressure, making decisions based on logic rather than on emotion. My research found that 94% of the wealthy practiced emotional discipline, compared to just 15% of the unsuccessful. Successful entrepreneurs stay composed and solution-focused. Unsuccessful entrepreneurs let emotions drive their decisions, leading to mistakes.

Success as an entrepreneur isn't about being the smartest or the most connected. It's about doing what unsuccessful entrepreneurs won't.

Pick one habit from this list and commit to it for 30 days. Track your progress in a journal, just like 62% of the wealthy in my study did. Small, consistent steps will transform your business — and your life. The Rich Habits aren't magic; they're a blueprint. Start building yours today.

Source: https://www.entrepreneur.com/growing-a-business/10-things-that-separate-successful-founders-from-the/495020



Pages: 1 ... 3 4 [5] 6 7 ... 10